< যিহোশূয়ের বই 6 >
1 সেই সময় ইস্রায়েলীদের কারণে যিরীহোর নগর-দুয়ারগুলিতে শক্ত করে খিল দেওয়া ছিল। কেউ বাইরে যেত না ও কেউ ভিতরেও আসত না।
2 তখন সদাপ্রভু যিহোশূয়কে বললেন, “দেখো, আমি যিরীহোকে তার রাজা ও তার সব যোদ্ধাসহ তোমার হাতে সঁপে দিয়েছি।
3 তোমার সব সশস্ত্র লোকজন নিয়ে নগরটি একবার প্রদক্ষিণ করো। ছয় দিন ধরে এরকম কোরো।
4 সাতজন যাজক নিয়ম-সিন্দুকের সামনে থেকে মেষের শিং দিয়ে তৈরি শিঙা বহন করুক। সপ্তম দিনে, নগরটি সাতবার প্রদক্ষিণ করবে ও যাজকেরা শিঙা বাজাবে।
5 যখন তোমরা তাদের দীর্ঘক্ষণ ধরে শিঙা বাজাতে শুনবে, তখন সমগ্র সৈন্যবাহিনী জোরে চিৎকার করে উঠবে; তখন নগর-প্রাচীর ভেঙে পড়বে এবং সৈন্যবাহিনীর প্রত্যেকে সোজা সামনের দিকে উঠে যাবে।”
6 অতএব নূনের ছেলে যিহোশূয় যাজকদের ডেকে পাঠালেন ও তাঁদের বললেন, “আপনারা সদাপ্রভুর নিয়ম-সিন্দুকটি তুলে নিন এবং সাতজন যাজক সেটির সামনে শিঙা বহন করুন।”
7 আর তিনি সৈন্যবাহিনীকে আদেশ দিলেন, “তোমরা এগিয়ে চলো! নগরটি প্রদক্ষিণ করো এবং একজন সশস্ত্র প্রহরী সদাপ্রভুর সিন্দুকের আগে আগে যাক।”
8 যিহোশূয় যখন লোকদের একথা বললেন, তখন সাতজন যাজক সাতটি শিঙা বহন করে সদাপ্রভুর সামনে সামনে এগিয়ে গেলেন ও তাঁদের শিঙাগুলি বাজাতে লাগলেন, এবং সদাপ্রভুর নিয়ম-সিন্দুক তাঁদের অনুগামী হল।
9 সশস্ত্র প্রহরীটি শিঙাবাদক যাজকদের অগ্রগামী হল এবং পিছনে থাকা প্রহরীটি সিন্দুকটির অনুগামী হল। এসময় অনবরত শিঙা বেজেই যাচ্ছিল।
10 কিন্তু যিহোশূয় সৈন্যবাহিনীকে আদেশ দিলেন, “তোমরা রণহুঙ্কার দিয়ো না, তোমাদের কণ্ঠস্বর তীব্র কোরো না, যতদিন না আমি তোমাদের চিৎকার করতে বলছি, ততদিন একটি কথাও বোলো না। পরে তোমরা চিৎকার কোরো!”
11 এভাবে তিনি সদাপ্রভুর সিন্দুকটিকে নগর প্রদক্ষিণ করতে দিলেন, রোজ একবার করে তা বৃত্তাকারে ঘুরল। পরে সৈন্যবাহিনী শিবিরে ফিরে এল এবং সেখানে রাত্রিযাপন করল।
12 পরদিন ভোরবেলায় যিহোশূয় উঠলেন এবং যাজকেরা সদাপ্রভুর সিন্দুক তুলে নিলেন।
13 সাতজন যাজক সাতটি শিঙা বহন করে সামনে এগিয়ে গেলেন এবং শিঙা বাজাতে বাজাতে সদাপ্রভুর সিন্দুকের আগে আগে চললেন। সশস্ত্র লোকেরা তাঁদের আগে আগে গেল এবং পিছন দিকের প্রহরীটি সদাপ্রভুর সিন্দুকের অনুগামী হল, আর এসময় শিঙাগুলি বেজেই যাচ্ছিল।
14 তাই দ্বিতীয় দিনেও তারা একবার নগর প্রদক্ষিণ করল ও শিবিরে ফিরে গেল। ছয় দিন ধরে তারা এরকম করল।
15 সপ্তম দিনে, ভোরবেলায় তারা উঠে পড়ল এবং একইভাবে তারা সেই নগরটি সাতবার প্রদক্ষিণ করল। কেবলমাত্র সেদিনই তারা সাতবার নগরটি প্রদক্ষিণ করল।
16 সাতবার প্রদক্ষিণ শেষে যখন যাজকেরা শিঙা বাজাচ্ছিলেন, যিহোশূয় লোকদের আদেশ দিলেন, “তোমরা সিংহনাদ করো, কারণ সদাপ্রভু এই নগরটি তোমাদের দান করেছেন!
