< মার্ক 10 >
1 যীশু এরপর সেই স্থান ত্যাগ করে যিহূদিয়া অঞ্চলে ও জর্ডন নদীর অপর পারে গেলেন। আবার তাঁর কাছে লোকেরা ভিড় করতে লাগল, আর তিনি তাঁর রীতি অনুযায়ী তাদের শিক্ষা দিলেন।
2 কয়েকজন ফরিশী এসে তাঁকে পরীক্ষা করার উদ্দেশ্যে প্রশ্ন করল, “কোনো পুরুষের পক্ষে তার স্ত্রীকে পরিত্যাগ করা কি বিধিসংগত?”
3 তিনি উত্তর দিলেন, “মোশি তোমাদের কি আদেশ দিয়েছেন?”
4 তারা বলল, “মোশি পুরুষকে একটি ত্যাগপত্র লিখে দিয়ে তার স্ত্রীকে পরিত্যাগ করার অনুমতি দিয়েছেন।”
5 যীশু উত্তর দিলেন, “তোমাদের হৃদয় কঠোর বলেই মোশি এই বিধানের কথা লিখে গিয়েছেন।
6 কিন্তু সৃষ্টির সূচনায় ঈশ্বর তাদের পুরুষ ও নারী—এভাবেই সৃষ্টি করেছিলেন।
7 আর এই কারণে একজন পুরুষ তার পিতা ও মাতাকে ত্যাগ করবে, তার স্ত্রীর সাথে সংযুক্ত হবে
8 ও সেই দুজন একাঙ্গ হবে। তাই, তারা আর দুজন নয়, কিন্তু অভিন্নসত্তা।
9 সেই কারণে, ঈশ্বর যা সংযুক্ত করেছেন, কোনো মানুষ তা বিচ্ছিন্ন না করুক।”
10 তাঁরা আবার ঘরের মধ্যে প্রবেশ করলে তাঁর শিষ্যেরা যীশুকে এ বিষয়ে জিজ্ঞাসা করলেন।
11 তিনি উত্তর দিলেন, “যে নিজের স্ত্রীকে ত্যাগ করে অন্য নারীকে বিবাহ করে, সে তার বিরুদ্ধে ব্যভিচার করে।
12 আর নারী যদি তার স্বামীকে পরিত্যাগ করে অন্য পুরুষকে বিবাহ করে, সেও ব্যভিচার করে।”
13 লোকেরা ছোটো শিশুদের যীশুর কাছে নিয়ে আসছিল, যেন তিনি তাদের স্পর্শ করেন। কিন্তু শিষ্যেরা তাদের ধমক দিলেন।
14 যীশু তা দেখে রুষ্ট হলেন। তিনি তাঁদের বললেন, “ছোটো শিশুদের আমার কাছে আসতে দাও, ওদের বাধা দিয়ো না। কারণ ঈশ্বরের রাজ্য এদের মতো মানুষদেরই।
15 আমি তোমাদের সত্যিই বলছি, ছোটো শিশুর মতো যে ঈশ্বরের রাজ্যকে গ্রহণ করতে পারে না, সে কখনও তাতে প্রবেশ করতে পারবে না।”
16 পরে তিনি সেই শিশুদের কোলে নিয়ে তাদের উপরে হাত রাখলেন ও তাদের আশীর্বাদ করলেন।
17 যীশু তাঁর পথ চলা শুরু করলে, একজন যুবক দৌড়ে তাঁর কাছে এল। সে তাঁর সামনে নতজানু হয়ে জিজ্ঞাসা করল, “সৎ গুরু, অনন্ত জীবনের অধিকারী হওয়ার জন্য আমাকে কী করতে হবে?” (aiōnios )
18 যীশু উত্তর দিলেন, “তুমি আমাকে সৎ বলছ কেন? একমাত্র ঈশ্বর ছাড়া আর কেউ সৎ নয়।
19 তুমি আজ্ঞাগুলি নিশ্চয় জানো, ‘নরহত্যা কোরো না, ব্যভিচার কোরো না, চুরি কোরো না, মিথ্যা সাক্ষ্য দিয়ো না, প্রতারণা কোরো না, তোমার বাবাকে ও তোমার মাকে সম্মান কোরো।’”
20 সে ঘোষণা করল, “গুরুমহাশয়, এসবই আমি বাল্যকাল থেকে পালন করে আসছি।”
21 যীশু তার দিকে তাকালেন ও তাকে প্রেম করলেন। তিনি বললেন, “একটি বিষয়ে তোমার ঘাটতি আছে। তুমি যাও, গিয়ে তোমার যা কিছু আছে, সর্বস্ব বিক্রি করে দরিদ্রদের মধ্যে বিলিয়ে দাও, তাহলে তুমি স্বর্গে ধনসম্পত্তি লাভ করবে। তারপর এসে আমাকে অনুসরণ করো।”
22 এতে সেই লোকটির মুখ ম্লান হয়ে গেল। সে দুঃখিত মনে চলে গেল, কারণ তার বিপুল ধনসম্পত্তি ছিল।
23 যীশু চারদিকে তাকিয়ে তাঁর শিষ্যদের বললেন, “ধনী মানুষের পক্ষে ঈশ্বরের রাজ্যে প্রবেশ করা কত কঠিন!”
