< মথি 22 >
1 যীশু পুনরায় তাদের সঙ্গে রূপকের মাধ্যমে কথা বলতে লাগলেন। তিনি বললেন,
2 “স্বর্গরাজ্য এমন এক রাজার মতো যিনি তাঁর পুত্রের বিবাহভোজের আয়োজন করলেন।
3 তিনি আমন্ত্রিত ব্যক্তিদের বিবাহভোজে আসার জন্য আহ্বান করতে তাঁর দাসদের পাঠালেন, কিন্তু তারা আসতে চাইল না।
4 “তারপর তিনি আরও অনেক দাসকে পাঠিয়ে বললেন, ‘আমন্ত্রিত লোকদের গিয়ে বলো, আমি আমার ভোজ প্রস্তুত করেছি: আমার বলদ ও মোটাসোটা বাছুরদের জবাই করা হয়েছে এবং সবকিছুই প্রস্তুত আছে। তোমরা সবাই বিবাহভোজে এসো।’
5 “কিন্তু তারা কোনও আগ্রহ না দেখিয়ে নিজের নিজের কাজে চলে গেল—একজন তার মাঠে, অন্যজন তার ব্যবসায়।
6 অবশিষ্ট লোকেরা তার দাসদের ধরে তাদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করল ও তাদের হত্যা করল।
7 রাজা ভীষণ ক্রুদ্ধ হলেন। তিনি তাঁর সৈন্যদল পাঠিয়ে সেইসব হত্যাকারীদের ধ্বংস করলেন ও তাদের নগর পুড়িয়ে দিলেন।
8 “তারপর তিনি তাঁর দাসদের বললেন, ‘বিবাহভোজ তো প্রস্তুত, কিন্তু যাদের আমি নিমন্ত্রণ করেছিলাম, তারা এর যোগ্য ছিল না।
9 তোমরা পথের কোণে কোণে যাও এবং যারই সন্ধান পাও, তাকে বিবাহভোজে আমন্ত্রণ করো।’
10 অতএব দাসেরা পথের কোণে কোণে গেল ও তারা যত লোকের সন্ধান পেল, ভালোমন্দ সবাইকে ডেকে একত্র করল। এইভাবে বিবাহের আসর অতিথিতে ভরে গেল।
11 “কিন্তু রাজা যখন অতিথিদের দেখতে এলেন, তিনি লক্ষ্য করলেন, একজন বিবাহ-পোশাক না পরেই সেখানে উপস্থিত ছিল।
12 তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, ‘বন্ধু, বিবাহ-পোশাক ছাড়াই তুমি কীভাবে এখানে প্রবেশ করলে?’ লোকটি নিরুত্তর রইল।
13 “রাজা তখন পরিচারকদের বললেন, ‘ওর হাত পা বেঁধে বাইরের অন্ধকারে ফেলে দাও। সেখানে রোদন ও দন্তঘর্ষণ হবে।’
14 “কারণ বহু জন আমন্ত্রিত, কিন্তু অল্প কয়েকজনই মনোনীত।”
15 তখন ফরিশীরা বাইরে গিয়ে ষড়যন্ত্র করল, কীভাবে যীশুকে কথার ফাঁদে ফেলতে পারে।
16 তারা কয়েকজন হেরোদীয়ের সঙ্গে তাদের শিষ্যদের তাঁর কাছে পাঠাল। তারা বলল, “গুরুমহাশয়, আমরা জানি, আপনি একজন সত্যনিষ্ঠ মানুষ এবং আপনি সত্য অনুযায়ী ঈশ্বরের পথের বিষয়ে শিক্ষা দেন। আপনি কারও দ্বারা প্রভাবিত হন না, কারণ তাদের কারও বিষয়ে আপনি কোনো ভ্রূক্ষেপ করেন না।
17 বেশ, আমাদের বলুন, আপনার অভিমত কী, কৈসরকে কর দেওয়া কি উচিত?”
18 কিন্তু যীশু তাদের মন্দ অভিসন্ধি বুঝতে পেরে বললেন, “ভণ্ডেরা, তোমরা কেন আমাকে ফাঁদে ফেলার চেষ্টা করছ?
19 সেই কর প্রদানের মুদ্রা আমাকে দেখাও।” তারা তাঁর কাছে একটি দিনার নিয়ে এল।
20 তিনি তাদের জিজ্ঞাসা করলেন, “এই মূর্তি কার? এই নামই বা কার?”
