< আদিপুস্তক 50 >

1 যোষেফ তাঁর বাবার উপর ঝাঁপিয়ে পড়লেন এবং কাঁদতে কাঁদতে তাঁকে চুমু দিলেন।
তখন যোষেফ নিজের বাবার মুখে মুখ দিয়ে কাঁদলেন ও তাকে চুম্বন করলেন।
2 পরে যোষেফ তাঁর সেবায় নিয়োজিত চিকিৎসকদের তাঁর বাবা ইস্রায়েলের দেহটি সুগন্ধি বস্তু দ্বারা রক্ষা করার নির্দেশ দিলেন। অতএব চিকিৎসকরা তাঁর দেহটি সুগন্ধি বস্তু দ্বারা সংরক্ষণ করলেন,
আর যোষেফ নিজের বাবার দেহে ক্ষয়-নিবারক দ্রব্য দিতে নিজের দাস চিকিৎসকদেরকে আদেশ করলেন, তাতে চিকিৎসকেরা ইস্রায়েলের দেহে ক্ষয়-নিবারক দ্রব্য দিল।
3 তাঁরা পুরো চল্লিশ দিন সময় নিলেন, কারণ সুগন্ধি বস্তু দ্বারা শবদেহ সংরক্ষণ করার জন্য এতখানিই সময় লাগত। আর মিশরীয়রা তাঁর জন্য সত্তর দিন শোক পালন করল।
তারা সেই কাজে চল্লিশ দিন কাটাল, কারণ সেই ক্ষয়-নিবারক দ্রব্য দিতে চল্লিশ দিন লাগে; আর মিশরীয়েরা তাঁর জন্যে সত্তর দিন ধরে কাঁদল।
4 যখন শোকপালনকাল অতিবাহিত হয়ে গেল, তখন যোষেফ ফরৌণের রাজসভাসদদের কাছে গিয়ে বললেন, “আমি যদি আপনাদের দৃষ্টিতে অনুগ্রহ পেয়ে থাকি, তবে আমার হয়ে ফরৌণের কাছে একথা বলুন। তাঁকে বলুন,
সেই শোকের দিন চলে গেলে যোষেফ ফরৌণের আত্মীয়দেরকে বললেন, “যদি আমি আপনাদের দৃষ্টিতে অনুগ্রহ পেয়ে থাকি, তবে ফরৌণের কানে এই কথা বলুন,
5 ‘আমার বাবা আমাকে দিয়ে এক প্রতিজ্ঞা করিয়ে নিয়েছিলেন এবং বলেছিলেন, “আমি মরতে চলেছি; কনান দেশে আমি নিজের জন্য যে কবর খুঁড়ে রেখেছি সেখানেই আমাকে কবর দিয়ো।” এখন আমাকে গিয়ে আমার বাবাকে কবর দিয়ে আসতে দিন; পরে আমি ফিরে আসব।’”
আমার বাবা আমাকে শপথ করিয়ে বলেছেন, দেখ, আমি যাচ্ছি, কনান দেশে আমার জন্য যে কবর খনন করেছি, তুমি আমাকে সেই কবরে রেখো। অতএব অনুরোধ করি, আমাকে যেতে দিন; আমি পিতাকে কবর দিয়ে আবার আসব।”
6 ফরৌণ বললেন, “যাও ও তোমার বাবাকে কবর দাও, যেমনটি করার জন্য তিনি তোমাকে দিয়ে প্রতিজ্ঞা করিয়ে নিয়েছেন।”
ফরৌণ বললেন, “যাও, তোমার বাবা তোমাকে যে শপথ করিয়েছেন, তুমি সেই অনুসারে তাঁর কবর দাও।”
7 অতএব যোষেফ তাঁর বাবাকে কবর দিতে গেলেন। ফরৌণের সব কর্মকর্তা যোষেফের সাথী হলেন—তাঁর দরবারের বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ ও মিশরের সব বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ—
পরে যোষেফ নিজের বাবার কবর দিতে যাত্রা করলেন; আর ফরৌণের দাসরা সবাই তাঁর বাড়ির প্রাচীনরা ও মিশর দেশের প্রাচীনেরা সবাই এবং যোষেফের সব পরিবার,
