< যাত্রাপুস্তক 9 >
1 তখন সদাপ্রভু মোশিকে বললেন, “ফরৌণের কাছে যাও এবং তাকে বলো, ‘হিব্রুদের ঈশ্বর সদাপ্রভু একথাই বলেন: “আমার প্রজাদের যেতে দাও, যেন তারা আমার আরাধনা করতে পারে।”
2 যদি তুমি তাদের যেতে দিতে অসম্মত হও এবং ক্রমাগত তাদের আটকে রাখো,
3 তবে সদাপ্রভুর হাত মাঠেঘাটে থাকা তোমাদের গৃহপালিত পশুপালের উপর—তোমাদের ঘোড়া, গাধা ও উটের এবং গবাদি পশুপালের, মেষ ও ছাগলদের উপর ভয়ংকর এক আঘাত নিয়ে আসবে।
4 কিন্তু সদাপ্রভু ইস্রায়েলীদের গৃহপালিত পশুপালের এবং মিশরীয়দের গৃহপালিত পশুপালের মধ্যে এক পার্থক্য গড়ে তুলবেন, যেন ইস্রায়েলীদের অধিকারভুক্ত কোনও পশু মারা না যায়।’”
5 সদাপ্রভু এক সময় নির্দিষ্ট করলেন ও বললেন, “আগামীকাল সদাপ্রভু দেশে এরকম করবেন।”
6 আর পরদিন সদাপ্রভু তা করলেন: মিশরীয়দের সব গৃহপালিত পশু মারা গেল, কিন্তু ইস্রায়েলীদের অধিকারভুক্ত একটি পশুও মারা গেল না।
7 ফরৌণ তদন্ত করলেন এবং জানতে পারলেন যে ইস্রায়েলীদের একটি পশুও মারা যায়নি। তবুও তাঁর হৃদয় অনমনীয়ই থেকে গেল এবং তিনি লোকদের যেতে দিলেন না।
8 পরে সদাপ্রভু মোশি ও হারোণকে বললেন, “একটি উনুন থেকে মুঠো ভর্তি করে ছাইভস্ম তুলে নাও এবং ফরৌণের সামনেই মোশি তা হাওয়ায় ছড়িয়ে দিক।
9 সমগ্র মিশর দেশে তা মিহি ধুলোয় পরিণত হবে, এবং দেশের সর্বত্র মানুষজনের ও পশুপালের গায়ে পুঁজ-ভরা ফোঁড়া ফুটে উঠবে।”
10 অতএব তাঁরা একটি উনুন থেকে ছাইভস্ম তুলে নিয়ে ফরৌণের সামনে গিয়ে দাঁড়ালেন। মোশি হাওয়ায় তা ছড়িয়ে দিলেন, এবং মানুষজনের ও পশুপালের গায়ে পুঁজ-ভরা ফোঁড়া ফুটে উঠল।
11 জাদুকরদের ও সব মিশরীয়দের গায়ে যে ফোঁড়াগুলি ফুটে উঠল, সেগুলির কারণে জাদুকররা মোশির সামনে দাঁড়াতে পারল না।
12 কিন্তু সদাপ্রভু ফরৌণের হৃদয় কঠিন করে দিলেন এবং তিনি মোশি ও হারোণের কথা শুনতে চাইলেন না, ঠিক যেমনটি সদাপ্রভু মোশিকে বলেছিলেন।
13 পরে সদাপ্রভু মোশিকে বললেন, “ভোরবেলায় ঘুম থেকে উঠে, ফরৌণের সম্মুখীন হয়ে তাকে বোলো, ‘হিব্রুদের ঈশ্বর সদাপ্রভু একথাই বলেন: আমার প্রজাদের যেতে দাও, যেন তারা আমার আরাধনা করতে পারে,
14 তা না হলে এবার আমি তোমার বিরুদ্ধে ও তোমার কর্মকর্তাদের ও তোমার প্রজাদের বিরুদ্ধে আমার আঘাতগুলির পূর্ণ বল পাঠাব, যেন তুমি জানতে পারো যে সারা পৃথিবীতে আমার মতো আর কেউ নেই।
15 কারণ এখনই আমি আমার হাত বাড়িয়ে তোমাকে ও তোমার প্রজাদের এমন এক আঘাত দ্বারা আহত করতে পারি যা তোমাদের এই পৃথিবীর বুক থেকে মুছে ফেলতে পারে।
16 কিন্তু ঠিক এই উদ্দেশ্যেই আমি তোমাকে উন্নত করেছি, যেন আমি তোমাকে আমার ক্ষমতা দেখাতে পারি ও সমগ্র পৃথিবীতে আমার নাম প্রচারিত হয়।
17 তুমি এখনও আমার প্রজাদের বিরুদ্ধে নিজেকে দাঁড় করিয়ে রেখেছ এবং তাদের যেতে দিচ্ছ না।
18 তাই, আগামীকাল এইসময় আমি এমন ভারী শিলাবৃষ্টি পাঠাব যা মিশরের প্রতিষ্ঠা-দিবস থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত কখনও মিশরের উপর পড়েনি।
