ইয়োবের বিবরণ 30
1 “কিন্তু এখন তারাই আমাকে বিদ্রুপ করে, যারা আমার থেকে বয়সে ছোটো, যাদের বাবাদের আমি আমার মেষপাল-রক্ষক কুকুরদের সাথে রাখতেও অবজ্ঞা করতাম।
১এখন যারা আমার থেকে ছোট, তাদের কাছে আমার জন্য উপহাস ছাড়া কিছুই নেই আমি তাদের পিতাদের আমার পালরক্ষা করা কুকুরদের সঙ্গে কাজ করার অনুমতি দিতাম না।
2 তাদের হাতের শক্তি আমার কী কাজে লাগত, যেহেতু তাদের প্রাণশক্তি তো তাদের কাছ থেকে চলে গিয়েছে?
২সত্যি, তাদের পিতাদের হাতের শক্তি, কীভাবে আমায় সাহায্য করতে পারে লোকেদের শক্তি তাদের প্রাপ্ত বয়েসে ধ্বংস হয়ে গেছে?
3 অভাব ও খিদের জ্বালায় জীর্ণশীর্ণ হয়ে তারা রাতের বেলায় রৌদ্রদগ্ধ জমিতে ও জনশূন্য পতিত জমিতে ঘুরে বেড়াত।
৩তারা দারিদ্রতায় এবং খিদেয় রোগা হয়ে গেছে; তারা প্রান্তরের অন্ধকারে এবং নির্জনতায় শুকনো মাটি চিবোত।
4 ঝাড়-জঙ্গলে তারা লবণাক্ত শাক সংগ্রহ করত, ও খেংরা ঝোপের মূল তাদের খাদ্য হয়েছিল।
৪তারা লতা জাতীয় শাক এবং ঝোপের পাতা তুলত; গুল্ম জাতীয় গাছের শিকড় তাদের খাবার ছিল।
5 মানবসমাজ থেকে তারা বিতাড়িত হয়েছিল, লোকজন যেভাবে চোরের পিছনে চিৎকার করে, সেভাবে তাদেরও পিছনেও চিৎকার করত।
৫তারা লোকেদের মধ্যে থেকে বিতাড়িত হয়েছিল, যারা তাদের পিছনে চিত্কার করত যেমন একজন চোরের পিছনে চিত্কার করে।
6 তারা শুকনো নদীখাতে, পাষাণ-পাথরের খাঁজে ও জমির ফাটলে বসবাস করতে বাধ্য হত।
৬তাই তাদের নদীর তীরে বাস করতে হত, মাটির গর্তে এবং পাথরের গুহায় বাস করতে হত।
7 ঝোপঝাড়ে তারা পশুদের মতো ডাক দিয়ে বেড়াত ও লতাগুল্মের জঙ্গলে গাদাগাদি করে থাকত।
৭ঝোপের মধ্যে তারা গাধার মত আওয়াজ করত; ঝোপের নিচে তারা একসঙ্গে জড়ো হত।
8 এক হীন ও অখ্যাত কুল হয়ে, তারা দেশ থেকে বিতাড়িত হয়েছে।
৮সত্যি, তারা মূর্খদের বংশধর, বেকার লোকেদের বংশধর; তারা চাবুকের আঘাতে দেশ থেকে বিতাড়িত হয়েছিল।
9 “আর এখন সেই যুবকেরা গান গেয়ে গেয়ে আমাকে বিদ্রুপ করে; আমি তাদের মাঝে এক জনশ্রুতিতে পরিণত হয়েছি।
৯কিন্তু এখন, আমি তাদের ছেলেদের জন্য উপহাসের গানের বিষয় হয়েছি; সত্যি, আমি এখন তাদের কাছে একটা মজার বিষয়।
10 তারা আমাকে ঘৃণা করে ও আমার কাছ থেকে দূরে সরে থাকে; আমার মুখে থুতু ছিটাতেও তারা দ্বিধাবোধ করে না।
১০তারা আমায় ঘৃণা করে এবং আমার থেকে দূরে দাঁড়ায়; তাদের আমার মুখে থুতু দিতে আটকায় না।