8 এছাড়াও যোষেফের পরিবারের সব সদস্য ও তাঁর দাদা-ভাইয়েরা এবং তাঁর পৈত্রিক পরিবারের অন্তর্গত সকলে তাঁর সঙ্গে গেলেন। শুধুমাত্র তাঁদের সন্তানেরা, এবং তাঁদের মেষপাল ও পশুপাল গোশনে থেকে গেল।
যোষেফের ভাইরা ও তাঁর বাবার বংশধর তাঁর সঙ্গে গেলেন; তারা গোশন প্রদেশে শুধু তাঁদের ছেলে মেয়েরা, ভেড়ার পাল ও গরুর পাল রেখে গেলেন।
9 রথ ও অশ্বারোহীরাও তাঁর সঙ্গে গেল। সে ছিল বিশাল এক সমবেত জনসমষ্টি।
তাঁর সঙ্গে রথ ও অশ্বারোহীরা গেল; অতি ভারী সমারোহ হল।
10 তাঁরা যখন জর্ডনের কাছে আটদের খামারে পৌঁছালেন, তখন তাঁরা তারস্বরে ও তীব্রভাবে কান্নাকাটি করলেন; এবং যোষেফ সেখানে তাঁর বাবার জন্য সাত দিন ধরে শোক পালন করলেন।
১০পরে তাঁরা যর্দ্দনের পারে অবস্থিত আটদের খামারে উপস্থিত হয়ে সেখানে ভীষণ শোক করে কাঁদলেন; যোষেফ সেই জায়গায় বাবার উদ্দেশ্যে সাত দিন শোক করলেন।
11 যে কনানীয়রা সেখানে বসবাস করত, তারা যখন আটদের খামারে তাদের শোক পালন করতে দেখল, তখন তারা বলল, “মিশরীয়রা শোকের এক গুরুগম্ভীর অনুষ্ঠান পালন করছে।” সেজন্যই জর্ডনের কাছে অবস্থিত সেই স্থানটি আবেল-মিস্রয়ীম নামে আখ্যাত হল।
১১আটদের খামারে তাঁদের সেরকম শোক দেখে সেই দেশনিবাসী কনানীয়েরা বলল, “মিশরীয়দের এ অতি দারুন শোক;” এই জন্যে যর্দনপারে অবস্থিত সেই জায়গা আবেল-মিস্রয়ীম [মিশরীয়দের শোক] নামে আখ্যাত হল।
12 অতএব যাকোবের ছেলেরা তাই করলেন, যা তিনি তাঁদের আদেশ দিয়েছিলেন:
১২যাকোব নিজের ছেলেদেরকে যেমন আদেশ দিয়েছিলেন, তাঁরা সেই অনুসারে তাঁর সৎকার করলেন।
13 তাঁরা তাঁকে কনান দেশে বয়ে নিয়ে গেলেন এবং তাঁকে মম্রির কাছে, মক্‌পেলার সেই ক্ষেতে অবস্থিত গুহায় কবর দিলেন, যেটি অব্রাহাম হিত্তীয় ইফ্রোণের কাছ থেকে ক্ষেতজমিসহ এক কবরস্থানরূপে কিনে নিয়েছিলেন।
১৩ফলে তাঁর ছেলেরা তাকে কনান দেশে নিয়ে গেলেন এবং মম্রির সামনে অবস্থিত মকপেলা ক্ষেতের মাঝখানের গুহাতে তাঁর কবর দিলেন, যা অব্রাহাম ক্ষেতসহ কবরস্থানের অধিকারের জন্য হেতীয় ইফ্রোণের কাছ থেকে কিনেছিলেন।
14 তাঁর বাবাকে কবর দেওয়ার পর, যোষেফ তাঁর দাদা-ভাইদের ও অন্যান্য সেইসব লোকজনের সাথে মিশরে ফিরে এলেন, যারা তাঁর বাবাকে কবর দেওয়ার জন্য তাঁর সঙ্গে সেখানে গিয়েছিলেন।
১৪বাবার কবর হলে পর যোষেফ, তাঁর ভাইরা এবং যত লোক তাঁর বাবার কবর দিতে তাঁর সঙ্গে গিয়েছিলেন, সবাই মিশরে ফিরে আসলেন।
15 যোষেফের দাদা-ভাইয়েরা যখন দেখলেন যে তাঁদের বাবা মারা গিয়েছেন, তখন তাঁরা বললেন, “যোষেফ যদি আমাদের বিরুদ্ধে আক্রোশ পুষে রাখে ও তার প্রতি আমরা যেসব অন্যায় করেছি সে যদি তার প্রতিশোধ নেয়, তবে কী হবে?”
