< লুক 22 >
1 তখন, নিস্তারপর্ব নামে পরিচিত খামিরবিহীন রুটির পর্ব ক্রমশ এগিয়ে আসছিল।
2 আর প্রধান যাজকেরা ও শাস্ত্রবিদরা যীশুর হাত থেকে নিষ্কৃতি পাওয়ার পথ খুঁজছিল, কারণ তারা জনসাধারণকে ভয় করত।
3 শয়তান তখন সেই বারোজনের অন্যতম, ইষ্কারিয়োৎ নামে পরিচিত যিহূদার অন্তরে প্রবেশ করল।
4 যিহূদা প্রধান যাজকবর্গ ও মন্দিরের পাহারায় নিযুক্ত পদস্থ কর্মচারীদের কাছে গিয়ে, কীভাবে যীশুকে ধরিয়ে দেবে, তা নিয়ে আলোচনা করল।
5 তারা আনন্দিত হয়ে তাকে টাকা দিতে সম্মত হল।
6 সেও তাদের প্রস্তাবে সম্মত হয়ে জনসাধারণের অগোচরে যীশুকে তাদের হাতে তুলে দেওয়ার সুযোগ খুঁজতে লাগল।
7 অবশেষে খামিরবিহীন রুটির পর্বের দিন উপস্থিত হল। সেদিন নিস্তারপর্বের মেষ বলি দিতে হত।
8 যীশু পিতর ও যোহনকে পাঠিয়ে দিয়ে বললেন, “যাও, আমাদের জন্য নিস্তারপর্বের ভোজের আয়োজন করো।”
9 তাঁরা জিজ্ঞাসা করলেন, “আপনি কী চান? আমরা কোথায় এর আয়োজন করব?”
10 তিনি উত্তর দিলেন, “তোমরা নগরে প্রবেশ করেই দেখতে পাবে, এক ব্যক্তি জলের একটি কলশি নিয়ে যাচ্ছে। তোমরা তাকে অনুসরণ করে যে বাড়িতে সে প্রবেশ করবে, সেখানে যেয়ো।
11 তোমরা সেই বাড়ির কর্তাকে বোলো, ‘গুরুমহাশয় জানতে চান, অতিথিদের জন্য নির্দিষ্ট ঘরটি কোথায়, যেখানে আমি আমার শিষ্যদের নিয়ে নিস্তারপর্বের ভোজ গ্রহণ করতে পারি?’
12 সে তোমাদের উপরতলার একটি সুসজ্জিত বড়ো ঘর দেখাবে। সেখানেই সব আয়োজন কোরো।”
13 তাঁরা বেরিয়ে পড়ে যীশুর কথামতো সবকিছুই দেখতে পেলেন এবং নিস্তারপর্বের ভোজ প্রস্তুত করলেন।
14 পরে সময় উপস্থিত হলে যীশু ও প্রেরিতশিষ্যেরা আসনে হেলান দিয়ে বসলেন।
15 আর তিনি তাঁদের বললেন, “যন্ত্রণাভোগের আগে আমি তোমাদের সঙ্গে নিস্তারপর্বের ভোজ গ্রহণ করার জন্য সাগ্রহে প্রতীক্ষা করেছি।
16 কারণ আমি তোমাদের বলছি, ঈশ্বরের রাজ্যে এই ভোজের উদ্দেশ্য বাস্তবায়িত না হওয়া পর্যন্ত, আমি আর এই ভোজ গ্রহণ করব না।”
17 পরে তিনি পানপাত্র তুলে নিয়ে ধন্যবাদ দিলেন। তারপর বললেন, “এটি নাও ও তোমাদের মধ্যে ভাগ করো।
18 আমি তোমাদের বলছি, ঈশ্বরের রাজ্যের আগমন না হওয়া পর্যন্ত আমি আর দ্রাক্ষারস পান করব না।”
19 তাপর তিনি রুটি নিলেন, ধন্যবাদ দিলেন ও ভেঙে তাঁদের দিলেন, আর বললেন, “এই হল আমার শরীর যা তোমাদের জন্য উৎসর্গীকৃত; আমার স্মরণার্থে তোমরা এরকম কোরো।”
20 একইভাবে, খাবারের পরে তিনি পানপাত্র নিয়ে বললেন, “এই পানপাত্র আমার রক্তে নতুন নিয়ম, যা তোমাদেরই জন্য পাতিত হয়েছে।
21 কিন্তু যে আমার সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করবে, তার হাত আমারই সঙ্গে টেবিলের উপরে আছে।
22 মনুষ্যপুত্র তাঁর নির্ধারিত পথেই এগিয়ে যাবেন, কিন্তু ধিক্ সেই ব্যক্তিকে, যে মনুষ্যপুত্রের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করবে!”