17 এই নগর এবং এর মধ্যে থাকা সবকিছু সদাপ্রভুর উদ্দেশে বর্জিত হবে। শুধুমাত্র বেশ্যা রাহব এবং তার সঙ্গী সকলে, যারা তার বাড়িতে অবস্থান করবে, তাদের রক্ষা করা হবে, কারণ সে আমাদের পাঠানো গুপ্তচরদের লুকিয়ে রেখেছিল।
18 কিন্তু বর্জিত জিনিসগুলি থেকে তোমরা দূরে সরে থাকবে, যেন সেগুলির কিছু গ্রহণ করে তোমরা নিজেদের ধ্বংস ডেকে না আনো। অন্যথায়, তোমরা ইস্রায়েলের শিবিরে বিনাশ ও তার উপরে বিপর্যয় ডেকে আনবে।
19 সমস্ত সোনা ও রুপো এবং ব্রোঞ্জ ও লোহার জিনিসপত্র সদাপ্রভুর উদ্দেশে পৃথক থাকবে ও সেগুলি অবশ্যই তাঁর ভাণ্ডারে যাবে।”
20 যখন শিঙা বাজানো হল, সৈন্যদল সিংহনাদ করে উঠল। শিঙাধ্বনির কারণে যখন তারা সিংহনাদ করল, প্রাচীর ধসে গেল; অতএব প্রত্যেকে সোজা নিজেদের সামনে উঠে গেল ও নগর নিজেদের দখলে নিল।
21 তারা সদাপ্রভুর উদ্দেশে নগরটি উৎসর্গ করল এবং তার মধ্যে জীবিত সমস্ত প্রাণীকে তরোয়াল দিয়ে ধ্বংস করল—সমস্ত পুরুষ ও নারী, যুবক বা বৃদ্ধ, গৃহপালিত পশুপাল, মেষপাল ও সমস্ত গাধা তারা ধ্বংস করল।
22 পরে যিহোশূয় সেই দুজন গুপ্তচরকে, যারা নগরটি পর্যবেক্ষণ করার জন্য গিয়েছিল, তাদের বললেন, “তোমরা ওই বেশ্যার বাড়িতে যাও এবং তোমাদের শপথমতো তাকে, তার সমস্ত পরিজনসহ সেখান থেকে বের করে আনো।”
23 তাই সেই দুজন যুবক, যারা দেশ পর্যবেক্ষণ করতে গিয়েছিল, তারা সেই বাড়িতে গিয়ে রাহবকে, তার বাবা-মা, ভাইদের ও তার সমস্ত আপনজনকে বের করে আনল। তারা তার সমস্ত পরিবারকে বের করে আনল এবং ইস্রায়েলীদের শিবিরের বাইরে এক স্থানে নিয়ে গিয়ে রাখল।
24 পরে তারা সমস্ত নগরটি ও তার মধ্যে থাকা সবকিছু পুড়িয়ে দিল, কিন্তু তারা সোনা ও রুপো, ব্রোঞ্জ ও লোহার তৈরি সমস্ত জিনিসপত্র নিয়ে সদাপ্রভুর গৃহের ভাণ্ডারে রাখল।
25 কিন্তু যিহোশূয় বেশ্যা রাহব, তার পরিবার ও সমস্ত আপনজনকে বাঁচিয়ে রাখলেন, কারণ সে যিরীহো নগরে পাঠানো যিহোশূয়ের দুজন গুপ্তচরকে লুকিয়ে রেখেছিল—আর আজও পর্যন্ত ইস্রায়েলীদের মধ্যে বসবাস করছে।
26 সেই সময় যিহোশূয় এই গুরুগম্ভীর শপথ উচ্চারণ করলেন: “যে এই যিরীহো নগর পুনর্নির্মাণ করতে উদ্যোগী হয়, সে সদাপ্রভুর সাক্ষাতে অভিশপ্ত হোক: “তার প্রথমজাত ছেলের প্রাণের বিনিময়ে সে এটির ভিত্তি স্থাপন করবে; তার সবচেয়ে ছোটো ছেলের প্রাণের বিনিময়ে সে এটির দুয়ার নির্মাণ করবে।”
27 অতএব সদাপ্রভু যিহোশূয়ের সঙ্গে ছিলেন এবং যিহোশূয়ের খ্যাতি সমস্ত দেশে ছড়িয়ে পড়ল।