< যোহন 19 >
1 পীলাত তখন যীশুকে নিয়ে গিয়ে চাবুক দিয়ে প্রহার করালেন।
2 সৈন্যরা একটি কাঁটার মুকুট তৈরি করে তাঁর মাথায় পরালো। তারা তাঁকে বেগুনি রংয়ের পোশাক পরিয়ে দিল।
3 বারবার তাঁর কাছে গিয়ে তারা বলতে লাগল, “ইহুদি-রাজ নমস্কার!” আর তাঁর মুখে তারা চড় মারতে লাগল।
4 পীলাত আর একবার বাইরে এসে ইহুদিদের বললেন, “দেখো, ওকে অভিযুক্ত করার মতো আমি কোনো অপরাধ খুঁজে পাইনি, একথা জানানোর জন্য ওকে আমি তোমাদের কাছে বের করে নিয়ে এসেছি।”
5 কাঁটার মুকুট এবং বেগুনি পোশাক পরে যীশু বেরিয়ে এলে পীলাত তাদের বললেন, “এই দেখো, সেই ব্যক্তি!”
6 প্রধান যাজকবৃন্দ ও তাদের কর্মচারীরা তাঁকে দেখার সঙ্গে সঙ্গে চিৎকার করে উঠল, “ওকে ক্রুশে দিন, ক্রুশে দিন!” পীলাত বললেন, “তোমরাই ওকে নিয়ে ক্রুশে দাও। যদি আমার কথা বলো, ওকে অভিযুক্ত করার মতো কোনো অপরাধ আমি পাইনি।”
7 ইহুদিরা জোর করতে লাগল, “আমাদের একটি বিধান আছে এবং সেই বিধান অনুসারে লোকটিকে মৃত্যুদণ্ড ভোগ করতে হবে, কারণ সে নিজেকে ঈশ্বরের পুত্র বলে দাবি করেছে।”
8 একথা শুনে পীলাত আরও বেশি ভীত হয়ে পড়লেন
9 এবং প্রাসাদের ভিতরে ফিরে গিয়ে তিনি যীশুকে জিজ্ঞাসা করলেন, “তুমি কোথা থেকে এসেছ?” কিন্তু যীশু তাঁকে কোনও উত্তর দিলেন না।
10 পীলাত বললেন, “তুমি কি আমার সঙ্গে কথা বলতে চাও না? তুমি কি বুঝতে পারছ না, তোমাকে মুক্তি দেওয়ার বা ক্রুশবিদ্ধ করার ক্ষমতা আমার আছে?”
11 যীশু উত্তর দিলেন, “ঈশ্বর তোমাকে এ ক্ষমতা না দিলে আমার উপর তোমার কোনো অধিকার থাকত না, তাই যে আমাকে তোমার হাতে সমর্পণ করেছে, তার অপরাধ আরও বেশি।”
12 সেই সময় থেকে পীলাত যীশুকে মুক্ত করার চেষ্টা করলেন, কিন্তু ইহুদিরা চিৎকার করে বলতে লাগল, “এই লোকটিকে মুক্তি দিলে আপনি কৈসরের বন্ধু নন। যে নিজেকে রাজা বলে দাবি করে, সে কৈসরের বিরুদ্ধাচরণ করে।”
13 একথা শুনে পীলাত যীশুকে বাইরে নিয়ে এলেন এবং পাষাণ-বেদি নামে পরিচিত এক স্থানে বিচারের আসনে বসলেন (অরামীয় ভাষায় স্থানটির নাম, গব্বথা)।