23 তাঁরা পরস্পরকে জিজ্ঞাসা করতে লাগলেন যে, তাদের মধ্যে কে এমন কাজ করতে পারে!
24 আর তাঁদের মধ্যে কে শ্রেষ্ঠ, এ নিয়েও একটি বিতর্ক দেখা দিল।
25 যীশু তাঁদের বললেন, “অন্য অন্য জাতির রাজা তাদের প্রজাদের উপরে প্রভুত্ব করে; আর যারা তাদের উপরে কর্তৃত্ব করে, তারা নিজেদের হিতার্থী বলে অভিহিত করে।
26 কিন্তু তোমরা সেরকম হোয়ো না। বরং, তোমাদের মধ্যে যে শ্রেষ্ঠ, তাকে হতে হবে যে সবচেয়ে ছোটো তার মতো, আর প্রশাসককে হতে হবে সেবকের মতো।
27 কারণ শ্রেষ্ঠ কে? যে খাবার খেতে বসে সে, না, যে পরিবেশন করে, সে? যে খাবার খেতে বসে, সেই নয় কি? কিন্তু আমি তোমাদের মধ্যে সেবকের মতো আছি।
28 আমার পরীক্ষার দিনগুলিতে তোমরা বরাবর আমার সঙ্গে আছ।
29 আমার পিতা যেমন আমাকে একটি রাজ্য অর্পণ করেছেন, আমিও তেমনই তোমাদের জন্য একটি রাজ্য নিরূপণ করছি,
30 যেন তোমরা আমার রাজ্যে আমারই সঙ্গে বসে খাওয়াদাওয়া করতে ও সিংহাসনে বসে ইস্রায়েলের বারো গোষ্ঠীর বিচার করতে পারো।
31 “শিমোন, শিমোন, শয়তান তোমাদেরকে গমের মতো ঝাড়াই করার জন্য অনুমতি চেয়েছে।
32 কিন্তু শিমোন, আমি তোমার জন্য প্রার্থনা করেছি, যেন তোমার বিশ্বাস ব্যর্থ না হয়। আর তুমি যখন ফিরে আসবে, তখন তোমার ভাইদের মধ্যে শক্তি সঞ্চার কোরো।”
33 কিন্তু পিতর উত্তর দিলেন, “প্রভু, আমি আপনার সঙ্গে কারাগারে যেতে ও মৃত্যুবরণ করতেও প্রস্তুত আছি।”
34 যীশু উত্তর দিলেন, “পিতর, আমি তোমাকে বলছি, আজ মোরগ ডাকার আগেই তুমি আমাকে চেনো না বলে তিনবার অস্বীকার করবে।”
35 যীশু তারপর তাঁদের জিজ্ঞাসা করলেন, “আমি যখন তোমাদের টাকার থলি, ঝুলি, বা চটিজুতো ছাড়াই পাঠিয়েছিলাম, তখন তোমরা কি কোনো কিছুর অভাববোধ করেছিলে?” তাঁরা উত্তর দিলেন, “না, কোনো কিছুরই নয়।”
36 তিনি তাঁদের বললেন, “কিন্তু এখন তোমাদের কাছে টাকার থলি থাকলে সঙ্গে নিয়ো, একটি ঝুলিও নিয়ো; যদি তোমাদের তরোয়াল না থাকে, তাহলে পোশাক বিক্রি করে তা কিনে নিয়ো।
