< আদিপুস্তক 31 >

1 যাকোব শুনতে পেলেন যে লাবনের ছেলেরা বলাবলি করছে, “আমাদের বাবার অধিকারভুক্ত সবকিছু যাকোব ছিনিয়ে নিয়েছে এবং আমাদের বাবার যেসব ধনসম্পদ ছিল তা নিয়েই তার বাড়বাড়ন্ত হয়েছে।”
পরে তিনি লাবনের ছেলেদের এই কথা শুনতে পেলেন, যাকোব আমাদের বাবার সব কিছু কেড়ে নিয়েছে, আমাদের বাবার সম্পত্তি থেকে তার এই সব ঐশ্বর্য্য হয়েছে।
2 আর যাকোব লক্ষ্য করলেন যে তার প্রতি লাবনের আচরণ আর আগের মতো নেই।
আর যাকোব লাবনের মুখ দেখলেন, আর দেখ, তা আর তাঁর প্রতি আগের মত নয়।
3 তখন সদাপ্রভু যাকোবকে বললেন, “তুমি তোমার পূর্বপুরুষদের ও আত্মীয়স্বজনের দেশে ফিরে যাও, আর আমি তোমার সঙ্গে থাকব।”
আর সদাপ্রভু যাকোবকে বললেন, “তুমি নিজের বাবার দেশে আত্মীয়দের কাছে ফিরে যাও, আমি তোমার সঙ্গী হব।
4 অতএব যাকোব রাহেল ও লেয়াকে খবর পাঠিয়ে সেই মাঠে ডেকে পাঠালেন, যেখানে তাঁর পশুপাল রাখা ছিল।
তাই যাকোব লোক পাঠিয়ে মাঠে পশুদের কাছে রাহেল ও লেয়াকে ডেকে বললেন,
5 তিনি তাঁদের বললেন, “আমি দেখছি যে আমার প্রতি তোমাদের বাবার আচরণ আর আগের মতো নেই, কিন্তু আমার পৈত্রিক ঈশ্বর আমার সঙ্গে আছেন।
আমি তোমাদের বাবার মুখ দেখে বুঝতে পারছি, তা আর আমার কাছে আগের মত নয়, কিন্তু আমার বাবার ঈশ্বর আমার সহবর্ত্তী রয়েছেন।
6 তোমরা তো জানো যে তোমাদের বাবার জন্য আমি আমার সর্বশক্তি দিয়ে পরিশ্রম করেছি,
আর তোমরা নিজেরা জান, আমি যথাশক্তি তোমাদের বাবার দাসত্ব করেছি।
7 তবুও তোমাদের বাবা দশবার আমার পারিশ্রমিক পরিবর্তন করে আমাকে ঠকিয়েছেন। অবশ্য, ঈশ্বর তাঁকে আমার কোনও ক্ষতি করার অনুমতি দেননি।
তোমার বাবা আমাকে প্রবঞ্চনা করে দশ বার আমার বেতন অন্যথা করেছেন; কিন্তু ঈশ্বর তাঁকে আমার ক্ষতি করতে দেননি।
8 তিনি যদি বলেছেন, ‘দাগযুক্ত পশুগুলি তোমার পারিশ্রমিক হবে,’ তবে সব পশুপালই দাগযুক্ত শাবকের জন্ম দিয়েছিল; আর তিনি যদি বলেছেন, ‘ডোরাকাটা পশুগুলি তোমার পারিশ্রমিক হবে,’ তবে সব পশুপালই ডোরাকাটা শাবকের জন্ম দিয়েছিল।
কারণ যখন তিনি বলতেন, বিন্দুচিহ্নিত পশুরা তোমার বেতন স্বরূপ হবে, তখন সব পাল বিন্দু চিহ্নিত শাবক প্রসব করত এবং যখন বলতেন, দাগযুক্ত পশু সব তোমার বেতন স্বরূপ হবে, তখন মেষরা সব দাগযুক্ত শাবক প্রসব করত।
9 অতএব ঈশ্বরই তোমাদের বাবার গবাদি পশুপাল তাঁর কাছ থেকে কেড়ে নিয়েছেন ও সেগুলি আমাকে দিয়ে দিয়েছেন।
এভাবে ঈশ্বর তোমাদের বাবার পশুধন নিয়ে আমাকে দিয়েছেন।”
