+ আদিপুস্তক 1 >
1 শুরুতে ঈশ্বর আকাশমণ্ডল ও পৃথিবী সৃষ্টি করলেন।
১আদিতে ঈশ্বর আকাশমণ্ডল ও পৃথিবীর সৃষ্টি করলেন।
2 এমতাবস্থায় পৃথিবী নিরবয়ব ও ফাঁকা ছিল, গভীরের উপরের স্তরে অন্ধকার ছেয়ে ছিল, এবং ঈশ্বরের আত্মা জলের উপর ভেসে বেড়াচ্ছিলেন।
২পৃথিবী বিন্যাস বিহীন ও শূন্য ছিল এবং অন্ধকার জলরাশির উপরে ছিল, আর ঈশ্বরের আত্মা জলের উপরে চলাচল করছিলেন।
3 আর ঈশ্বর বললেন, “আলো হোক,” এবং আলো হল।
৩পরে ঈশ্বর বললেন, আলো হোক; তাতে আলো হল।
4 ঈশ্বর দেখলেন যে সেই আলো ভালো হয়েছে, এবং তিনি অন্ধকার থেকে আলোকে বিচ্ছিন্ন করলেন।
৪তখন ঈশ্বর আলো উত্তম দেখলেন এবং ঈশ্বর আলো ও অন্ধকার আলাদা করলেন।
5 ঈশ্বর আলোকে “দিন” নাম দিলেন এবং অন্ধকারকে “রাত” নাম দিলেন। সন্ধ্যা হল এবং সকাল হল—এই হল প্রথম দিন।
৫আর ঈশ্বর আলোর নাম “দিন” ও অন্ধকারের নাম “রাত” রাখলেন। সন্ধ্যা ও সকাল হলে প্রথম দিন হল।
6 আর ঈশ্বর বললেন, “পৃথিবীর জল থেকে আকাশের জলকে আলাদা করার জন্য এই দুই ধরনের জলের মাঝখানে উন্মুক্ত এলাকা তৈরি হোক।”
৬পরে ঈশ্বর বললেন, “জলের মধ্যে আকাশ (বায়ুমণ্ডল) হোক ও জলকে দুই ভাগে আলাদা করুক।”
7 অতএব ঈশ্বর উন্মুক্ত এলাকা তৈরি করলেন এবং সেই এলাকার উপরের ও নিচের জলকে আলাদা করে দিলেন। আর তা সেইমতোই হল।
৭ঈশ্বর এই ভাবে বায়ুমণ্ডল করে আকাশের উপরের জল থেকে নীচের জল পৃথক করলেন; তাতে সেরকম হল।
8 ঈশ্বর সেই উন্মুক্ত এলাকাকে “আকাশ” নাম দিলেন। আর সন্ধ্যা হল ও সকাল হল—এই হল দ্বিতীয় দিন।
৮পরে ঈশ্বর আকাশের নাম আকাশমণ্ডল রাখলেন। আর সন্ধ্যা ও সকাল হলে দ্বিতীয় দিন হল।
9 আর ঈশ্বর বললেন, “আকাশের নিচের সব জল এক স্থানে জমা হোক, এবং শুকনো জমি দৃষ্টিগোচর হোক।” আর তা সেইমতোই হল।
৯পরে ঈশ্বর বললেন, “আকাশমণ্ডলের নীচে অবস্থিত সমস্ত জল এক জায়গায় জমা হোক ও স্থল প্রকাশিত হোক,” তাতে সেরকম হল।
10 ঈশ্বর সেই শুকনো জমির নাম দিলেন “ভূমি” এবং জমা জলকে তিনি “সমুদ্র” নাম দিলেন। আর ঈশ্বর দেখলেন যে সেটি ভালো হয়েছে।
১০তখন ঈশ্বর শুকনো জায়গার নাম ভূমি ও জলরাশির নাম সমুদ্র রাখলেন; আর ঈশ্বর দেখলেন যে, তা উত্তম।
11 পরে ঈশ্বর বললেন, “ভূমি গাছপালা উৎপন্ন করুক: সেগুলির বিভিন্ন ধরন অনুসারে ভূমিতে উৎপন্ন সবীজ লতাগুল্ম ও বীজ সমেত ফল উৎপাদনকারী গাছ উৎপন্ন হোক।” আর তা সেইমতোই হল।
