< যিশাইয় ভাববাদীর বই 44 >
1 “কিন্তু এখন, ওহে আমার দাস যাকোব, আমার মনোনীত ইস্রায়েল, তোমরা শোনো।
2 যিনি তোমাকে নির্মাণ করেছেন, যিনি মায়ের গর্ভে তোমাকে গঠন করেছেন এবং যিনি তোমাকে সাহায্য করবেন, সেই সদাপ্রভু এই কথা বলেন: ওহে আমার দাস যাকোব, আমার মনোনীত যিশুরূণ, তুমি ভয় কোরো না।
3 কারণ আমি তৃষিত ভূমিতে জল ঢেলে দেব, শুষ্ক মাটিতে বইয়ে দেব নদীর স্রোত; আমি তোমার বংশধরদের উপরে ঢেলে দেব আমার আত্মা, তোমার সন্তানদের উপরে ঢেলে দেব আমার আশীর্বাদ।
4 যেমন জলস্রোতের তীরে ঝাউ গাছ, তেমনই চারণভূমিতে তৃণের মতো তারা উৎপন্ন হবে।
5 কেউ একজন বলবে, ‘আমি সদাপ্রভুর’; অন্য একজন যাকোবের নামে নিজের পরিচয় দেবে; আরও একজন তার হাতে লিখবে, ‘সদাপ্রভুর,’ আর তারা ইস্রায়েল নামে পদবি গ্রহণ করবে।
6 “ইস্রায়েলের রাজা ও মুক্তিদাতা, সর্বশক্তিমান সদাপ্রভু এই কথা বলেন: আমিই প্রথম ও আমিই শেষ: আমি ছাড়া আর কোনো ঈশ্বর নেই।
7 তাহলে আমার মতো আর কে আছে? সে সেকথা ঘোষণা করুক। সে তা বলুক ও আমার সামনে উপস্থাপন করুক; আমার পুরাকালের লোকদের স্থাপন করার সময় কী ঘটেছিল, আর ভবিষ্যতেই বা কী ঘটবে, হ্যাঁ, সে আগাম বলুক, ভাবীকালে কী ঘটবে।
8 তোমরা ভয়ে কেঁপো না, ভয় কোরো না। একথা আমি কি ঘোষণা করিনি ও বহুপূর্বেই তা বলে দিইনি? তোমরাই আমার সাক্ষী। আমি ছাড়া আর কোনো ঈশ্বর কি আছে? না, আর কোনো শৈল নেই; আমি তেমন কাউকে জানি না।”
9 যারা প্রতিমা নির্মাণ করে, তারা কিছুই নয়, তাদের নির্মিত মনোহর বস্তুগুলি কোনো উপকারে আসে না। যারা তাদের হয়ে কথা বলে, তারা অন্ধ; নিজেদেরই লজ্জা উদ্রেকের জন্য তারা অজ্ঞ প্রতিপন্ন হয়।
10 কে কোনো প্রতিমার আকার দেয় ও কোনো মূর্তি ছাঁচে ঢালে, যা তার কোনো উপকারে আসে না?
11 সে ও তার অনুগামী সকলে লজ্জিত হবে; শিল্পকরেরা মানুষ ছাড়া আর কিছুই নয়। তারা সকলে এসে নিজের অবস্থান গ্রহণ করুক; তাদের সকলকে আতঙ্কগ্রস্ত ও নীচ প্রতিপন্ন করা হবে।
12 কামার একটি যন্ত্র গ্রহণ করে ও জ্বলন্ত কয়লায় তা নিয়ে কাজ করে; হাতুড়ি পিটিয়ে সে এক মূর্তি তৈরি করে, সে তার শক্তিশালী হাতে তার আকৃতি দেয়। সে ক্ষুধার্ত হয়ে তার শক্তি হারায়; জলপান না করে সে মূর্ছিত হয়।
13 ছুতোর একটি সুতো দিয়ে মাপে ও কম্পাস দিয়ে তার রূপরেখা তৈরি করে; ছেনি দিয়ে সে তা খোদাই করে ও কম্পাস দিয়ে তার আকার ঠিক করে। সে তাতে পুরুষের আকৃতি দেয়, যার মধ্যে থাকে মানুষের সব সৌন্দর্য, যেন তা কোনো দেবালয়ে স্থান পেতে পারে।
14 সে সিডার গাছ কেটে ফেলে, কিংবা বেছে নেয় কোনো সাইপ্রেস বা ওক গাছ। সে বনের গাছপালার সঙ্গে সেটিকে বাড়তে দেয়, কিংবা রোপণ করে পাইন গাছ, বৃষ্টি যাকে বাড়িয়ে তোলে।
15 পরে তা মানুষের জ্বালানি কাঠ হয়; তার একটি অংশ নিয়ে সে আগুন পোহায়, একটি অংশে আগুন জ্বালিয়ে রুটি সেঁকে। আবার তা দিয়ে সে এক দেবতাও নির্মাণ করে ও তার উপাসনা করে, একটি প্রতিমা নির্মাণ করে তার কাছে সে প্রণত হয়।
16 অর্ধেক কাঠ দিয়ে সে আগুন জ্বালায়, তার উত্তাপে সে রান্না খাবার করে, মাংস ঝলসে নিয়ে সে তা দিয়ে উদরপূর্তি করে। আবার সে আগুনের তাপ নেয় ও বলে, “আহা! আমি উষ্ণ হয়েছি, আগুনের তাপ নিচ্ছি।”
17 কাঠের অবশিষ্ট অংশ নিয়ে সে এক দেবতা, তার আরাধ্য মূর্তি নির্মাণ করে; সে তার কাছে প্রণত হয়ে উপাসনা করে। সে তার কাছে প্রার্থনা করে ও বলে, “আমাকে রক্ষা করো; তুমি আমার দেবতা!”
