< গণনার বই 11 >
1 এরপর জনগণ সদাপ্রভুর কর্ণগোচরে তাদের ক্লেশের জন্য অভিযোগ করল এবং তিনি যখন তা শুনলেন তখন তিনি রুষ্ট হলেন। তখন সদাপ্রভুর কাছ থেকে আগুন বের হয়ে ছাউনির প্রান্তসীমার কিছু অংশ পুড়িয়ে দিল।
2 যখন সেই লোকেরা মোশির কাছে কাঁদল, তিনি সদাপ্রভুর কাছে বিনতি করলেন এবং আগুন নিবে গেল।
3 এজন্য সেই স্থানের নাম তবেরা রাখা হল, কারণ সদাপ্রভুর কাছ থেকে আগুন বেরিয়ে এসে তাদের পুড়িয়ে দিয়েছিল।
4 তাদের মধ্যে বসবাসকারী উচ্ছৃঙ্খল লোকেরা, বিকল্প খাবারের জন্য অনুনয় করল এবং ইস্রায়েলীরা পুনরায় বিলাপ করে বলতে লাগল, “আমাদের খাবারের জন্য যদি একটু মাংস পেতাম!
5 স্মরণে আসছে, মিশরে আমরা বিনামূল্যে মাছ খেতাম, সেই সঙ্গে শসা, তরমুজ, সবজি, পিঁয়াজ, রসুনও খেতাম।
6 কিন্তু এখন আমাদের ক্ষুধার অবলুপ্তি ঘটেছে; এই মান্না ছাড়া অন্য কিছু দেখা যায় না।”
7 মান্না, ধনে বীজের মতো আকৃতি এবং দেখতে কিশমিশের মতো ছিল।
8 লোকেরা চতুর্দিকে ভ্রমণ করে তা সংগ্রহ করত, তারপর যাঁতায় পেষণ অথবা হামানদিস্তায় চূর্ণ করত। তারা কোনো পাত্রে সেই মান্না রান্না করত, নতুবা তা দিয়ে পিঠে তৈরি করত। জলপাই তেলে প্রস্তুত কোনো পদের মতোই তার স্বাদ ছিল।
9 রাত্রিবেলা, ছাউনিতে শিশিরের সঙ্গে মান্না পড়ত।
10 মোশি প্রত্যেক পরিবারের বিলাপ শুনতে পেলেন। তারা প্রত্যেকে নিজেদের তাঁবুর প্রবেশ মুখে ছিল। সদাপ্রভু ভয়ংকর রুষ্ট হওয়াতে, মোশি উদ্বিগ্ন হলেন।
11 তিনি সদাপ্রভুকে জিজ্ঞাসা করলেন, “তোমার দাসকে এই সমস্যার সম্মুখীন কেন করেছ? আমি কোন কাজ করতে তোমাকে অসন্তুষ্ট করেছি যে তুমি এই সমস্ত লোকের ভার আমার উপর চাপিয়ে দিলে?
12 এদের সবাইকে কি আমি গর্ভে ধারণ করেছিলাম? আমি কি তাদের জন্ম দিয়েছি? ধাত্রী যেমন শিশুসন্তান বহন করে, সেভাবে, কেন তুমি আমাকে বলেছিলে, তাদের বহন করে, পূর্বপুরুষদের কাছে করা শপথ অনুসারে প্রতিজ্ঞাত দেশে নিয়ে যেতে?
13 এই সমস্ত লোকের জন্য আমি এখন কোথায় মাংস পাব? তারা আমার কাছে কেঁদে বলছে, ‘আমাদের খাবারের জন্য মাংস দাও!’
14 আমি এককভাবে, এই সমস্ত লোকের দায়িত্ব বহন করতে পারব না। তা আমার শক্তির অতিরিক্ত।
15 আমার সঙ্গে অনুরূপ ব্যবহার যদি তোমার অভিপ্রেত হয়, তাহলে এই মুহূর্তেই আমাকে বধ করো, যদি তোমার দৃষ্টিতে কৃপা লাভ করে থাকি, আমাকে ধ্বংসের সম্মুখীন হতে দিয়ো না।”
16 সদাপ্রভু মোশিকে বললেন, “আমার কাছে ইস্রায়েলের সত্তরজন প্রবীণ ব্যক্তিকে, যারা জনসমাজের নেতা ও কর্মকর্তারূপে তোমার কাছে পরিচিত, তাদের নিয়ে এসো। তারা সমাগম তাঁবুতে সমাগত হোক, যেন তারা সেই জায়গায় তোমার সঙ্গে দাঁড়ায়।
17 আমি নেমে এসে তোমার সঙ্গে আলাপ করব এবং তোমার উপরে যে আত্মা বিদ্যমান, সেই আত্মা আমি তাদের উপরেও অধিষ্ঠান করাব। তারা তোমার সঙ্গে জনসমাজের দায়িত্ব বহন করবে, যেন তোমাকে এককভাবে সমস্ত ভারবহন করতে না হয়।
18 “লোকদের বলো, ‘আগামীকালের জন্য প্রস্তুত হও, নিজেদের পবিত্র করো, যখন তোমরা মাংস ভোজন করতে পারবে। তোমরা যখন বিলাপ করে বলেছিলে, “যদি আহার করার জন্য মাংস পেতাম! মিশরেই আমরা অপেক্ষাকৃত ভালো ছিলাম!” সেই কথা সদাপ্রভু শুনেছিলেন। এইবার, সদাপ্রভু তোমাদের মাংস জোগাবেন, তোমরা তা ভোজন করবে।
19 মাত্র একদিন, দু-দিন, পাঁচ, দশ কি কুড়ি দিনের জন্য তোমরা ভোজন করবে, তা নয়;
20 সম্পূর্ণ এক মাস অবধি, যতক্ষণ না মাংস তোমাদের নাক থেকে বহির্গত হয় ও তোমাদের বিরাগ জন্মে, কারণ যিনি তোমাদের মধ্যে অবস্থানকারী, তোমরা সেই সদাপ্রভুকে প্রত্যাখ্যান করেছ, বলেছ, “কেন আমরা সম্পূর্ণরূপে মিশর পরিত্যাগ করে এলাম?”’”