10 “পশুদের প্রজননের মরশুমে আমি একবার এক স্বপ্ন দেখেছিলাম যে আমি উপরের দিকে চোখ তুলে তাকিয়েছিলাম আর দেখেছিলাম যে, যে মদ্দা ছাগলগুলি মাদিগুলির সাথে যৌনমিলন করছে, সেগুলি ডোরাকাটা, দাগযুক্ত বা তিলকিত।
১০পশুদের গর্ভধারনের দিনের আমি স্বপ্নে চোখ তুলে দেখলাম, আর দেখ, পালের মধ্যে স্ত্রী পশুদের উপরে যত পুরুষ পশু উঠছে, সকলেই দাগযুক্ত ও চিত্রবিচিত্র।
11 ঈশ্বরের দূত স্বপ্নে আমাকে বলেছিলেন, ‘যাকোব।’ আমি উত্তর দিয়েছিলাম, ‘আমি এখানে।’
১১তখন ঈশ্বরের দূত স্বপ্নে আমাকে বললেন, “হে যাকোব;” আর আমি বললাম, “দেখুন, এই আমি।”
12 আর তিনি বলেছিলেন, ‘উপরের দিকে চোখ তুলে তাকাও ও দেখো মাদিগুলির সাথে যেসব মদ্দা ছাগল যৌনমিলন করছে সেগুলি ডোরাকাটা, দাগযুক্ত বা তিলকিত, কারণ লাবন তোমার সঙ্গে যা যা করে চলেছে, আমি সেসব দেখেছি।
১২তিনি বললেন, “তোমার চোখ তুলে দেখ, স্ত্রীপশুদের ওপরে যত পুরুষ পশু উঠছে, সকলেই রেখাঙ্কিত, দাগযুক্ত ও চিত্রবিচিত্র; কারণ, লাবন তোমার প্রতি যা যা করে, তা সবই আমি দেখলাম।
13 আমি সেই বেথেলের ঈশ্বর, যেখানে তুমি এক স্তম্ভকে অভিষিক্ত করেছিলে এবং আমার কাছে এক শপথ নিয়েছিলে। এখন তুমি এই মুহূর্তেই এই স্থান ত্যাগ করো এবং তোমার স্বদেশে ফিরে যাও।’”
১৩যে জায়গায় তুমি স্তম্ভের অভিষেক ও আমার কাছে মানত করেছ, সেই বৈথেলের ঈশ্বর আমি; এখন উঠ, এই দেশ ত্যাগ করে নিজের জন্মভূমিতে ফিরে যাও।”
14 তখন রাহেল ও লেয়া উত্তর দিলেন, “আমাদের বাবার ভূসম্পত্তিতে এখনও কি আমাদের আর কোনও অংশ ও অধিকার আছে?
১৪তখন রাহেল ও লেয়া উত্তর করে তাঁকে বললেন, “বাবার বাড়িতে আমাদের কি আর কিছু অংশ ও অধিকার আছে?
15 তিনি কি আমাদের বিদেশি বলে গণ্য করেন না? তিনি যে শুধু আমাদের বিক্রি করে দিয়েছেন তা নয়, কিন্তু আমাদের জন্য যা দেওয়া হয়েছিল, তাও তিনি নিঃশেষ করে ফেলেছেন।
১৫আমরা কি তাঁর কাছে বিদেশীদের মতো না? তিনি তো আমাদেরকে বিক্রি করেছেন এবং আমাদের রূপা নিজে ভোগ করেছেন।
16 নিঃসন্দেহে যেসব ধনসম্পদ ঈশ্বর আমাদের বাবার কাছ থেকে কেড়ে নিয়েছেন, তা আমাদের ও আমাদের সন্তানদেরই। অতএব ঈশ্বর তোমাকে যা যা বলেছেন, তাই করো।”
১৬ঈশ্বর আমাদের বাবা থেকে যে সব সম্পত্তি কেড়ে নিয়েছেন, সে সবই আমাদের ও আমাদের ছেলে মেয়েদের। তাই ঈশ্বর তোমাকে যা কিছু বলেছেন, তুমি তাই কর।”
17 তখন যাকোব তার সন্তানদের ও তাঁর স্ত্রীদের উটের পিঠে চাপিয়ে দিলেন,
১৭তখন যাকোব উঠে আপন ছেলেদের ও স্ত্রীদেরকে উটে চড়িয়ে আপনার উপার্জিত সমস্ত পশুধন,
