< দানিয়েল 2 >
1 নেবুখাদনেজারের রাজত্বের দ্বিতীয় বছরে, তিনি স্বপ্ন দেখলেন; তার মন অস্থির হয়ে উঠল এবং তিনি ঘুমাতে পারলেন না।
১নবূখদনিৎসরের রাজত্বের দ্বিতীয় বছরে, তিনি স্বপ্ন দেখলেন। তাঁর মন অস্থির হল এবং তিনি কিছুতেই ঘুমাতে পারলেন না।
2 তিনি রাজ্যের সমস্ত মন্ত্রবেত্তা, মায়াবী, জাদুকর ও জ্যোতিষীদের ডেকে পাঠালেন এবং তাদের কাছে জানতে চাইলেন যে তিনি কী স্বপ্ন দেখেছেন। যখন তারা এলেন ও রাজার সামনে দাঁড়ালেন,
২তখন রাজা যাদুকর এবং যারা মৃতদের সঙ্গে কথা বলত বলে দাবি করত তাদের ডাকলেন। একই সঙ্গে তিনি মায়াবী ও জ্ঞানী লোকদেরও ডাকলেন। তিনি চাইলেন যেন তারা এসে তাঁকে তার স্বপ্নের বিষয়ে জানায়। তাই তারা এসে রাজার সামনে দাঁড়াল।
3 তিনি তাদের বললেন, “আমি একটি স্বপ্ন দেখেছি যা আমাকে দুশ্চিন্তায় ফেলেছে এবং আমি এর মানে জানতে চাই।”
৩রাজা তাদের বললেন, “আমি একটা স্বপ্ন দেখেছি এবং সেই স্বপ্নের অর্থ কি তা বোঝার জন্য আমার মন অস্থির হয়ে উঠেছে।”
4 জ্যোতিষীগণ রাজাকে অরামীয় ভাষায় উত্তর দিলেন, “মহারাজ দীর্ঘজীবী হোন। আপনার দাসদের বলুন আপনি কী স্বপ্ন দেখেছেন, আমরা তার মানে ব্যাখ্যা করব।”
৪তখন সেই জ্ঞানী লোকেরা অরামীয় ভাষায় রাজাকে বলল, “মহারাজ, আপনি চিরকাল বেঁচে থাকুন। স্বপ্নটা আপনার দাসদের কাছে বলুন এবং আমরা তার অর্থ প্রকাশ করব।”
5 কিন্তু রাজা জ্যোতিষীদের বললেন, “আমি দৃঢ়ভাবে স্থির করেছি যে, যদি তোমরা আমার স্বপ্ন ও তার মানে বলতে না পারো তবে তোমাদের কেটে টুকরো টুকরো করে ফেলা হবে এবং তোমাদের ঘরবাড়ি ধ্বংসস্তূপে পরিণত করা হবে।
৫রাজা সেই সমস্ত জ্ঞানী লোকদের উত্তর দিয়ে বললেন, “এই বিষয়টি স্থির করা হয়েছে। যদি তোমরা সেই স্বপ্নটি আমার কাছে প্রকাশ না কর এবং এর অর্থ না বলো, তবে তোমাদের দেহকে খণ্ডবিখণ্ড করা হবে এবং তোমাদের বাড়িগুলিকে আবর্জনার স্তূপে পরিণত করা হবে।
6 কিন্তু যদি তোমরা আমার স্বপ্ন ও তার মানে বলতে পারো, তবে তোমরা অনেক উপহার, পুরস্কার ও মহা সম্মান পাবে। তাই তোমরা আমার স্বপ্নটি ও তার মানে বলো।”
৬কিন্তু যদি তোমরা আমার স্বপ্ন ও তার অর্থ বলতে পার তবে তোমরা আমার কাছ থেকে উপহার, পুরষ্কার ও মহা সম্মান লাভ করবে। তাই তোমরা সেই স্বপ্ন ও তার অর্থ আমাকে বল।”
7 তারা আবার বললেন, “মহারাজ, আপনি শুধু স্বপ্নটি বলুন, আমরা তার মানে বলে দেব।”
৭তারা আবার তার উত্তর দিয়ে বলল, “মহারাজ যেন তাঁর দাসদের কাছে স্বপ্নটা বলেন এবং আমরা আপনাকে তার অর্থ বলব।”
