< বিচারকর্ত্তৃগণের বিবরণ 20 >
1 পরে দান থেকে বের-শেবা পর্যন্ত বিস্তৃত এলাকা থেকে এবং গিলিয়দ দেশ থেকে এসে সমগ্র ইস্রায়েল একজন মানুষের মতো ঐক্যবদ্ধ হয়ে মিস্পাতে সদাপ্রভুর সামনে সমবেত হল।
2 ইস্রায়েলের বিভিন্ন গোষ্ঠীর সব লোকজনের নেতারা ঈশ্বরের প্রজাদের জনসমাবেশে 4,00,000 তরোয়ালধারী লোকের মধ্যে তাঁদের স্থান গ্রহণ করলেন।
3 (বিন্যামীন গোষ্ঠীভুক্ত লোকজন শুনেছিল যে ইস্রায়েলীরা মিস্পাতে গিয়েছে) পরে ইস্রায়েলীরা বলল, “আমাদের বলো কীভাবে এই ভয়াবহ ঘটনাটি ঘটল।”
4 অতএব সেই নিহত মহিলাটির স্বামী—সেই লেবীয় লোকটি বলল, “আমি ও আমার উপপত্নী রাত কাটানোর জন্য বিন্যামীনের অন্তর্গত গিবিয়াতে গিয়েছিলাম।
5 রাতের বেলায় গিবিয়ার লোকজন আমাকে ধরার জন্য এসেছিল এবং আমাকে হত্যা করার মতলবে, সেই বাড়িটি ঘিরে ধরেছিল। তারা আমার উপপত্নীকে ধর্ষণ করল, ও সে মরে গেল।
6 আমি আমার উপপত্নীকে নিয়ে, তাকে টুকরো টুকরো করে কেটে ইস্রায়েলের অধিকারভুক্ত প্রত্যেকটি এলাকায় একটি করে টুকরো পাঠিয়ে দিলাম, কারণ তারা ইস্রায়েলের মধ্যে এই নীচ ও জঘন্য কাজটি করেছে।
7 এখন তোমরা, ইস্রায়েলীরা সবাই, চিৎকার করে ওঠো ও আমায় বলো তোমরা কী করার সিদ্ধান্ত নিলে।”
8 সব লোকজন উঠে দাঁড়িয়ে একযোগে বলে উঠল, “আমরা কেউ ঘরে যাব না। না, আমাদের মধ্যে একজনও তার বাড়িতে ফিরে যাবে না।
9 কিন্তু এখন গিবিয়ার প্রতি আমরা যা করব তা হল এই: গুটিকাপাতের মাধ্যমে ক্রম স্থির করে আমরা গিবিয়ার বিরুদ্ধে আক্রমণ চালাব।
10 ইস্রায়েলের সব গোষ্ঠী থেকে প্রতি একশো জনের মধ্যে দশজন, প্রতি 1,000 জনের মধ্যে একশো জন এবং প্রতি 10,000 জনের মধ্যে 1,000 জনকে নিয়ে আমরা তাদের সৈন্যবাহিনীর খাদ্য সরবরাহের জন্য নিযুক্ত করব। পরে, সৈন্যবাহিনী যখন বিন্যামীনের অন্তর্গত গিবিয়াতে পৌঁছাবে, তখন ইস্রায়েলের মধ্যে করা এই জঘন্য কাজের জন্য তারা তাদের উপযুক্ত দণ্ড দেবে।”
11 অতএব ইস্রায়েলীরা সবাই একত্রিত হয়ে সেই নগরটির বিরুদ্ধে একজন মানুষের মতো সংঘবদ্ধ হল।
12 ইস্রায়েলের বিভিন্ন গোষ্ঠী বিন্যামীন গোষ্ঠীভুক্ত এলাকার সর্বত্র লোক মারফত বলে পাঠাল, “তোমাদের মধ্যে এসব কী ভয়াবহ অপকর্ম হয়েছে?
