< দানিয়েল 4 >
1 রাজা নেবুখাদনেজার, সমস্ত পৃথিবীতে বসবাসকারী প্রত্যেক জাতি ও ভাষার মানুষের প্রতি: তোমাদের অনেক উন্নতি হোক!
2 পরাৎপর ঈশ্বর আমার জন্য যে অলৌকিক চিহ্ন ও আশ্চর্য কাজ করেছেন তা সব তোমাদের জানানো আমি উচিত মনে করছি।
3 তাঁর চিহ্নসকল কত মহান,
4 আমি, নেবুখাদনেজার, পরিতৃপ্তি ও সমৃদ্ধিতে রাজপ্রাসাদে বাস করছিলাম।
5 কিন্তু একদিন এক স্বপ্ন দেখলাম যা আমাকে ভীত করল। যখন আমি বিছানায় শুয়ে ছিলাম, তখন যেসব চিন্তা ও দর্শন মনে এল তা আমাকে আতঙ্কিত করল।
6 তাই আদেশ দিলাম যে এই স্বপ্নের মানে আমাকে ব্যাখ্যা করবার জন্য ব্যাবিলনের সমস্ত জ্ঞানীদের আমার সামনে হাজির করা হোক।
7 যখন সব মন্ত্রবেত্তা, যাদুকর, জ্যোতিষী ও গণকেরা এসে হাজির হল, আমি স্বপ্নটি তাদের বললাম কিন্তু তারা কেউ এর মানে আমাকে ব্যাখ্যা করতে পারল না।
8 অবশেষে, দানিয়েল আমার সামনে এল এবং আমি স্বপ্নটি তাকে বললাম। আমার দেবতার নামানুসারে তাকে বেল্টশৎসর বলা হত কারণ পুণ্য দেবতাদের আত্মা তার অন্তরে ছিল।
9 আমি বললাম, “হে মন্ত্রবেত্তাদের প্রধান বেল্টশৎসর, আমি জানি পুণ্য দেবতাদের আত্মা তোমার অন্তরে আছে এবং কোনো রহস্যই তোমার অসাধ্য নয়। এই হল আমার স্বপ্ন; আমাকে এর মানে বুঝিয়ে দাও।
10 বিছানায় শুয়ে থাকা অবস্থায় আমি এসব দর্শন পেলাম: আমি তাকিয়ে দেখলাম, পৃথিবীর মাঝখানে আমার সামনে একটি গাছ, যা ছিল উচ্চতায় প্রকাণ্ড।
11 গাছটি ক্রমাগত বেড়ে বৃহৎ ও শক্তিশালী হয়ে উঠল, উচ্চতায় আকাশ ছুঁল এবং পৃথিবীর সব প্রান্ত পর্যন্ত দৃশ্যমান হল।
12 তার সুন্দর পাতা ছিল ও পর্যাপ্ত ফল ছিল এবং তার মধ্যে সকলের আহার ছিল। মাঠের বন্যপশুরা এই গাছের তলায় আশ্রয় খুঁজে পেল এবং পাখিরা ডালপালায় বাস করল; সকল প্রাণী এই গাছটি থেকে খাবার পেল।
13 “পরে আমি বিছানায় শুয়ে দর্শনে দেখলাম, আমার সামনে এক পবিত্র ব্যক্তি, এক দূত, যিনি স্বর্গ থেকে নেমে আসছিলেন।
14 তিনি জোর গলায় ঘোষণা করলেন: ‘গাছটি কেটে ফেলো ও তার ডালপালাগুলি ছেঁটে দাও, পাতাগুলি ঝেড়ে ফেলো এবং ফলগুলি ছড়িয়ে-ছিটিয়ে দাও। এই গাছের আশ্রয় থেকে পশুরা এবং ডালপালা থেকে পাখিরা পালিয়ে যাক।
15 কিন্তু শুধু মূলকাণ্ড ও শিকড়, লোহা ও পিতলের শিকল দিয়ে বাঁধা অবস্থায়, মাটিতে পড়ে থাক; ও মাঠের ঘাসের মধ্যে পড়ে থাক। “‘সে আকাশের শিশিরে ভিজুক এবং পশুদের সঙ্গে পৃথিবীর গাছপালার মধ্যে তার বাসস্থান হোক।
