< যিরমিয়ের বই 23 >
1 সদাপ্রভু বলেন, “ধিক্ সেই পালকদের, যারা আমার চারণভূমির মেষদের ছিন্নভিন্ন ও ধ্বংস করে!”
2 সেই কারণে, যারা আমার প্রজাদের চরায়, ইস্রায়েলের ঈশ্বর সদাপ্রভু তাদের উদ্দেশ্যে এই কথা বলেন: “তোমরা যেহেতু আমার মেষদের ছিন্নভিন্ন করেছ, তাদের বিতাড়িত করেছ এবং তাদের প্রতি কোনো যত্ন করোনি, তোমরা তাদের প্রতি যে অন্যায় করেছ, তার জন্য আমি তোমাদের শাস্তি দেব,” সদাপ্রভু এই কথা বলেন।
3 “আমি যে সমস্ত দেশে আমার প্রজাপালকে বিতাড়িত করেছি, আমি স্বয়ং সেখান থেকে তাদের অবশিষ্টাংশকে সংগ্রহ করে তাদের চারণভূমিতে ফিরিয়ে আনব। সেখানে তারা ফলবান হবে ও সংখ্যায় বৃদ্ধি পাবে।
4 আমি তাদের উপরে পালকদের নিযুক্ত করব। তারা তাদের তত্ত্বাবধান করবে। তারা আর ভীত বা আতঙ্কগ্রস্ত হবে না, কেউ হারিয়েও যাবে না,” সদাপ্রভু এই কথা বলেন।
5 সদাপ্রভু বলেন, “সেদিন আসন্ন,” যখন দাউদের বংশ থেকে আমি এক ধার্মিক পল্লবকে তুলে ধরব, সেই রাজা জ্ঞানপূর্বক রাজত্ব করবে এবং সেদেশে যথার্থ ও ন্যায়সংগত কাজ করবে।
6 তার সময়ে যিহূদা পরিত্রাণ পাবে এবং ইস্রায়েল নিরাপদে বসবাস করবে। আর এই নামে সে আখ্যাত হবে, সদাপ্রভু আমাদের ধার্মিক ত্রাণকর্তা।
7 সদাপ্রভু বলেন, “তাহলে সেই দিনগুলি আসছে, যখন লোকেরা আর বলবে না, ‘জীবন্ত সদাপ্রভুর দিব্যি, যিনি ইস্রায়েলীদের মিশর থেকে মুক্ত করে এনেছেন,’
8 কিন্তু তারা বলবে, ‘জীবন্ত সদাপ্রভুর দিব্যি, যিনি ইস্রায়েলের বংশধরদের উত্তরের দেশ থেকে এবং যে সমস্ত দেশে তাদের নির্বাসিত করেছিলেন, সেখান থেকে তাদের নিয়ে এসেছেন।’ তখন তারা স্বদেশে বসবাস করবে।”
9 ভাববাদীদের সম্পর্কিত বিষয়: আমার অন্তর আমার মধ্যে ভেঙে পড়েছে, আমার সব হাড় কাঁপতে থাকে; আমি এক মাতাল ব্যক্তির মতো হয়েছি, দ্রাক্ষারসে পরাভূত কোনো লোকের মতো, সদাপ্রভু ও তাঁর পবিত্র বাক্যের কারণে।
10 দেশ সব ব্যভিচারীতে পূর্ণ; অভিশাপের কারণে দেশ শুকনো হয়ে পড়ে আছে, মরুপ্রান্তের সব চারণভূমি শুকিয়ে গেছে। ভাববাদীরা এক মন্দ উপায় অবলম্বন করে, তারা তাদের ক্ষমতার অন্যায় ব্যবহার করে।
11 “ভাববাদী ও যাজক, উভয়েই ভক্তিহীন; এমনকি, আমার মন্দিরেও আমি তাদের দুষ্টতা দেখি,” সদাপ্রভু এই কথা বলেন।
12 “সেই কারণে তাদের পথ পিচ্ছিল হবে, তাদের অন্ধকারে তাড়িয়ে দেওয়া হবে এবং সেখানেই তাদের পতন হবে। যে বছরে তারা শাস্তি পাবে, আমি তাদের উপরে বিপর্যয় নিয়ে আসব,” সদাপ্রভু এই কথা বলেন।
