< যাত্রাপুস্তক 10 >
1 পরে সদাপ্রভু মোশিকে বললেন, “ফরৌণের কাছে যাও, কারণ আমি তার হৃদয় ও তার কর্মচারীদের হৃদয় কঠিন করে দিয়েছি যেন তাদের মাঝখানে আমি আমার এই চিহ্নকাজগুলি সম্পন্ন করতে পারি
2 ও যেন তুমি তোমার সন্তানদের ও নাতি-নাতনিদের বলতে পারো কীভাবে আমি মিশরীয়দের সঙ্গে রূঢ়ভাবে আচরণ করেছি এবং কীভাবে আমি তাদের মাঝখানে আমার চিহ্নকাজগুলি সম্পন্ন করেছি, এবং তোমরা যেন জানতে পারো যে আমিই সদাপ্রভু।”
3 অতএব মোশি ও হারোণ ফরৌণের কাছে গেলেন এবং তাঁকে বললেন, “হিব্রুদের ঈশ্বর সদাপ্রভু একথাই বলেন: ‘আর কত কাল তুমি আমার সামনে নিজেকে নত করতে অসম্মত হবে? আমার প্রজাদের যেতে দাও, যেন তারা আমার আরাধনা করতে পারে।
4 যদি তুমি তাদের যেতে না দাও, তবে আগামীকাল আমি তোমার দেশে পঙ্গপাল নিয়ে আসব।
5 সেগুলি মাঠঘাট এমনভাবে ঢেকে ফেলবে যেন তা দেখা না যায়। শিলাবৃষ্টির পর তোমাদের অল্পসল্প যা কিছু অবশিষ্ট আছে, সেগুলি ও তার পাশাপাশি তোমাদের মাঠেঘাটে যত গাছপালা বেড়ে উঠছে, সেসব সেগুলি গ্রাস করবে।
6 সেগুলি তোমার বাড়িঘর ও তোমার কর্মকর্তাদের এবং সমস্ত মিশরীয়ের বাড়িঘর ভরিয়ে তুলবে—তা এমন এক ঘটনা হবে যা তোমার বাবা-মায়েরা বা তোমার পূর্বপুরুষরাও এদেশে তাদের বসতি স্থাপন করা থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত কখনও দেখেনি।’” পরে মোশি ঘুরে দাঁড়ালেন ও ফরৌণকে ছেড়ে চলে গেলেন।
7 ফরৌণের কর্মকর্তারা তাঁকে বললেন, “আর কত দিন এই লোকটি আমাদের পক্ষে এক ফাঁদ হয়ে থাকবে? লোকদের যেতে দিন, যেন তারা তাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর আরাধনা করতে পারে। আপনি কি এখনও বুঝতে পারছেন না যে মিশর ছারখার হয়ে গিয়েছে?”
8 তখন মোশি ও হারোণকে ফরৌণের কাছে ফিরিয়ে আনা হল। “যাও, তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর আরাধনা করো,” তিনি বললেন। “কিন্তু আমায় বলো, কে কে যাবে।”
9 মোশি উত্তর দিলেন, “আমরা আমাদের শিশু ও বৃদ্ধদের, আমাদের ছেলেমেয়েদের, এবং আমাদের মেষপাল ও পশুপাল সঙ্গে নিয়ে যাব, কারণ সদাপ্রভুর উদ্দেশে আমাদের এক উৎসব পালন করতে হবে।”
10 ফরৌণ বললেন, “সদাপ্রভু তোমাদের সহবর্তী হোন—আমি যদি মহিলা ও শিশুদের সঙ্গে নিয়ে তোমাদের যেতে দিই! এতে তোমাদের অশুভ উদ্দেশ্য প্রকাশিত হচ্ছে।
11 না! শুধুমাত্র পুরুষরাই যাক এবং সদাপ্রভুর আরাধনা করুক, যেহেতু তোমরা তো তাই চেয়েছিলে।” পরে মোশি ও হারোণকে ফরৌণের কাছ থেকে তাড়িয়ে দেওয়া হল।
12 আর সদাপ্রভু মোশিকে বললেন, “মিশরের উপর তোমার হাত প্রসারিত করো যেন পঙ্গপালেরা দেশের উপর ঝাঁকে ঝাঁকে নেমে আসে ও শিলাবৃষ্টির পর যা কিছু অবশিষ্ট থেকে গিয়েছে, মাঠঘাটে বেড়ে ওঠা সেসবকিছু সেগুলি গ্রাস করে নেয়।”
13 অতএব মোশি মিশর দেশের উপর তাঁর ছড়িটি বাড়িয়ে দিলেন, আর সদাপ্রভু সারাদিন ও সারারাত দেশে পূর্বীয় বাতাস বইতে দিলেন। সকাল হতে না হতেই সেই বাতাস ঝাঁকে ঝাঁকে পঙ্গপাল নিয়ে এল;