16 সাত কাল পর্যন্ত তার মানুষের মন নিয়ে তাকে পশুর মন দেওয়া হোক।
17 “‘এই সিদ্ধান্ত দূতদের মাধ্যমে ঘোষিত হল, পবিত্র ব্যক্তিগণ এই রায় ঘোষণা করলেন, যেন সব জীবিত মানুষ জানতে পারে যে পরাৎপর ঈশ্বর পৃথিবীর সব রাজ্যের উপর সার্বভৌম এবং যে ব্যক্তিকে চান তার হাতে তিনি সেই রাজত্বভার অর্পণ করেন এবং ঈশ্বর এই রাজ্যগুলি শাসনের জন্য বিনয়ী লোকেদের মনোনীত করেন।’
18 “আমি, রাজা নেবুখাদনেজার এই স্বপ্নই দেখেছিলাম। এখন, বেল্টশৎসর, আমাকে এর মানে কি তা বুঝিয়ে বলো কেননা আমার রাজ্যের কোনো জ্ঞানী এর মানে আমাকে ব্যাখ্যা করতে পারে না। কিন্তু তুমি পারবে, কারণ পবিত্র দেবতাদের আত্মা তোমার মধ্যে উপস্থিত।”
19 তখন দানিয়েল, যাকে বেল্টশৎসর বলা হত, কিছুক্ষণের জন্য খুব হতবুদ্ধি হয়ে রইল; স্বপ্নের মানে তাকে আতঙ্কিত করল। তাই রাজা বললেন, “বেল্টশৎসর, এই স্বপ্ন বা তার অর্থ যেন তোমাকে ভীত না করে।” বেল্টশৎসর উত্তর দিলেন, “হে আমার প্রভু, শুধু যদি এই স্বপ্ন আপনার পরিবর্তে আপনার শত্রুদের উপর বর্তাত ও এর অর্থ আপনার বিপক্ষের প্রতি ঘটত!
20 যে গাছটি আপনি দেখেছিলেন, যা বৃদ্ধি পেয়েছিল ও শক্তিশালী হয়েছিল, যার উচ্চতা আকাশ ছুঁয়েছিল, সমস্ত পৃথিবীতে দৃশ্যমান হয়ে উঠেছিল,
21 যার পাতা সুন্দর ও প্রচুর ফল ছিল, সকলকে আহার দিয়েছিল, বন্যপশুদের আশ্রয় দিয়েছিল এবং যার ডালে পাখিরা বাসা বেঁধেছিল,
22 হে মহারাজ, আপনিই সেই গাছ! আপনি মহান এবং শক্তিশালী হয়েছেন; আপনার গৌরব বৃদ্ধি পেয়ে আকাশ ছুঁয়েছে এবং আপনার আধিপত্য পৃথিবীর দূরদূরান্ত পর্যন্ত বিস্তৃত হয়েছে।
23 “হে মহারাজ আপনি এক পবিত্র ব্যক্তিকে দেখলেন, এক দূত, যিনি স্বর্গ থেকে নেমে আসছিলেন; তিনি বললেন, ‘গাছটি কেটে একেবারে নষ্ট করে দাও, শুধু মূল কাণ্ডটি রেখে দাও, লোহা ও পিতলের শিকল দিয়ে ওটাকে বেঁধে রাখো, ঘাসের মধ্যে থাক, আর শিকড় মাটিতে পড়ে থাক। সে আকাশের শিশিরে ভিজুক, বন্যপশুদের সঙ্গে বাস করুক, যতদিন না পর্যন্ত তার জন্য সাত কাল অতিক্রম হচ্ছে।’
24 “হে মহারাজ, স্বপ্নের মানে এই এবং পরাৎপর ঈশ্বর আমার প্রভু মহারাজের বিরুদ্ধে এই আদেশ জারি করেছেন:
25 মানুষের সমাজ থেকে আপনাকে তাড়িয়ে দেওয়া হবে এবং আপনি বন্যপশুদের সঙ্গে বাস করবেন; বলদের মতো আপনি ঘাস খাবেন ও আকাশের শিশিরে ভিজবেন। সাত কাল পার হবে যতদিন না পর্যন্ত আপনি স্বীকার করবেন যে পরাৎপর ঈশ্বর পৃথিবীর সমস্ত রাজ্যের উপর সার্বভৌম এবং যাকে তাঁর খুশি তার হাতে তিনি রাজত্বভার অর্পণ করেন।
