< আদিপুস্তক 31 >
1 যাকোব শুনতে পেলেন যে লাবনের ছেলেরা বলাবলি করছে, “আমাদের বাবার অধিকারভুক্ত সবকিছু যাকোব ছিনিয়ে নিয়েছে এবং আমাদের বাবার যেসব ধনসম্পদ ছিল তা নিয়েই তার বাড়বাড়ন্ত হয়েছে।”
2 আর যাকোব লক্ষ্য করলেন যে তার প্রতি লাবনের আচরণ আর আগের মতো নেই।
3 তখন সদাপ্রভু যাকোবকে বললেন, “তুমি তোমার পূর্বপুরুষদের ও আত্মীয়স্বজনের দেশে ফিরে যাও, আর আমি তোমার সঙ্গে থাকব।”
4 অতএব যাকোব রাহেল ও লেয়াকে খবর পাঠিয়ে সেই মাঠে ডেকে পাঠালেন, যেখানে তাঁর পশুপাল রাখা ছিল।
5 তিনি তাঁদের বললেন, “আমি দেখছি যে আমার প্রতি তোমাদের বাবার আচরণ আর আগের মতো নেই, কিন্তু আমার পৈত্রিক ঈশ্বর আমার সঙ্গে আছেন।
6 তোমরা তো জানো যে তোমাদের বাবার জন্য আমি আমার সর্বশক্তি দিয়ে পরিশ্রম করেছি,
7 তবুও তোমাদের বাবা দশবার আমার পারিশ্রমিক পরিবর্তন করে আমাকে ঠকিয়েছেন। অবশ্য, ঈশ্বর তাঁকে আমার কোনও ক্ষতি করার অনুমতি দেননি।
8 তিনি যদি বলেছেন, ‘দাগযুক্ত পশুগুলি তোমার পারিশ্রমিক হবে,’ তবে সব পশুপালই দাগযুক্ত শাবকের জন্ম দিয়েছিল; আর তিনি যদি বলেছেন, ‘ডোরাকাটা পশুগুলি তোমার পারিশ্রমিক হবে,’ তবে সব পশুপালই ডোরাকাটা শাবকের জন্ম দিয়েছিল।
9 অতএব ঈশ্বরই তোমাদের বাবার গবাদি পশুপাল তাঁর কাছ থেকে কেড়ে নিয়েছেন ও সেগুলি আমাকে দিয়ে দিয়েছেন।
10 “পশুদের প্রজননের মরশুমে আমি একবার এক স্বপ্ন দেখেছিলাম যে আমি উপরের দিকে চোখ তুলে তাকিয়েছিলাম আর দেখেছিলাম যে, যে মদ্দা ছাগলগুলি মাদিগুলির সাথে যৌনমিলন করছে, সেগুলি ডোরাকাটা, দাগযুক্ত বা তিলকিত।
11 ঈশ্বরের দূত স্বপ্নে আমাকে বলেছিলেন, ‘যাকোব।’ আমি উত্তর দিয়েছিলাম, ‘আমি এখানে।’
12 আর তিনি বলেছিলেন, ‘উপরের দিকে চোখ তুলে তাকাও ও দেখো মাদিগুলির সাথে যেসব মদ্দা ছাগল যৌনমিলন করছে সেগুলি ডোরাকাটা, দাগযুক্ত বা তিলকিত, কারণ লাবন তোমার সঙ্গে যা যা করে চলেছে, আমি সেসব দেখেছি।
13 আমি সেই বেথেলের ঈশ্বর, যেখানে তুমি এক স্তম্ভকে অভিষিক্ত করেছিলে এবং আমার কাছে এক শপথ নিয়েছিলে। এখন তুমি এই মুহূর্তেই এই স্থান ত্যাগ করো এবং তোমার স্বদেশে ফিরে যাও।’”
14 তখন রাহেল ও লেয়া উত্তর দিলেন, “আমাদের বাবার ভূসম্পত্তিতে এখনও কি আমাদের আর কোনও অংশ ও অধিকার আছে?
