< মথি 27 >
1 ভোরবেলায়, সমস্ত প্রধান যাজক ও লোকদের প্রাচীনবর্গ এই সিদ্ধান্তে উপনীত হল যে, যীশুকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হবে।
2 তারা তাঁকে বেঁধে প্রদেশপাল পীলাতের কাছে গেল ও তাঁর হাতে তাঁকে সমর্পণ করল।
3 যে তাঁর সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছিল, সেই যিহূদা যখন দেখল যে যীশুকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে সে তীব্র বিবেক দংশনে বিদ্ধ হল। সে প্রধান যাজকদের ও প্রাচীনদের কাছে গিয়ে সেই ত্রিশটি রুপোর মুদ্রা ফিরিয়ে দিল।
4 সে বলল, “নির্দোষ মানুষের রক্ত সমর্পণ করে আমি পাপ করেছি।” তারা উত্তরে বলল, “তাতে আমাদের কী? সে তোমার দায়।”
5 তাই যিহূদা সেই অর্থ মন্দিরে ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে চলে গেল। তারপর গিয়ে নিজেকে ফাঁসি দিল।
6 প্রধান যাজকেরা মুদ্রাগুলি তুলে নিয়ে বলল, “এই অর্থ ভাণ্ডারে রাখা বিধানবিরুদ্ধ, কারণ এটি রক্তের মূল্য।”
7 তাই তারা স্থির করল, ওই অর্থ দিয়ে কুমোরের জমি কেনা হবে, যেন বিদেশিদের কবর দেওয়া যেতে পারে।
8 এই কারণে একে আজও পর্যন্ত রক্তক্ষেত্র বলা হয়।
9 তখন ভাববাদী যিরমিয়ের দ্বারা কথিত এই বচন পূর্ণ হল: “তারা সেই ত্রিশটি রুপোর মুদ্রা নিল, ইস্রায়েল-সন্তানেরা যা তাঁর মূল্য নির্ধারণ করেছিল,
10 আর তারা সেই অর্থ কুমোরের জমি কেনার জন্য ব্যয় করল, যেমন প্রভু আমাকে আদেশ দিয়েছিলেন।”
11 ইতিমধ্যে যীশুকে প্রদেশপালের সামনে দাঁড় করানো হল। প্রদেশপাল তাঁকে জিজ্ঞাসা করলেন, “তুমি কি ইহুদিদের রাজা?” যীশু উত্তর দিলেন, “হ্যাঁ, ঠিক তাই, যেমন তুমি বললে।”
12 প্রধান যাজকেরা ও প্রাচীনবর্গ যখন তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ করতে লাগল, তিনি কোনও উত্তর দিলেন না।
13 তখন পীলাত তাঁকে জিজ্ঞাসা করলেন, “তোমার বিরুদ্ধে ওরা যে সাক্ষ্য এনেছে তুমি কি শুনতে পাচ্ছ না?”
14 তবুও যীশু কোনো উত্তর দিলেন না, একটি অভিযোগেরও না। এতে প্রদেশপাল অত্যন্ত বিস্মিত হলেন।
15 সেই সময়ে, পর্ব উপলক্ষে প্রদেশপালের একটি প্রথা ছিল, লোকসাধারণ যে কারাবন্দিকে চাইত, তিনি তাকে মুক্তি দিতেন।
16 তখন যীশু-বারাব্বা নামে তাদের এক কুখ্যাত বন্দি ছিল।
17 তাই লোকেরা সমবেত হলে পীলাত তাদের জিজ্ঞাসা করলেন, “তোমাদের জন্য আমি কাকে মুক্তি দেব, বারাব্বাকে না যীশুকে, যাকে খ্রীষ্ট বলে?”
18 কারণ তিনি জানতেন, তারা ঈর্ষাবশত যীশুকে তাঁর হাতে তুলে দিয়েছিল।
19 পীলাত যখন বিচারাসনে বসেছিলেন, তাঁর স্ত্রী তাঁর কাছে এই বার্তা পাঠালেন, “ওই নির্দোষ ব্যক্তির প্রতি তুমি কিছু কোরো না, কারণ আজ আমি স্বপ্নে তাঁর কারণে ভীষণ কষ্ট পেয়েছি।”
20 কিন্তু প্রধান যাজকেরা ও প্রাচীনবর্গ লোকদের প্ররোচিত করে বলল, তারা যেন বারাব্বাকে মুক্তির জন্য চেয়ে নেয়, কিন্তু যীশুকে যেন মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়।
21 প্রদেশপাল জিজ্ঞাসা করলেন, “এই দুজনের মধ্যে তোমরা কাকে চাও যে আমি মুক্ত করি?” তারা উত্তর দিল, “বারাব্বাকে।”
22 পীলাত জিজ্ঞাসা করলেন, “তাহলে যীশু, যাকে খ্রীষ্ট বলে, আমি তাকে নিয়ে কী করব?” তারা সকলে মিলে উত্তর দিল, “ওকে ক্রুশে দিন!”
