< যাত্রাপুস্তক 32 >
1 লোকেরা যখন দেখেছিল যে মোশি পর্বত থেকে নিচে নামতে খুব দেরি করছেন, তখন তারা হারোণের চারপাশে একত্রিত হয়ে বলল, “আসুন, আমাদের জন্য এমন সব দেবতা তৈরি করে দিন, যারা আমাদের অগ্রগামী হবেন। যে মোশি আমাদের মিশর দেশ থেকে বের করে এনেছেন, তার কী হল তা আমরা জানি না।”
2 হারোণ তাদের উত্তর দিলেন, “তোমাদের স্ত্রী, ছেলে ও মেয়েরা যেসব সোনার কানের দুল পরে আছে, সেগুলি খুলে ফেলো ও আমার কাছে নিয়ে এসো।”
3 অতএব সব লোকজন তাদের সোনার কানের দুল খুলে ফেলল ও হারোণের কাছে এনে দিল।
4 তারা তাঁর হাতে যা সঁপে দিল, সেগুলি তিনি গ্রহণ করলেন এবং ঢালাই করে এক যন্ত্রের সাহায্যে তিনি বাছুরের আকৃতিবিশিষ্ট একটি প্রতিমা তৈরি করে দিলেন। তখন তারা বলল, “হে ইস্রায়েল, এরাই তোমাদের সেই দেবতা, যারা মিশর থেকে তোমাদের বের করে এনেছেন।”
5 হারোণ যখন তা দেখলেন, তখন তিনি সেই বাছুরের সামনে একটি বেদি নির্মাণ করে দিলেন ও ঘোষণা করলেন, “আগামীকাল সদাপ্রভুর উদ্দেশে একটি উৎসব হবে।”
6 অতএব লোকজন পরদিন ভোরবেলায় উঠে পড়ল এবং হোমবলি উৎসর্গ করল ও মঙ্গলার্থক বলি নিবেদন করল। পরে তারা ভোজনপান করার জন্য বসে পড়ল, তারপর উঠে পরজাতীয়দের মতো হুল্লোড়ে মত্ত হল।
7 পরে সদাপ্রভু মোশিকে বললেন, “নিচে নেমে যাও, কারণ তোমার যে লোকদের তুমি মিশর থেকে বের করে এনেছ, তারা নীতিভ্রষ্ট হয়ে পড়েছে।
8 আমি তাদের যে আদেশ দিয়েছিলাম তা থেকে তারা খুব তাড়াতাড়ি বিপথগামী হয়ে পড়েছে এবং নিজেদের জন্য তারা ঢালাই করে বাছুরের আকৃতিবিশিষ্ট একটি প্রতিমা তৈরি করেছে। সেটির সামনে তারা নতজানু হয়েছে এবং সেটির উদ্দেশে বলি উৎসর্গ করে বলেছে, ‘হে ইস্রায়েল, এরাই তোমার সেইসব দেবতা, যারা মিশর থেকে তোমাকে বের করে এনেছেন।’
9 “আমি এই লোকদের দেখেছি,” সদাপ্রভু মোশিকে বললেন, “আর এরা খুব একগুঁয়ে লোক।
10 এখন আমার কাজে হস্তক্ষেপ কোরো না, যেন এদের বিরুদ্ধে আমি ক্রোধে ফেটে পড়তে পারি ও যেন এদের আমি ধ্বংস করে ফেলতে পারি। পরে আমি তোমাকে এক মহাজাতিতে পরিণত করব।”
11 কিন্তু মোশি তাঁর ঈশ্বর সদাপ্রভুর অনুগ্রহ চাইলেন, “হে সদাপ্রভু,” তিনি বললেন, “তুমি কেন তোমার সেই প্রজাদের বিরুদ্ধে ক্রোধে ফেটে পড়বে, যাদের তুমি মহাশক্তিতে ও বলশালী এক হাত দিয়ে মিশর থেকে বের করে এনেছ?
12 মিশরীয়রা কেন বলবে, ‘মন্দ উদ্দেশ্য নিয়ে, পাহাড়-পর্বতে তাদের হত্যা করার এবং পৃথিবীর বুক থেকে তাদের নিশ্চিহ্ন করে ফেলার জন্যই তিনি তাদের বের করে এনেছেন’? তোমার প্রচণ্ড ক্রোধ প্রশমিত করো; কোমল হও ও তোমার এই প্রজাদের উপর বিপর্যয় ডেকে এনো না।
13 তোমার সেই দাস অব্রাহাম, ইস্হাক ও যাকোবকে স্মরণ করো, যাদের কাছে তুমি নিজের নামে শপথ করে বলেছিলে: ‘আমি তোমার বংশধরদের আকাশের তারার মতো অসংখ্য করে তুলব এবং আমি তোমার বংশধরদের এই সমগ্র দেশটি দেব, যেটি আমি তাদের দেওয়ার প্রতিজ্ঞা করলাম, এবং চিরকালের জন্য এই দেশটি তাদের উত্তরাধিকার হবে।’”
14 তখন সদাপ্রভু কোমল হলেন এবং তাঁর প্রজাদের উপর যে বিপর্যয় ডেকে আনার হুমকি তিনি দিয়েছিলেন, তা আর আনেননি।
15 মোশি ঘুরে দাঁড়ালেন এবং বিধিনিয়মের সেই দুটি ফলক হাতে নিয়ে পাহাড় থেকে নিচে নেমে এলেন। সেই ফলকগুলির সামনে ও পিছনে, দুই দিকেই বিধিনিয়ম খোদাই করা ছিল।
16 ফলকগুলি ছিল ঈশ্বরের কাজ; রচনাটি ছিল ফলকগুলির উপর খোদাই করা ঈশ্বরের রচনা।
17 যিহোশূয় যখন লোকজনের চিৎকার শুনলেন, তখন তিনি মোশিকে বললেন, “শিবিরে যুদ্ধের শব্দ হচ্ছে।”
18 মোশি উত্তর দিলেন: “এটি জয়ধ্বনির শব্দ নয়, এটি পরাজয়ের শব্দ নয়; আমি গানের শব্দ শুনতে পাচ্ছি।”
19 মোশি যখন শিবিরের কাছাকাছি এলেন, এবং সেই বাছুরটিকে ও নাচানাচি দেখলেন, তখন তিনি ক্রোধে ফেটে পড়লেন এবং তিনি ফলকগুলি হাত থেকে ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে পর্বতের পাদদেশে সেগুলি ভেঙে টুকরো টুকরো করে দিলেন।
20 আর তিনি লোকদের তৈরি করা সেই বাছুরটি নিয়ে আগুনে পুড়িয়ে দিলেন; পরে তিনি সেটি পিষে গুঁড়ো করে, তা জলের উপর ছড়িয়ে দিলেন এবং ইস্রায়েলীদের তা পান করতে বাধ্য করলেন।
21 তিনি হারোণকে বললেন, “এই লোকেরা তোমার কী করেছিল, যে তুমি তাদের দিয়ে এত বড়ো পাপ করালে?”