15 তিনি কি আমাদের বিদেশি বলে গণ্য করেন না? তিনি যে শুধু আমাদের বিক্রি করে দিয়েছেন তা নয়, কিন্তু আমাদের জন্য যা দেওয়া হয়েছিল, তাও তিনি নিঃশেষ করে ফেলেছেন।
16 নিঃসন্দেহে যেসব ধনসম্পদ ঈশ্বর আমাদের বাবার কাছ থেকে কেড়ে নিয়েছেন, তা আমাদের ও আমাদের সন্তানদেরই। অতএব ঈশ্বর তোমাকে যা যা বলেছেন, তাই করো।”
17 তখন যাকোব তার সন্তানদের ও তাঁর স্ত্রীদের উটের পিঠে চাপিয়ে দিলেন,
18 এবং কনান দেশে তাঁর বাবা ইস্হাকের কাছে যাবার জন্য তিনি পদ্দন-আরামে থাকাকালীন যেসব জিনিসপত্র জমিয়েছিলেন, সেগুলি সাথে নিয়ে তাঁর আগে আগে তাঁর সব গবাদি পশুপালও তাড়িয়ে নিয়ে গেলেন।
19 লাবন যখন তাঁর মেষের লোম ছাঁটতে গিয়েছিলেন, রাহেল তখন তাঁর বাবার গৃহদেবতাদের মূর্তিগুলি চুরি করে নিলেন।
20 এছাড়াও, তিনি যে পালিয়ে যাচ্ছেন একথা অরামীয় লাবনকে না বলে যাকোব তাঁকে প্রতারিত করলেন।
21 অতএব তিনি তাঁর সবকিছু সাথে নিয়ে, ইউফ্রেটিস নদী পার করে পালিয়ে গেলেন, এবং গিলিয়দের পার্বত্য এলাকার দিকে এগিয়ে গেলেন।
22 তৃতীয় দিনে লাবনকে বলা হল যে যাকোব পালিয়ে গিয়েছেন।
23 তাঁর আত্মীয়স্বজনদের সঙ্গে নিয়ে, তিনি সাত দিন ধরে যাকোবের পশ্চাদ্ধাবন করলেন এবং গিলিয়দের পার্বত্য এলাকায় তাঁকে ধরে ফেললেন।
24 তখন রাতের বেলায় ঈশ্বর স্বপ্নে অরামীয় লাবনের কাছে এলেন ও তাঁকে বললেন, “যাকোবকে ভালো বা মন্দ কোনো কিছু বলার বিষয়ে তুমি সাবধান থেকো।”
25 লাবন যখন যাকোবের নাগাল ধরে ফেললেন, তখন যাকোব গিলিয়দের পার্বত্য এলাকায় তাঁর তাঁবু খাটিয়েছিলেন, এবং লাবন ও তাঁর আত্মীয়স্বজনরাও সেখানেই ঘাঁটি গেড়েছিলেন।
26 তখন লাবন যাকোবকে বললেন, “তুমি এ কী করলে? তুমি আমার সাথে প্রতারণা করেছ এবং তুমি আমার মেয়েদের যুদ্ধবন্দিদের মতো করে নিয়ে এসেছ।
27 তুমি কেন গোপনে পালিয়ে এসেছ ও আমাকে ঠকিয়েছ? তুমি কেন আমায় বলোনি, আমি তো আনন্দের সঙ্গে এবং খঞ্জনি ও বীণার বাজনা সহযোগে গান গেয়ে তোমাদের বিদায় জানাতে পারতাম?
28 এমনকি তুমি আমাকে আমার নাতি-নাতনিদের ও মেয়েদের চুমু দিয়ে বিদায় জানাতেও দাওনি। তুমি এক মূর্খের মতো কাজ করেছ।
29 তোমার ক্ষতিসাধন করার শক্তি আমার আছে; কিন্তু গতকাল রাতে তোমার পৈত্রিক ঈশ্বর আমাকে বললেন, ‘যাকোবকে ভালো বা মন্দ কোনো কিছু বলার বিষয়ে তুমি সাবধান থেকো।’
30 তুমি প্রস্থান করেছ, কারণ তুমি তোমার বাবার ঘরে ফিরে যেতে চেয়েছিলে। কিন্তু আমার দেবতাদের তুমি চুরি করলে কেন?”