21 তারা উত্তর দিল, “কৈসরের।” তখন তিনি তাদের বললেন, “কৈসরের যা, তা কৈসরকে দাও, এবং যা ঈশ্বরের, তা ঈশ্বরকে দাও।”
22 একথা শুনে তারা আশ্চর্য হল। তাই তারা তাঁকে ছেড়ে চলে গেল।
23 সেদিনই সদ্দূকীরা, যারা বলে পুনরুত্থান বলে কিছু নেই, তাঁর কাছে এক প্রশ্ন নিয়ে এল।
24 তারা বলল, “গুরুমহাশয়, মোশি আমাদের বলেছেন, কোনো মানুষ যদি অপুত্রক মারা যায়, তাহলে তার ভাই সেই বিধবাকে বিবাহ করবে ও তার বড়ো ছেলের জন্য সন্তানের জন্ম দেবে।
25 এখন, আমাদের মধ্যে সাত ভাই ছিল। প্রথমজন বিবাহ করে মারা গেল, আর যেহেতু সে অপুত্রক ছিল, সে তার ভাইয়ের জন্য স্ত্রীকে রেখে গেল।
26 একই ঘটনা দ্বিতীয়, তৃতীয়, এমনকি সপ্তমজন পর্যন্ত ঘটল।
27 শেষে সেই নারীও মারা গেল।
28 তাহলে পুনরুত্থানে সে সাতজনের মধ্যে কার স্ত্রী হবে, কারণ তারা সবাই তো তাকে বিবাহ করেছিল?”
29 যীশু উত্তর দিলেন, “তোমরা ভুল করছ, কারণ তোমরা শাস্ত্র জানো না, ঈশ্বরের পরাক্রমও জানো না।
30 পুনরুত্থানের পর লোকেরা বিবাহ করে না, বা তাদের বিবাহ দেওয়াও হয় না। তারা স্বর্গলোকের দূতদের মতো থাকে।
31 কিন্তু মৃতদের পুনরুত্থান সম্পর্কে বলি, ঈশ্বর তোমাদের কী বলেছেন, তা কি তোমরা পাঠ করোনি?
32 তিনি বলেছেন, ‘আমি অব্রাহামের ঈশ্বর, ইস্হাকের ঈশ্বর ও যাকোবের ঈশ্বর।’ তিনি মৃতদের ঈশ্বর নন, তিনি জীবিতদের ঈশ্বর।”
33 সকলে যখন একথা শুনল, তারা তাঁর উপদেশে চমৎকৃত হল।
34 যীশু সদ্দূকীদের নিরুত্তর করেছেন শুনে ফরিশীরা একত্র হল।
35 তাদের মধ্যে অন্যতম, একজন বিধানবিশারদ, এই প্রশ্ন করে তাঁকে পরীক্ষা করল:
36 “গুরুমহাশয়, বিধানের মধ্যে সর্বাপেক্ষা মহৎ আজ্ঞা কোনটি?”
37 যীশু উত্তর দিলেন: “‘তুমি তোমার সমস্ত হৃদয়, তোমার সমস্ত প্রাণ ও তোমার সমস্ত মন দিয়ে তোমার ঈশ্বর সদাপ্রভুকে প্রেম করবে।’
38 এটিই প্রথম ও মহত্তম আজ্ঞা।
39 আর দ্বিতীয়টি এরই সমতুল্য: ‘তোমার প্রতিবেশীকে তোমার নিজের মতোই প্রেম করবে।’
40 এই দুটি আজ্ঞার উপরেই সমস্ত বিধান ও ভাববাদীদের গ্রন্থ প্রতিষ্ঠিত।”
41 ফরিশীরা যখন সমবেত হয়েছিল, যীশু তাদের প্রশ্ন করলেন,
42 “খ্রীষ্ট সম্পর্কে তোমাদের কী মনে হয়? তিনি কার সন্তান?” তারা উত্তর দিল, “তিনি দাউদের সন্তান।”
43 তিনি তাদের বললেন, “তাহলে দাউদ কীভাবে আত্মার আবেশে তাঁকে ‘প্রভু’ বলেন? কারণ তিনি বলেছেন,
44 “‘প্রভু আমার প্রভুকে বললেন, আমার ডানদিকে এসে বসো, যে পর্যন্ত তোমার শত্রুদের আমি তোমার পদতলে না রাখি।’
45 যদি দাউদ তাঁকে ‘প্রভু’ বলে অভিহিত করেছেন, তাহলে কীভাবে তিনি তাঁর সন্তান হতে পারেন?”
46 প্রত্যুত্তরে তারা কেউ একটি কথাও বলতে পারল না। সেদিন থেকে আর কেউ তাঁকে কোনও প্রশ্ন করতে সাহস পেল না।