13 “শমরিয়ার ভাববাদীদের মধ্য আমি এই বিরক্তিকর ব্যাপার দেখেছি, তারা বায়াল-দেবতার নামে ভাববাণী করে আমার প্রজা ইস্রায়েলকে বিপথগামী করেছে।
14 আবার জেরুশালেমের ভাববাদীদের মধ্যে, আমি এই ভয়ংকর ব্যাপার দেখেছি, তারা ব্যভিচার করে ও মিথ্যাচারের জীবন কাটায়। তারা অন্যায়কারীদের হাত শক্ত করে, যেন কেউই তার দুষ্টতার পথ থেকে না ফেরে। তারা সবাই আমার কাছে সদোমের লোকদের মতো; জেরুশালেমের লোকেরা ঘমোরার মতো।”
15 অতএব, ভাববাদীদের সম্পর্কে বাহিনীগণের সদাপ্রভু এই কথা বলেন: “আমি তাদের খেতে দেব তেতো আহার, পান করার জন্য বিষাক্ত জল, কারণ জেরুশালেমের সব ভাববাদীর কাছ থেকে ভক্তিহীনতা ছড়িয়ে পড়েছে সমস্ত দেশে।”
16 বাহিনীগণের সদাপ্রভু এই কথা বলেন, “ভাববাদীরা তোমাদের কাছে যে ভাববাণী বলে, তোমরা সেই কথা শুনো না; তারা মিথ্যা আশা তোমাদের মনে ভরায়। তাদের মনগড়া দর্শনের কথা তারা বলে, যা সদাপ্রভুর মুখ থেকে নির্গত হয়নি।
17 যারা আমাকে অবজ্ঞা করে, তারা তাদের কাছে বলে যায়, ‘সদাপ্রভু বলেন: তোমাদের শান্তি হবে।’ আর যারাই তাদের হৃদয়ের একগুঁয়েমির অধীনে চলে, তারা বলে, ‘তোমাদের কোনো ক্ষতি হবে না।’
18 কিন্তু তাদের মধ্যে কে সদাপ্রভুর সভায় দাঁড়িয়েছে তাঁকে দেখার বা তাঁর কথা শোনার জন্য? কে তাঁর বাক্য শুনে তা অবধান করেছে?
19 দেখো, সদাপ্রভুর ক্রোধ ঝড়ের মতো আছড়ে পড়বে, তা ঘূর্ণিবায়ুর মতো ঘুরে ঘুরে দুষ্টদের মাথায় পড়বে।
20 সদাপ্রভুর ক্রোধ ফিরে আসবে না যতক্ষণ না তা তাঁর হৃদয়ের অভিপ্রায় পূর্ণরূপে সাধন করে। আগামী দিনগুলিতে তোমরা তা স্পষ্ট বুঝতে পারবে।
21 আমি এসব ভাববাদীকে প্রেরণ করিনি, তবুও তারা নিজেদেরই বার্তা আমার বলে দাবি করেছে। আমি তাদের সঙ্গে কথা বলিনি, তবুও তারা ভাববাণী বলেছে।
22 কিন্তু, যদি তারা আমার দরবারে দাঁড়াত, তারা আমার কথা আমার প্রজাদের কাছে ঘোষণা করত এবং তাদের মন্দ পথ ও সব মন্দ কর্ম করা থেকে ফেরাত।
23 “আমি কি কেবলমাত্র নিকটের ঈশ্বর,” সদাপ্রভু এই কথা বলেন, “আমি কি দূরের ঈশ্বর নই?
24 কেউ কি এমন কোনো গোপন স্থানে লুকাতে পারে, যেখানে আমি তাকে দেখতে পাব না?” সদাপ্রভু এই কথা বলেন। “আমি কি স্বর্গ ও মর্ত্য জুড়ে থাকি না?” সদাপ্রভু এই কথা বলেন।
25 “যে ভাববাদীরা আমার নামে মিথ্যা ভাববাণী বলে, সেই ভাববাদীরা কী বলে, আমি তা শুনেছি। তারা বলে, ‘আমি একটি স্বপ্ন দেখেছি! আমি একটি স্বপ্ন দেখেছি!’
26 এসব ভণ্ড ভাববাদীর মনে কত কাল এসব থাকবে, যারা নিজেদের ভ্রান্ত মন থেকে উৎপন্ন এসব ভাববাণী বলে?
