< আদিপুস্তক 44 >

1 যোষেফ তাঁর ঘরের গোমস্তাকে এই নির্দেশগুলি দিলেন: “এই লোকেরা যতখানি খাদ্যশস্য বয়ে নিয়ে যেতে পারে, ততখানি করে দিয়ে ওদের বস্তাগুলি ভরে দাও, এবং প্রত্যেকের বস্তার মুখে তাদের রুপো রেখে দাও।
আর যোষেফ বাড়ির পরিচালককে আজ্ঞা করলেন, এই লোকদের থলেতে যত শস্য ধরে, ভরে দাও এবং প্রতিজনের টাকা তার থলের মুখে রাখ।
2 পরে খাদ্যশস্যের জন্য আনা রুপোর পাশাপাশি আমার পানপাত্রটি, সেই রুপোর পানপাত্রটিও সেই ছোটো ছেলেটির বস্তার মুখে রেখে দাও।” আর যোষেফ যেমনটি বললেন, তিনি তেমনটিই করলেন।
আর কনিষ্ঠের থলের মুখে তার শস্য কেনার টাকার সঙ্গে আমার বাটি অর্থাৎ রূপার বাটি রাখ। তখন সে যোষেফের বলা কথানুসারে কাজ করল।
3 সকাল হওয়ামাত্র, তাঁদের গাধাগুলির সঙ্গে তাঁদের বিদায় করে দেওয়া হল।
আর সকাল হওয়ামাত্র তাঁরা গাধাদের সঙ্গে বিদায় পেলেন।
4 তাঁরা নগর থেকে তখন খুব বেশি দূরে যাননি, এমন সময় যোষেফ তাঁর গোমস্তাকে বললেন, “এখনই ওই লোকদের পশ্চাদ্ধাবন করো, এবং তাদের নাগাল পেয়ে, তুমি তাদের বোলো, ‘ভালোর পরিবর্তে তোমরা কেন মন্দ প্রতিদান দিলে?
তাঁরা নগর থেকে বের হয়ে অনেক দূরে যেতে না যেতে যোষেফ নিজের বাড়ির পরিচালককে বললেন, “ওঠ, ঐ লোকদের পিছনে দৌড়িয়ে গিয়ে তাদের সঙ্গ ধরে বল তোমরা উপকারের পরিবর্তে কেন অপকার করলে?
5 এটি কি সেই পানপাত্র নয় যেটি থেকে আমার প্রভু পান করেন এবং ভবিষ্যৎ-কথনের জন্য যেটি ব্যবহার করেন? তোমরা এ এক মন্দ কাজ করে বসলে।’”
আমার প্রভু যাতে পান করেন ও যার মাধ্যমে গণনা করেন, এ কি সেই বাটি না? এই কাজ করায় তোমরা দোষ করেছ।”
6 তাঁদের নাগাল পেয়ে তিনি তাঁদের কাছে এই কথাগুলি বলে শোনালেন।
পরে সে তাদেরকে নাগালে পেয়ে সেইকথা বলল।
7 কিন্তু তাঁরা তাঁকে বললেন, “আমার প্রভু কেন এরকম কথা বলছেন? এরকম কোনও কাজ আপনার দাসেরা করতেই পারে না!
তাঁরা বললেন, “মহাশয়, কেন এমন কথা বললেন? আপনার দাসেরা যে এমন কাজ করবে, তা দূরে থাকুক।
8 এমনকি আমরা সেই কনান দেশ থেকে সেই রুপোও তো ফেরত এনেছিলাম, যা আমাদের বস্তার মুখে পাওয়া গিয়েছিল। তাই আপনার প্রভুর বাড়ি থেকে কেনই বা আমরা রুপো বা সোনা চুরি করব?
দেখুন, আমরা নিজের নিজের থলের মুখে যে টাকা পেয়েছিলাম, তা কনান দেশ থেকে আবার আপনার কাছে এনেছি; তবে আমরা কি কোনো মতে আপনার প্রভুর গৃহ থেকে রূপা বা সোনা চুরি করব?