13 এখন গিবিয়ার সেইসব দুর্জন লোককে তোমরা আমাদের হাতে তুলে দাও যেন আমরা তাদের হত্যা করে ইস্রায়েল থেকে দুষ্টাচার লোপ করতে পারি।” কিন্তু বিন্যামীন গোষ্ঠীভুক্ত লোকেরা তাদের স্বজাতীয় ইস্রায়েলীদের কথা শুনতে চাইল না।
14 তাদের নগরগুলি থেকে বেরিয়ে এসে তারা ইস্রায়েলীদের সঙ্গে যুদ্ধ করার জন্য গিবিয়ায় সমবেত হল।
15 অবিলম্বে বিন্যামীন গোষ্ঠীভুক্ত লোকেরা তাদের নগরগুলি থেকে 26,000 তরোয়ালধারী লোক সংগ্রহ করল। এর পাশাপাশি গিবিয়াতে বসবাসকারী লোকদের মধ্যে থেকেও 700 জন দক্ষ যুবক সংগ্রহ করা হল।
16 এইসব সৈনিকের মধ্যে বাছাই করা 700 জন সৈনিক ছিল ন্যাটা, যাদের প্রত্যেকেই চুলের মতো সূক্ষ্ম নিশানায় গুলতি দিয়ে পাথর ছুঁড়তে পারত ও লক্ষ্যভ্রষ্ট হত না।
17 বিন্যামীনকে বাদ দিয়ে ইস্রায়েল তরোয়ালধারী এমন 4,00,000 লোক জোগাড় করল, যারা সবাই যুদ্ধের জন্য যোগ্যতাসম্পন্ন ছিল।
18 ইস্রায়েলীরা বেথেলে গিয়ে ঈশ্বরের কাছে জানতে চাইল। তারা বলল, “বিন্যামীন গোষ্ঠীভুক্ত লোকদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য আমাদের মধ্যে থেকে কারা আগে যাবে?” সদাপ্রভু উত্তর দিলেন, “যিহূদা গোষ্ঠী আগে যাবে।”
19 পরদিন সকালে ইস্রায়েলীরা উঠে গিবিয়ার কাছে শিবির স্থাপন করল।
20 ইস্রায়েলীরা বিন্যামীন গোষ্ঠীভুক্ত লোকদের সঙ্গে যুদ্ধ করার জন্য বাইরে গেল এবং গিবিয়ায় তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধের অবস্থান নিল।
21 বিন্যামীন গোষ্ঠীভুক্ত লোকেরা গিবিয়া থেকে বেরিয়ে এসে সেদিন যুদ্ধক্ষেত্রে 22,000 ইস্রায়েলীকে হত্যা করল।
22 কিন্তু ইস্রায়েলীরা পরস্পরকে উৎসাহিত করল এবং প্রথম দিন যেখানে তারা নিজেদের মোতায়েন করেছিল, সেখানেই আবার তাদের অবস্থান গ্রহণ করল।
23 ইস্রায়েলীরা গিয়ে সেদিন সন্ধ্যা পর্যন্ত সদাপ্রভুর কাছে কান্নাকাটি করল, এবং তাঁর কাছে জানতে চাইল। তারা বলল, “আমরা কি আবার আমাদের স্বজাতীয় বিন্যামীন গোষ্ঠীভুক্ত লোকদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে যাব?” সদাপ্রভু উত্তর দিলেন, “তাদের বিরুদ্ধে চলে যাও।”
24 পরে ইস্রায়েলীরা দ্বিতীয় দিনে বিন্যামীনের দিকে এগিয়ে গেল।
25 এবার, বিন্যামীন গোষ্ঠীভুক্ত লোকেরা ইস্রায়েলীদের বিরুদ্ধাচরণ করার জন্য গিবিয়া থেকে বেরিয়ে এসে এমন আরও 18,000 ইস্রায়েলীকে হত্যা করল, যারা সবাই ছিল তরোয়ালধারী সৈনিক।