8 তখন রাজা উত্তর দিলেন, “আমি নিশ্চিত যে তোমরা বেশি সময় নেবার চেষ্টা করছ, কারণ তোমরা বুঝেছ যে আমি এটি দৃঢ়ভাবে স্থির করেছি:
৮তখন রাজা উত্তর দিয়ে বললেন, “আমি নিশ্চয়ই জানি যে, এই বিষয়ে আমার আদেশ কঠিন বলে তোমরা দেরি করবার চেষ্টা করছ।
9 যদি তোমরা আমার স্বপ্নটি বলতে না পারো, তাহলে তোমাদের জন্য একটিই শাস্তি হবে। তোমরা আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা কথা ও বঞ্চনাবাক্য বলার মন্ত্রণা করেছ, এই ভেবে যে পরিস্থিতির পরিবর্তন হবে। অতএব তোমরা আমার স্বপ্নটি বলো, তাতে আমি বুঝব যে তার মানেও তোমরা বলতে পারবে।”
৯কিন্তু যদি তোমরা স্বপ্নটা আমাকে না বল তবে, তোমাদের জন্য একটি কথা থাকল। তোমরা আশা করছ অবস্থার বদল হবে, তোমরা একসঙ্গে হয়ে মিথ্যা ও প্রতারণায় পূর্ণ কথা আমাকে বলার জন্য ঠিক করেছ যেন আমি আমার মন পরিবর্তন করি। তাই, আমাকে স্বপ্নটা বল, তাহলে আমি বুঝতে পারব যে, তোমরা আমাকে এর অর্থও বলতে পারবে।”
10 জ্যোতিষীরা রাজাকে উত্তর দিলেন, “মহারাজ, আপনি যা জানতে চাইছেন তা বলবার মতো লোক সারা পৃথিবীতে পাওয়া যাবে না! আজ পর্যন্ত কোনো রাজা, যত মহান ও ক্ষমতাশালী হোন না কেন, এরকম কথা মন্ত্রবেত্তা, মায়াবী বা জ্যোতিষীদের কাছে জানতে চাননি।
১০জ্ঞানীলোকেরা রাজাকে উত্তর দিয়ে বলল, “পৃথিবীতে এমন কোন লোক নেই যে মহারাজের দাবিকে পূর্ণ করতে পারে। কোন মহান ও শক্তিশালী রাজা কখনও এমন বিষয় কোন যাদুকর বা যারা ভূতেদের সঙ্গে কথা বলে, বা কোন জ্ঞানী ব্যক্তির কাছে এমন দাবি করেন নি।
11 মহারাজ, যে কথা আপনি জানতে চাইছেন তা খুব কঠিন। দেবতারা ব্যতিরেকে আর কেউ রাজার কাছে এই কথা প্রকাশ করতে পারবেন না এবং দেবতারা মানুষের মধ্যে বাস করে না।”
১১মহারাজ যা দাবি করছেন তা খুবই কঠিন এবং শুধু দেবতারা ছাড়া আর কেউই নেই যে মহারাজের সেই বিষয়ে বলতে পারে আর তাঁরা মানুষের মধ্যে বসবাস করেন না।”
12 এটি শুনে রাজা এতটাই ক্রুদ্ধ ও ক্ষিপ্ত হয়ে উঠলেন যে তিনি ব্যাবিলনের সব জ্ঞানীদের হত্যা করার আদেশ দিলেন।
১২এই বিষয়টি রাজাকে খুবই রাগিয়ে এবং ক্রুদ্ধ করে তুললো এবং তিনি ব্যাবিলনের সমস্ত লোকদের যারা তাঁদের জ্ঞানের জন্য পরিচিত ছিল তাদের মেরে ফেলার জন্য আদেশ দিলেন।
13 তাই আদেশ দেওয়া হল যেসব জ্ঞানীদের হত্যা করা হবে এবং রাজা লোকেদের পাঠালেন যেন তারা দানিয়েল ও তার বন্ধুদের খুঁজে তাদের হত্যা করতে পারে।
