< যিরমিয়ের বই 34 >
1 যখন ব্যাবিলনের রাজা নেবুখাদনেজার, তাঁর সব সৈন্য এবং তাঁর শাসনাধীন সমস্ত রাজ্য ও প্রজারা জেরুশালেম ও তার চারপাশের নগরগুলির বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছিল, তখন যিরমিয়ের কাছে সদাপ্রভুর বাক্য উপস্থিত হল:
2 “সদাপ্রভু, ইস্রায়েলের ঈশ্বর এই কথা বলেন: তুমি যিহূদার রাজা সিদিকিয়ের কাছে যাও ও তাকে গিয়ে বলো, ‘সদাপ্রভু এই কথা বলেন, আমি এই নগর ব্যাবিলনের রাজার হাতে তুলে দিতে চলেছি। সে এই নগর অগ্নিদগ্ধ করবে।
3 তুমি তার হাত এড়াতে পারবে না, কিন্তু নিশ্চয়ই ধৃত হয়ে তার হাতে সমর্পিত হবে। তুমি নিজের চোখে ব্যাবিলনের রাজাকে দেখবে এবং সে মুখোমুখি তোমার সঙ্গে কথা বলবে। আর তুমি ব্যাবিলনে যাবে।
4 “‘তবুও, হে যিহূদার রাজা সিদিকিয়, তুমি সদাপ্রভুর প্রতিজ্ঞার কথা শোনো। তোমার সম্পর্কে সদাপ্রভু এই কথা বলেন, তুমি তরোয়ালের আঘাতে মৃত্যুবরণ করবে না;
5 তুমি শান্তিতে মৃত্যুবরণ করবে। তোমার পূর্বপুরুষেরা, অর্থাৎ পূর্বতন রাজাদের প্রতি সম্মান প্রদর্শনের জন্য যেমন দাহ-সংস্কার করা হত, তোমার ক্ষেত্রেও তারা তেমনই দাহ-সংস্কার করবে ও “হায় প্রভু!” এই বলে বিলাপ করবে। আমি স্বয়ং এই প্রতিজ্ঞা করছি, একথা সদাপ্রভু বলেন।’”
6 তারপর ভাববাদী যিরমিয় এই সমস্ত কথা জেরুশালেমে, যিহূদার রাজা সিদিকিয়কে গিয়ে বললেন।
7 সেই সময়, ব্যাবিলনের রাজার সৈন্যদল জেরুশালেম ও যিহূদার অন্যান্য নগরের বিরুদ্ধে, লাখীশ ও অসেকার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছিল। কেবলমাত্র প্রাচীর-ঘেরা এই দুটি নগর অবশিষ্ট ছিল।
8 ক্রীতদাসদের প্রতি মুক্তি ঘোষণার জন্য রাজা সিদিকিয় জেরুশালেমের সমস্ত লোকের সঙ্গে এক চুক্তি সম্পাদন করেন। তারপরেই সদাপ্রভুর বাক্য যিরমিয়ের কাছে উপস্থিত হল।
9 প্রত্যেকজনকে, পুরুষ-স্ত্রী নির্বিশেষে সমস্ত হিব্রু ক্রীতদাসকে মুক্তি দিতে হবে; কেউই কোনো সহ-ইহুদিকে দাসত্বে আবদ্ধ রাখবে না।
10 তাই, প্রত্যেকজন রাজকর্মচারী ও লোকেরা, যারা এই চুক্তিতে প্রবেশ করল, তারা সম্মত হল যে, তারা সমস্ত পুরুষ ও স্ত্রী দাসদাসীকে মুক্তি দেবে এবং আর তাদের ক্রীতদাসত্বে আবদ্ধ করবে না। তারা সম্মত হয়ে তাদের মুক্তি দিল।
11 কিন্তু পরে তারা তাদের মন পরিবর্তন করল এবং যাদের মুক্তি দিয়েছিল, সেইসব দাসদাসীকে ফিরিয়ে আনল ও পুনরায় তাদের ক্রীতদাসত্বে আবদ্ধ করল।
12 তারপর সদাপ্রভু বাক্য যিরমিয়ের কাছে উপস্থিত হল:
13 “সদাপ্রভু, ইস্রায়েলের ঈশ্বর এই কথা বলেন, আমি তোমাদের পূর্বপুরুষদের, ক্রীতদাসত্বের দেশ মিশর থেকে মুক্ত করে এনে তাদের সঙ্গে এক চুক্তি করেছিলাম। আমি বলেছিলাম,
14 ‘প্রত্যেক সপ্তম বছরে, তোমাদের মধ্যে প্রত্যেকে, অবশ্যই তার সহ-হিব্রু ভাইকে, যে নিজেকে তোমার কাছে বিক্রি করেছে, মুক্ত হয়ে চলে যেতে দেবে। ছয় বছর তোমার সেবা করার পর, তুমি তাকে মুক্ত করে দেবে।’ তোমাদের পূর্বপুরুষেরা অবশ্য আমার কথা শোনেনি বা আমার বাক্যের প্রতি মনোযোগও দেয়নি।
15 সম্প্রতি তোমরা অনুতাপ করেছিলে ও আমার দৃষ্টিতে যা ভালো, তাই করেছিলে। তোমাদের প্রত্যেকেই তোমাদের স্বদেশি ভাইদের মুক্ত করেছিলে। তোমরা এমনকি, আমার নামে আখ্যাত গৃহে একটি নিয়মও করেছিলে।
16 কিন্তু এখন তোমরা সম্পূর্ণ বিপরীতমুখী হয়েছ এবং আমার নামের প্রতি অশ্রদ্ধা প্রদর্শন করেছ; তোমাদের মধ্যে প্রত্যেকে সেই পুরুষ ও স্ত্রী ক্রীতদাসেদের আবার ফিরিয়ে এনেছ, যাদের তোমরা যেখানে ইচ্ছা, চলে যেতে দিয়েছিলে। তোমরা তাদের পুনরায় তোমাদের ক্রীতদাস হতে বাধ্য করেছ।
17 “সেই কারণে, সদাপ্রভু এই কথা বলেন: তোমরা আমার কথা শোনোনি; তোমাদের সহ স্বদেশবাসীদের প্রতি তোমরা মুক্তি ঘোষণা করোনি। তাই, এখন আমি তোমাদের জন্য ‘মুক্তি’ ঘোষণা করছি, সদাপ্রভু এই কথা বলেন, তরোয়াল, মহামারি ও দুর্ভিক্ষে পতিত হওয়ার জন্য ‘মুক্তি।’ পৃথিবীর সব রাজ্যের কাছে আমি তোমাদের ঘৃণার পাত্র করব।
18 যে সকল মানুষ আমার নিয়ম ভেঙে ফেলেছে এবং ওই নিয়মগুলি পালন করেনি, যা তারা আমার সামনে স্থাপন করেছিল, আমি তাদের সেই বাছুরের মতো করব, যেটি তারা দু-টুকরো করে সেগুলির মাঝখান দিয়ে পার হয়েছিল।
19 যিহূদা ও জেরুশালেমের নেতৃবর্গ, রাজদরবারের কর্মকর্তারা, যাজকেরা ও দেশের অন্য সমস্ত লোক, যারা ওই দ্বিখণ্ডিত বাছুরটির মাঝখান দিয়ে পার হয়েছিল,
20 আমি তাদের সেইসব শত্রুর হাতে সমর্পণ করব, যারা তাদের প্রাণনাশ করতে চায়। তাদের মৃতদেহগুলি আকাশের পাখিদের ও বনের পশুদের আহার হবে।
21 “আমি যিহূদার রাজা সিদিকিয় ও তার রাজকর্মচারীদের, তাদের সেইসব শত্রুর হাতে সমর্পণ করব, যারা তাদের প্রাণনাশ করতে চায়। ব্যাবিলনের-রাজের যে সৈন্যেরা তোমাদের কাছ থেকে চলে গিয়েছিল, তাদেরই হাতে সমর্পণ করব।
22 সদাপ্রভু ঘোষণা করেন, আমি তাদের আদেশ দেব ও এই নগরে নিয়ে আসব। তারা এই নগরের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবে, তা অধিকার করে আগুনে পুড়িয়ে দেবে। আমি যিহূদার নগরগুলি নিবাসী-বিহীন করব, যেন কেউ সেখানে বসবাস করতে না পারে।”