11 এখন যেহেতু ঈশ্বর আমার ধনুক বিতন্ত্রিত করেছেন ও আমাকে দুর্দশাগ্রস্ত করেছেন, তাই আমার সামনে তারা সংযম ঝেড়ে ফেলেছে।
১১কারণ ঈশ্বর আমার ধনুকের দড়ি খুলে দিতেন এবং আমায় কষ্ট দিতেন এবং তাই এই লোকেরা আমার সামনে তাদের সমস্ত আত্মসংযম হারাত।
12 আমার ডানদিকে উপজাতিরা আক্রমণ করে; তারা আমার পায়ের জন্য ফাঁদ বিছায়, আমার বিরুদ্ধে তারা তাদের অবরোধ-পথ নির্মাণ করে।
১২আমার দক্ষিণে বিশৃঙ্খল জনতা ওঠে; তারা আমায় তাড়িয়ে দেয় এবং আমার বিরুদ্ধে তাদের ধ্বংসের পথ উঁচু করে তোলে।
13 তারা আমার পথ অবরুদ্ধ করে; তারা আমাকে ধ্বংস করতে সফল হয়। ‘কেউ তাকে সাহায্য করতে পারবে না,’ তারা বলে।
১৩তারা আমার পথ ধ্বংস করে; তারা আমার জন্য দুর্যোগ নিয়ে আসে, সেই লোকেদের এমন কেউ নেই যে তাদের ধরে রাখতে পারে।
14 তারা যেন এক প্রশস্ত ফাটলের মধ্যে দিয়ে এগিয়ে আসে; ধ্বংসাবশেষের মাঝখান দিয়ে তারা ঘূর্ণিবেগে আসে।
১৪তারা শহরের দেওয়ালের বড় ফাটল দিয়ে সৈন্যদলের মত আমার বিরুদ্ধে আসে; বিনাশের মধ্যে তারা আমার ওপর গড়িয়ে পড়ে।
15 আতঙ্ক আমাকে অভিভূত করে; আমার সম্মান যেন বাতাসে উড়ে গিয়েছে, আমার নিরাপত্তা মেঘের মতো অদৃশ্য হয়ে যায়।
১৫আতঙ্ক আমার ওপরে আসে; আমার সম্মান বাতাসের মত উড়ে গেছে; আমার সমৃদ্ধি মেঘের মত দূর হয়েছে।
16 “আর এখন আমার জীবনে ভাটার টান এসেছে; কষ্টভোগের দিন আমাকে গ্রাস করেছে।
১৬এখন আমার প্রাণ আমার মধ্যে ঢালা হচ্ছে; অনেক দুঃখের দিন আমাকে আকঁড়ে ধরে রেখেছে।
17 রাতের বেলায় আমার অস্থি বিদ্ধ হয়; আমার বিরক্তিকর যন্ত্রণা কখনও বিশ্রাম নেয় না।
১৭রাতে আমার হাড় যন্ত্রণায় ক্লিষ্ট হয়; সেই ব্যথা যা আমায় কখন বিশ্রাম নেয় না।
18 ঈশ্বর তাঁর মহাপরাক্রমে আমার কাছে পোশাকের মতো হয়ে গিয়েছেন; আমার জামার গলবন্ধের মতো তিনি আমাকে বেঁধে রেখেছেন।
১৮ঈশ্বরের মহা শক্তি আমার পরিচ্ছদ ছিনিয়ে নেন; জামার গলার মত এটা আমায় চারিদিক দিয়ে জড়ায়।
19 তিনি আমাকে কাদায় ছুঁড়ে ফেলেছেন, ও আমি ধুলো ও ভস্মের মতো হয়ে গিয়েছি।
১৯তিনি আমায় কাদায় ছুঁড়ে ফেলেন; আমি ধূলো ও ছাইয়ে মত হয়ে পড়ি।
20 “হে ঈশ্বর, আমি তোমার কাছে আর্তনাদ করেছি, কিন্তু তুমি উত্তর দাওনি; আমি উঠে দাঁড়িয়েছি, কিন্তু তুমি শুধু আমার দিকে তাকিয়েছ।
২০হে ঈশ্বর, আমি তোমার কাছে কাঁদি, কিন্তু তুমি আমায় উত্তর দাও না; আমি দাঁড়ায়ে থাকি এবং তুমি নামমাত্র আমাকে দেখ।