9 যদি আপনার এই দাসেদের মধ্যে কারও কাছে তা পাওয়া যায়, তবে সে মরবে; এবং আমাদের মধ্যে বাকি সবাই আমার প্রভুর ক্রীতদাস হবে।”
আপনার দাসদের মধ্যে যার কাছে তা পাওয়া যায়, সে মরুক এবং আমরাও প্রভুর দাস হব।”
10 “তবে ঠিক আছে,” তিনি বললেন, “তোমাদের কথানুসারেই তা হোক। যার কাছে সেটি পাওয়া যাবে সে আমার ক্রীতদাস হয়ে যাবে; তোমাদের মধ্যে বাদবাকি সবাই দোষমুক্ত হবে।”
১০সে বলল, “ভাল, এক্ষণে তোমাদের কথানুসারেই হোক; যার কাছে তা পাওয়া যাবে, সে আমার দাস হবে, কিন্তু আর সবাই নির্দোষ হবে।”
11 তাঁদের প্রত্যেকেই তাড়াতাড়ি মাটিতে বস্তা নামালেন ও তা খুলে ধরলেন।
১১তখন তাঁরা তাড়াতাড়ি করে নিজেদের থলিগুলি মাটিতে নামিয়ে প্রত্যেকে নিজের নিজের থলে খুললেন।
12 পরে সেই গোমস্তা খানাতল্লাশি করার জন্য এগিয়ে গেলেন, বড়ো থেকে শুরু করে ছোটো জনের কাছে গিয়ে খানাতল্লাশি শেষ করলেন। আর সেই পানপাত্রটি বিন্যামীনের বস্তাতে পাওয়া গেল।
১২আর সে বড় থেকে আরম্ভ করে ছোট পর্যন্ত খুঁজল; আর বিন্যামীনের থলেতে সেই বাটি পাওয়া গেল।
13 তা দেখে, তাঁরা তাঁদের পোশাক ছিঁড়ে ফেললেন। পরে তাঁরা সবাই তাঁদের গাধার পিঠে বোঝা চাপিয়ে নগরে ফিরে গেলেন।
১৩তখন তাঁরা নিজের নিজের পোশাক ছিঁড়লেন ও নিজের নিজের গাধায় থলে চাপিয়ে নগরে ফিরে গেলেন।
14 যিহূদা ও তাঁর ভাইয়েরা যখন ফিরে এলেন, যোষেফ তখনও বাড়ির মধ্যেই ছিলেন, এবং তাঁরা তাঁর সামনে গিয়ে মাটিতে উবুড় হয়ে পড়লেন।
১৪পরে যিহূদা ও তাঁর ভাইরা যোষেফের বাড়িতে আসলেন; তিনি তখনও সেখানে ছিলেন; আর তাঁরা তাঁর আগে মাটিতে পড়লেন।
15 যোষেফ তাঁদের বললেন, “তোমরা এ কী কাজ করলে? তোমরা কি জানো না যে আমার মতো একজন লোকগণনা করে সবকিছু খুঁজে বের করতে পারে?”
১৫তখন যোষেফ তাঁদেরকে বললেন, “তোমরা এ কেমন কাজ করলে? আমার মত পুরুষ অবশ্য গণনা করতে পারে, এটা কি তোমরা জান না?”
16 “আমার প্রভুর কাছে আমরা কী আর বলব?” যিহূদা উত্তর দিলেন। “আমরা কী আর বলব? আমরা কীভাবেই বা আমাদের নির্দোষিতার প্রমাণ দেব? ঈশ্বর আপনার দাসদের দোষ উন্মোচন করে দিয়েছেন। আমরা এখন আমার প্রভুর ক্রীতদাস হয়ে গিয়েছি—আমরা নিজেরা এবং সেই জন, যার কাছে সেই পানপাত্রটি পাওয়া গিয়েছে।”
১৬যিহূদা বললেন, “আমরা প্রভুর কাছে কি উত্তর দেব? কি কথা বলব? কিসেই বা নিজেদেরকে নির্দোষ দেখাব? ঈশ্বর আপনার দাসদের অপরাধ প্রকাশ করেছেন, দেখুন, আমরা ও যার কাছে বাটি পাওয়া গিয়েছে, সবাই প্রভুর দাস হলাম।”
17 কিন্তু যোষেফ বললেন, “এরকম কাজ যেন আমি না করি! শুধু যার কাছে সেই পানপাত্রটি পাওয়া গিয়েছে, সেই লোকটিই আমার ক্রীতদাস হবে। তোমাদের মধ্যে বাদবাকি সবাই শান্তিতে তোমাদের বাবার কাছে ফিরে যাও।”
১৭যোষেফ বললেন, “এমন কাজ আমার থেকে দূরে থাকুক; যার কাছে বাটি পাওয়া গিয়েছে, সেই আমার দাস হবে, কিন্তু তোমরা ভালোভাবে বাবার কাছে ফিরে যাও।”
18 তখন যিহূদা তাঁর কাছে গিয়ে বললেন: “হে আমার প্রভু, আপনার এই দাসকে ক্ষমা করুন, আমার প্রভুর কাছে আমাকে একটি কথা বলতে দিন। আপনার এই দাসের প্রতি ক্রুদ্ধ হবেন না, যদিও বা আপনি স্বয়ং ফরৌণের সমতুল্য।
১৮তখন যিহূদা কাছে গিয়ে বললেন, “হে প্রভু, অনুরোধ করি, আপনার দাসকে প্রভুর কানে একটি কথা বলতে অনুমতি দিন; এই দাসের প্রতি আপনার রাগ প্রজ্বলিত না হোক, কারণ আপনি ফরৌণের সমান।”
19 আমার প্রভু তাঁর দাসদের জিজ্ঞাসা করেছিলেন, ‘তোমাদের কি বাবা অথবা ভাই আছে?’
