< রূতের বিবরণ 2 >
1 নয়মীর স্বামী ইলীমেলকের পরিবারের একজন সম্ভ্রান্ত লোক ছিলেন, যাঁর নাম বোয়স।
2 আর মোয়াবীয় রূত তার শাশুড়িকে বলল, “দয়া করে আমাকে যে কোনো জমিতে শিষ কুড়াতে অনুমতি দিন। যাতে জমিতে পড়ে থাকা শিষ কুড়ানোর জন্য আমি যার পিছনে যাই তার কাছেই দয়া পাই।” নয়মী তাকে বলল, “বাছা আমার, যাও।”
3 তাই রূত বাইরে গেল, যেখানে মজুরেরা যব কেটে জমা করছিল, এবং তাদের পিছনে পিছনে গিয়ে জমিতে পড়ে থাকা যবের শিষ কুড়াতে লাগল। সেদিন ঘটনাক্রমে, সে জানতে পারল, যে জমির অংশটিতে সে কুড়াচ্ছে, সেই জমিটি বোয়সের ছিল, যিনি নয়মীর স্বামী ইলীমেলকের পরিবারের একজন।
4 ঠিক সেই সময় বোয়স বেথলেহেম থেকে আসলেন। যে মজুরেরা শস্য কেটে জমা করছিল, তিনি তাদের উদ্দেশে বললেন, “সদাপ্রভু তোমাদের সঙ্গে থাকুন!” আর তারাও উত্তরে বলল, “সদাপ্রভু আপনাকে আশীর্বাদ করুন!”
5 তখন বোয়স মজুরদের উপরে নিযুক্ত প্রধানকে বললেন, “কে এই যুবতী মহিলা?”
6 মজুরদের উপরে নিযুক্ত প্রধান বলল, “এই যুবতী সেই মোয়াবীয় মহিলা যে নয়মীর সঙ্গে মোয়াব দেশ থেকে এসেছে।”
7 সে বলেছিল, “দয়া করে আমাকে মজুরদের পিছনে পিছনে গিয়ে জমিতে পড়ে থাকা যবের শিষ কুড়াতে দিন। সে জমিতে গেছে এবং ঘরে খুব কম সময় আরাম করা ছাড়া, সকাল থেকে এখন পর্যন্ত অনবরত কাজ করে চলেছে।”
8 তাই বোয়স রূতকে বললেন, “বাছা আমার, খুব মন দিয়ে আমার কথা শোনো, এই জমি ছেড়ে আর অন্য কোনো লোকের জমিতে শিষ কুড়াতে যেয়ো না। এখানে আমার দাসীদের সঙ্গে থাকো।
9 তারা যে জমিতে শস্য জমা করছে, সেই জমির উপর তোমার চোখ রেখে, তাদের পিছনে পিছনে শিষ কুড়াও। আমি আমার দাসদের বলে দিয়েছি, যেন তারা তোমার গায়ে হাত না দেয়। আর যখন তোমার পিপাসা পাবে তখন আমার দাসেরা যে জল ভরে রেখেছে সেই জলের পাত্রের কাছে গিয়ে জল পান করবে।”
10 বোয়সের সব কথা শোনার পর রূত মাটিতে উবুড় হয়ে প্রণাম করল। সে জিজ্ঞাসা করল, “কেন আমি আপনার চোখে এত দয়া পেয়েছি? কেনই বা আপনি আমার এত যত্ন নিচ্ছেন? আমি তো অন্য দেশের লোক, আপনার কাছে বিদেশিনী।”
11 বোয়স উত্তরে বললেন, “তোমার স্বামীর মৃত্যুর পর তুমি তোমার শাশুড়ির জন্য যা কিছু করেছ, এবং কীভাবে তুমি তোমার জন্মভূমি, তোমার বাবা ও মাকে ছেড়ে, যে লোকদের তুমি আগে জানতে না, তাদের সঙ্গে বসবাস করতে এসেছ, সেই বিষয়ে তোমার সব কথা আমি লোকের মুখে শুনেছি।