37 কারণ লেখা আছে: ‘আর তিনি অপরাধীদের সঙ্গে গণিত হলেন’; আর আমি তোমাদের বলছি, যে লেখা আছে তা আমার জীবনে অবশ্যই পূর্ণ হবে। হ্যাঁ, আমার সম্পর্কে যা লেখা আছে, তার পূর্ণ হতে চলেছে।”
38 শিষ্যেরা বললেন, “প্রভু দেখুন, এখানে দুটি তরোয়াল আছে।” তিনি উত্তর দিলেন, “তাই যথেষ্ট।”
39 পরে যীশু সেখান থেকে বেরিয়ে তাঁর অভ্যাসমতো জলপাই পর্বতে গেলেন এবং তাঁর শিষ্যেরা তাঁকে অনুসরণ করলেন।
40 সেই স্থানে উপস্থিত হয়ে তিনি তাঁদের বললেন, “প্রার্থনা করো, যেন তোমরা প্রলোভনে না পড়ো।”
41 তিনি তাঁদের কাছ থেকে এক-ঢিল ছোঁড়া দূরত্বে গিয়ে নতজানু হয়ে প্রার্থনা করলেন,
42 “পিতা, তোমার ইচ্ছা হলে আমার কাছ থেকে এই পানপাত্র সরিয়ে নাও। তবুও আমার ইচ্ছা নয়, তোমারই ইচ্ছা পূর্ণ হোক।”
43 তখন স্বর্গের এক দূত তাঁর কাছে আবির্ভূত হয়ে তাঁকে শক্তি জোগালেন।
44 নিদারুণ যন্ত্রণায়, তিনি প্রার্থনায় আরও একাগ্র হলেন; তাঁর ঘাম রক্তের বড়ো বড়ো ফোঁটার মতো মাটিতে ঝরে পড়ছিল।
45 প্রার্থনা থেকে উঠে তিনি শিষ্যদের কাছে ফিরে গিয়ে দেখলেন, তাঁরা দুঃখে ভারাক্রান্ত হয়ে ঘুমিয়ে পড়েছেন।
46 তিনি তাদের জিজ্ঞাসা করলেন, “তোমরা ঘুমাচ্ছ কেন? ওঠো, প্রার্থনা করো, যেন তোমরা প্রলোভনে না পড়ো।”
47 তিনি তখনও কথা বলছেন, এমন সময় একদল লোক উঠে এল আর তাদের সঙ্গে এল সেই বারোজনের অন্যতম যিহূদা। সে তাদের নেতৃত্ব দিচ্ছিল। সে চুম্বন করার জন্য যীশুর কাছে এগিয়ে এল।
48 কিন্তু যীশু তাকে জিজ্ঞাসা করলেন, “যিহূদা, তুমি কি চুম্বন করে মনুষ্যপুত্রকে শত্রুদের হাতে সমর্পণ করছ?”
49 যীশুর অনুগামীরা যখন দেখলেন কী ঘটতে যাচ্ছে, তাঁরা বললেন, “প্রভু, আমাদের তরোয়াল দিয়ে কি আঘাত করব?”
50 তাঁদের মধ্যে একজন মহাযাজকের দাসকে আঘাত করে তার ডানদিকের কান কেটে ফেললেন।
51 কিন্তু যীশু উত্তর দিলেন, “এমন যেন আর না ঘটে!” আর তিনি সেই লোকটির কান স্পর্শ করে তাকে সুস্থ করে দিলেন।
52 আর যে প্রধান যাজকবর্গ, মন্দিরের প্রহরীদলের অধ্যক্ষেরা ও প্রাচীনবর্গ যীশুর উদ্দেশে এসেছিল, তিনি তাদের বললেন, “আমি কি বিদ্রোহের নেতৃত্ব দিচ্ছি যে, তোমরা তরোয়াল ও লাঠিসোঁটা নিয়ে এসেছ?