23 পীলাত জিজ্ঞাসা করলেন, “কেন? ও কী অপরাধ করেছে?” কিন্তু তারা আরও জোরে চিৎকার করে বলতে লাগল, “ওকে ক্রুশে দিন!”
24 পীলাত যখন দেখলেন, তাঁর সব প্রচেষ্টা নিষ্ফল হচ্ছে, বরং এক হট্টগোলের সৃষ্টি হচ্ছে, তিনি জল নিয়ে লোকদের সামনে তাঁর হাত ধুয়ে বললেন, “আমি এই মানুষটির রক্তপাত সম্পর্কে নির্দোষ। এই দায় তোমাদের!”
25 লোকেরা সবাই উত্তর দিল, “ওর রক্ত আমাদের উপরে ও আমাদের সন্তানের উপরে বর্তাক।”
26 তখন তিনি তাদের কাছে বারাব্বাকে মুক্ত করে দিলেন, কিন্তু যীশুকে চাবুক দিয়ে প্রহার করিয়ে ক্রুশার্পিত করার জন্য সমর্পণ করলেন।
27 এরপর প্রদেশপালের সৈন্যরা যীশুকে তাঁর প্রাসাদে নিয়ে গেল ও তাঁর চারপাশে সমস্ত সৈন্যদলকে একত্র করল।
28 তারা তাঁর পোশাক খুলে একটি লাল রংয়ের পোশাক পরিয়ে দিল।
29 তারপর কাঁটালতা দিয়ে পাকানো একটি মুকুট তৈরি করে তাঁর মাথায় স্থাপন করল। তারা তাঁর ডান হাতে নলখাগড়ার একটি ছড়ি দিল ও তাঁর সামনে নতজানু হয়ে ব্যঙ্গবিদ্রুপ করল, বলল, “ইহুদিদের রাজা, নমস্কার!”
30 তারা তাঁর গায়ে থুতু দিল, ছড়িটি নিয়ে নিল এবং তা দিয়ে বারবার তাঁর মাথায় আঘাত করতে লাগল।
31 তাঁকে ব্যঙ্গবিদ্রুপ করার পর, তারা তাঁর পোশাকটি খুলে নিল ও তাঁর নিজের পোশাক তাঁকে পরিয়ে দিল। তারপর তারা তাঁকে ক্রুশবিদ্ধ করার জন্য নিয়ে গেল।
32 তারা যখন বেরিয়ে যাচ্ছে, তখন তারা কুরীণ থেকে আগত শিমোন নামে এক ব্যক্তির সাক্ষাৎ পেল। তারা ক্রুশ বয়ে নিয়ে যেতে তাকে বাধ্য করল।
33 তারা গলগথা নামক এক স্থানে এল (নামটির অর্থ, “মাথার খুলির স্থান”)।
34 তারা সেখানে যীশুকে পিত্তরসে মেশানো দ্রাক্ষারস পান করতে দিল; কিন্তু তিনি তার স্বাদ নিয়ে তা পান করতে চাইলেন না।
35 তারা যখন তাঁকে ক্রুশবিদ্ধ করল, তারা গুটিকাপাত করে তাঁর পোশাকগুলি ভাগ করে নিল।
36 আর সেখানে বসে, তারা তাঁকে পাহারা দিতে লাগল।
37 তাঁর মাথার উপরে তারা তাঁর বিরুদ্ধে এই লিখিত অভিযোগপত্র টাঙিয়ে দিল: এই ব্যক্তি যীশু, ইহুদিদের রাজা।
38 দুজন দস্যুকে তাঁর সঙ্গে ক্রুশার্পিত করা হল, একজনকে তাঁর ডানদিকে, অন্যজনকে তাঁর বাঁদিকে।
39 যারা ওই পথ দিয়ে যাচ্ছিল, তারা তাদের মাথা নাড়তে নাড়তে তাঁকে অপমান করে বলতে লাগল,
40 “তুমি নাকি মন্দির ধ্বংস করে তিনদিনের মধ্যে পুনর্নির্মাণ করতে চলেছিলে, এবার নিজেকে রক্ষা করো! তুমি যদি ঈশ্বরের পুত্র হও, ক্রুশ থেকে নেমে এসো!”
41 একইভাবে প্রধান যাজকেরা, শাস্ত্রবিদরা ও প্রাচীনবর্গ তাঁকে বিদ্রুপ করল।
42 তারা বলল, “ও অন্যদের বাঁচাত, কিন্তু নিজেকে বাঁচাতে পারে না! ও তো ইস্রায়েলের রাজা! এখন ও ক্রুশ থেকে নেমে আসুক, তাহলে আমরাও ওকে বিশ্বাস করব।
43 ও ঈশ্বরে নির্ভর করে। ঈশ্বরই ওকে নিস্তার করুন, যদি তিনি ওকে চান, কারণ ও বলেছে, ‘আমি ঈশ্বরের পুত্র।’”
44 একইভাবে, তাঁর সঙ্গে ক্রুশবিদ্ধ দুই দস্যুও তাঁকে বিভিন্নভাবে অপমান করল।
45 দুপুর বারোটা থেকে তিনটে পর্যন্ত সমস্ত দেশে অন্ধকার ছেয়ে গেল।
46 প্রায় তিনটের সময় যীশু উচ্চকণ্ঠে চিৎকার করে উঠলেন, “এলী, এলী, লামা শবক্তানী?” যার অর্থ, “ঈশ্বর আমার, ঈশ্বর আমার, কেন তুমি আমাকে পরিত্যাগ করেছ?”