18 তারা কিছু জানে না, কিছু বোঝে না; তাদের চোখে প্রলেপ থাকে, তাই তারা দেখতে পায় না, তাদের মন থাকে অবরুদ্ধ, তাই তারা বুঝতে পারে না।
19 কেউ থেমে একটু চিন্তা করে না, কারও তেমন জ্ঞান বা বোধবুদ্ধি নেই যে বলে, “কাঠের অর্ধেক আমি জ্বালানিরূপে ব্যবহার করেছি; এর অঙ্গারে আমি এমনকি খাবার তৈরি করেছি, মাংস রান্না করে আমি তা খেয়েছি। তাহলে এর অবশিষ্ট অংশ নিয়ে আমি কি কোনো ঘৃণ্য বস্তু তৈরি করব? একটি কাঠের টুকরোর কাছে আমি কি প্রণত হব?”
20 সে যেন ছাই ভোজন করে, এক মোহগ্রস্ত হৃদয় তাকে বিপথগামী করে; সে নিজেই নিজেকে রক্ষা করতে পারে না, কিংবা বলে না, “আমার ডান হাতে রাখা এই বস্তুটি কি মিথ্যা নয়?”
21 “ওহে যাকোব, এসব কথা স্মরণে রেখো, কারণ ওহে ইস্রায়েল, তুমি আমার দাস। আমি তোমাকে গঠন করেছি, তুমি আমার দাস; ওহে ইস্রায়েল, আমি তোমাকে ভুলে যাব না।
22 আমি তোমার সব অপরাধ মেঘের মতো সরিয়ে ফেলেছি, তোমার সব পাপ সকালের কুয়াশার মতো দূর করেছি। তুমি আমার কাছে ফিরে এসো, কারণ আমি তোমাকে মুক্ত করেছি।”
23 আকাশমণ্ডল, আনন্দে গান গাও, কারণ সদাপ্রভু এ কাজ করেছেন; পৃথিবীর গভীরতম স্থান সকল, তোমরাও জয়ধ্বনি করো। যত পাহাড়-পর্বত, সমস্ত অরণ্য ও সেগুলির মধ্যে স্থিত সব গাছপালা, তোমরা আনন্দ সংগীতে ফেটে পড়ো, কারণ সদাপ্রভু যাকোবকে মুক্ত করেছেন, তিনি ইস্রায়েলে তাঁর গৌরব প্রকাশ করেন।
24 “সদাপ্রভু, যিনি তোমাকে মায়ের গর্ভে গঠন করেছেন, তোমার সেই মুক্তিদাতা একথা বলেন: “আমিই সদাপ্রভু, যিনি এই সমস্ত নির্মাণ করেছেন, যিনি একা আকাশমণ্ডল বিস্তার করেছেন, যিনি স্বয়ং পৃথিবীকে প্রসারিত করেছেন,
25 যিনি ভণ্ড ভাববাদীদের চিহ্নসকল ব্যর্থ করেন এবং গণকদের মূর্খ প্রতিপন্ন করেন, যিনি জ্ঞানবানদের শিক্ষা বিফল করেন ও তা অসারতায় পরিণত করেন,
26 যিনি তাঁর দাসেদের কথা সফল করেন ও তাঁর দূতদের পূর্বঘোষণা পূর্ণ করেন, “যিনি জেরুশালেমের বিষয়ে বলেন, ‘এতে লোকেদের বসতি হবে,’ যিহূদার নগরগুলির বিষয়ে বলেন, ‘সেগুলি পুনর্নির্মিত হবে,’ তার ধ্বংসাবশেষকে বলেন, ‘আমি তা পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করব,’
27 যিনি অগাধ জলরাশিকে বলেন, ‘শুষ্ক হও, আমি তোমার স্রোতোধারাগুলি শুকিয়ে ফেলব,’
28 যিনি কোরস সম্পর্কে বলেন, ‘সে হবে আমার মেষদের পালক এবং আমি যা চাই, সে তা পূর্ণ করবে; সে জেরুশালেম সম্পর্কে বলবে, “তা পুনর্নির্মিত হোক,” এবং তার মন্দির সম্পর্কে বলবে, “এর ভিত্তিপ্রস্তরগুলি স্থাপিত হোক।”’