31 যাকোব লাবনকে উত্তর দিলেন, “আমি ভয় পেয়েছিলাম, কারণ আমি ভেবেছিলাম আপনি আপনার মেয়েদের জোর করে আমার কাছ থেকে ছিনিয়ে নেবেন।
32 কিন্তু এমন কাউকে যদি আপনি খুঁজে পান যার কাছে আপনার দেবতারা আছে, তবে সে আর বেঁচে থাকবে না। আমাদের আত্মীয়স্বজনদের উপস্থিতিতে, আপনি নিজেই দেখে নিন আপনার কোনও জিনিস আমার সাথে আছে কি না; এবং যদি তা থাকে, তবে তা নিয়ে নিন।” যাকোব জানতেনই না যে রাহেল দেবতাদের চুরি করেছেন।
33 অতএব লাবন যাকোবের তাঁবুতে ও লেয়ার তাঁবুতে এবং দুই দাসীর তাঁবুতে প্রবেশ করলেন, কিন্তু তিনি কিছুই খুঁজে পেলেন না। আর লেয়ার তাঁবু থেকে বেরিয়ে আসার পর, তিনি রাহেলের তাঁবুতে প্রবেশ করলেন।
34 রাহেল গৃহদেবতাদের নিয়ে সেগুলি তাঁর উটের জিনের মধ্যে রেখে দিয়েছিলেন এবং সেটির উপরে বসেছিলেন। লাবন সেই তাঁবুর প্রত্যেকটি জিনিসপত্র খানাতল্লাশি করলেন কিন্তু কিছুই খুঁজে পেলেন না।
35 রাহেল তাঁর বাবাকে বললেন, “হে আমার প্রভু, আমি যে আপনার সামনে উঠে দাঁড়াতে পারছি না, সেজন্য আমার উপর রাগ করবেন না; আমার মাসিক চলছে।” তাই লাবন খানাতল্লাশি করেও গৃহদেবতাদের খুঁজে পাননি।
36 যাকোব রেগে গিয়ে লাবনকে তিরস্কার করলেন। “আমি কী অপরাধ করেছি?” তিনি লাবনকে জিজ্ঞাসা করলেন। “আমি আপনার কী এমন ক্ষতি করেছি যে আপনি আমাকে তন্নতন্ন করে খুঁজে বেড়াচ্ছেন?
37 এখন আপনি যে আমার সব জিনিসপত্র খানাতল্লাশি করলেন, তাতে এমন কিছু কি পেয়েছেন যা আপনার গৃহস্থালিভুক্ত? আপনার ও আমার আত্মীয়স্বজনদের সামনে তা এখানে এনে রাখুন, এবং তাদেরকেই আমাদের উভয়ের মধ্যে বিচার করতে দিন।
38 “আমি আপনার কাছে এখন কুড়ি বছর ধরে আছি। না আপনার মেষ ও ছাগপালের গর্ভপাত হয়েছে, না আমি আপনার পশুপাল থেকে মদ্দা মেষগুলি ধরে ধরে খেয়েছি।
39 বন্যজন্তুরা যেসব পশুকে বিদীর্ণ করেছিল আমি সেগুলি আপনার কাছে নিয়ে আসিনি; সেই ক্ষতি আমি নিজেই বহন করেছি। আর দিনে বা রাতে যখনই কিছু চুরি গিয়েছিল, আপনি আমার কাছ থেকে তার দাম দাবি করেছিলেন।
40 এই ছিল আমার অবস্থা: দিনের বেলায় উত্তাপ ও রাতের বেলায় শৈত্য আমাকে গ্রাস করেছিল, এবং আমার চোখ থেকে নিদ্রা পালিয়ে গিয়েছিল।
41 এভাবেই আমি কুড়িটি বছর আপনার ঘর-পরিবারে কাটিয়ে দিয়েছি। আপনার দুই মেয়ের জন্য চোদ্দো বছর এবং আপনার পশুপালের জন্য ছয় বছর আমি আপনার কাছে কাজ করেছি, আর দশবার আপনি আমার পারিশ্রমিকের পরিবর্তন করেছেন।
42 আমার পৈত্রিক ঈশ্বর, অব্রাহামের ঈশ্বর এবং ইস্হাকের সেই আশঙ্কা যদি আমার সাথে না থাকতেন, তবে আপনি নিঃসন্দেহে আমাকে শূন্য হাতেই পাঠিয়ে দিতেন। কিন্তু ঈশ্বর আমার কষ্ট ও আমার হাতের পরিশ্রম দেখেছেন, আর তাই গতকাল রাতে তিনি আপনাকে ভর্ৎসনা করেছেন।”
43 লাবন যাকোবকে উত্তর দিলেন, “এই মহিলারা আমার মেয়ে, এই সন্তানেরা আমার সন্তানসন্ততি ও এই পশুপাল আমারই পশুপাল। তুমি যা কিছু দেখছ এসবই আমার। তবুও আজ আমি আমার এই মেয়েদের বিষয়ে বা তারা যেসব সন্তানের জন্ম দিয়েছে, তাদের বিষয়ে কী-ই বা করতে পারি?
