< যিরমিয়ের বই 25 >
1 যিহূদার রাজা যোশিয়ের পুত্র যিহোয়াকীমের রাজত্বের চতুর্থ বছরে, অর্থাৎ ব্যাবিলনের রাজা নেবুখাদনেজারের রাজত্বের প্রথম বছরে, যিহূদার লোকদের জন্য সদাপ্রভুর বাক্য যিরমিয়ের কাছে উপস্থিত হল।
2 তাই ভাববাদী যিরমিয় যিহূদার সব লোকের কাছে এবং জেরুশালেমে বসবাসকারী সকলের কাছে এই কথা বললেন:
3 যিহূদার রাজা আমোনের পুত্র যোশিয়ের রাজত্বের তেরোতম বছর থেকে আজ পর্যন্ত, এই তেইশ বছর, সদাপ্রভুর বাক্য আমার কাছে উপস্থিত হয়েছে এবং আমি বারবার তোমাদের সঙ্গে কথা বলেছি, কিন্তু তোমরা তা শোনোনি।
4 আর সদাপ্রভু যদিও তাঁর দাস ভাববাদীদের বারবার তোমাদের কাছে প্রেরণ করেছেন, তোমরা কিন্তু তাদের কথা শোনোনি বা তাতে মনোযোগও দাওনি।
5 তারা বলেছিলেন, “তোমাদের প্রত্যেকে এখন তোমাদের মন্দ পথ থেকে ও তোমাদের মন্দ সব অভ্যাস থেকে ফেরো, তাহলে সদাপ্রভু তোমাদের ও তোমাদের পিতৃপুরুষদের এই যে দেশ দিয়েছেন, তার মধ্যে তোমরা চিরকাল বসবাস করতে পারবে।
6 অন্য দেবদেবীর অনুসারী হয়ে তোমরা তাদের সেবা ও উপাসনা করবে না। তোমাদের হাতের তৈরি সব দেবমূর্তি দিয়ে আমার ক্রোধ উত্তেজিত কোরো না। তাহলে আমি তোমাদের কোনো ক্ষতি করব না।”
7 সদাপ্রভু বলেন, “তোমরা কিন্তু আমার কথা শোনোনি এবং তোমাদের হাতে তৈরি ওইসব বিগ্রহের দ্বারা তোমরা আমার ক্রোধ জাগিয়ে তুলেছ। এভাবে তোমরা নিজেরাই নিজেদের ক্ষতিসাধন করেছ।”
8 সেই কারণে, বাহিনীগণের সদাপ্রভু এই কথা বলেন: “তোমরা যেহেতু আমার কথা শোনোনি,
9 আমি উত্তর দিকের সমস্ত জাতিকে ও আমার দাস, ব্যাবিলনের রাজা নেবুখাদনেজারকে ডেকে পাঠাব,” একথা সদাপ্রভু বলেন। “আমি এই দেশ ও এর অধিবাসীদের এবং এর চারপাশের সব জাতির বিরুদ্ধে তাদের নিয়ে আসব। আমি তাদের সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস করব। আমি তাদের বিভীষিকা ও নিন্দার পাত্র করব। তারা চিরকালের জন্য ধ্বংস হবে।
10 আমি তাদের মধ্য থেকে আমোদ ও আনন্দের রব, বর ও কনের আনন্দরব নিবৃত্ত করব। সেখানে জাঁতার শব্দ আর শোনা যাবে না এবং তাদের গৃহের সমস্ত প্রদীপ আমি নিভিয়ে ফেলব।
11 সমস্ত দেশই এক জনশূন্য পতিত ভূমি হয়ে যাবে, আর এই জাতিগুলি সত্তর বছর ধরে ব্যাবিলনের রাজার দাসত্ব করবে।
12 “কিন্তু সেই সত্তর বছর সম্পূর্ণ হলে পর, আমি ব্যাবিলনের রাজা ও তার জাতি এবং ব্যাবিলনীয়দের দেশকে তাদের অপরাধের জন্য শাস্তি দেব,” সদাপ্রভু এই কথা বলেন, “এবং চিরকালের জন্য তা জনমানবহীন স্থানে পরিণত করব।
13 আমি সেই দেশের বিরুদ্ধে যে সমস্ত অভিশাপের কথা বলেছি, যে কথাগুলি এই পুস্তকে লিখিত হয়েছে এবং সব জাতির বিরুদ্ধে যিরমিয় যে সকল ভাববাণী করেছে, সেই সমস্তই তাদের উপরে নিয়ে আসব।
14 তারা নিজেরাই বহু জাতি ও মহান রাজাদের দাসত্ব করবে; তাদের সমস্ত কাজ ও তাদের হাত যা করেছে, সেই অনুযায়ী আমি তাদের প্রতিফল দেব।”
15 ইস্রায়েলের ঈশ্বর, সদাপ্রভু আমাকে এই কথা বললেন: “তুমি আমার হাত থেকে আমার ক্রোধের দ্রাক্ষারসে পূর্ণ এই পেয়ালা নাও এবং আমি যে জাতিদের কাছে তোমাকে পাঠাই, তুমি তা থেকে তাদের পান করাও।
16 তা থেকে পান করলে পর তারা টলমল করবে এবং তাদের মধ্যে আমি যে তরোয়াল প্রেরণ করব, তার দরুন তারা উন্মাদ হয়ে যাবে।”
17 তাই আমি সদাপ্রভুর হাত থেকে সেই পানপাত্র নিলাম এবং যাদের কাছে তিনি আমাকে প্রেরণ করেছিলেন, সেই সমস্ত জাতিকে তা পান করালাম।