53 আমি মন্দির চত্বরে প্রতিদিনই তোমাদের মধ্যে ছিলাম। তখন তোমরা আমার উপরে হস্তক্ষেপ করোনি। কিন্তু এই হল তোমাদের সুসময়, কারণ এখন অন্ধকারেরই রাজত্ব।”
54 তারা তখন যীশুকে বন্দি করল ও তাঁকে মহাযাজকের বাড়িতে নিয়ে গেল। পিতর দূরত্ব বজায় রেখে অনুসরণ করলেন।
55 কিন্তু উঠানের মাঝখানে তারা যখন আগুন জ্বেলে একসঙ্গে বসল, পিতরও তাদের সঙ্গে বসলেন।
56 একজন দাসী আগুনের আলোয় তাঁকে সেখানে বসে থাকতে দেখল। সে তাঁর দিকে একদৃষ্টে তাকিয়ে বলল, “এই লোকটিও ওর সঙ্গে ছিল।”
57 কিন্তু তিনি অস্বীকার করে বললেন, “নারী, আমি ওঁকে চিনি না।”
58 অল্প কিছুক্ষণ পরে আর একজন তাকে দেখে বলল, “তুমিও ওদের একজন।” পিতর বললেন, “ওহে, আমি নই।”
59 প্রায় এক ঘণ্টা পরে আরও একজন দৃঢ়ভাবে বলল, “নিঃসন্দেহে, এই লোকটিও তাঁর সঙ্গে ছিল, কারণ এ একজন গালীলীয়।”
60 পিতর উত্তর দিলেন, “ওহে, তুমি কী বলছ, আমি বুঝতে পারছি না।” তিনি কথা বলছিলেন, এমন সময় মোরগ ডেকে উঠল।
61 প্রভু মুখ ফিরালেন ও সোজা পিতরের দিকে তাকালেন। তখন প্রভু তাঁকে যে কথা বলেছিলেন, পিতরের তা মনে পড়ল: “আজ মোরগ ডাকার আগেই তুমি আমাকে তিনবার অস্বীকার করবে।”
62 তখন পিতর বাইরে গিয়ে তীব্র কান্নায় ভেঙে পড়লেন।
63 যারা যীশুর পাহারায় নিযুক্ত ছিল, তারা তাঁকে বিদ্রুপ ও মারধর করতে লাগল।
64 তাঁর চোখ বেঁধে দিয়ে তারা জিজ্ঞাসা করল, “ভাববাণী বল দেখি! কে তোকে মারল?”
65 তারা তাঁকে আরও অনেক অপমানসূচক কথা বলল।
66 সকাল হলে সেই জাতির প্রাচীনবর্গ, দুই প্রধান যাজক ও শাস্ত্রবিদদের মন্ত্রণা পরিষদ সমবেত হল। যীশুকে তাদের সামনে হাজির করা হল।
67 তারা বলল, “তুমি যদি সেই খ্রীষ্ট হও, তাহলে আমাদের বলো।” যীশু উত্তর দিলেন, “আমি তোমাদের বললে তোমরা আমাকে বিশ্বাস করবে না।
68 আর আমি যদি তোমাদের প্রশ্ন করি, তোমরাও উত্তর দেবে না।
69 কিন্তু এখন থেকে, মনুষ্যপুত্র সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের ডানদিকে উপবিষ্ট থাকবেন।”
70 তারা সবাই প্রশ্ন করল, “তাহলে, তুমিই কি ঈশ্বরের পুত্র?” তিনি বললেন, “তোমরা ঠিক কথাই বলছ, আমিই তিনি।”
71 তখন তারা বলল, “আমাদের আর সাক্ষ্য-প্রমাণের কী প্রয়োজন? আমরা নিজেরাই তো ওর মুখ থেকে একথা শুনলাম।”