26 পরে ইস্রায়েলীরা সবাই—সমগ্র সৈন্যবাহিনী বেথেলে গেল, এবং সেখানে বসে তারা সদাপ্রভুর সামনে কান্নাকাটি করতে লাগল। সেদিন সন্ধ্যা পর্যন্ত তারা উপবাস করল এবং সদাপ্রভুর কাছে হোমবলি ও মঙ্গলার্থক-নৈবেদ্য উৎসর্গ করল।
27 আর ইস্রায়েলীরা সদাপ্রভুর কাছে জানতে চাইল। (সেই সময় ঈশ্বরের নিয়ম-সিন্দুকটি সেখানে ছিল,
28 এবং হারোণের নাতি, তথা ইলিয়াসরের ছেলে পীনহস সেটির সামনে থেকে পরিচর্যা করতেন) তারা জিজ্ঞাসা করল, “আমরা কি আবার আমাদের স্বজাতীয় বিন্যামীন গোষ্ঠীভুক্ত লোকদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে যাব, কি যাব না?” সদাপ্রভু উত্তর দিলেন, “যাও, কারণ আগামীকাল আমি তাদের তোমাদের হাতে সমর্পণ করে দেব।”
29 পরে ইস্রায়েল গিবিয়ার চারপাশে ওৎ পেতে বসে থাকল।
30 তৃতীয় দিনে তারা বিন্যামীন গোষ্ঠীভুক্ত লোকদের বিরুদ্ধে উঠে গেল এবং গিবিয়ার বিরুদ্ধে অবস্থান নিল, যেভাবে আগেও তারা নিয়েছিল।
31 বিন্যামীন গোষ্ঠীভুক্ত লোকেরা ইস্রায়েলীদের সম্মুখীন হওয়ার জন্য বেরিয়ে এল এবং তাদের নগর থেকে দূরে আকৃষ্ট করা হল। আগের মতোই তারা ইস্রায়েলীদের হত্যা করতে শুরু করল, তাতে খোলা মাঠে এবং পথের উপরে—একটি বেথেলের অভিমুখে ও অন্যটি গিবিয়ার অভিমুখে, প্রায় ত্রিশজন মরে পড়ে থাকল।
32 একদিকে বিন্যামীন গোষ্ঠীভুক্ত লোকেরা বলছিল, “আগের মতোই আমরা ওদের পরাজিত করছি,” অন্যদিকে ইস্রায়েলীরা বলছিল, “এসো আমরা পিছিয়ে যাই এবং নগর থেকে ওদের পথের দিকে আকর্ষণ করি।”
33 ইস্রায়েলের লোকজন সবাই তাদের স্থান থেকে সরে এসে বায়াল-তামরে অবস্থান গ্রহণ করল, এবং ওৎ পেতে বসে থাকা ইস্রায়েলীরা গিবিয়ার পশ্চিমদিকে অবস্থিত তাদের গুপ্ত স্থান ছেড়ে বেরিয়ে এল।
34 পরে ইস্রায়েলের 10,000 জন যোগ্যতাসম্পন্ন যুবক সামনে থেকে গিবিয়ার উপর আক্রমণ চালাল। সেই যুদ্ধ এত ধুন্ধুমার হল যে বিন্যামীন গোষ্ঠীভুক্ত লোকেরা বুঝতেই পারেনি যে বিপর্যয় ঘনিয়ে এসেছে।
35 সদাপ্রভু ইস্রায়েলের সামনে বিন্যামীনকে পরাজিত করলেন, এবং সেদিন ইস্রায়েলীরা বিন্যামীন গোষ্ঠীভুক্ত 25,100 জন লোককে হত্যা করল। তারা সবাই ছিল তরোয়ালধারী সৈনিক।