22 “হে আমার প্রভু, ক্রুদ্ধ হবেন না,” হারোণ উত্তর দিলেন। “আপনি তো জানেন এই লোকেরা কত দুষ্টতাপ্রবণ।
23 তারা আমাকে বলল, ‘আমাদের জন্য এমন সব দেবতা তৈরি করে দিন, যারা আমাদের অগ্রগামী হবেন। যে মোশি আমাদের মিশর থেকে বের করে এনেছেন, তার কী হয়েছে তা আমরা জানি না।’
24 তাই আমি তাদের বললাম, ‘যার যার কাছে সোনার অলংকার আছে, সেগুলি খুলে ফেলো।’ তখন তারা আমাকে সেই সোনা দিয়েছিল, আর আমি সেগুলি আগুনে ফেলে দিয়েছিলাম, ও সেখান থেকে এই বাছুরটি বেরিয়ে এসেছে!”
25 মোশি দেখলেন যে, লোকেরা যা খুশি তাই করছে এবং হারোণও তাদের লাগামছাড়া হতে দিয়েছেন ও এভাবে তাদের শত্রুদের কাছে উপহাসের পাত্রে পরিণত হয়েছেন।
26 অতএব তিনি শিবিরের প্রবেশদ্বারে দাঁড়িয়ে বললেন, “যে কেউ সদাপ্রভুর স্বপক্ষে, সে আমার কাছে চলে এসো।” আর লেবীয়রা সবাই তাঁর কাছে এসে একত্রিত হল।
27 তখন তিনি তাদের বললেন, “ইস্রায়েলের ঈশ্বর সদাপ্রভু একথাই বলেন: ‘প্রত্যেকে নিজের নিজের দেহের পাশে একটি করে তরোয়াল বেঁধে নিক। শিবিরের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্ত পর্যন্ত সে আসা যাওয়া করুক, এবং প্রত্যেকে তার ভাই ও বন্ধু ও প্রতিবেশীকে হত্যা করুক।’”
28 লেবীয়রা মোশির আদেশানুসারেই কাজ করল, আর সেদিন প্রায় 3,000 লোক মারা গেল।
29 তখন মোশি বললেন, “আজ তোমরা সদাপ্রভুর উদ্দেশে পৃথক হলে, কারণ তোমরা তোমাদের নিজের ছেলে ও ভাইদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছ, এবং এই দিনে তিনি তোমাদের আশীর্বাদ করেছেন।”
30 পরদিন মোশি লোকদের বললেন, “তোমরা মহাপাপ করেছ। কিন্তু আমি সদাপ্রভুর কাছে যাব; হয়তো আমি তোমাদের পাপের প্রায়শ্চিত্ত করতে পারব।”
31 অতএব মোশি সদাপ্রভুর কাছে ফিরে গিয়ে বললেন, “হায়, হায়, এই লোকেরা কী মহাপাপই না করেছে! তারা নিজেদের জন্য সোনার দেবতা তৈরি করেছে।
32 কিন্তু এখন, দয়া করে এদের পাপ ক্ষমা করো—কিন্তু যদি না করো, তবে তোমার লেখা বই থেকে আমার নামটি মুছে ফেলো।”
33 সদাপ্রভু মোশিকে উত্তর দিলেন, “যে কেউ আমার বিরুদ্ধে পাপ করেছে, তারই নাম আমি আমার বই থেকে মুছে ফেলব।
34 এখন যাও, যে স্থানের কথা আমি বলেছিলাম, লোকদের সেখানে নিয়ে যাও এবং আমার দূত তোমার অগ্রগামী হবেন। অবশ্য, যখন শাস্তি দেওয়ার সময় আসবে, তখন তাদের পাপের জন্য আমি তাদের শাস্তি দেব।”
35 আর হারোণের তৈরি করা সেই বাছুরটিকে নিয়ে লোকেরা যা করেছিল সেজন্য সদাপ্রভু এক সংক্রামক মহামারি দ্বারা লোকদের আঘাত করলেন।