১৫আর বাবার মৃত্যু হল দেখে যোষেফের ভাইয়েরা বললেন, “হয় তো যোষেফ আমাদেরকে ঘৃণা করবে, আর আমরা তাঁর যে সব অপকার করেছি, তাঁর সম্পূর্ণ প্রতিফল আমাদেরকে দেবে।”
16 অতএব তাঁরা যোষেফের কাছে খবর পাঠিয়ে, বললেন, “তোমার বাবা মারা যাওয়ার আগে এসব নির্দেশ দিয়ে গিয়েছেন:
১৬আর তারা যোষেফের কাছে এই কথা বলে পাঠালেন, “তোমার বাবা মৃত্যুর আগে এই আদেশ দিয়েছিলেন,”
17 ‘যোষেফকে তোমাদের এই কথাটি বলতে হবে: তোমার দাদারা তোমার প্রতি এত খারাপ ব্যবহার করে যে পাপ ও অন্যায় করেছে আমি চাই তুমি যেন তা ক্ষমা করে দাও।’ এখন দয়া করে তোমার পৈত্রিক ঈশ্বরের দাসদের পাপগুলি ক্ষমা করে দাও।” তাঁদের এই খবর যখন যোষেফের কাছে এসে পৌঁছাল, তখন তিনি কেঁদে ফেললেন।
১৭তোমরা যোষেফকে এই কথা বল, “তোমার ভাইরা তোমার অপকার করেছে, কিন্তু অনুরোধ করি, তুমি তাদের সেই অধর্ম্ম ও পাপ ক্ষমা কর। অতএব এখন আমরা অনুরোধ করি, তোমার বাবার ঈশ্বরের এই দাসদের অধর্ম্ম ক্ষমা কর।” তাদের এই কথায় যোষেফ কাঁদতে লাগলেন।
18 তাঁর দাদা-ভাইয়েরা পরে তাঁর কাছে এলেন এবং তাঁর সামনে নতমস্তক হয়ে প্রণাম করলেন। “আমরা তোমার ক্রীতদাস,” তাঁরা বললেন।
১৮পরে তার ভায়েরা নিজেরা গিয়ে তাঁর সামনে নত হয়ে বললেন, “দেখ, আমরা তোমার দাস।”
19 কিন্তু যোষেফ তাঁদের বললেন, “ভয় পেয়ো না। আমি কি ঈশ্বরের স্থলাভিষিক্ত?
১৯তখন যোষেফ তাঁদেরকে বললেন, “ভয় কর না, আমি কি ঈশ্বরের প্রতিনিধি?