26 আদেশ অনুযায়ী মূলকাণ্ড ও শিকড় অক্ষত রাখার অর্থ হল যে, আপনি যখন স্বর্গের কর্তৃত্বের কথা স্বীকার করবেন, তখন আপনার রাজত্ব আপনাকে ফিরিয়ে দেওয়া হবে।
27 অতএব, হে মহারাজ, আমার পরামর্শ গ্রহণ করুন: ন্যায় আচরণ করে পাপের জীবন পরিত্যাগ করুন ও পীড়িতদের প্রতি দয়া করে দুষ্ট জীবন বর্জন করুন। তাতে হয়তো আপনার সমৃদ্ধি বজায় থাকবে।”
28 এসবই রাজা নেবুখাদনেজারের জীবনে ঘটেছিল।
29 বারো মাস পরে, রাজা যখন ব্যাবিলনের রাজপ্রাসাদের ছাদে হাঁটছিলেন,
30 তিনি বললেন, “এই কি সেই মহান ব্যাবিলন নয়, যা আমি আপন পরাক্রমে নিজের মহিমা প্রকাশের উদ্দেশে রাজকীয় ভবন রূপে গড়ে তুলেছি?”
31 কথাগুলি যখন তার মুখেই ছিল, স্বর্গ থেকে এক কণ্ঠস্বর ভেসে এল, “তোমার জন্য এই আদেশ জারি করা হয়েছে, রাজা নেবুখাদনেজার, তোমার রাজকীয় কর্তৃত্ব তোমার কাছে থেকে কেড়ে নেওয়া হয়েছে।
32 মানুষের সমাজ থেকে তোমাকে তাড়িয়ে দেওয়া হবে এবং বন্যপশুদের সঙ্গে তুমি বাস করবে; তুমি বলদের মতো ঘাস খাবে। সাত কাল এভাবেই কেটে যাবে যতদিন না পর্যন্ত তুমি স্বীকার করবে যে পরাৎপর ঈশ্বর পৃথিবীর সমস্ত রাজ্যের উপর সার্বভৌম এবং যাকে তাঁর খুশি তার হাতে তিনি রাজত্বভার অর্পণ করেন।”
33 তৎক্ষণাৎ নেবুখাদনেজারের সম্বন্ধে যা বলা হয়েছিল তা পূর্ণ হল। মানুষের সমাজ থেকে তাকে তাড়িয়ে দেওয়া হল এবং বলদের মতো সে ঘাস খেল। আকাশের নিচে তার সারা শরীর শিশিরে ভিজল যতদিন না পর্যন্ত তার চুল ঈগল পাখির পালকের মতো বেড়ে উঠল ও তার নখ পাখির নখের মতো হয়ে উঠল।
34 সেই সময় শেষ হওয়ার পরে, আমি, নেবুখাদনেজার, স্বর্গের দিকে চোখ তুলে দেখলাম এবং আমার সুবুদ্ধি ফিরিয়ে দেওয়া হল; তখন আমি পরাৎপর ঈশ্বরের ধন্যবাদ করলাম; যিনি নিত্যস্থায়ী তাঁর প্রশংসা ও সমাদর করলাম।
35 পৃথিবীর সব মানুষেরা
36 যে সময়ে আমার সুবুদ্ধি ফিরিয়ে দেওয়া হল, আমার রাজ্যের গৌরবার্থে, সেই সময়েই আমার সম্মান ও প্রতিপত্তিও আমাকে ফিরিয়ে দেওয়া হল। আমার উপদেষ্টা ও বিশিষ্ট ব্যক্তি সকলে আমাকে খুঁজে বের করল। আমাকে রাজসিংহাসনে পুনরায় প্রতিষ্ঠিত করা হল এবং আমার মহিমা আগের তুলনায় অনেক বৃদ্ধি পেল।
37 এখন, আমি, নেবুখাদনেজার, স্বর্গের রাজার প্রশংসা, গৌরব ও সমাদর করি কারণ তিনি যা করেন তা সঠিক ও তাঁর সমস্ত পথ ন্যায্য। আর যারা অহংকারে জীবন কাটায় তাদের তিনি নম্র করতে সক্ষম।