36 তখন বিন্যামীন গোষ্ঠীভুক্ত লোকেরা দেখল যে তারা পরাজিত হয়েছে। ইত্যবসরে ইস্রায়েলের লোকজন বিন্যামীন গোষ্ঠীভুক্ত লোকদের সামনে থেকে পালিয়ে গেল, কারণ তারা সেইসব লোকের উপরে নির্ভর করছিল, যারা গিবিয়ার কাছে ওৎ পেতে বসেছিল।
37 যারা ওৎ পেতে বসেছিল, তারা আচমকাই গিবিয়াতে ঢুকে পড়ল, এবং চারপাশে ছড়িয়ে গিয়ে তরোয়াল চালিয়ে নগরবাসী সবাইকে আঘাত করল।
38 ইস্রায়েলীরা ওৎ পেতে থাকা লোকদের বলে দিয়েছিল, যেন তারা নগর থেকে ধোঁয়াযুক্ত বিশাল মেঘ ছড়িয়ে দেয়,
39 এবং তখনই ইস্রায়েলীরা পালটা আক্রমণ করবে। বিন্যামীন গোষ্ঠীভুক্ত লোকেরা ইস্রায়েলীদের (প্রায় ত্রিশ জনকে) হত্যা করতে শুরু করল, এবং তারা বলল, “প্রথমবারের যুদ্ধের মতোই আমরা তাদের পরাজিত করছি।”
40 কিন্তু নগর থেকে যখন ধোঁয়ার স্তম্ভ উপরে উঠতে শুরু করল, তখন বিন্যামীন গোষ্ঠীভুক্ত লোকেরা মুখ ফিরিয়ে দেখল যে সমগ্র নগর থেকে গলগল করে ধোঁয়া আকাশে উঠে যাচ্ছে।
41 তখন ইস্রায়েলীরাও তাদের পালটা আক্রমণ করল, এবং বিন্যামীন গোষ্ঠীভুক্ত লোকেরা আতঙ্কিত হয়ে পড়ল, কারণ তারা বুঝতে পারল যে তাদের উপরে বিপর্যয় নেমে এসেছে।
42 অতএব তারা ইস্রায়েলীদের কাছ থেকে মরুপ্রান্তরের দিকে পালিয়ে গেল, কিন্তু তারা যুদ্ধ এড়িয়ে পালাতে পারল না। আর যেসব ইস্রায়েলী লোকজন নগর থেকে বেরিয়ে এসেছিল, তারা সেখানেই তাদের হত্যা করল।
43 ইস্রায়েলীরা বিন্যামীন গোষ্ঠীভুক্ত লোকদের ঘিরে ধরল, তাড়া করল এবং খুব সহজেই পূর্বদিকে গিবিয়ার কাছে গিয়ে তাদের ছারখার করে দিল।
44 বিন্যামীন গোষ্ঠীভুক্ত 18,000 লোক নিহত হল। তারা সবাই ছিল বীর যোদ্ধা।
45 তারা যখন মরুপ্রান্তরের দিকে পিছু ফিরে রিম্মোণ পাষাণ-পাথরের দিকে পালিয়ে গেল, তখন ইস্রায়েলীরা পথেই 5,000 জন লোককে হত্যা করল। গিদোম পর্যন্ত এগিয়ে গিয়ে তারা বিন্যামীন গোষ্ঠীভুক্ত লোকদের পশ্চাদ্ধাবন করে গেল এবং আরও 2,000 লোককে হত্যা করল।
46 সেদিন বিন্যামীন গোষ্ঠীভুক্ত 25,000 তরোয়ালধারী লোক নিহত হল। তারা সবাই ছিল বীর যোদ্ধা।
47 কিন্তু তাদের মধ্যে 600 জন লোক মরুপ্রান্তরের দিকে পিছু ফিরে রিম্মোণ পাষাণ-পাথরের দিকে পালিয়ে গেল এবং চার মাস তারা সেখানেই থাকল।
48 ইস্রায়েলী লোকজন বিন্যামীন গোষ্ঠীর অধিকারভুক্ত এলাকায় ফিরে গেল এবং সব নগরে তরোয়াল চালিয়ে মানুষ, পশুপাল ও আরও যা যা পাওয়া গেল, সেসব ছারখার করে দিল। তারা যত নগর পেল, সেগুলিতে আগুন জ্বালিয়ে দিল।