18 এবং কনান দেশে তাঁর বাবা ইস্‌হাকের কাছে যাবার জন্য তিনি পদ্দন-আরামে থাকাকালীন যেসব জিনিসপত্র জমিয়েছিলেন, সেগুলি সাথে নিয়ে তাঁর আগে আগে তাঁর সব গবাদি পশুপালও তাড়িয়ে নিয়ে গেলেন।
১৮অর্থাৎ পদ্দন অরামে যে পশু ও যে সম্পত্তি উপার্জন করেছিলেন, তা নিয়ে কনান দেশে নিজের বাবা ইসহাকের কাছে যাত্রা করলেন।
19 লাবন যখন তাঁর মেষের লোম ছাঁটতে গিয়েছিলেন, রাহেল তখন তাঁর বাবার গৃহদেবতাদের মূর্তিগুলি চুরি করে নিলেন।
১৯সে দিন লাবন ভেড়ার লোম কাটতে গিয়েছিলেন; তখন রাহেল নিজের বাবার ঠাকুরগুলাকে চুরি করলেন।
20 এছাড়াও, তিনি যে পালিয়ে যাচ্ছেন একথা অরামীয় লাবনকে না বলে যাকোব তাঁকে প্রতারিত করলেন।
২০আর যাকোব নিজের পালানোর কোনো খবর না দিয়ে অরামীয় লাবণকে ঠকালেন।
21 অতএব তিনি তাঁর সবকিছু সাথে নিয়ে, ইউফ্রেটিস নদী পার করে পালিয়ে গেলেন, এবং গিলিয়দের পার্বত্য এলাকার দিকে এগিয়ে গেলেন।
২১তিনি নিজের সর্বস্ব নিয়ে পালিয়ে গেলেন এবং উঠে [ফরাৎ] নদী পার হয়ে গিলিয়দ পর্বত সামনে রেখে চলতে লাগলেন।
22 তৃতীয় দিনে লাবনকে বলা হল যে যাকোব পালিয়ে গিয়েছেন।
২২পরে তৃতীয় দিনের লাবন যাকোবের পালানোর খবর পেলেন
23 তাঁর আত্মীয়স্বজনদের সঙ্গে নিয়ে, তিনি সাত দিন ধরে যাকোবের পশ্চাদ্ধাবন করলেন এবং গিলিয়দের পার্বত্য এলাকায় তাঁকে ধরে ফেললেন।
২৩এবং নিজের আত্মীয়দেরকে সঙ্গে নিয়ে সাত দিনের র পথ তাঁর পেছনে গেলেন ও গিলিয়দ পর্বতে তাঁর দেখা পেলেন।
24 তখন রাতের বেলায় ঈশ্বর স্বপ্নে অরামীয় লাবনের কাছে এলেন ও তাঁকে বললেন, “যাকোবকে ভালো বা মন্দ কোনো কিছু বলার বিষয়ে তুমি সাবধান থেকো।”
২৪কিন্তু ঈশ্বর রাতে স্বপ্নযোগে অরামীয় লাবনের কাছে উপস্থিত হয়ে তাঁকে বললেন, “সাবধান, যাকোবকে ভাল মন্দ কিছুই বোলো না।”
25 লাবন যখন যাকোবের নাগাল ধরে ফেললেন, তখন যাকোব গিলিয়দের পার্বত্য এলাকায় তাঁর তাঁবু খাটিয়েছিলেন, এবং লাবন ও তাঁর আত্মীয়স্বজনরাও সেখানেই ঘাঁটি গেড়েছিলেন।
২৫লাবন যখন যাকোবের দেখা পেলেন, তখন যাকোবের তাঁবু পর্বতের ওপরে স্থাপিত ছিল; তাতে লাবণও কুটুম্বদের সঙ্গে গিলিয়দ পর্বতের ওপরে তাঁবু স্থাপন করলেন।
26 তখন লাবন যাকোবকে বললেন, “তুমি এ কী করলে? তুমি আমার সাথে প্রতারণা করেছ এবং তুমি আমার মেয়েদের যুদ্ধবন্দিদের মতো করে নিয়ে এসেছ।
২৬পরে লাবন যাকোবকে বললেন, “তুমি কেন এমন কাজ করলে? আমাকে ঠকিয়ে আমার যেমন তরোয়াল দিয়ে বন্দী বানানো হয় সেই বন্দিদের মত কেন আমার মেয়েদেরকে নিয়ে আসলে?