24 শিষ্যেরা তাঁর কথা শুনে বিস্মিত হলেন। কিন্তু যীশু আবার বললেন, “বৎসেরা, যারা ধনসম্পদে নির্ভর করে, তাদের পক্ষে ঈশ্বরের রাজ্যে প্রবেশ করা কেমন কঠিন!
25 ধনী মানুষের পক্ষে ঈশ্বরের রাজ্যে প্রবেশ করার চেয়ে বরং সুচের ছিদ্রপথ দিয়ে উটের পার হওয়া সহজ।”
26 শিষ্যেরা তখন আরও বেশি বিস্মিত হয়ে পরস্পরকে বললেন, “তাহলে কে পরিত্রাণ পেতে পারে?”
27 যীশু তাদের দিকে তাকিয়ে বললেন, “মানুষের পক্ষে এ অসম্ভব, কিন্তু ঈশ্বরের কাছে নয়। ঈশ্বরের পক্ষে সবকিছুই সম্ভব।”
28 পিতর তাঁকে বললেন, “আপনাকে অনুসরণ করার জন্য আমরা সবকিছু ত্যাগ করেছি।”
29 যীশু উত্তর দিলেন, “আমি তোমাদের সত্যিই বলছি, এমন কেউ নেই, যে আমার ও সুসমাচারের জন্য নিজের বাড়িঘর, ভাইবোন, মা-বাবা, সন্তানসন্ততি, কি জমিজায়গা ত্যাগ করেছে, অথচ বর্তমান কালে তার শতগুণ ফিরে পাবে না।
30 সে এই জীবনেই বাড়িঘর, ভাইবোন, মা-বাবা, সন্তানসন্ততি ও জমিজায়গা লাভ করবে ও সেই সঙ্গে নির্যাতন ভোগ করবে। কিন্তু ভাবীকালে অনন্ত জীবন লাভ করবে। (aiōn , aiōnios )
31 কিন্তু অনেকেই, যারা প্রথমে আছে, তারা শেষে হবে, আর যারা পিছনে আছে, তারা প্রথমে হবে।”
32 তাঁরা জেরুশালেমের পথে যাচ্ছিলেন। যীশু ছিলেন সবার সামনে। শিষ্যেরা এতে বিস্মিত হলেন ও যারা অনুসরণ করছিল, তারা ভয় পেল। তিনি আবার সেই বারোজনকে এক পাশে ডেকে নিয়ে, তাঁর প্রতি কী ঘটতে চলেছে তা বললেন।
33 তিনি বললেন, “আমরা জেরুশালেম পর্যন্ত যাচ্ছি। আর মনুষ্যপুত্রকে প্রধান যাজকদের ও শাস্ত্রবিদদের হাতে সমর্পণ করা হবে। তারা তাঁকে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত করবে ও অইহুদিদের হাতে তুলে দেবে।
34 তারা তাঁকে বিদ্রুপ করবে, তাঁর গায়ে থুতু দেবে, চাবুক দিয়ে মারবে ও তাঁকে হত্যা করবে। তিন দিন পরে, তিনি আবার মৃত্যু থেকে পুনরুত্থিত হবেন।”
35 তারপর, সিবদিয়ের পুত্র যাকোব ও যোহন তাঁর কাছে এলেন। তাঁরা বললেন, “গুরুমহাশয়, আমরা যা চাই, আপনি আমাদের জন্য তা করুন।”
36 তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, “তোমরা কী চাও? আমি তোমাদের জন্য কী করব?”