14 সেগুলি সমগ্র মিশর দেশে হানা দিল এবং বিপুল সংখ্যায় দেশের প্রত্যেকটি অঞ্চলে থিতুও হল। আগে কখনও পঙ্গপালের এরকম আঘাত সহ্য করতে হয়নি, আর কখনও তা করতেও হবে না।
15 অন্ধকার হওয়ার আগেই সেগুলি সমস্ত মাঠঘাট ঢেকে ফেলল। শিলাবৃষ্টির পর যা কিছু অবশিষ্ট থেকে গিয়েছিল—মাঠেঘাটে বেড়ে ওঠা সবকিছু এবং গাছের ফলমূল সেগুলি গ্রাস করে ফেলল। মিশর দেশের সর্বত্র গাছপালায় বা লতাপাতায় কোনও সবুজ অংশ অবশিষ্ট রইল না।
16 ফরৌণ তাড়াতাড়ি মোশি ও হারোণকে ডেকে পাঠালেন এবং বললেন, “আমি তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর বিরুদ্ধে ও তোমাদের বিরুদ্ধেও পাপ করেছি।
17 এখন আর একবার আমার পাপ ক্ষমা করে দাও, এবং এই মৃত্যুজনক আঘাত আমার কাছ থেকে দূর করার জন্য তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর কাছে প্রার্থনা করো।”
18 মোশি পরে ফরৌণকে ছেড়ে সদাপ্রভুর কাছে প্রার্থনা করতে গেলেন।
19 আর সদাপ্রভু সেই বাতাসকে প্রচণ্ড এক পশ্চিমী বাতাসে পরিবর্তিত করে দিলেন, যা পঙ্গপালগুলিকে ধরে উঠিয়ে নিয়ে গিয়ে লোহিত সাগরে ফেলে দিল। মিশরে কোথাও আর একটিও পঙ্গপাল অবশিষ্ট রইল না।
20 কিন্তু সদাপ্রভু ফরৌণের হৃদয় কঠিন করে দিলেন, এবং তিনি ইস্রায়েলীদের যেতে দিলেন না।
21 পরে সদাপ্রভু মোশিকে বললেন, “আকাশের দিকে তোমার হাত প্রসারিত করো যেন মিশরের উপর অন্ধকার ছড়িয়ে পড়ে—তা এমন অন্ধকার যা অনুভব করা যায়।”
22 অতএব মোশি আকাশের দিকে তাঁর হাত প্রসারিত করলেন, এবং সমগ্র মিশর দেশ তিনদিনের জন্য অন্ধকারে ঢেকে গেল।
23 তিন দিন ধরে কেউ কাউকে দেখতে পায়নি বা চলাফেরাও করতে পারেনি। অথচ ইস্রায়েলীরা যেখানে বসবাস করত সেখানে তাদের কাছে আলো ছিল।
24 তখন ফরৌণ মোশিকে ডেকে পাঠালেন এবং বললেন, “যাও, সদাপ্রভুর আরাধনা করো। এমনকি তোমাদের মহিলারা এবং সন্তানেরাও তোমাদের সঙ্গে যেতে পারে; শুধু তোমাদের মেষপাল ও পশুপাল এখানে রেখে যাও।”
25 কিন্তু মোশি বললেন, “আমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর উদ্দেশে উপহার বলি এবং হোমবলি উৎসর্গ করার জন্য আপনাকে আমাদের অনুমতি দিতে হবে।
26 আমাদের গৃহপালিত পশুপালও আমাদের সঙ্গে অবশ্যই যাবে; একটি খুরও এখানে পড়ে থাকবে না। আমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর আরাধনায় সেগুলির মধ্যে কয়েকটিকে আমাদের ব্যবহার করতে হবে, আর যতক্ষণ না আমরা সেখানে পৌঁছাচ্ছি, ততক্ষণ পর্যন্ত আমরা জানতে পারব না যে সদাপ্রভুর আরাধনার জন্য আমাদের কী কী ব্যবহার করতে হবে।”
27 কিন্তু সদাপ্রভু ফরৌণের হৃদয় কঠিন করে দিলেন, এবং তিনি তাঁদের যেতে দিতে চাইলেন না।
28 ফরৌণ মোশিকে বললেন, “আমার চোখের সামনে থেকে দূর হয়ে যাও! নিশ্চিত করে নাও যে আমার সামনে তুমি আর কখনও দর্শন দেবে না! যেদিন আমার মুখদর্শন করবে সেদিনই তুমি মারা যাবে!”
29 “আপনি ঠিকই বলেছেন,” মোশি উত্তর দিলেন, “আমি আর কখনোই আপনার সামনে দর্শন দেব না।”