47 সেখানে দাঁড়িয়ে আছেন এমন কয়েকজন যখন একথা শুনল, তারা বলল, “ও এলিয়কে ডাকছে।”
48 সঙ্গে সঙ্গে তাদের মধ্যে একজন দৌড়ে গিয়ে একটি স্পঞ্জ নিয়ে এল। সে তা সিরকা মিশ্রিত দ্রাক্ষারসে পূর্ণ করে একটি নলের সাহায্যে যীশুকে পান করতে দিল।
49 অন্যেরা সকলে বলল, “এখন ওকে একা ছেড়ে দাও। দেখি, এলিয় ওকে রক্ষা করতে আসেন কি না।”
50 পরে যীশু আবার উচ্চকণ্ঠে চিৎকার করে তাঁর আত্মাকে সমর্পণ করলেন।
51 আর সেই মুহূর্তে মন্দিরের পর্দাটি উপর থেকে নিচ পর্যন্ত চিরে দু-টুকরো হল। ভূমিকম্প হল ও পাথর শিলাগুলি বিদীর্ণ হল।
52 কবরসকল উন্মুক্ত হল ও বহু পুণ্যজনের শরীর, যাঁরা পূর্বে নিদ্রাগত হয়েছিলেন, তাদের জীবনে উত্থাপিত করা হল।
53 তাঁরা কবর থেকে বের হয়ে এলেন ও যীশুর পুনরুত্থানের পর পবিত্র নগরে প্রবেশ করলেন এবং বহু মানুষকে দর্শন দিলেন।
54 তখন সেই শত-সেনাপতি ও যারা তার সঙ্গে যীশুকে পাহারা দিচ্ছিল, সেই ভূমিকম্প ও অন্য সব ঘটনা ঘটতে দেখে, তারা আতঙ্কগ্রস্ত হল ও বিস্ময়ে চিৎকার করে উঠল, “নিশ্চিতরূপেই ইনি ঈশ্বরের পুত্র ছিলেন!”
55 সেখানে বহু মহিলাও উপস্থিত ছিলেন, তাঁরা দূর থেকে সব লক্ষ্য করছিলেন। তাঁরা যীশুর পরিচর্যার জন্য গালীল থেকে তাঁকে অনুসরণ করে আসছিলেন।
56 তাঁদের মধ্যে ছিলেন মাগ্দালাবাসী মরিয়ম, যাকোব ও যোষির মা মরিয়ম এবং সিবদিয়ের পুত্রদের মা।
57 সন্ধ্যা ঘনিয়ে এলে, সেখানে যোষেফ নামে আরিমাথিয়ার এক ধনী ব্যক্তি উপস্থিত হলেন। তিনি নিজেও যীশুর শিষ্য হয়েছিলেন।
58 পীলাতের কাছে গিয়ে তিনি যীশুর দেহটি চাইলেন, পীলাত তা তাঁকে দেওয়ার আদেশ দিলেন।
59 যোষেফ সেই দেহটি নিয়ে পরিষ্কার লিনেন কাপড়ে জড়ালেন
60 ও পাথরে খোদাই করা তাঁর নিজের নতুন সমাধি গৃহে তা রাখলেন। তিনি সমাধির প্রবেশপথে একটি বড়ো পাথর গড়িয়ে দিয়ে সেখান থেকে চলে গেলেন।
61 সেখানে মাগ্দালাবাসী মরিয়ম ও অন্য মরিয়ম কবরের উল্টোদিকে বসেছিলেন।
62 পরের দিন, অর্থাৎ প্রস্তুতি-দিনের পরদিন, প্রধান যাজকেরা ও ফরিশীরা পীলাতের কাছে গেল।
63 তারা বলল, “মহাশয়, আমাদের মনে পড়ছে, সেই প্রবঞ্চক জীবিত থাকাকালীন বলেছিল, ‘তিন দিন পরে আমি আবার উত্থিত হব।’
64 সেই কারণে, তিন দিন পর্যন্ত সমাধিটি পাহারা দিতে আদেশ দিন, তা না হলে, তাঁর শিষ্যেরা এসে সেই দেহ চুরি করে নিয়ে যাবে ও লোকদের বলবে যে তিনি মৃতলোক থেকে জীবিত হয়ে উঠেছেন। তাহলে শেষের এই প্রতারণা প্রথমের থেকে আরও গুরুতর হবে।”
65 পীলাত উত্তর দিলেন, “তোমরা পাহারা দাও। গিয়ে সমাধি যতটা সুরক্ষিত রাখতে পারো, তোমরা তাই করো।”
66 তাই তারা গেল, সেই পাথরটি মোহরাঙ্কিত করে সমাধি সুরক্ষিত করল ও প্রহরীদের নিযুক্ত করল।