১৩তাই সেই আদেশ বের হল। তাঁদের মেরে ফেলার জন্য যারা তাঁদের জ্ঞানের জন্য পরিচিত ছিল। তারা দানিয়েল ও তাঁর বন্ধুদেরও খোঁজ করল যেন তাদেরও হত্যা করা হয়।
14 রাজার প্রহরীদের সেনাপতি অরিয়োক, যখন ব্যাবিলনের জ্ঞানীদের হত্যা করতে গেল, দানিয়েল তার সঙ্গে জ্ঞান ও কৌশলের সাথে কথা বললেন।
১৪তখন দানিয়েল বুদ্ধি ও বিচক্ষণতার সঙ্গে রাজার দেহরক্ষীদের সেনাপতি অরিয়োকের সঙ্গে কথা বললেন, যিনি ব্যাবিলনের সেই সমস্ত লোকদের যারা তাদের জ্ঞানের জন্য পরিচিত ছিল তাঁদের হত্যা করতে এসেছিলেন।
15 তিনি রাজার কর্মচারীকে জিজ্ঞাসা করলেন, “কেন রাজা এমন কঠোর আদেশ দিয়েছেন?” অরিয়োক তখন দানিয়েলকে সমস্ত বিষয় ব্যাখ্যা করলেন।
১৫দানিয়েল রাজার সেই সেনাপতিকে জিজ্ঞাসা করলেন, “মহারাজ এই ভীষণ আদেশ কেন?” তখন অরিয়োক যা ঘটেছিল তা দানিয়েলকে জানালেন।
16 এতে দানিয়েল রাজার কাছে গেলেন এবং সময় চেয়ে নিলেন যাতে তিনি রাজার স্বপ্নের মানে ব্যাখ্যা করতে পারেন।
১৬তখন দানিয়েল রাজার কাছে গিয়ে তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ করার জন্য দিন চাইলেন যেন তিনি রাজার কাছে স্বপ্নটার অর্থ প্রকাশ করতে পারেন।
17 দানিয়েল তখন বাড়ি ফিরে এলেন ও তার বন্ধু হনানিয়, মীশায়েল ও অসরিয়কে সব কথা ব্যাখ্যা করলেন।
১৭তারপর দানিয়েল ঘরে ফিরে গিয়ে তাঁর বন্ধু হনানিয়, মীশায়েল ও অসরিয়কে যা কিছু হয়েছিল তা বিস্তারিতভাবে বললেন।
18 দানিয়েল তাদের স্বর্গের ঈশ্বরের কাছে এই স্বপ্নের রহস্য জানার জন্য করুণা ভিক্ষা করতে বললেন, যেন সে ও তার বন্ধুরা ব্যাবিলনের অন্য জ্ঞানীদের সঙ্গে বিনষ্ট না হয়।
১৮তিনি তাঁদের অনুরোধ করলেন যেন তাঁরা সেই গুপ্ত বিষয় জানার জন্য স্বর্গের ঈশ্বরের কাছে দয়া চান, যেন তিনি ও তাঁর বন্ধুরা সেই সমস্ত লোক যারা তাঁদের জ্ঞানের জন্য পরিচিত ছিল তাদের সঙ্গে মারা না যান।
19 সেরাতেই স্বপ্নের রহস্য দানিয়েলের কাছে এক দর্শনের মাধ্যমে প্রকাশ পেল। তখন দানিয়েল স্বর্গের ঈশ্বরের প্রশংসা করলেন।
১৯সেই রাতে একটা দর্শনের মাধ্যমে সেই গুপ্ত বিষয়টি দানিয়েলের কাছে প্রকাশিত হল। তখন দানিয়েল স্বর্গের ঈশ্বরকে ধন্যবাদ দিলেন।
20 তিনি বললেন: “ঈশ্বরের নামের চিরকাল প্রশংসা হোক; কারণ জ্ঞান ও শক্তি তাঁরই।
২০এবং বললেন, “ঈশ্বরের নামের প্রশংসা চিরকাল হোক; কারণ জ্ঞান ও শক্তি তাঁরই।