44 এখন তবে এসো, তুমি ও আমি, আমরা এক নিয়ম তৈরি করি, এবং এটি আমাদের মধ্যে এক সাক্ষী হয়ে থাকুক।”
45 অতএব যাকোব একটি পাথর নিয়ে সেটি এক স্তম্ভরূপে স্থাপন করলেন।
46 তিনি তাঁর আত্মীয়স্বজনদের বললেন, “কিছু পাথর সংগ্রহ করো।” অতএব তাঁরা বেশ কিছু পাথর নিয়ে সেগুলি একটি স্তূপে পাঁজা করে রাখলেন, এবং সেই স্তূপের পাশে বসে ভোজনপান করলেন।
47 লাবন সেটির নাম রাখলেন যিগর সাহদূথা, এবং যাকোব সেটির নাম রাখলেন গল্-এদ।
48 লাবন বললেন, “এই স্তূপ আজ তোমার ও আমার মধ্যে এক সাক্ষী হয়ে রইল।” এজন্য সেটির নাম রাখা হল গল্-এদ।
49 সেটির নাম মিস্পা রাখা হল, কারণ তিনি বললেন, “আমরা যখন পরস্পরের থেকে দূরে সরে থাকব তখনও সদাপ্রভু যেন আমাদের দুজনের উপর নজর রাখেন।
50 তুমি যদি আমার মেয়েদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করো বা আমার মেয়েদের পাশাপাশি অন্য কোনও স্ত্রীকে গ্রহণ করো, তবে যদিও আমাদের সঙ্গে কেউ নাও থাকে, তবু মনে রেখো যে তোমার ও আমার মাঝখানে ঈশ্বর এক সাক্ষী হয়ে আছেন।”
51 লাবন যাকোবকে এও বললেন, “এই সেই স্তূপ, ও এই সেই স্তম্ভ যা আমি তোমার ও আমার মাঝখানে স্থাপন করেছি।
52 এই স্তূপ এক সাক্ষী, এবং এই স্তম্ভ এক সাক্ষী হয়ে থাকল, যে এই স্তূপ পার হয়ে আমি তোমার ক্ষতিসাধন করার জন্য তোমার দিকে যাব না এবং তুমিও এই স্তূপ ও স্তম্ভ পার হয়ে আমার ক্ষতিসাধন করার জন্য আমার দিকে আসবে না।
53 অব্রাহামের ঈশ্বর এবং নাহোরের ঈশ্বর, তাঁদের পৈত্রিক ঈশ্বরই, আমাদের দুজনের মধ্যে বিচারক হয়ে থাকুন।” অতএব যাকোব তাঁর বাবা ইস্হাকের আশঙ্কার নামে শপথ নিলেন।
54 সেই পার্বত্য এলাকায় তিনি এক বলি উৎসর্গ করলেন ও তাঁর আত্মীয়স্বজনদের এক ভোজসভায় নিমন্ত্রণ করলেন। ভোজনপান করার পর, তাঁরা সেখানে রাত কাটালেন।
55 পরদিন ভোরবেলায় লাবন তাঁর নাতি-নাতনিদের ও তাঁর মেয়েদের চুমু দিলেন এবং তাদের আশীর্বাদ করলেন। পরে তিনি বিদায় নিয়ে তাঁর স্বদেশে ফিরে গেলেন।