১১পরে ঈশ্বর বললেন, “ভূমি ঘাস, বীজ উত্পন্নকারী ওষধি ও সবীজ গাছপালা তাদের জাতি অনুযায়ী ফলের উৎপাদক ফলের গাছ, ভূমির উপরে উৎপন্ন করুক,” তাতে সেরকম হল।
12 ভূমি গাছপালা উৎপন্ন করল: নিজস্ব প্রজাতি অনুসারে বীজ উৎপাদনকারী লতাগুল্ম এবং নিজস্ব প্রজাতি অনুসারে বীজ সমেত ফল উৎপাদনকারী গাছ উৎপন্ন হল। এবং ঈশ্বর দেখলেন যে সেগুলি ভালো হয়েছে।
১২ফলে ভূমি ঘাস, তাদের জাতি অনুযায়ী বীজ উত্পন্নকারী ওষধি, ও তাদের জাতি অনুযায়ী সবীজ ফলের উৎপাদক গাছ, উৎপন্ন করল; আর ঈশ্বর দেখলেন যে, সে সকল ভালো।
13 আর সন্ধ্যা হল ও সকাল হল—এই হল তৃতীয় দিন।
১৩আর সন্ধ্যা ও সকাল হলে তৃতীয় দিন হল।
14 আর ঈশ্বর বললেন, “রাত থেকে দিনকে আলাদা করার জন্য আকাশের উন্মুক্ত এলাকায় জ্যোতি হোক, এবং বিভিন্ন ঋতু, দিন ও বছর চিহ্নিত করার জন্য এগুলি নিদর্শনরূপে কাজ করুক,
১৪পরে ঈশ্বর বললেন, “রাত থেকে দিন কে আলাদা করার জন্য আকাশমণ্ডলের বিতানে নক্ষত্র হোক এবং তারা চিহ্নের মতো হোক, ঋতুর জন্য, রাত এবং সময়ের ও বছরের জন্য হোক;
15 আর পৃথিবীতে আলো দেওয়ার জন্য এগুলি আকাশের উন্মুক্ত এলাকায় আলোর উৎস হয়ে যাক।” আর তা সেরকমই হল।
১৫এবং পৃথিবীতে আলো দেবার জন্য দীপ বলে আকাশ (বায়ুমণ্ডল) থাকুক,” তাতে সেরকম হল।
16 ঈশ্বর দুটি বড়ো জ্যোতি তৈরি করলেন—দিন নিয়ন্ত্রিত করার জন্য অপেক্ষাকৃত বড়ো জ্যোতি এবং রাত নিয়ন্ত্রিত করার জন্য অপেক্ষাকৃত ছোটো জ্যোতি। তিনি তারকামালাও তৈরি করলেন।
১৬ঈশ্বর সময়ের উপরে কর্তৃত্ব করতে এক মহাজ্যোতি ও রাতের উপরে কর্তৃত্ব করতে তার থেকেও ছোট এক জ্যোতি, এই দুটি বড় জ্যোতি এবং সমস্ত নক্ষত্র সৃষ্টি করলেন।
17 পৃথিবীতে আলো দেওয়ার জন্য ঈশ্বর সেগুলিকে আকাশের উন্মুক্ত এলাকায় বসিয়ে দিলেন,
১৭ঈশ্বর পৃথিবীতে আলো দেবার জন্য তাদেরকে আকাশে স্থাপন করলেন এবং
18 যেন সেগুলি দিন ও রাতের উপরে প্রভুত্ব করতে পারে, এবং অন্ধকার থেকে আলোকে আলাদা করতে পারে। আর ঈশ্বর দেখলেন যে তা ভালো হয়েছে।
১৮দিন ও রাতের উপরে কর্তৃত্ব করার জন্য এবং আলো থেকে অন্ধকার আলাদা করার জন্য ঈশ্বর ঐ জ্যোতিগুলিকে আকাশে স্থাপন করলেন এবং ঈশ্বর দেখলেন যে, সে সব উত্তম।