18 জেরুশালেম ও যিহূদার সব নগর, তার রাজাদের ও রাজকর্মচারীদের, যেন তারা আজও যেমন আছে, সেইরকম বিভীষিকা ও নিন্দা ও অভিশাপের পাত্র হয়;
19 মিশরের রাজা ফরৌণকে, তাঁর পরিচারকদের ও রাজকর্মচারীদের ও তাঁর সমস্ত প্রজাকে,
20 আর যে সমস্ত বিদেশি সেখানে বসবাস করে; ঊষ দেশের সব রাজাকে; ফিলিস্তিনী সব রাজাকে (অর্থাৎ অস্কিলোন, গাজা, ইক্রোণ এবং অস্দোদের অবশিষ্ট পরিত্যক্ত লোকদের);
21 ইদোম, মোয়াব ও অম্মোনকে;
22 সোর ও সীদোনের সব রাজাকে; সমুদ্র-উপকূল বরাবর সমস্ত রাজাকে;
23 দদান, টেমা, বূষ ও দূরবর্তী স্থানের লোককে;
24 আরবের সমস্ত রাজা এবং প্রান্তের দেশগুলিতে বসবাসকারী বিদেশিদের সব রাজাকে
25 সিম্রি, এলম ও মাদীয় সব রাজাকে;
26 দূরে ও নিকটে স্থিত উত্তর দিকের সব রাজাকে এবং ভূপৃষ্ঠের উপরে স্থিত সমস্ত রাজ্যকে, একের পর অন্য একজনকে পান করালাম। তাদের সবার পান করার পর শেশকের রাজাকেও তা পান করতে হবে।
27 “তারপর তুমি তাদের বোলো, ‘বাহিনীগণের সদাপ্রভু, ইস্রায়েলের ঈশ্বর এই কথা বলেন: পান করো, মত্ত হও ও বমি করো। আর আমি যে বিপক্ষের তরোয়াল প্রেরণ করব, তার জন্য পতিত হও, আর উঠো না।’
28 কিন্তু তারা যদি তোমার হাত থেকে ওই পানপাত্র নিয়ে পান করতে না চায়, তাদের বোলো, ‘বাহিনীগণের সদাপ্রভু এই কথা বলেন: তোমাদের অবশ্যই পান করতে হবে!
29 দেখো আমার নামে আখ্যাত এই নগরের উপরে আমার বিপর্যয় নিয়ে আসা শুরু করলাম, আর তোমরা কি প্রকৃতই অদণ্ডিত থাকবে? না, তোমরা অদণ্ডিত থাকবে না, কারণ পৃথিবীনিবাসী সকলের উপরে আমি এক তরোয়াল আহ্বান করেছি, বাহিনীগণের সদাপ্রভু এই কথা বলেন।’
30 “এখন তাদের বিরুদ্ধে এই ভাববাণী করো এবং তাদের বলো: “‘সদাপ্রভু ঊর্ধ্ব থেকে গর্জন করবেন; তাঁর পবিত্র বাসস্থান থেকে তিনি বজ্রধ্বনি করবেন এবং তাঁর দেশের বিরুদ্ধে প্রবল গর্জন করবেন। তিনি দ্রাক্ষাপেষণকারীদের মতো চিৎকার করবেন, পৃথিবীনিবাসী সকলের বিরুদ্ধে চিৎকার করবেন।
31 সেই কলরব পৃথিবীর প্রান্তসীমা পর্যন্ত প্রতিধ্বনিত হবে, কারণ সদাপ্রভু সব জাতির বিরুদ্ধে অভিযোগ আনবেন; তিনি সব জাতির বিচার করবেন এবং দুষ্টদের তরোয়ালের মুখে ফেলবেন,’” সদাপ্রভু এই কথা বলেন।
32 বাহিনীগণের সদাপ্রভু এই কথা বলেন: “দেখো! এক জাতি থেকে অন্য জাতির উপরে বিপর্যয় ছড়িয়ে পড়ছে; পৃথিবীর প্রান্তসীমা থেকে উঠে আসছে এক শক্তিশালী ঝড়।”
33 সেই সময়ে সদাপ্রভুর দ্বারা নিহতেরা, পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্ত পর্যন্ত, সর্বত্র পড়ে থাকবে। তাদের জন্য শোক করা হবে না বা তাদের সংগ্রহ করে কবর দেওয়া হবে না, কিন্তু মাটিতে পতিত আবর্জনার মতো তারা পড়ে থাকবে।
34 হে পালকেরা, তোমরা কাঁদো ও বিলাপ করো; পালের নেতারা, তোমরা ধুলোয় গড়াগড়ি দাও। কারণ তোমাদের হত্যা করার সময় এসে পড়েছে; তোমরা পড়ে চুরমার হওয়া কোনো সুন্দর পাত্রের মতো চারদিকে পড়ে থাকবে।
35 পালকদের পালানোর কোনো স্থান থাকবে না, পালের নেতাদের পালানোর কোনো জায়গা থাকবে না।
36 ওই পালকদের কান্নার রব শোনো, পালের নেতাদের বিলাপের রব শোনো, কারণ সদাপ্রভু তাদের পালের চারণভূমি ধ্বংস করছেন।
37 সদাপ্রভুর প্রচণ্ড ক্রোধের জন্য শান্তিপূর্ণ পশুচারণভূমিগুলি পরিত্যক্ত পড়ে থাকবে।
38 অত্যাচারীদের তরোয়ালের জন্য হে সদাপ্রভুর প্রচণ্ড ক্রোধের জন্য, সিংহের মতোই তিনি তাঁর আবাস ত্যাগ করে আসবেন, তাদের দেশ জনশূন্য পড়ে থাকবে।