< মার্ক 7 >
1 জেরুশালেম থেকে কয়েকজন ফরিশী ও শাস্ত্রবিদ এসে যীশুর চারপাশে জড়ো হল।
2 তারা দেখল, তাঁর কয়েকজন শিষ্য অশুচি হাতে, অর্থাৎ হাত না ধুয়ে খাবার গ্রহণ করছে।
3 (ফরিশীরা ও সমগ্র ইহুদি সমাজ প্রাচীনদের নিয়ম অনুসারে সংস্কারগতভাবে হাত না ধুয়ে খাবার গ্রহণ করত না।
4 হাটবাজার থেকে ফিরে এসে তারা স্নান না করে খাবার খেতো না। আরও বহু প্রথা তারা পালন করত, যেমন ঘটি, কলশি ও বিভিন্ন পাত্র পরিষ্কার করা।)
5 সেই কারণে ফরিশীরা ও শাস্ত্রবিদরা যীশুকে জিজ্ঞাসা করল, “আপনার শিষ্যেরা প্রাচীনদের প্রথা অনুসরণ না করে অশুচি হাতেই খাবার খাচ্ছে কেন?”
6 তিনি উত্তর দিলেন, “ভণ্ডের দল! যিশাইয় তোমাদের সম্পর্কে সঠিক ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন: যেমন লেখা আছে: “‘এই লোকেরা তাদের ওষ্ঠাধরে আমাকে সম্মান করে, কিন্তু তাদের হৃদয় থাকে আমার থেকে বহুদূরে।
7 বৃথাই তারা আমার উপাসনা করে, তাদের শিক্ষামালা বিভিন্ন মানুষের শেখানো নিয়মবিধি মাত্র।’
8 তোমরা ঈশ্বরের আদেশ উপেক্ষা করে মানুষের প্রথা আঁকড়ে আছ।”
9 তিনি তাদের আরও বললেন, “তোমাদের নিজস্ব প্রথা পালন করার উদ্দেশ্যে ঈশ্বরের আদেশ এক পাশে সরিয়ে রাখার এক সুন্দর উপায় তোমাদের আছে।
10 মোশি বলেছেন, তোমার বাবা ও তোমার মাকে সম্মান কোরো, এবং ‘যে কেউ তার বাবা অথবা মাকে অভিশাপ দেয়, তার অবশ্যই প্রাণদণ্ড হবে।’
11 কিন্তু তোমরা বলে থাকো, কেউ যদি তার বাবা অথবা মাকে বলে, ‘আমার কাছ থেকে যে সাহায্য তোমরা পেতে পারতে, তা কর্বান,’ (অর্থাৎ ঈশ্বরকে দেওয়া হয়েছে)—
12 তাহলে তাকে তার বাবা অথবা মার জন্য আর কিছুই করতে দাও না।
13 এইভাবে প্রথা অনুসরণ করতে গিয়ে তোমরা ঈশ্বরের বাক্য নিষ্ফল করছ। এই ধরনের আরও অনেক কাজ তোমরা করে থাকো।”
14 যীশু আবার সব লোককে তাঁর কাছে ডেকে বললেন, “তোমরা সকলে শোনো আর একথা বুঝে নাও,
15 বাইরে থেকে কোনো কিছু মানুষের ভিতরে প্রবেশ করে তাকে অশুচি করতে পারে না।
16 বরং মানুষের ভিতর থেকে যা বের হয়ে আসে, তাই তাকে অশুচি করে। যদি কারোর শোনার কান থাকে, তবে সে শুনুক।”
17 লোকদের ছেড়ে দিয়ে যীশু এসে ঘরে প্রবেশ করলে তাঁর শিষ্যেরা তাঁকে এই রূপকটি সম্বন্ধে জিজ্ঞাসা করলেন।
18 তিনি প্রশ্ন করলেন, “তোমরা কি এতই অবোধ? তোমরা কি বোঝো না যে, বাইরে থেকে যা মানুষের ভিতরে প্রবেশ করে, তা তাকে অশুচি করতে পারে না?