14 সেদিন ছিল নিস্তারপর্বের প্রস্তুতির দিন। তখন প্রায় দুপুর। “এই দেখো, তোমাদের রাজা,” পীলাত ইহুদিদের বললেন।
15 কিন্তু তারা চিৎকার করে উঠল, “ওকে দূর করুন, দূর করুন, ওকে ক্রুশে দিন!” পীলাত জিজ্ঞাসা করলেন, “তোমাদের রাজাকে কি আমি ক্রুশে দেব?” প্রধান যাজকেরা উত্তর দিলেন, “কৈসর ছাড়া আমাদের আর কোনও রাজা নেই।”
16 অবশেষে পীলাত যীশুকে ক্রুশবিদ্ধ করার জন্য তাদের হাতে সমর্পণ করলেন। তখন সৈন্যরা যীশুর দায়িত্ব গ্রহণ করল।
17 যীশু নিজের ক্রুশ বহন করে করোটি নামক স্থানে গেলেন (অরামীয় ভাষায় স্থানটির নাম গলগথা)।
18 তারা সেখানে অন্য দুজনের সঙ্গে তাঁকে ক্রুশার্পিত করল। দুই পাশে দুজন এবং মাঝখানে যীশু।
19 একটি বিজ্ঞপ্তি লিখিয়ে পীলাত ক্রুশে ঝুলিয়ে দিলেন। তাতে লেখা ছিল: নাসরতের যীশু, ইহুদিদের রাজা।
20 যীশুকে যেখানে ক্রুশবিদ্ধ করা হয়েছিল, সেই স্থানটি ছিল নগরের কাছেই। অনেক ইহুদি এই বিজ্ঞপ্তিটি পড়ল। এটি লেখা হয়েছিল অরামীয়, লাতিন ও গ্রিক ভাষায়।
21 ইহুদিদের প্রধান যাজকেরা পীলাতের কাছে প্রতিবাদ জানাল, “‘ইহুদিদের রাজা,’ একথা লিখবেন না, বরং লিখুন যে এই লোকটি নিজেকে ইহুদিদের রাজা বলে দাবি করেছিল।”
22 পীলাত উত্তর দিলেন, “আমি যা লিখেছি, তা লিখেছি।”
23 সৈন্যরা যীশুকে ক্রুশবিদ্ধ করার পর তাঁর পোশাক চার ভাগে ভাগ করে প্রত্যেকে একটি করে অংশ নিল। রইল শুধু অন্তর্বাসটি। সেই পোশাকে কোনো সেলাই ছিল না, উপর থেকে নিচ পর্যন্ত বোনা একটি অখণ্ড কাপড়ে সেটি তৈরি করা হয়েছিল।
24 তারা পরস্পরকে বলল, “এটা আমরা ছিঁড়ব না, এসো, এটা কার ভাগে পড়ে, তা নির্ধারণ করার জন্য গুটিকাপাত করি।” শাস্ত্রের এই বাণী যেন পূর্ণ হয় তাঁর জন্য এ ঘটনা ঘটল: “আমার পোশাক তারা তাদের মধ্যে ভাগ করে নিল, আর আমার আচ্ছাদনের জন্য গুটিকাপাতের দান ফেলল।” সুতরাং, সৈন্যরা তাই করল।
25 যীশুর ক্রুশের কাছেই দাঁড়িয়েছিলেন তাঁর মা, তাঁর মাসিমা, ক্লোপার স্ত্রী মরিয়ম এবং মাগ্দালাবাসী মরিয়ম।
26 যীশু সেখানে তাঁর মা এবং কাছেই দাঁড়িয়ে থাকা শিষ্যকে, যাঁকে তিনি প্রেম করতেন, তাঁকে দেখে, তাঁর মাকে বললেন, “নারী, ওই দেখো, তোমার পুত্র!”
