< যিরমিয়ের বই 32 >
1 নেবুখাদনেজারের রাজত্বের আঠারোতম বছরে, যিহূদার রাজা সিদিকিয়ের রাজত্বের দশম বছরে, যিরমিয়ের কাছে সদাপ্রভুর এই বাক্য উপস্থিত হল।
2 ব্যাবিলনের রাজার সৈন্যেরা তখন জেরুশালেম অবরোধ করেছিল। আর ভাববাদী যিরমিয় যিহূদার রাজপ্রাসাদে রক্ষীদের প্রাঙ্গণে বন্দি ছিলেন।
3 যিহূদার রাজা সিদিকিয় সেই সময় যিরমিয়কে এই কথা বলে বন্দি করেছিলেন, “আপনি যেসব কথা বলে ভাববাণী করেন, সেইরকম কেন করেছেন? আপনি বলেন, ‘সদাপ্রভু এই কথা বলেন, আমি এই নগর ব্যাবিলনের রাজার হাতে সমর্পণ করতে চলেছি, আর সে এই নগর দখল করবে।
4 যিহূদার রাজা সিদিকিয় ব্যাবিলনীয়দের হাত এড়াতে পারবে না, কিন্তু সে নিশ্চিতরূপে ব্যাবিলনের রাজার হাতে সমর্পিত হবে। সে ব্যাবিলনের রাজার মুখোমুখি হয়ে তাকে স্বচক্ষে দেখবে ও তার সঙ্গে কথা বলবে।
5 সে সিদিকিয়কে ব্যাবিলনে নিয়ে যাবে। আমি তার তত্ত্বাবধান না করা পর্যন্ত সে সেখানেই থাকবে, একথা সদাপ্রভু বলেন। তুমি যদি ব্যাবিলনীয়দের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করো, তাহলে তুমি সফল হবে না।’”
6 যিরমিয় বললেন, “সদাপ্রভুর বাক্য আমার কাছে উপস্থিত হয়েছে:
7 তোমার কাকা শল্লুমের পুত্র হনমেল তোমার কাছে এসে বলবে, ‘অনাথোতে আমার যে ক্ষেতটি আছে, তা তুমি ক্রয় করো, কারণ নিকটতম আত্মীয়রূপে তা ক্রয় করা তোমার ন্যায়সংগত অধিকার ও কর্তব্য।’
8 “তারপর, সদাপ্রভু যেমন বলেছিলেন, আমার কাকাতো ভাই হনমেল রক্ষীদের প্রাঙ্গণে আমার কাছে এসে বলল, ‘বিন্যামীনের এলাকায় স্থিত অনাথোতে আমার যে ক্ষেতটি আছে, তা তুমি ক্রয় করো। কারণ তা মুক্ত ও দখল করার জন্য তোমার ন্যায়সংগত অধিকার আছে, তাই তুমি নিজের জন্য তা ক্রয় করো।’ “আমি জানতাম যে, এ ছিল সদাপ্রভুর বাক্য;
9 তাই আমার কাকাতো ভাই হনমেলের কাছ থেকে আমি অনাথোতে ওই ক্ষেত্রটি ক্রয় করলাম এবং তাকে সতেরো শেকল রুপো ওজন করে দিলাম।
10 আমি সেই দলিল স্বাক্ষর করে সিলমোহর দিলাম, সাক্ষী রাখলাম এবং দাঁড়িপাল্লায় সেই রুপো ওজন করলাম।
11 আমি সেই ক্রয়ের দলিলটি নিলাম, সিলমোহরাঙ্কিত প্রতিলিপি, যার মধ্যে নিয়ম ও শর্ত লেখা ছিল এবং সিলমোহরাঙ্কিত না করা একটি প্রতিলিপিও নিলাম,
12 আর আমি সেই দলিলটি আমার কাকাতো ভাই হনমেল ও যে সাক্ষীরা দলিলে স্বাক্ষর করেছিলেন, তাদের এবং যে সমস্ত ইহুদি রক্ষীদের প্রাঙ্গণে বসেছিল তাদের সাক্ষাতে মাসেয়ের পৌত্র নেরিয়ের পুত্র বারূককে দিলাম।
13 “তাদের উপস্থিতিতে আমি বারূককে এই সমস্ত আদেশ দিলাম:
14 ‘বাহিনীগণের সদাপ্রভু, ইস্রায়েলের ঈশ্বর এই কথা বলেন, তুমি সিলমোহরাঙ্কিত ও সিলমোহর না করা, ক্রয় করা উভয় দলিলই নাও। সেগুলি তুমি একটি মাটির পাত্রে রাখো, যেন দীর্ঘদিন তা অবিকৃত থাকে।
15 কারণ বাহিনীগণের সদাপ্রভু, ইস্রায়েলের ঈশ্বর, এই কথা বলেন, ঘরবাড়ি, ক্ষেত্র ও দ্রাক্ষাকুঞ্জ, এই দেশে আবার কেনাবেচা করা হবে।’
16 “নেরিয়ের পুত্র বারূককে জমি ক্রয়ের দলিলটি দেওয়ার পর, আমি সদাপ্রভুর কাছে প্রার্থনা করলাম:
17 “অহো, সার্বভৌম সদাপ্রভু, তুমি তোমার মহাপরাক্রমে ও প্রসারিত বাহু দিয়ে আকাশমণ্ডল ও পৃথিবী সৃষ্টি করেছ। তোমার পক্ষে কোনো কিছুই করা কঠিন নয়।
18 তুমি সহস্র-অযুত জনকে তোমার ভালোবাসা প্রদর্শন করে থাকো, কিন্তু বাবাদের পাপের প্রতিফল, তাদের পরে তাদের সন্তানদের কোলে দিয়ে থাকো। মহান ও পরাক্রমী ঈশ্বর, তোমার নাম বাহিনীগণের সদাপ্রভু,
19 তোমার অভিপ্রায় সকল মহান এবং তোমার কাজগুলি শক্তিশালী। তোমার দৃষ্টি মানুষের সমস্ত জীবনাচরণের প্রতি থাকে; তুমি প্রত্যেকের আচরণ ও তার যেমন কর্ম, সেই অনুযায়ী তাকে প্রতিফল দিয়ে থাকো।
20 তুমি মিশরে যেসব চিহ্নকাজ ও বিস্ময়কর সব কাজ করেছিলে, তা ইস্রায়েল ও সমস্ত মানবসমাজে আজও করে যাচ্ছ। তার দ্বারা তুমি তোমার সুনাম আজও অক্ষুণ্ণ রেখেছ।
21 তুমি তোমার প্রজা ইস্রায়েলকে বিভিন্ন চিহ্ন ও বিস্ময়কর সব কাজ, এক পরাক্রমী বাহু ও প্রসারিত বাহুর দ্বারা মহা আতঙ্কের সঙ্গে মিশর থেকে বের করে এনেছিলে।
22 তুমি তাদের এই দেশ দান করেছিলে, যে দুধ ও মধু প্রবাহিত দেশ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি তুমি তাদের পূর্বপুরুষদের দিয়েছিলে।
23 তারা এখানে এসে এই দেশের অধিকার নিয়েছে, তবুও তারা তোমার কথা শোনেনি বা তোমার বিধান পালন করেনি। তুমি তাদের যা করার আদেশ দিয়েছিলে, তা তারা পালন করেনি। তাই তুমি সব ধরনের বিপর্যয় তাদের উপরে নিয়ে এসেছ।
24 “দেখো, নগরের অধিকার নেওয়ার জন্য কী রকম ঢালু জঙ্গল তৈরি করা হয়েছে। তরোয়াল, দুর্ভিক্ষ ও মহামারির কারণে, যারা এই নগর আক্রমণ করেছে, সেই ব্যাবিলনীয়দের হাতে এই নগর তুলে দেওয়া হবে। তুমি যা বলেছিলে, তুমি দেখতে পাচ্ছ, এখন তাই ঘটছে।
25 আর যদিও এই নগর ব্যাবিলনীয়দের হাতে তুলে দেওয়া হবে, তুমি, হে সার্বভৌম সদাপ্রভু, আমাকে বলেছ, ‘ওই ক্ষেত্রটি রুপোর টাকার বিনিময়ে কিনে নাও এবং আদানপ্রদানের সাক্ষী রেখো।’”
26 তারপর সদাপ্রভুর বাক্য যিরমিয়ের কাছে উপস্থিত হল:
27 “আমি সদাপ্রভু, সর্বমানবের ঈশ্বর। আমার পক্ষে কোনো কিছু করা কি খুব কঠিন?