27 তুমি কেন গোপনে পালিয়ে এসেছ ও আমাকে ঠকিয়েছ? তুমি কেন আমায় বলোনি, আমি তো আনন্দের সঙ্গে এবং খঞ্জনি ও বীণার বাজনা সহযোগে গান গেয়ে তোমাদের বিদায় জানাতে পারতাম?
২৭তুমি আমাকে বঞ্চনা করে কেন গোপনে পালালে? কেন আমাকে খবর দিলে না? দিলে আমি তোমাকে উদযাপন ও গান এবং খঞ্জনির ও বীণার বাজনা দিয়ে বিদায় করতাম।
28 এমনকি তুমি আমাকে আমার নাতি-নাতনিদের ও মেয়েদের চুমু দিয়ে বিদায় জানাতেও দাওনি। তুমি এক মূর্খের মতো কাজ করেছ।
২৮তুমি আমার নাতি ও মেয়েদেরকে চুমু দিতে আমাকে দিলে না; এ মূর্খের কাজ করেছ।
29 তোমার ক্ষতিসাধন করার শক্তি আমার আছে; কিন্তু গতকাল রাতে তোমার পৈত্রিক ঈশ্বর আমাকে বললেন, ‘যাকোবকে ভালো বা মন্দ কোনো কিছু বলার বিষয়ে তুমি সাবধান থেকো।’
২৯তোমাদের ক্ষতি করতে আমার হাতে শক্তি আছে;” কিন্তু গত রাতে তোমাদের বাবার ঈশ্বর আমাকে বললেন, “সাবধান, যাকোবকে ভাল খারাপ কিছুই বল না।
30 তুমি প্রস্থান করেছ, কারণ তুমি তোমার বাবার ঘরে ফিরে যেতে চেয়েছিলে। কিন্তু আমার দেবতাদের তুমি চুরি করলে কেন?”
৩০আর এখন, তুমি দূরে চলে গেছ কারণ তুমি তোমার বাবার বাড়ির জন্য অনেক প্রত্যাশিত; কিন্তু আমার দেবতাদেরকে কেন চুরি করলে?”
31 যাকোব লাবনকে উত্তর দিলেন, “আমি ভয় পেয়েছিলাম, কারণ আমি ভেবেছিলাম আপনি আপনার মেয়েদের জোর করে আমার কাছ থেকে ছিনিয়ে নেবেন।
৩১যাকোব লাবনকে উত্তরে বললেন, “আমি ভয় পেয়েছিলাম; কারণ ভেবেছিলাম, যদি আপনি আমার কাছ থেকে আপনার মেয়েদেরকে জোর করে কেড়ে নেন।
32 কিন্তু এমন কাউকে যদি আপনি খুঁজে পান যার কাছে আপনার দেবতারা আছে, তবে সে আর বেঁচে থাকবে না। আমাদের আত্মীয়স্বজনদের উপস্থিতিতে, আপনি নিজেই দেখে নিন আপনার কোনও জিনিস আমার সাথে আছে কি না; এবং যদি তা থাকে, তবে তা নিয়ে নিন।” যাকোব জানতেনই না যে রাহেল দেবতাদের চুরি করেছেন।
৩২আপনি যার কাছে আপনার দেবতাদেরকে পাবেন, সে বাঁচবে না। আমাদের আত্মীদের কাছে খোঁজ নিয়ে আমার কাছে আপনার যা আছে, তা নিন।” আসলে যাকোব জানতেন না যে, রাহেল সেগুলো চুরি করেছেন৷
33 অতএব লাবন যাকোবের তাঁবুতে ও লেয়ার তাঁবুতে এবং দুই দাসীর তাঁবুতে প্রবেশ করলেন, কিন্তু তিনি কিছুই খুঁজে পেলেন না। আর লেয়ার তাঁবু থেকে বেরিয়ে আসার পর, তিনি রাহেলের তাঁবুতে প্রবেশ করলেন।
৩৩তখন লাবন যাকোবের তাঁবুতে ও লেয়ার তাঁবুতে ও দুই দাসীর তাঁবুতে প্রবেশ করলেন, কিন্তু পেলেন না। পরে তিনি লেয়ার তাঁবু থেকে রাহেলের তাঁবুতে প্রবেশ করলেন।