১৯প্রভু এই দাসদেরকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন, “তোমাদের বাবা কি ভাই আছে?”
20 আর আমরা তাঁকে উত্তর দিয়েছিলাম, ‘আমাদের বৃদ্ধ বাবা আছেন, এবং তাঁর বৃদ্ধাবস্থায় জন্মানো তাঁর এক ছোটো ছেলেও আছে। তার দাদা মারা গিয়েছে, এবং তার মায়ের একমাত্র সন্তানরূপে সেই বেঁচে আছে, এবং তার বাবা তাকে ভালোবাসেন।’
২০আমরা প্রভুকে উত্তর করেছিলাম, “আমাদের বৃদ্ধ বাবা আছেন এবং তাঁর বৃদ্ধ অবস্থায় এক ছোট ছেলে আছে; তার ভাই মারা গিয়েছে; সেই একমাত্র তার মায়ের অবশিষ্ট ছেলে এবং তার বাবা তাকে ভালবাসেন।”
21 “পরে আপনি আপনার দাসদের বলেছিলেন, ‘তাকে আমার কাছে নিয়ে এসো, যেন আমি তাকে স্বচক্ষে দেখতে পারি।’
২১পরে আপনি এই দাসদেরকে বলেছিলেন, “তোমরা আমার কাছে তাকে আন, আমি তাকে স্বচক্ষে দেখব।”
22 আর আমরা আমার প্রভুকে বলেছিলাম, ‘সেই বালকটি তার বাবার কাছছাড়া হতে পারবে না; যদি সে তাঁকে ছেড়ে আসে, তবে তার বাবা মারা যাবেন।’
২২তখন আমরা প্রভুকে বলেছিলাম, “সেই যুবক বাবাকে ছেড়ে আসতে পারবে না, সে বাবাকে ছেড়ে আসলে বাবা মারা যাবেন।”
23 কিন্তু আপনি আপনার দাসদের বলেছিলেন, ‘তোমাদের ছোটো ভাই যতক্ষণ না তোমাদের সঙ্গে আসছে, তোমরা আর আমার মুখদর্শন করবে না।’
২৩তাতে আপনি এই দাসদেরকে বলেছিলেন, সেই ছোট ভাইটি তোমাদের সঙ্গে না আসলে তোমরা আমার মুখ আর দেখতে পাবে না।
24 আমরা যখন আপনার দাস আমার বাবার কাছে ফিরে গেলাম, তখন আমার প্রভু যা যা বলেছিলেন, সেসব আমরা তাঁকে বলেছিলাম।
২৪আমরা আপনার দাস যে আমার বাবা, তাঁর কাছে গিয়ে তাঁকে প্রভুর সেই সব কথা বললাম।
25 “তখন আমাদের বাবা বললেন, ‘তোমরা ফিরে যাও এবং আরও অল্প কিছু খাদ্যশস্য কিনে আনো।’
২৫পরে আমাদের বাবা বললেন, “তোমরা আবার যাও, আমাদের জন্য কিছু খাবার কিনে আন।”
26 কিন্তু আমরা বললাম, ‘আমরা যেতে পারব না। আমাদের ছোটো ভাই যদি আমাদের সঙ্গে থাকে তবেই আমরা যাব। আমাদের ছোটো ভাই যদি আমাদের সঙ্গে না থাকে তবে আমরা সেই লোকটির মুখদর্শন করতে পারব না।’
২৬আমরা বললাম, “যেতে পারব না; যদি ছোট ভাই আমাদের সঙ্গে থাকে, তবে যাই; কারণ ছোট ভাইটি সঙ্গে না থাকলে আমরা সেই ব্যক্তির মুখ দেখতে পাব না।”
27 “আপনার দাস আমার বাবা আমাদের বললেন, ‘তোমরা তো জানো যে আমার স্ত্রী আমার জন্য দুটি সন্তানের জন্ম দিয়েছিল।
২৭তাতে আপনার দাস আমার বাবা বললেন, “তোমরা জান, আমার সেই স্ত্রী থেকে দুটি মাত্র সন্তান জন্মায়।
