< আদিপুস্তক 45 >
1 তখন যোষেফ তাঁর সব সেবকের সামনে নিজেকে আর সংযত করে রাখতে পারলেন না, এবং তিনি চিৎকার করে উঠলেন, “সবাই আমার সামনে থেকে সরে যাও!” অতএব যোষেফ যখন তাঁর দাদা-ভাইদের কাছে নিজের পরিচয় প্রকাশ করলেন তখন তাঁর কাছে আর কেউ ছিল না।
2 আর তিনি এত জোরে কাঁদলেন যে মিশরীয়রা তা শুনতে পেল, এবং ফরৌণের পরিবার-পরিজনও তা শুনতে পেল।
3 যোষেফ তাঁর দাদা-ভাইদের বললেন, “আমি যোষেফ! আমার বাবা কি এখনও বেঁচে আছেন?” কিন্তু তাঁর দাদারা তাঁকে উত্তর দিতে পারলেন না, কারণ তাঁর উপস্থিতিতে তাঁরা ভয় পেয়ে গেলেন।
4 পরে যোষেফ তাঁর দাদা-ভাইদের বললেন, “আমার কাছে এসো।” যখন তাঁরা এলেন, তখন তিনি বললেন, “আমিই তোমাদের সেই ভাই যোষেফ, যাকে তোমরা মিশরে বিক্রি করে দিয়েছিলে!
5 আর এখন, আমাকে এখানে বিক্রি করে দিয়েছ বলে আকুল হোয়ো না ও নিজেদের উপর রাগ কোরো না, কারণ মানুষের প্রাণরক্ষা করার জন্যই ঈশ্বর তোমাদের আগে আগে আমাকে পাঠিয়ে দিয়েছেন।
6 দুই বছর ধরে এখন এদেশে দুর্ভিক্ষ চলছে, এবং পরবর্তী পাঁচ বছর কোনও হলকর্ষণ ও শস্যচ্ছেদন হবে না।
7 কিন্তু এই পৃথিবীতে তোমাদের বংশরক্ষা করার জন্য ও এক মহামুক্তির মাধ্যমে তোমাদের প্রাণরক্ষা করার জন্য ঈশ্বর তোমাদের আগে আগে আমাকে পাঠিয়ে দিয়েছেন।
8 “অতএব, এমনটি নয় যে তোমরা আমাকে এখানে পাঠিয়েছ, কিন্তু ঈশ্বরই পাঠিয়েছেন। তিনি আমাকে ফরৌণের বাবা, তাঁর সমস্ত পরিবারের মালিক এবং সমগ্র মিশরের শাসনকর্তা করেছেন।
9 এখন তাড়াতাড়ি করে আমার বাবার কাছে ফিরে যাও এবং তাঁকে বলো, ‘তোমার ছেলে যোষেফ একথা বলেছে: ঈশ্বর আমাকে সমগ্র মিশরের মালিক করে তুলেছেন। আমার কাছে নেমে এসো; দেরি কোরো না।
10 তোমরা গোশন অঞ্চলে বসবাস করবে এবং আমার কাছেই থাকবে—তোমরা, তোমাদের সন্তানেরা, এবং তোমাদের নাতিপুতিরা, তোমাদের গোমেষাদি পশুপাল, এবং তোমাদের যা যা আছে সেসবকিছু।
11 আমি সেখানে তোমাদের জন্য সবকিছুর জোগান দেব, কারণ পাঁচ বছরের দুর্ভিক্ষ এখনও বাকি আছে। তা না হলে তোমরা ও তোমাদের পরিবার-পরিজন এবং তোমাদের অধিকারভুক্ত সবাই নিঃস্ব হয়ে যাবে।’
12 “তোমরা নিজের চোখেই দেখতে পাচ্ছ, এবং আমার ভাই বিন্যামীনও দেখতে পাচ্ছে, যে তোমাদের সঙ্গে যে কথা বলছে সে আসলে আমিই।
13 মিশরে আমাকে যে সম্মান দেওয়া হয়েছে ও তোমরা যা যা দেখেছ সেসব আমার বাবাকে গিয়ে বলো। আর আমার বাবাকে তাড়াতাড়ি নিয়ে এসো।”