19 কারণ সেটা তার অন্তরে প্রবেশ করে না, কিন্তু পাকস্থলীতে প্রবেশ করে, তারপর তার শরীর থেকে বের হয়ে যায়।” (একথা বলে যীশু ঘোষণা করলেন যে, সব খাদ্যদ্রব্যই শুচিশুদ্ধ।)
20 তিনি আরও বললেন, “মানুষের ভিতর থেকে যা বের হয়ে আসে, তাই তাকে অশুচি করে।
21 কারণ ভিতর থেকে, সব মানুষের হৃদয় থেকে নির্গত হয় কুচিন্তা, বিবাহ-বহির্ভূত যৌনাচার, চুরি, নরহত্যা, ব্যভিচার,
22 লোভ-লালসা, অপরের অনিষ্ট কামনা, প্রতারণা, অশ্লীলতা, ঈর্ষা, কুৎসা-রটনা, ঔদ্ধত্য ও কাণ্ডজ্ঞানহীনতা।
23 এই সমস্ত মন্দ বিষয় ভিতর থেকে আসে ও মানুষকে অশুচি করে।”
24 যীশু সেই অঞ্চল ত্যাগ করে টায়ার ও সীদোনের কাছাকাছি স্থানে গেলেন। তিনি একটি বাড়িতে প্রবেশ করলেন, কিন্তু চাইলেন, কেউ যেন সেকথা জানতে না পারে। তবুও তিনি তাঁর উপস্থিতি গোপন রাখতে পারলেন না।
25 প্রকৃতপক্ষে একজন নারী, যেই তাঁর কথা শুনতে পেল, এসে তাঁর চরণে লুটিয়ে পড়ল। তার মেয়ে ছিল ছোটো অথচ অশুচি-আত্মাগ্রস্ত ছিল।
26 সেই নারী ছিল জাতিতে গ্রিক, তার জন্ম সাইরো-ফিনিশিয়া অঞ্চলে। সে তার মেয়ের ভিতর থেকে ভূত বের করার জন্য যীশুর কাছে মিনতি করল।
27 তিনি তাকে বললেন, “প্রথমে ছেলেমেয়েরা পরিতৃপ্ত হোক, কারণ ছেলেমেয়েদের খাবার নিয়ে কুকুরদের দেওয়া সংগত নয়।”
28 সে উত্তর দিল, “হ্যাঁ প্রভু, কিন্তু কুকুরও তো টেবিলের নিচে থেকে ছেলেমেয়েদের রুটির টুকরো খেতে পায়!”
29 তখন তিনি তাকে বললেন, “এ ধরনের উত্তর দিয়েছ বলে, তুমি চলে যাও, ভূত তোমার মেয়েকে ছেড়ে চলে গেছে।”
30 সে বাড়ি গিয়ে দেখল, তার মেয়ে বিছানায় শুয়ে আছে ও ভূত তাকে ছেড়ে চলে গেছে।
31 এরপর যীশু টায়ারের সন্নিহিত সেই অঞ্চল ত্যাগ করে সীদোনের মধ্য দিয়ে গালীল সাগরের কাছে গেলেন। যাওয়ার সময় তিনি ডেকাপলি হয়েই গেলেন।
32 সেখানে কয়েকজন লোক এক কালা ও তোৎলা ব্যক্তিকে তাঁর কাছে নিয়ে এল। সে ভালো করে কথা বলতে পারত না। তারা তার উপর হাত রেখে প্রার্থনা করার জন্য যীশুকে মিনতি করল।
33 তখন তিনি সকলের মধ্য থেকে সেই ব্যক্তিকে এক পাশে নিয়ে গেলেন। তিনি তার দুই কানে আঙুল রাখলেন, থুতু ফেললেন ও তার জিভ স্পর্শ করলেন।
34 আর তিনি স্বর্গের দিকে ঊর্ধ্বদৃষ্টি করে দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন, “ইপফাথা!” (যার অর্থ, “খুলে যাক!”)।
35 এতে সেই লোকটির দুই কান খুলে গেল, তার জিভ জড়তামুক্ত হল এবং সে স্পষ্টভাবে কথা বলতে লাগল।
36 সেকথা কাউকে না বলার জন্য যীশু তাদের আদেশ দিলেন। কিন্তু তিনি যতই নিষেধ করলেন, তারা ততই সেকথা প্রচার করতে লাগল।
37 লোকে বিস্ময়ে অভিভূত হয়ে বলতে লাগল, “তিনি সবকিছুই সুন্দররূপে সম্পন্ন করেছেন, এমনকি, কালাকে শোনার শক্তি ও বোবাকে কথা বলার শক্তি দান করেছেন।”