19 আর সন্ধ্যা হল এবং সকাল হল—এই হল চতুর্থ দিন।
১৯আর সন্ধ্যা ও সকাল হলে চতুর্থ দিন হল।
20 আর ঈশ্বর বললেন, “জলে জীবিত প্রাণীর ঝাঁক দেখা যাক এবং আকাশে পৃথিবীর উপর পাখিরা উড়ে বেড়াক।”
২০পরে ঈশ্বর বললেন, “জল নানাজাতীয় জলজ প্রাণীতে প্রাণীময় হোক এবং ভূমির উপরে আকাশে পাখিরা উড়ুক।”
21 তাই ঈশ্বর সমুদ্রের বড়ো বড়ো প্রাণীদের এবং জলে থাকা প্রত্যেকটি জীবিত ও গতিশীল জীবকে তাদের প্রজাতি অনুসারে, এবং প্রত্যেকটি ডানাযুক্ত পাখিকে তাদের প্রজাতি অনুসারে সৃষ্টি করলেন। আর ঈশ্বর দেখলেন যে তা ভালো হয়েছে।
২১তখন ঈশ্বর বৃহৎ জলজ প্রাণীদের ও যে নানাজাতীয় জলজ প্রাণীতে জল প্রাণীময় আছে, সে সবের এবং নানাজাতীয় পাখি সৃষ্টি করলেন। পরে ঈশ্বর দেখলেন যে সে সব উত্তম।
22 ঈশ্বর তাদের আশীর্বাদ করে বললেন, “ফলবান হও ও সংখ্যায় বৃদ্ধি পেয়ে সমুদ্রের জল ভরিয়ে তোলো, এবং পৃথিবীর বুকে পাখিরাও সংখ্যায় বৃদ্ধি পাক।”
২২আর ঈশ্বর সে সকলকে আশীর্বাদ করে বললেন, “তোমরা ফলবান ও বহুবংশ হও, সমুদ্রের জল পরিপূর্ণ কর এবং পৃথিবীতে পাখিদের বৃদ্ধি হোক।”
23 আর সন্ধ্যা হল এবং সকাল হল—এই হল পঞ্চম দিন।
২৩আর সন্ধ্যা ও সকাল হলে পঞ্চম দিন হল।
24 আর ঈশ্বর বললেন, “ভূমি নিজস্ব প্রজাতি অনুসারে জীবিত প্রাণী উৎপন্ন করুক: গৃহপালিত পশু, জমির সরীসৃপ প্রাণী, এবং বন্যপশু, প্রত্যেকে নিজস্ব প্রজাতি অনুসারেই হোক।” আর তা সেইমতোই হল।
২৪পরে ঈশ্বর বললেন, “ভূমি নানাজাতীয় প্রাণীতে, অর্থাৎ তাদের জাতি অনুযায়ী পশুপাল, সরীসৃপ ও বন্য পশু সৃষ্টি করুক; তাতে সেরকম হল।”
25 বন্যপশুদের তাদের নিজস্ব প্রজাতি অনুসারে, গৃহপালিত পশুদের তাদের নিজস্ব প্রজাতি অনুসারে, এবং জমির সরীসৃপ প্রাণীদের তাদের নিজস্ব প্রজাতি অনুসারে ঈশ্বর তৈরি করলেন। আর ঈশ্বর দেখলেন যে তা ভালো হয়েছে।
২৫ফলে ঈশ্বর নিজের নিজের জাতি অনুযায়ী বন্য পশু ও নিজের নিজের জাতি অনুযায়ী পশুপাল ও নিজের নিজের জাতি অনুযায়ী যাবতীয় ভূচর সরীসৃপ সৃষ্টি করলেন; আর ঈশ্বর দেখলেন যে, সে সব উত্তম।
26 তখন ঈশ্বর বললেন, “এসো, আমরা আমাদের প্রতিমূর্তিতে ও আমাদের সাদৃশ্যে মানুষ তৈরি করি, যেন তারা সমুদ্রের মাছেদের উপরে এবং আকাশের পাখিদের উপরে, গৃহপালিত পশুদের ও সব বন্যপশুর উপরে, এবং জমির সব সরীসৃপ প্রাণীর উপরে কর্তৃত্ব করে।”