27 এবং সেই শিষ্যকে বললেন, “ওই দেখো, তোমার মা!” সেই সময় থেকে, সেই শিষ্য তাঁর মাকে তাঁর বাড়িতে নিয়ে গেলেন।
28 এরপর, সবকিছুই সম্পূর্ণ হয়েছে জেনে, শাস্ত্রের বচন যেন পূর্ণ হয় সেইজন্য যীশু বললেন, “আমার পিপাসা পেয়েছে।”
29 সেখানে রাখা ছিল এক পাত্র অম্লরস। তারা সেই অম্লরসে এক টুকরো স্পঞ্জ ভিজিয়ে, সেটিকে এসোব গাছের ডাঁটায় লাগিয়ে যীশুর মুখের কাছে তুলে ধরল।
30 সেই পানীয় গ্রহণ করে যীশু বললেন, “সমাপ্ত হল।” এই কথা বলে তিনি তাঁর মাথা নত করে তাঁর আত্মা সমর্পণ করলেন।
31 সেদিন ছিল প্রস্তুতির দিন এবং পরদিন ছিল বিশেষ এক বিশ্রামদিন। ইহুদিরা চায়নি যে বিশ্রামদিনের সময় ওই দেহগুলি ক্রুশের উপর থাকে, তাই পা ভেঙে দিয়ে দেহগুলি ক্রুশের উপর থেকে নামাবার জন্য তারা পীলাতকে অনুরোধ করল।
32 সৈন্যরা সেই কারণে এসে যীশুর সঙ্গে ক্রুশবিদ্ধ প্রথম ব্যক্তির এবং তারপর অন্য ব্যক্তির পা ভেঙে দিল।
33 কিন্তু তারা যীশুর কাছে এসে দেখল, ইতিমধ্যে তাঁর মৃত্যু হয়েছে, তাই তারা তাঁর পা ভাঙল না।
34 বরং, সৈন্যদের একজন বর্শা দিয়ে যীশুর বুকে বিদ্ধ করলে রক্ত ও জলের ধারা নেমে এল।
35 যে এ বিষয়ের প্রত্যক্ষদর্শী, সেই সাক্ষ্যদান করেছে এবং তার সাক্ষ্য সত্য। সে জানে যে, সে সত্য কথা বলেছে এবং সে সাক্ষ্য দিচ্ছে যেন তোমরাও বিশ্বাস করতে পারো।
36 শাস্ত্রের বচন পূর্ণ হওয়ার জন্য এই সমস্ত ঘটল, “তাঁর একটিও হাড় ভাঙা হবে না” এবং
37 শাস্ত্রের অন্যত্র যেমন বলা হয়েছে, “তারা যাঁকে বিদ্ধ করেছে, তাঁরই উপরে দৃষ্টি নিবদ্ধ করবে তারা।”
38 পরে, আরিমাথিয়ার যোষেফ যীশুর দেহের জন্য পীলাতের কাছে নিবেদন জানালেন। যোষেফ ছিলেন যীশুর একজন শিষ্য, কিন্তু ইহুদি নেতাদের ভয়ে তাঁকে গোপনে অনুসরণ করতেন। পীলাতের অনুমতি নিয়ে, তিনি এসে যীশুর দেহ নিয়ে গেলেন।
39 তার সঙ্গে ছিলেন নীকদীম, যিনি রাত্রিবেলা যীশুর সঙ্গে পূর্বে সাক্ষাৎ করতে গিয়েছিলেন। নীকদীম প্রায় চৌত্রিশ কিলোগ্রাম গন্ধরস মিশ্রিত অগুরু নিয়ে এলেন।
40 যীশুর দেহ নিয়ে তারা দুজনে সুগন্ধি মশলা মাখিয়ে লিনেন কাপড়ের ফালি দিয়ে জড়ালেন। ইহুদিদের সমাধিদানের প্রথা অনুসারে তারা এ কাজ করলেন।
41 যীশু যেখানে ক্রুশবিদ্ধ হয়েছিলেন, সেখানে একটি বাগান ছিল। সেই বাগানে ছিল একটি নতুন সমাধি, কাউকে কখনও তার মধ্যে কবর দেওয়া হয়নি।
42 সেদিন ছিল ইহুদিদের প্রস্তুতির দিন এবং সমাধিটি কাছেই ছিল বলে তারা সেখানেই যীশুর দেহ শুইয়ে রাখলেন।