28 সেই কারণে, সদাপ্রভু এই কথা বলেন: আমি ব্যাবিলনীয়দের কাছে ও ব্যাবিলনের রাজা নেবুখাদনেজারের কাছে এই নগর সমর্পণ করতে চলেছি, তারা তা অধিকার করবে।
29 যে ব্যাবিলনীয়েরা এই নগর আক্রমণ করেছে, তারা ভিতরে প্রবেশ করে এই নগরে আগুন লাগিয়ে দেবে; তারা সেইসব গৃহের সঙ্গে তা অগ্নিদগ্ধ করবে, যেগুলির ছাদের উপরে লোকেরা বায়াল-দেবতার উদ্দেশে ধূপদাহ ও অন্যান্য দেবদেবীর উদ্দেশে পেয়-নৈবেদ্য উৎসর্গ করে আমার ক্রোধের সঞ্চার করেছে।
30 “ইস্রায়েল ও যিহূদার লোকেরা তাদের যৌবনকাল থেকে অন্য কিছু নয়, কিন্তু আমার দৃষ্টিতে কেবলই মন্দ কাজ করেছে; প্রকৃতপক্ষে, ইস্রায়েলের লোকেরা অন্য কিছু করেনি, কিন্তু তাদের হাত দিয়ে তৈরি জিনিসগুলি দিয়ে আমার ক্রোধ জাগিয়ে তুলেছে, একথা সদাপ্রভু বলেন।
31 যেদিন থেকে এই নগরের গোড়াপত্তন হয়েছে, সেই থেকে আজ পর্যন্ত এই নগর আমার রোষ ও ক্রোধ এত জাগিয়ে তুলেছে যে, আমি অবশ্যই এই নগরকে আমার দৃষ্টিপথ থেকে অপসারিত করব।
32 ইস্রায়েল ও যিহূদার লোকেরা, তারা নিজেরা, তাদের রাজা ও রাজকর্মচারীরা, তাদের যাজক ও ভাববাদীরা, যিহূদার ও জেরুশালেমের লোকেরা যে সমস্ত অন্যায় করেছে, তার দ্বারা আমার ক্রোধ জাগিয়ে তুলেছে।
33 তারা তাদের পিঠ আমার প্রতি ফিরিয়েছে, তাদের মুখ নয়। যদিও আমি বারবার তাদের উপদেশ দিয়েছি, তারা কিন্তু শোনেনি ও আমার শাসনে সাড়া দেয়নি।
34 তারা তাদের ঘৃণ্য প্রতিমাগুলি আমার নামে আখ্যাত গৃহে স্থাপন করেছে এবং তা কলুষিত করেছে।
35 তারা বিন-হিন্নোমের উপত্যকায় বায়াল-দেবতার জন্য উঁচু সব স্থান নির্মাণ করেছে, যেন তাদের পুত্রকন্যাদের মোলক দেবতার উদ্দেশ্যে বলি দেয়। সেকথা আমি তাদের আদেশ দিইনি বা তা আমার মনেও আসেনি, যেন তারা এরকম ঘৃণ্য কাজ করে যিহূদাকে পাপ করায়।
36 “তোমরা এই নগর সম্বন্ধে বলছ, ‘তরোয়াল, দুর্ভিক্ষ ও মহামারির দ্বারা এই নগর ব্যাবিলনের রাজার হাতে তুলে দেওয়া হবে’; কিন্তু ইস্রায়েলের ঈশ্বর, সদাপ্রভু এই কথা বলেন,
37 আমার ভয়ংকর ক্রোধে ও প্রচণ্ড রোষে, আমি যে সমস্ত দেশে তাদের নির্বাসিত করেছিলাম, সেই সমস্ত দেশ থেকে তাদের নিশ্চয়ই সংগ্রহ করব; আমি তাদের পুনরায় এই দেশে ফিরিয়ে আনব এবং তারা নিরাপদে এখানে বসবাস করবে।
38 তারা আমার প্রজা হবে ও আমি তাদের ঈশ্বর হব।
39 আমি তাদের মঙ্গলের জন্য ও তাদের পরে তাদের সন্তানদের মঙ্গলের জন্য তাদের একনিষ্ঠ হৃদয় ও এক উদ্দেশ্য দেব, যেন তারা সবসময়ই আমাকে ভয় করে।
40 আমি তাদের সঙ্গে এক চিরস্থায়ী নিয়ম করব; তাদের মঙ্গল করায় আমি কখনও নিবৃত্ত হব না, আমাকে ভয় করার জন্য আমি তাদের প্রেরণা দেব, যেন তারা কখনও আমার কাছ থেকে ফিরে না যায়।
41 তাদের মঙ্গলসাধন করে আমি আনন্দিত হব এবং আমার সম্পূর্ণ মনেপ্রাণে নিশ্চিতরূপে তাদের এই দেশে রোপণ করব।
42 “সদাপ্রভু এই কথা বলেন, আমি যে রকম সব মহা বিপর্যয় এসব লোকের উপরে এনেছি, সেইরকমই আমার প্রতিশ্রুত সব সমৃদ্ধি তাদের দেব।
43 আর একবার এই দেশে জমি কেনাবেচা হবে, যে দেশ সম্বন্ধে তোমরা বলো, ‘এই দেশ নির্জন পরিত্যক্ত স্থান, যেখানে কোনো মানুষ বা পশু থাকে না, কারণ এই দেশ ব্যাবিলনীয়দের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে।’
44 জমি রুপো দিয়ে ক্রয় করা হবে, দলিল সব স্বাক্ষরিত হবে, সিলমোহরাঙ্কিত করা হবে ও সাক্ষী রাখা হবে, বিন্যামীন গোষ্ঠীর এলাকায়, জেরুশালেমের চারপাশের গ্রামগুলিতে, যিহূদার সমস্ত নগরে এবং পার্বত্য অঞ্চলের নগরগুলিতে, পশ্চিমের পাহাড়তলিতে এবং নেগেভের দেশগুলিতে, কারণ আমি তাদের বন্দিদশা থেকে ফিরিয়ে আনব, একথা সদাপ্রভু বলেন।”