28 তাদের মধ্যে একজন আমার কাছ থেকে দূরে চলে গিয়েছে, এবং আমি বলেছিলাম, “নিশ্চিতভাবে তাকে ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন করে ফেলা হয়েছে।” তখন থেকে আমি আর তাকে দেখতে পাইনি।
২৮তাদের মধ্যে এক জন আমার কাছ থেকে চলে গেল,” আর আমি বললাম, “সে নিশ্চয় খণ্ড খণ্ড হয়েছে এবং সেই থেকে আমি তাঁকে আর দেখতে পাইনি।”
29 তোমরা যদি একেও আবার আমার কাছ থেকে নিয়ে যাও এবং এর যদি কোনও ক্ষতি হয়, তবে এই পাকাচুলে মর্মপীড়ায় তোমরা আমাকে কবরে পাঠাবে।’ (Sheol h7585)
২৯এখন আমার কাছ থেকে একেও নিয়ে গেলে যদি এর কোনো বিপদ ঘটে, তবে তোমরা শোকে এই পাকা চুলে আমাকে পাতালে নামিয়ে দেবে। (Sheol h7585)
30 “অতএব এখন, আমি যখন আপনার দাস আমার বাবার কাছে ফিরে যাব, তখন যদি বালকটি আমাদের সঙ্গে না থাকে এবং আমার সেই বাবা, যাঁর জীবন সেই বালকটির জীবনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত,
৩০অতএব আপনার দাস যে আমার বাবা, আমি তাঁর কাছে উপস্থিত হলে আমাদের সঙ্গে যদি এই যুবক না থাকে,
31 তিনি যদি দেখেন যে বালকটি সেখানে নেই, তবে তিনি মারা যাবেন। আপনার দাসেরা আমার বাবাকে এই পাকাচুলে মর্মপীড়ায় কবরে পাঠাবে। (Sheol h7585)
৩১তবে এই যুবকের প্রাণে তাঁর প্রাণ বাঁধা আছে বলে, যুবকটি নেই দেখলে তিনি মারা পড়বেন; এই ভাবে আপনার এই দাসেরা শোকে পাকা চুলে আপনার দাস আমাদের বাবাকে পাতালে নামিয়ে দেবে। (Sheol h7585)
32 আপনার এই দাস আমি আমার বাবার কাছে সেই বালকটির নিরাপত্তার মুচলেকা দিয়েছিলাম। আমি বলেছিলাম, ‘আমি যদি তাকে আপনার কাছে ফিরিয়ে আনতে না পারি, তবে হে আমার বাবা, আজীবন আমি আপনার সামনে দোষ বয়ে বেড়াব!’
৩২আবার আপনার দাস আমি বাবার কাছে এই যুবকটির জামিন হয়ে বলেছিলাম, আমি যদি তাকে তোমার কাছে না আনি, যাবজ্জীবন বাবার কাছে অপরাধী থাকব।
33 “এখন তবে, প্রভু দয়া করে এই বালকটির স্থানে আপনার এই দাসকেই এখানে আপনার ক্রীতদাস হয়ে থাকতে দিন, এবং এই বালকটিকে তার দাদাদের সঙ্গে ফিরে যেতে দিন।
৩৩অতএব অনুরোধ করি, প্রভুর কাছে এই যুবকটির পরিবর্তে আপনার দাস আমি প্রভুর দাস হয়ে থাকি, কিন্তু এই যুবককে আপনি তাঁর ভাইদের সঙ্গে যেতে দিন।
34 বালকটি যদি আমার সঙ্গে না থাকে তবে আমি কীভাবে আমার বাবার কাছে ফিরে যাব? না! আমার বাবার উপর যে মর্মপীড়া নেমে আসবে, তা যেন আমাকে দেখতে না হয়।”
৩৪কারণ এই যুবকটি আমার সঙ্গে না থাকলে আমি কিভাবে বাবার কাছে যেতে পারি? যদি বাবার যে বিপদ ঘটে, তাই আমাকে দেখতে হয়।

< আদিপুস্তক 44 >