27 তারা মনে করে, পরস্পরের কাছে তারা যে স্বপ্নের কথা বলে, তার ফলে আমার প্রজারা আমার নাম ভুলে যাবে, যেভাবে তাদের পূর্বপুরুষেরা বায়াল-দেবতার উপাসনার মাধ্যমে আমার নাম ভুলে গিয়েছিল।
28 যে ভাববাদী স্বপ্ন দেখেছে, সে তার স্বপ্নের কথা বলুক, কিন্তু যার কাছে আমার বাক্য আছে, সে তা বিশ্বস্তভাবে বলুক। কারণ শস্যদানার সঙ্গে খড়ের কী সম্পর্ক?” সদাপ্রভু এই কথা বলেন।
29 “আমার বাক্য কি আগুনের মতো নয়,” সদাপ্রভু এই কথা বলেন, “এবং তা কি কোনো হাতুড়ির মতো নয়, যা পাথরকে খণ্ড খণ্ড করে?
30 “সেই কারণে,” সদাপ্রভু বলেন, “আমি সেইসব ভাববাদীর বিরুদ্ধে, যারা পরস্পরের কাছ থেকে বাক্য চুরি করে ও দাবি করে যে সেই বাক্যগুলি আমার কাছ থেকে পেয়েছে।”
31 সদাপ্রভু বলেন, “হ্যাঁ, আমি সেইসব ভাববাদীর বিরুদ্ধে, যারা নিজেরা নিজেদের জিভ নাড়ায়, অথচ বলে, ‘সদাপ্রভু ঘোষণা করেন।’
32 প্রকৃতপক্ষে, আমি তাদের বিরুদ্ধে, যারা আমার নামে মিথ্যা স্বপ্নের ভাববাণী বলে,” সদাপ্রভু এই কথা বলেন। “তারা তাদের সেগুলি বলে এবং তাদের ভাবনাচিন্তাহীন মিথ্যার দ্বারা আমার প্রজাদের বিপথগামী করে, যদিও আমি তাদের পাঠাইনি বা নিয়োগ করিনি। তারা এই লোকদের বিন্দুমাত্রও উপকার করতে পারে না,” সদাপ্রভু এই কথা বলেন।
33 “মনে করো, কোনো প্রজা বা ভাববাদীদের বা যাজকদের মধ্যে কোনো একজন তোমাকে জিজ্ঞাসা করে, ‘সদাপ্রভু কোনও ভাববাণী দিয়ে এখন তোমাকে ভারগ্রস্ত করেছেন?’ তাহলে তাদের বোলো, ‘তোমরাই হলে সেই ভার। সদাপ্রভু বলেছেন, তিনি তোমাদের পরিত্যাগ করবেন।’
34 কোনো ভাববাদী বা যাজক বা অন্য কেউ যদি দাবি করে, ‘এই হল সদাপ্রভুর কাছ থেকে পাওয়া প্রত্যাদেশ,’ তাহলে আমি সেই ব্যক্তিকে এবং তার পরিজনদের শাস্তি দেব।
35 তোমাদের প্রত্যেকে তার বন্ধু বা আপনজনকে এই কথা বলতে থাকো: ‘সদাপ্রভু কি উত্তর দিয়েছেন?’ অথবা ‘সদাপ্রভু কী কথা বলেছেন?’
36 কিন্তু তোমরা আর ‘সদাপ্রভুর ভাববাণী’ বলে উল্লেখ করবে না, কারণ সব মানুষের নিজেরই কথা তার পক্ষে ভারস্বরূপ হবে এবং এইভাবে তোমরা জীবন্ত ঈশ্বরের সব বাক্যকে বিকৃত করে থাকো, যিনি হলেন বাহিনীগণের সদাপ্রভু, আমাদের ঈশ্বর।
37 তোমরা এই কথা কোনো ভাববাদীকে বলতে থাকো, ‘আপনাকে সদাপ্রভু কী উত্তর দিয়েছেন?’ বা ‘সদাপ্রভু কী কথা বলেছেন?’
38 তোমরা যদিও দাবি করো, ‘এই হল সদাপ্রভুর ভাববাণী,’ একথা সদাপ্রভু বলেন: তোমরা এই কথাগুলি ব্যবহার করো, ‘এই হল সদাপ্রভুর ভাববাণী,’ যদিও আমি তোমাদের বলেছি, তোমরা ‘এই হল সদাপ্রভুর ভাববাণী,’ একথা অবশ্যই আর বলবে না।
39 অতএব, আমি নিশ্চিতরূপে তোমাদের ভুলে যাব এবং যে নগর আমি তোমাদের ও তোমাদের পিতৃপুরুষদের দিয়েছিলাম, তা আমার উপস্থিতি থেকে দূরে নিক্ষেপ করব।
40 আমি তোমাদের উপরে চিরস্থায়ী দুর্নাম নিয়ে আসব—এক চিরকালীন লজ্জা, যা লোকেরা ভুলে যাবে না।”