19 তুমি এখন এক আদেশ জারি করো, যেন মাঠেঘাটে তোমার যত গৃহপালিত পশুপাল ও যা যা আছে, সেসব নিরাপদ আশ্রয়ে নিয়ে আসা হয়, কারণ যেসব মানুষ ও পশুকে ভিতরে আনা হয়নি ও যারা এখনও মাঠেঘাটেই আছে, তাদের প্রত্যেকের উপর শিলাবৃষ্টি নেমে আসবে, ও তারা মারা পড়বে।’”
20 ফরৌণের যেসব কর্মকর্তা সদাপ্রভুর বাক্যে ভয় পেয়েছিলেন, তাঁরা তাড়াতাড়ি করে তাঁদের ক্রীতদাস-দাসীদের ও তাঁদের গৃহপালিত পশুপালকে ভিতরে নিয়ে এলেন।
21 কিন্তু যারা সদাপ্রভুর বাক্য উপেক্ষা করল, তারা তাদের ক্রীতদাস-দাসীদের ও গৃহপালিত পশুপাল মাঠেঘাটেই ছেড়ে দিল।
22 পরে সদাপ্রভু মোশিকে বললেন, “তোমার হাত আকাশের দিকে প্রসারিত করো যেন মিশরে সর্বত্র শিলাবৃষ্টি নেমে আসে—মানুষজনের ও পশুপালের এবং মিশরের মাঠেঘাটে যা যা উৎপন্ন হচ্ছে, সবকিছুর উপরে নেমে আসে।”
23 মোশি যখন তাঁর ছড়িটি আকাশের দিকে প্রসারিত করলেন, তখন সদাপ্রভু বজ্রবিদ্যুৎ ও শিলাবৃষ্টি পাঠিয়ে দিলেন, এবং বজ্রবিদ্যুতের চমক মাটি স্পর্শ করল। অতএব সদাপ্রভু মিশর দেশের উপর শিলাবৃষ্টি বর্ষণ করলেন;
24 শিলাবৃষ্টিপাত হয়েছিল এবং এদিক-ওদিক বজ্রবিদ্যুৎ চমকাল। যখন থেকে মিশর এক দেশে পরিণত হয়েছিল, তখন থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত মিশর দেশে এরকম শিলাবৃষ্টি আর কখনও হয়নি।
25 মিশরে সর্বত্র শিলাবৃষ্টি মাঠের সবকিছুকে—মানুষজন ও পশুপাল, সবাইকেই আঘাত করল; মাঠেঘাটে যা যা উৎপন্ন হয় সেসবকিছু তা দুমড়ে-মুচড়ে দিল ও প্রত্যেকটি গাছ নেড়া করে ফেলল।
26 একমাত্র যেখানে শিলাবৃষ্টি পড়েনি তা হল সেই গোশন প্রদেশ, যেখানে ইস্রায়েলীরা বসবাস করত।
27 তখন ফরৌণ মোশি ও হারোণকে ডেকে পাঠালেন। “এবার আমি পাপ করেছি,” তিনি তাঁদের বললেন। “সদাপ্রভু ন্যায়পরায়ণ, এবং আমি ও আমার প্রজারা অন্যায় করেছি।
28 সদাপ্রভুর কাছে প্রার্থনা করো, কারণ আমরা যথেষ্ট বজ্রবিদ্যুৎ ও শিলাবৃষ্টি পেয়েছি। আমি তোমাদের যেতে দেব; তোমাদের আর এখানে থাকতে হবে না।”
29 মোশি উত্তর দিলেন, “আমি যখন নগরটি ছেড়ে যাব, তখন আমি আমার হাত দুটি প্রার্থনায় সদাপ্রভুর দিকে প্রসারিত করব। বজ্রপাত থেমে যাবে এবং শিলাবৃষ্টি আর হবে না, যেন আপনি জানতে পারেন যে এই পৃথিবী সদাপ্রভুরই।
30 কিন্তু আমি জানি যে আপনি ও আপনার কর্মকর্তারা এখনও সদাপ্রভু ঈশ্বরকে ভয় পাচ্ছেন না।”
31 (শণগাছ ও যব ধ্বংস হল, যেহেতু যবের শিষ ফুটেছিল ও শণগাছে ফুল ধরেছিল।
32 গম ও বাজরা অবশ্য ধ্বংস হয়নি, কারণ সেগুলি পরে পাকে।)
33 পরে মোশি ফরৌণকে ছেড়ে নগর থেকে বাইরে চলে গেলেন। তিনি সদাপ্রভুর দিকে তাঁর হাত দুটি প্রসারিত করলেন; বজ্রবিদ্যুৎ ও শিলাবৃষ্টি পড়া বন্ধ হয়ে গেল, এবং বৃষ্টিও আর জমিতে নেমে এল না।
34 ফরৌণ যখন দেখলেন যে বৃষ্টি ও শিলাবৃষ্টি ও বজ্রবিদ্যুৎ পড়া বন্ধ হয়েছে, তখন আবার তিনি পাপ করলেন: তিনি ও তাঁর কর্মকর্তারা তাঁদের হৃদয় কঠিন করলেন।
35 অতএব ফরৌণের হৃদয় কঠিন হল এবং তিনি ইস্রায়েলীদের যেতে দিলেন না, ঠিক যেমনটি সদাপ্রভু মোশির মাধ্যমে বলেছিলেন।