37 তাঁরা উত্তর দিলেন, “আপনি মহিমা লাভ করলে আমাদের একজনকে আপনার ডানদিকে, আর একজনকে আপনার বাঁদিকে বসতে দেবেন।”
38 যীশু বললেন, “তোমরা কী চাইছ, তা তোমরা জানো না। আমি যে পেয়ালায় পান করি, তাতে তোমরা কি পান করতে পারো? অথবা যে বাপ্তিষ্মে আমি বাপ্তিষ্ম লাভ করি, তাতে কি তোমরা বাপ্তিষ্ম নিতে পারো?”
39 তাঁরা উত্তর দিলেন, “আমরা পারি।” যীশু তাঁদের বললেন, “আমি যে পেয়ালায় পান করি, তাতে তোমরা পান করবে এবং আমি যে বাপ্তিষ্মে বাপ্তিষ্ম লাভ করি, তোমরাও সেই বাপ্তিষ্মে বাপ্তিষ্ম লাভ করবে।
40 কিন্তু, আমার ডানদিকে বা বাঁদিকে বসতে দেওয়ার অধিকার আমার নেই। এই স্থান তাদের জন্য, যাদের জন্য সেগুলি প্রস্তুত করা হয়েছে।”
41 অন্য দশজন একথা শুনে যাকোব ও যোহনের প্রতি রুষ্ট হলেন।
42 যীশু তাঁদের কাছে ডেকে বললেন, “তোমরা জানো যে, যারা অন্য জাতির শাসক বলে পরিচিত, তারা তাদের উপরে প্রভুত্ব করে। আবার তাদের উচ্চপদস্থ কর্মচারীরা সেই শাসকদের উপরে কর্তৃত্ব করে।
43 তোমাদের ক্ষেত্রে সেরকম হবে না। বরং, কেউ যদি তোমাদের মধ্যে মহান হতে চায়, তাকে অবশ্যই তোমাদের দাস হতে হবে।
44 আর যে প্রধান হতে চায়, সে অবশ্যই সকলের ক্রীতদাস হবে।
45 কারণ, এমনকি, মনুষ্যপুত্রও সেবা পেতে আসেননি, কিন্তু সেবা করতে ও অনেকের পরিবর্তে নিজের প্রাণ মুক্তিপণস্বরূপ দিতে এসেছেন।”
46 এরপর তাঁরা যিরীহোতে এলেন। যীশু ও তাঁর শিষ্যেরা যখন অনেক লোকের সঙ্গে নগর ত্যাগ করে চলে যাচ্ছেন, তখন বরতীময় নামে এক ব্যক্তি পথের ধারে বসে ভিক্ষা করছিল। সে ছিল তীময়ের পুত্র।
47 যখন সে শুনতে পেল, তিনি নাসরতের যীশু, সে চিৎকার করে বলতে লাগল, “দাউদ-সন্তান যীশু, আমার প্রতি কৃপা করুন।”
48 অনেকে তাকে ধমক দিল ও চুপ করতে বলল, কিন্তু সে আরও বেশি চিৎকার করে বলতে লাগল, “হে দাউদের সন্তান, আমার প্রতি কৃপা করুন।”
49 যীশু থেমে বললেন, “ওকে ডাকো।” তাই তারা সেই অন্ধ লোকটিকে ডেকে বলল, “ওহে, সাহস করো, ওঠো, তিনি তোমাকে ডাকছেন!”
50 সে তার নিজের পোশাক একদিকে ছুঁড়ে ফেলে তার পায়ে লাফ দিয়ে উঠে দাঁড়াল ও যীশুর কাছে এল।
51 যীশু তাকে জিজ্ঞাসা করলেন, “তুমি কী চাও, আমি তোমার জন্য কী করব?” অন্ধ লোকটি বলল, “রব্বি, আমি যেন দেখতে পাই।”
52 যীশু বললেন, “যাও, তোমার বিশ্বাসই তোমাকে সুস্থ করেছে।” তখনই সে তার দৃষ্টিশক্তি লাভ করল ও সেই পথে যীশুকে অনুসরণ করল।