34 রাহেল গৃহদেবতাদের নিয়ে সেগুলি তাঁর উটের জিনের মধ্যে রেখে দিয়েছিলেন এবং সেটির উপরে বসেছিলেন। লাবন সেই তাঁবুর প্রত্যেকটি জিনিসপত্র খানাতল্লাশি করলেন কিন্তু কিছুই খুঁজে পেলেন না।
৩৪কিন্তু রাহেল সেই ঠাকুরগুলাকে নিয়ে উটের গদীর ভেতরে রেখে তাদের ওপরে বসে ছিলেন; সে জন্য লাবন তাঁর তাঁবুর সব জায়গায় হাতড়ালেও তাদেরকে পেলেন না।
35 রাহেল তাঁর বাবাকে বললেন, “হে আমার প্রভু, আমি যে আপনার সামনে উঠে দাঁড়াতে পারছি না, সেজন্য আমার উপর রাগ করবেন না; আমার মাসিক চলছে।” তাই লাবন খানাতল্লাশি করেও গৃহদেবতাদের খুঁজে পাননি।
৩৫তখন রাহেল বাবাকে বললেন, “প্রভু, আপনার সামনে আমি উঠতে পারলাম না, এতে বিরক্ত হবেন না, কারণ আমার ঋতুচক্র চলছে।” এভাবে তিনি খোঁজ করলেও সেই ঠাকুরগুলাকে পেলেন না।
36 যাকোব রেগে গিয়ে লাবনকে তিরস্কার করলেন। “আমি কী অপরাধ করেছি?” তিনি লাবনকে জিজ্ঞাসা করলেন। “আমি আপনার কী এমন ক্ষতি করেছি যে আপনি আমাকে তন্নতন্ন করে খুঁজে বেড়াচ্ছেন?
৩৬তখন যাকোব রেগে গিয়ে লাবনের সঙ্গে ঝগড়া করতে লাগলেন। যাকোব লাবনকে বললেন, “আমার অপরাধ কি, ও আমার পাপ কি যে, তুমি রেগে গিয়ে আমার পেছনে পেছনে দৌড়ে এসেছো?
37 এখন আপনি যে আমার সব জিনিসপত্র খানাতল্লাশি করলেন, তাতে এমন কিছু কি পেয়েছেন যা আপনার গৃহস্থালিভুক্ত? আপনার ও আমার আত্মীয়স্বজনদের সামনে তা এখানে এনে রাখুন, এবং তাদেরকেই আমাদের উভয়ের মধ্যে বিচার করতে দিন।
৩৭তুমি আমার সব জিনিসপত্র হাতড়িয়ে তোমার বাড়ির কোন জিনিস পেলে? আমার ও তোমার এই আত্মীয়দের সামনে তা রাখ, এরা উভয় পক্ষের বিচার করুন।
38 “আমি আপনার কাছে এখন কুড়ি বছর ধরে আছি। না আপনার মেষ ও ছাগপালের গর্ভপাত হয়েছে, না আমি আপনার পশুপাল থেকে মদ্দা মেষগুলি ধরে ধরে খেয়েছি।
৩৮এই কুড়ি বছর আমি তোমার কাছে আছি; তোমার ভেড়ীদের কি ছাগীদের গর্ভপাত হয়নি এবং আমি তোমার পালের ভেড়াদের খাইনি;
39 বন্যজন্তুরা যেসব পশুকে বিদীর্ণ করেছিল আমি সেগুলি আপনার কাছে নিয়ে আসিনি; সেই ক্ষতি আমি নিজেই বহন করেছি। আর দিনে বা রাতে যখনই কিছু চুরি গিয়েছিল, আপনি আমার কাছ থেকে তার দাম দাবি করেছিলেন।
৩৯পশুতে ছিন্নভিন্ন করা ভেড়া তোমার কাছে আনতাম না; সে ক্ষতি নিজে স্বীকার করতাম; দিনের কিম্বা রাতে যা চুরি হত, তার পরিবর্তে তুমি আমার কাছ থেকে নিতে
40 এই ছিল আমার অবস্থা: দিনের বেলায় উত্তাপ ও রাতের বেলায় শৈত্য আমাকে গ্রাস করেছিল, এবং আমার চোখ থেকে নিদ্রা পালিয়ে গিয়েছিল।
৪০আমার এরকম দশা হত, আমি দিনের র তাপ ও রাতে শীত ভোগ করতাম, ঘুম আমার চোখ থেকে দূরে পালিয়ে যেত।