২৬পরে ঈশ্বর বললেন, “আমরা আমাদের প্রতিমূর্ত্তিতে, আমাদের সঙ্গে মিল রেখে মানুষ সৃষ্টি করি; আর তারা সমুদ্রের মাছদের ওপরে, আকাশের পাখিদের ওপরে, পশুদের ওপরে, সমস্ত পৃথিবীর ওপরে ও ভূমিতে চলাচলকারী যাবতীয় সরীসৃপের ওপরে কর্তৃত্ব করুক।”
27 অতএব ঈশ্বর তাঁর নিজস্ব প্রতিমূর্তিতে মানুষ সৃষ্টি করলেন, ঈশ্বরের প্রতিমূর্তিতেই তিনি তাকে সৃষ্টি করলেন; পুরুষ ও স্ত্রী করে তিনি তাদের সৃষ্টি করলেন।
২৭পরে ঈশ্বর নিজের প্রতিমূর্ত্তিতে মানুষকে সৃষ্টি করলেন; ঈশ্বরের প্রতিমূর্তিতেই তাকে সৃষ্টি করলেন, পুরুষ ও স্ত্রী করে তাদেরকে সৃষ্টি করলেন।
28 ঈশ্বর তাদের আশীর্বাদ করে বললেন, “তোমরা ফলবান হও ও সংখ্যায় বৃদ্ধিলাভ করো; পৃথিবী ভরিয়ে তোলো ও এটি বশে রেখো। সমুদ্রের মাছগুলির উপরে ও আকাশের পাখিদের উপরে এবং প্রত্যেকটি সরীসৃপ প্রাণীর উপরে তোমরা কর্তৃত্ব কোরো।”
২৮পরে ঈশ্বর তাদেরকে আশীর্বাদ করলেন; ঈশ্বর বললেন, “তোমরা ফলবান ও বহুবংশ হও এবং পৃথিবী পরিপূর্ণ ও কর্তৃত্ব কর, আর সমুদ্রের মাছদের ওপরে, আকাশের পাখিদের ওপরে এবং ভূমিতে গমনশীল যাবতীয় জীবজন্তুর ওপরে কর্তৃত্ব কর।”
29 পরে ঈশ্বর বললেন, “প্রত্যেকটি সবীজ লতাগুল্ম, যা সমগ্র পৃথিবীর বুকে উৎপন্ন হয় ও বীজ সমেত ফল উৎপাদনকারী প্রত্যেকটি গাছপালা আমি তোমাদের দিলাম। সেগুলি তোমাদের খাদ্যদ্রব্য হবে।
২৯ঈশ্বর আরও বললেন, “দেখ, আমি সমস্ত পৃথিবীতে অবস্থিত যাবতীয় বীজৎপাদক ওষধি ও যাবতীয় সবীজ ফলদায়ী বৃক্ষ তোমাদেরকে দিলাম, তা তোমাদের খাদ্য হবে।”
30 আর পৃথিবীর সব পশুর ও আকাশের সব পাখির এবং সব সরীসৃপ প্রাণীর কাছে—যে সবকিছুর মধ্যে জীবন আছে—খাদ্যদ্রব্যরূপে আমি প্রত্যেকটি সবুজ চারাগাছ দিলাম।” আর তা সেইমতোই হল।
৩০আর ভূমিতে চরাচর যাবতীয় পশু ও আকাশের যাবতীয় পাখি ও ভূমিতে বুকে হেঁটে চলা যাবতীয় কীট, এই সব প্রাণীর আহারের জন্য সবুজ গাছপালা সকল দিলাম। তাতে সেরকম হল।
31 ঈশ্বর যা যা তৈরি করলেন, তা তিনি দেখলেন, এবং তা খুবই ভালো হল। আর সন্ধ্যা হল ও সকাল হল—এই হল ষষ্ঠ দিন।
৩১পরে ঈশ্বর নিজের তৈরী সব জিনিসের প্রতি দেখলেন, আর দেখলেন, সে সবই খুবই ভালো। আর সন্ধ্যা ও সকাল হলে ষষ্ঠ দিন হল।