21 কিন্তু মোশি বললেন, “এখানে আমি ছয় লক্ষ পদাতিকের মধ্যে অবস্থান করছি এবং তুমি বলছ, ‘আমি তাদের এক মাস পর্যন্ত মাংস ভোজন করতে দেব!’
22 যদি পাল পাল গবাদি পশু ও মেষ হনন করা হয়, তা হলেও তাদের জন্য পরিমাণে কি তা পর্যাপ্ত হবে? যদি সমুদ্রের সমস্ত মাছ ধরা হয়, তাও কি তাদের জন্য যথেষ্ট হবে?”
23 সদাপ্রভু মোশিকে উত্তর দিলেন, “সদাপ্রভুর হাত কি নিতান্তই সংকুচিত হয়েছে? তুমি এবার দেখবে, আমি যা বলি, তা তোমাদের জন্য বাস্তব হয় কি না!”
24 অতএব মোশি বাইরে গিয়ে সদাপ্রভু যে সমস্ত কথা বলেছিলেন, তা লোকদেরকে বললেন। তাদের সত্তরজন প্রবীণকে একত্র করে, সেই শিবিরের চতুর্দিকে দাঁড় করালেন।
25 তখন সদাপ্রভু মেঘের মধ্যে অবতীর্ণ হলেন এবং তাঁর সঙ্গে কথা বললেন; তিনি ঈশ্বরের সেই আত্মা সত্তরজন প্রবীণের উপর অধিষ্ঠান করালেন, যে আত্মা মোশির উপর ছিলেন। যখন আত্মা তাঁদের উপর অধিষ্ঠান করলেন, তাঁরা ভাববাণী বলতে লাগলেন, অবশ্য পরে তাঁরা আর তা করেননি।
26 কিন্তু, ইল্দদ ও মেদদ নামক দুজন ব্যক্তি ছাউনিতেই থেকে গিয়েছিলেন। তাঁরাও প্রবীণদের মধ্যে গণিত হয়েছিলেন, যদিও বের হয়ে সেই শিবিরের কাছে যাননি। তা সত্ত্বেও আত্মা তাঁদের উপরে অধিষ্ঠিত হলেন এবং তাঁরা ছাউনির মধ্যেই ভাববাণী বলা শুরু করলেন।
27 একজন যুবক দৌড়ে গিয়ে মোশিকে বলল, “ইল্দদ ও মেদদ, ছাউনির মধ্যেই ভাববাণী বলছেন।”
28 নূনের ছেলে যিহোশূয়, যিনি যৌবনকাল থেকে মোশির পরিচারক ছিলেন, তিনি বললেন, “আমার প্রভু, মোশি, ওদের বারণ করুন!”
29 কিন্তু মোশি উত্তরে বললেন, “আমার জন্য তুমি কি ঈর্ষান্বিত হয়েছ? আমার বাসনা, সদাপ্রভুর প্রত্যেকজন ব্যক্তি ভাববাদী হোন এবং তিনি তাদের সকলের উপর আত্মাকে অধিষ্ঠিত করুন।”
30 তারপর মোশি ও ইস্রায়েলের প্রবীণেরা ছাউনিতে ফিরে গেলেন।
31 তখন সদাপ্রভুর কাছ থেকে এক ঝড় বের হয়ে সমুদ্র থেকে ভারুই পাখিদের তুলে নিয়ে এল। সেই ঝড়, ছাউনির চতুর্দিকে তাদের উড়িয়ে নিয়ে এল। তারা ভূমি থেকে তিন ফুট উঁচুতে অবস্থান করল এবং যে কোনো দিশায়, একদিনের চলার পথ পর্যন্ত বিস্তৃত হয়ে রইল।
32 সেদিন, সম্পূর্ণ দিন ও রাত এবং তার পরেরও সম্পূর্ণ দিন সবাই ভারুই পাখি সংগ্রহ করল। কোনো ব্যক্তিই দশ হোমারের কম সংগ্রহ করল না। তারা সেই সমস্ত পাখি ছাউনির চতুর্দিকে ছড়িয়ে রাখল।
33 মাংস তাদের দাঁতে থাকতে থাকতেই এবং সব সমাপ্ত হবার আগেই লোকেদের বিপক্ষে সদাপ্রভুর রোষ বহ্নিমান হল। তিনি ভয়ংকর এক মহামারি দ্বারা তাদের আঘাত করলেন।
34 অতএব সেই স্থানের নাম রাখা হল কিব্রোৎ-হত্তাবা, কারণ যারা ভিন্নতর খাবারের জন্য লোভাতুর হয়েছিল, তাদের সেখানেই তারা সমাধি দিল।
35 কিব্রোৎ-হত্তাবা থেকে সেই জনতা, হৎসেরোতে যাত্রা করল এবং সেই জায়গায় অবস্থান করল।