12 সদাপ্রভু তোমার কাজের পুরস্কার দিন। সদাপ্রভু ইস্রায়েলের ঈশ্বর তোমাকে তোমার কাজের পুরো দাম দিন, যাঁর কাছে আশ্রয় নিয়ে সুরক্ষা পেতে তুমি এখানে এসেছ।”
13 তখন রূত বোয়সকে বলল, “হে আমার প্রভু, এখন আমি যেমন আপনার কাছে দয়া পেয়েছি, তেমনি দয়া যেন এর পরেও পেতে পারি। আপনি আমাকে সান্ত্বনা দিয়েছেন এবং আপনার এই দাসীর সঙ্গে দয়ালু ভাব দেখিয়েছেন—যদিও আমি আপনার যত দাসী আছে তাদের একজনেরও যোগ্য নই।”
14 দুপুরবেলায় খাবার সময় বোয়স রূতকে ডেকে বললেন, “এখানে উঠে এসো, কিছু রুটি নিয়ে সিরকায় ডুবিয়ে নাও।” যখন সে শস্যচ্ছেদকদের কাছে গিয়ে বসল, তখন বোয়স তাকে কিছুটা ভাজা শস্য দিলেন। মনের ইচ্ছামতো পেট পুরে সে খেল এবং কিছু রেখে দিল।
15 যখন সে আবার শস্য কুড়াতে উঠল, তখন বোয়স তার দাসদের আদেশ দিয়ে বললেন, “বরং একে তোমাদের আঁটির মধ্যে থেকে কুড়াতে দিয়ো, তার বিরুদ্ধে কিছু কথা বলবে না।
16 বরং আঁটির মধ্যে থেকে কিছু শিষ বের করে তার জন্য ফেলে দিয়ো যেন সে কুড়াতে পারে এবং তাকে বকাবকি করবে না।”
17 তাই রূত সন্ধ্যা পর্যন্ত বোয়সের জমিতে শিষ কুড়ালো। পরে সে কুড়ানো যব ঝাড়াই করলে তার পরিমাণ প্রায় এক ঐফা হল।
18 এরপর সে সেগুলি নিয়ে নগরে গেল আর তার শাশুড়ি দেখল যে সে কত কুড়িয়েছে। রূত যথেষ্ট খাওয়ার পর বেঁচে যাওয়া খাবার বের করে তার শাশুড়িকে দিল।
19 তার শাশুড়ি তাকে জিজ্ঞাসা করল, “তুমি আজ কোথায় শিষ কুড়াতে গিয়েছিলে? আজ তুমি কোথায় কাজ করলে? যিনি তোমার উপর দয়া দেখিয়েছেন তাঁর মঙ্গল হোক!” তাই সে তার শাশুড়িকে বলল, “আমি আজ যার জমিতে কাজ করেছি সেই ব্যক্তির নাম বোয়স।”
20 তখন নয়মী রূতকে বলল, “ধন্য সদাপ্রভু যিনি তাঁর দয়া জীবিত ও মৃতদের উপর দেখিয়েছেন।” নয়মী রূতকে আরও বলল, “সে আমাদের পরিবারের এক নিকট আত্মীয় এবং আমাদের একজন মুক্তিকর্তা জ্ঞাতি।”
21 পরে মোয়াবীয় রূত বলল, “তিনি আমাকে আরও বললেন, তুমি আমার দাসদের সঙ্গে থেকো যতক্ষণ না তারা শস্য জমা করার কাজ শেষ করছে।”
22 নয়মী তার বউমা রূতকে বলল, “বাছা, তোমার পক্ষে এই ভালো যে তুমি তাঁর দাসীদের সঙ্গে ছিলে কারণ অন্যের জমি হলে তোমার ক্ষতি হত।”
23 তাই যব ও গম কুড়ানো শেষ না হওয়া পর্যন্ত রূত বোয়সের দাসীদের সঙ্গেই ছিল। এইভাবে সে তার শাশুড়ির সঙ্গে থাকতে লাগল।