41 এভাবেই আমি কুড়িটি বছর আপনার ঘর-পরিবারে কাটিয়ে দিয়েছি। আপনার দুই মেয়ের জন্য চোদ্দো বছর এবং আপনার পশুপালের জন্য ছয় বছর আমি আপনার কাছে কাজ করেছি, আর দশবার আপনি আমার পারিশ্রমিকের পরিবর্তন করেছেন।
৪১এই কুড়ি বছর আমি তোমার বাড়িতে আছি; তোমার দুই মেয়ের জন্য চোদ্দ বছর, আর তোমার পশুদের জন্য ছয় বছর দাসবৃত্তি করেছি; এর মধ্যে তুমি দশ বার আমার বেতন অন্যথা করেছ।
42 আমার পৈত্রিক ঈশ্বর, অব্রাহামের ঈশ্বর এবং ইস্‌হাকের সেই আশঙ্কা যদি আমার সাথে না থাকতেন, তবে আপনি নিঃসন্দেহে আমাকে শূন্য হাতেই পাঠিয়ে দিতেন। কিন্তু ঈশ্বর আমার কষ্ট ও আমার হাতের পরিশ্রম দেখেছেন, আর তাই গতকাল রাতে তিনি আপনাকে ভর্ৎসনা করেছেন।”
৪২আমার বাবার ঈশ্বর, অব্রাহামের ঈশ্বর ও ইস্‌হাকের ভয়স্থান যদি আমার পক্ষ না হতেন, তবে অবশ্য এখন তুমি আমাকে খালি হাতে বিদায় করতে। ঈশ্বর আমার দুঃখ ও হাতের পরিশ্রম দেখেছেন, এ জন্য গত রাত্রে তোমাকে ধমকালেন।”
43 লাবন যাকোবকে উত্তর দিলেন, “এই মহিলারা আমার মেয়ে, এই সন্তানেরা আমার সন্তানসন্ততি ও এই পশুপাল আমারই পশুপাল। তুমি যা কিছু দেখছ এসবই আমার। তবুও আজ আমি আমার এই মেয়েদের বিষয়ে বা তারা যেসব সন্তানের জন্ম দিয়েছে, তাদের বিষয়ে কী-ই বা করতে পারি?
৪৩তখন লাবন উত্তর করে যাকোবকে বললেন, “এই মেয়েরা আমারই মেয়ে, এই ছেলেরা আমারই ছেলে এবং এই পশুরা আমারই পশু; যা যা দেখছ, এ সবই আমার। এখন আমার এই মেয়েদেরকে ও এদের প্রস্তুত এই ছেলেদের কে আমি কি করব?
44 এখন তবে এসো, তুমি ও আমি, আমরা এক নিয়ম তৈরি করি, এবং এটি আমাদের মধ্যে এক সাক্ষী হয়ে থাকুক।”
৪৪এস তোমাতে ও আমাতে নিয়ম স্থির করি, তা তোমার ও আমার সাক্ষী থাকবে।”
45 অতএব যাকোব একটি পাথর নিয়ে সেটি এক স্তম্ভরূপে স্থাপন করলেন।
৪৫তখন যাকোব এক পাথর নিয়ে স্তম্ভরূপে স্থাপন করলেন।
46 তিনি তাঁর আত্মীয়স্বজনদের বললেন, “কিছু পাথর সংগ্রহ করো।” অতএব তাঁরা বেশ কিছু পাথর নিয়ে সেগুলি একটি স্তূপে পাঁজা করে রাখলেন, এবং সেই স্তূপের পাশে বসে ভোজনপান করলেন।
৪৬আর যাকোব নিজের আত্মীয়দেরকে বললেন, আপনারাও পাথর সংগ্রহ করুন। তাতে তাঁরা পাথর এনে এক রাশি করলেন এবং সেই জায়গায় ঐ রাশির কাছে ভোজন করলেন।
47 লাবন সেটির নাম রাখলেন যিগর সাহদূথা, এবং যাকোব সেটির নাম রাখলেন গল্-এদ।
৪৭আর লাবন তার নাম যিগর-সাহদূখা [সাক্ষি-রাশি] রাখলেন, কিন্তু যাকোব তার নাম গল-এদ [সাক্ষি-রাশি] রাখলেন।
48 লাবন বললেন, “এই স্তূপ আজ তোমার ও আমার মধ্যে এক সাক্ষী হয়ে রইল।” এজন্য সেটির নাম রাখা হল গল্-এদ।