14 পরে তিনি তাঁর দু-হাত বাড়িয়ে দিয়ে তাঁর ভাই বিন্যামীনকে আলিঙ্গন করলেন এবং কাঁদলেন, এবং বিন্যামীনও তাঁকে জড়িয়ে ধরে কাঁদলেন।
15 আর তিনি তাঁর দাদাদের সবাইকে চুমু দিলেন, ও তাঁদের ধরে কাঁদলেন। পরে তাঁর দাদারা তাঁর সঙ্গে কথা বললেন।
16 যোষেফের দাদা-ভাইরা এসেছে, এই খবর যখন ফরৌণের প্রাসাদে এসে পৌঁছাল, তখন ফরৌণ ও তাঁর সব কর্মকর্তা খুশি হলেন।
17 ফরৌণ যোষেফকে বললেন, “তোমার দাদা-ভাইদের বলো, ‘এরকম করো: তোমাদের পশুদের পিঠে বোঝা চাপাও ও কনান দেশে ফিরে যাও,
18 এবং তোমাদের বাবাকে ও তোমাদের পরিবার-পরিজনকে নিয়ে আমার কাছে ফিরে এসো। মিশর দেশের সেরা জিনিসগুলি আমি তোমাদের দেব এবং তোমরা দেশের বাছাই করা জিনিসগুলি উপভোগ করবে।’
19 “তোমাকে আরও নির্দেশ দেওয়া হল যেন তুমি তাদের বলো, ‘এরকম করো: তোমাদের সন্তানদের ও তোমাদের স্ত্রীদের জন্য মিশর থেকে কয়েকটি দুই চাকার গাড়ি নাও, এবং তোমাদের বাবাকে নিয়ে চলে এসো।
20 তোমাদের বিষয়সম্পত্তির জন্য কোনও চিন্তা কোরো না, কারণ সমগ্র মিশরের সেরা জিনিসগুলি তোমাদেরই হবে।’”
21 অতএব ইস্রায়েলের ছেলেরা এমনটিই করলেন। ফরৌণ যেমনটি আদেশ দিলেন, সেই অনুসারে যোষেফ তাঁদের দু-চাকার গাড়িগুলি দিলেন, এবং তিনি তাঁদের যাত্রাপথের জন্য রসদপত্রও জোগালেন।
22 তাঁদের প্রত্যেককে তিনি নতুন নতুন পোশাক দিলেন, কিন্তু তিনি বিন্যামীনকে তিনশো শেকল রুপো ও পাঁচজোড়া পোশাক দিলেন।
23 আর তাঁর বাবার কাছে তিনি যা যা পাঠালেন তা হল এই: দশটি মদ্দা গাধার পিঠে বোঝাই করা মিশরের সেরা জিনিসপত্র, এবং দশটি গাধির পিঠে বোঝাই করা তাঁর যাত্রাপথের জন্য প্রয়োজনীয় খাদ্যশস্য এবং রুটি ও অন্যান্য রসদপত্র।
24 পরে তিনি তাঁর দাদা-ভাইদের পাঠিয়ে দিলেন, এবং তাঁরা যখন প্রস্থান করলেন, তিনি তাঁদের বললেন, “রাস্তায় ঝগড়াঝাটি কোরো না!”
25 অতএব তাঁরা মিশর থেকে চলে গেলেন এবং কনান দেশে তাঁদের বাবা যাকোবের কাছে এলেন।
26 তাঁরা তাঁকে বললেন, “যোষেফ এখনও বেঁচে আছে! আসলে, সে সমগ্র মিশরের শাসনকর্তা হয়ে গিয়েছে।” যাকোব স্তব্ধ হয়ে গেলেন; তাঁদের কথা তিনি বিশ্বাস করলেন না।
27 কিন্তু তাঁরা যখন যোষেফ তাঁদের যা যা বলেছিলেন সেসব কথা তাঁকে বললেন, এবং তিনি যখন তাঁকে বয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য যোষেফের পাঠানো দুই চাকার গাড়িগুলি দেখলেন, তখন তাঁদের বাবা যাকোবের অন্তরাত্মা পুনরুজ্জীবিত হল।
28 আর ইস্রায়েল বললেন, “আমি নিশ্চিত! আমার ছেলে যোষেফ এখনও বেঁচে আছে। মরার আগে আমি যাব এবং তাকে দেখব।”