20 তোমরা আমার ক্ষতি করার সংকল্প করলে, কিন্তু এখন যা কিছু হয়েছে তা ভালোর জন্যই, প্রচুর প্রাণরক্ষা করার জন্য ঈশ্বরই মনস্থ করে রেখেছিলেন।
২০তোমরা আমার বিরুদ্ধে অনিষ্ট কল্পনা করেছিলে বটে, কিন্তু ঈশ্বর তা মঙ্গলের কল্পনা করলেন; আজ যেমন দেখছ, এই ভাবে অনেক লোকের প্রাণ রক্ষা করাই তাঁর উদ্দেশ্য ছিল।
21 তাই এখন, ভয় পেয়ো না। আমি তোমাদের ও তোমাদের সন্তানদের জন্য রসদপত্র জোগাব।” আর তিনি আবার তাঁদের আশ্বস্ত করলেন এবং তাঁদের সাথে সদয় কথাবার্তা বললেন।
২১তোমরা এখন ভীত হয়ো না, আমিই তোমাদেরকে ও তোমাদের ছেলে মেয়েদেরকে প্রতিপালন করব।” এই ভাবে তিনি তাঁদেরকে সান্ত্বনা করলেন ও ভালো কথা বললেন।
22 যোষেফ তাঁর পৈত্রিক পরিবারের সব লোকজনকে সঙ্গে নিয়ে মিশরে থেকে গেলেন। তিনি 110 বছর বেঁচেছিলেন
২২পরে যোষেফ ও তাঁর বাবার বংশ মিশরে বাস করতে থাকলেন এবং যোষেফ একশ দশ বছর জীবিত থাকলেন।
23 এবং ইফ্রয়িমের সন্তানদের তৃতীয় প্রজন্মকে স্বচক্ষে দেখলেন। এছাড়াও মনঃশির ছেলে মাখীরের সন্তানদেরও জন্মের সময় যোষেফের কোলেই রাখা হল।
২৩যোষেফ ইফ্রয়িমের নাতি পর্যন্ত দেখলেন; মনঃশির মাখীর নামক ছেলের ছেলেমেয়েরাও যোষেফের কোলে জন্ম নিল।
24 পরে যোষেফ তাঁর দাদা-ভাইদের বললেন, “আমি মরতে চলেছি। কিন্তু ঈশ্বর নিঃসন্দেহে তোমাদের সাহায্য করতে এগিয়ে আসবেন এবং তোমাদের এই দেশ থেকে বের করে সেই দেশে নিয়ে যাবেন, যেটি তিনি অব্রাহাম, ইস্‌হাক ও যাকোবকে দেওয়ার প্রতিজ্ঞা করেছিলেন।”
২৪পরে যোষেফ নিজের ভাইদেরকে বললেন, “আমি মরছি কিন্তু ঈশ্বর অবশ্য তোমাদের পরিচালনা করবেন এবং অব্রাহামের, ইসহাকের ও যাকোবের কাছে যে দেশ দিতে শপথ করেছেন তোমাদেরকে এ দেশ থেকে ঐ দেশে নিয়ে যাবেন।”
25 আর যোষেফ ইস্রায়েলীদের দিয়ে একটি প্রতিজ্ঞা করিয়ে নিলেন ও বললেন, “ঈশ্বর নিঃসন্দেহে তোমাদের সাহায্য করতে এগিয়ে আসবেন, এবং তখন তোমাদের অবশ্যই আমার অস্থি এই স্থান থেকে বয়ে নিয়ে যেতে হবে।”
২৫আর যোষেফ ইস্রায়েলীয়দেরকে এই শপথ করালেন, বললেন, “ঈশ্বর অবশ্য তোমাদের পরিচালনা করবেন, আর তোমরা এ জায়গা থেকে আমার অস্থি নিয়ে যাবে।”
26 অতএব যোষেফ 110 বছর বয়সে মারা গেলেন। আর তাঁরা তাঁকে সুগন্ধি বস্তু দ্বারা সংরক্ষণ করার পর তাঁর মৃতদেহ মিশরে একটি শবাধারের মধ্যে রেখে দেওয়া হল।
২৬যোষেফ একশো দশ বছর বয়সে মারা গেলেন; আর লোকেরা তাঁর দেহে ক্ষয়-নিবারক দ্রব্য দিয়ে তা মিশর দেশে এক মৃতদেহ রাখার বাক্সর মধ্যে রাখল।

< আদিপুস্তক 50 >