৪৮তখন লাবন বললেন, “এই রাশি আজ তোমার ও আমার সাক্ষী থাকল। এই জন্য তার নাম গিলিয়দ”
49 সেটির নাম মিস্‌পা রাখা হল, কারণ তিনি বললেন, “আমরা যখন পরস্পরের থেকে দূরে সরে থাকব তখনও সদাপ্রভু যেন আমাদের দুজনের উপর নজর রাখেন।
৪৯এছাড়া মিস্পা নামে [প্রহরী স্থান] রাখা গেল; কারণ তিনি বললেন, “আমরা পরস্পর অদৃশ্য হলে সদাপ্রভু আমার ও তোমার প্রহরী থাকবেন।
50 তুমি যদি আমার মেয়েদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করো বা আমার মেয়েদের পাশাপাশি অন্য কোনও স্ত্রীকে গ্রহণ করো, তবে যদিও আমাদের সঙ্গে কেউ নাও থাকে, তবু মনে রেখো যে তোমার ও আমার মাঝখানে ঈশ্বর এক সাক্ষী হয়ে আছেন।”
৫০তুমি যদি আমার মেয়েদেরকে দুঃখ দাও আর যদি আমার মেয়ে ছাড়া অন্য স্ত্রীকে বিয়ে কর, তবে কোন মানুষ আমার কাছে থাকবে না বটে, কিন্তু দেখ, ঈশ্বর আমার ও তোমার সাক্ষী হবেন।”
51 লাবন যাকোবকে এও বললেন, “এই সেই স্তূপ, ও এই সেই স্তম্ভ যা আমি তোমার ও আমার মাঝখানে স্থাপন করেছি।
৫১লাবন যাকোবকে আর ও বললেন, “এই রাশি দেখ ও এই স্তম্ভ দেখ, আমার ও তোমার মধ্যে আমি এটা স্থাপন করলাম।
52 এই স্তূপ এক সাক্ষী, এবং এই স্তম্ভ এক সাক্ষী হয়ে থাকল, যে এই স্তূপ পার হয়ে আমি তোমার ক্ষতিসাধন করার জন্য তোমার দিকে যাব না এবং তুমিও এই স্তূপ ও স্তম্ভ পার হয়ে আমার ক্ষতিসাধন করার জন্য আমার দিকে আসবে না।
৫২হিংসাভাবে আমিও এই রাশি পার হয়ে তোমার কাছে যাব না এবং তুমিও এই রাশি ও এই স্তম্ভ পার হয়ে আমার কাছে আসবে না, এর সাক্ষী এই রাশি ও এর সাক্ষী এই স্তম্ভ;
53 অব্রাহামের ঈশ্বর এবং নাহোরের ঈশ্বর, তাঁদের পৈত্রিক ঈশ্বরই, আমাদের দুজনের মধ্যে বিচারক হয়ে থাকুন।” অতএব যাকোব তাঁর বাবা ইস্‌হাকের আশঙ্কার নামে শপথ নিলেন।
৫৩অব্রাহামের ঈশ্বর, নাহোরের ঈশ্বর ও তাঁদের বাবার ঈশ্বর আমাদের মধ্যে বিচার করবেন।” তখন যাকোব নিজের বাবা ইসহাকের ভয়স্থানের শপথ করলেন।
54 সেই পার্বত্য এলাকায় তিনি এক বলি উৎসর্গ করলেন ও তাঁর আত্মীয়স্বজনদের এক ভোজসভায় নিমন্ত্রণ করলেন। ভোজনপান করার পর, তাঁরা সেখানে রাত কাটালেন।
৫৪পরে যাকোব সেই পর্বতে বলিদান করে আহার করতে নিজের আত্মীদের নিমন্ত্রণ করলেন, তাতে তারা ভোজন করে পর্বতে রাত্ কাটালেন।
55 পরদিন ভোরবেলায় লাবন তাঁর নাতি-নাতনিদের ও তাঁর মেয়েদের চুমু দিলেন এবং তাদের আশীর্বাদ করলেন। পরে তিনি বিদায় নিয়ে তাঁর স্বদেশে ফিরে গেলেন।
৫৫পরে লাবন সকালে উঠে নিজের নাতি মেয়েদেরকে চুম্বনপূর্বক আশীর্বাদ করলেন। আর লাবন নিজের জায়গায় ফিরে গেলেন।

< আদিপুস্তক 31 >