21 নির্মমভাবে তুমি আমার দিকে ঘুরে দাঁড়িয়েছ; তোমার হাতের শক্তি দিয়ে তুমি আমাকে আক্রমণ করেছ।
২১তুমি পরিবর্তিত হয়েছ এবং আমার প্রতি নিষ্ঠুর হয়েছ; তোমার হাতের শক্তিতে তুমি আমায় অত্যাচার করেছ।
22 আমাকে ছিনিয়ে নিয়ে তুমি আমাকে বাতাসের সামনে চালান করেছ; তুমি আমাকে ঝড়ের মধ্যে ছুঁড়ে দিয়েছ।
২২তুমি বাতাসে আমাকে তুলেছ এবং আমায় উড়িয়ে নিয়ে গেছ; তুমি আমায় ঝড়ে বিলীন করেছ।
23 আমি জানি তুমি আমাকে মৃত্যুর কাছে নিয়ে যাবে, সেই স্থানে নিয়ে যাবে, যা সব জীবিতজনের জন্য নিরূপিত হয়ে আছে।
২৩কারণ আমি জানি যে তুমি আমায় মৃত্যুর সম্মুখে নিয়ে যাচ্ছ, সেই পূর্ব্ব নির্ধারিত ঘরে যা সমস্ত জীবিত বস্তুর জন্য নিরূপিত আছে।
24 “একজন বিদীর্ণ মানুষ যখন তার চরম দুর্দশায় সাহায্যের জন্য আর্তনাদ করে তখন নিশ্চয় তার উপরে কেউ হস্তক্ষেপ করে না।
২৪যাইহোক, যখন সে পড়ে তখন কি সে তার হাত বাড়ায় না সাহায্যের জন্য অথবা বিপদে কি সে চিত্কার করে না?
25 আমি কি বিপদগ্রস্তদের জন্য কাঁদিনি? দরিদ্রদের জন্য আমার প্রাণ কি ব্যথিত হয়নি?
২৫আমি কি তার জন্য কাঁদি নি যে বিপদের মধ্যে ছিল? আমার হৃদয় কি দরিদ্রের জন্য দুঃখ করে নি?
26 অথচ আমি যখন মঙ্গলের প্রত্যাশা করেছি, তখন অমঙ্গল এসেছে; আমি যখন আলোর খোঁজ করেছি, তখন অন্ধকার ঘনিয়ে এসেছে।
২৬যখন আমি ভাল খুঁজতাম, তখন মন্দ আসত; যখন আমি আলোর জন্য অপেক্ষা করি, পরিবর্তে অন্ধকার আসে।
27 আমার ভিতরের মন্থন কখনও থামেনি; দিনের পর দিন আমাকে যন্ত্রণার সম্মুখীন হতে হয়েছে।
২৭যখন আমার হৃদয় অস্থির এবং তার বিশ্রাম নেই; কষ্টের দিন আমার ওপরে আসে।
28 আমি কলঙ্কিত হয়েছি, কিন্তু সূর্যের দ্বারা নয়; জনসমাবেশে দাঁড়িয়ে আমি সাহায্যের জন্য আর্তনাদ করেছি।
২৮আমি বিনা রৌদ্রে ধীরে ধীরে কালো হয়ে যাচ্ছি, আমি সমাজে দাঁড়াই এবং সাহায্যের জন্য চিত্কার করি।
29 আমি শিয়ালদের ভাই হয়েছি, প্যাঁচাদের সঙ্গী হয়েছি।
২৯আমি শিয়ালের ভাই, উঠ পাখিদের সঙ্গী হয়ে গেছি।
30 আমার চামড়া কালো হয়ে গিয়ে তাতে খোসা ছাড়ছে; আমার শরীর জ্বরে পুড়ছে।
৩০আমার চামড়া কালো এবং তা খসে পড়ছে; আমার হাড়গুলো তাপে পুড়ে গেছে।
31 আমার বীণা শোকের সুর তুলছে, ও আমার বাঁশি হাহাকারের শব্দ করছে।
৩১এই জন্য, আমার বীণার শব্দ যেন হাহাকারের সুর, আমার সানাইয়ের সুর যেন বিলাপের গান।