21 তিনি সময় ও ঋতু পরিবর্তন করেন; তিনি রাজাদের অপসারণ করেন ও অন্য রাজাদের উত্থাপন করেন। তিনি জ্ঞানীকে জ্ঞান দেন, আর বিচক্ষণকে বুদ্ধি দেন।
২১তিনি দিন ও ঋতুর পরিবর্তন করেন; তিনি রাজাদের সরিয়ে দেন এবং রাজাদের তাঁদের সিংহাসনের উপরে বসান। তিনি জ্ঞানীদের জ্ঞান ও বুদ্ধিমানদের বুদ্ধি দান করেন।
22 তিনি গভীর ও লুকানো বিষয় ব্যক্ত করেন; তিনি জানেন অন্ধকারে কী লুকিয়ে আছে, আর আলো ঈশ্বরেই বাস করে।
২২তিনি গভীর ও গুপ্ত বিষয়গুলি প্রকাশ করেন; কারণ অন্ধকারের মধ্যে কি আছে তা তিনি জানেন এবং আলো তাঁর সঙ্গে বাস করে।
23 হে আমার পূর্বপুরুষের ঈশ্বর, আমি তোমার ধন্যবাদ ও প্রশংসা করি; তুমি আমায় জ্ঞান ও শক্তি দিয়েছ, আমরা তোমার কাছে যা জানতে চেয়েছিলাম তা তুমি আমার কাছে প্রকাশ করেছ, তুমি আমাদের কাছে রাজার সেই স্বপ্নের রহস্য প্রকাশ করেছ।”
২৩আমার পূর্বপুরুষদের ঈশ্বর, আমি তোমাকে ধন্যবাদ দিই ও তোমার প্রশংসা করি, কারণ তুমি আমাকে জ্ঞান ও ক্ষমতা দিয়েছ। আমি তোমার কাছে যে বিষয়ের জন্য প্রার্থনা করেছিলাম তা আমাকে তুমি আমাকে জানিয়েছ; তুমি আমাদেরকে সেই বিষয়ে জানিয়েছ যা রাজাকে চিন্তিত করেছিল।”
24 তখন দানিয়েল অরিয়োকের কাছে গেলেন, যাকে রাজা ব্যাবিলনের সব জ্ঞানীদের হত্যা করার জন্য নিযুক্ত করেছিলেন। দানিয়েল তাকে বললেন, “ব্যাবিলনের সব জ্ঞানীদের হত্যা করবেন না। আমাকে মহারাজের কাছে নিয়ে চলুন, আমি তার স্বপ্নের মানে ব্যাখ্যা করব।”
২৪এই সমস্ত বিষয় নিয়ে দানিয়েল অরিয়োকের কাছে গেলেন, যাকে রাজা ব্যাবিলনের সমস্ত জ্ঞানী লোকদের হত্যা করতে নিযুক্ত করেছিলেন। তিনি গিয়ে তাঁকে বললেন, “ব্যাবিলনের সমস্ত জ্ঞানী লোকদের হত্যা করবেন না। আমাকে রাজার কাছে নিয়ে চলুন এবং আমি রাজাকে তাঁর স্বপ্নের অর্থ বলব।”
25 অরিয়োক তখনই দানিয়েলকে রাজার কাছে নিয়ে গেলেন এবং বললেন, “মহারাজ, যিহূদার বন্দিদের মধ্যে এমন একজনকে খুঁজে পেয়েছি যে আপনার স্বপ্নের মানে বলে দিতে পারবে।”
২৫তখন অরিয়োক তাড়াতাড়ি করে দানিয়েলকে রাজার কাছে নিয়ে গিয়ে বললেন, “আমি যিহূদার বন্দীদের মধ্যে এমন একজন লোককে খুঁজে পেয়েছি যে মহারাজের স্বপ্নের অর্থ প্রকাশ করবে।”
26 রাজা দানিয়েলকে, যাকে বেল্টশৎসর নামেও ডাকা হত, জিজ্ঞাসা করলেন, “আমি স্বপ্নে কী দেখেছি তা কি বলতে ও মানে ব্যাখ্যা করতে পারবে?”
২৬রাজা দানিয়েলকে (যাঁকে বেল্টশৎসর নামে ডাকা হত) জিজ্ঞাসা করলেন, “তুমি কি আমাকে আমার স্বপ্ন ও তার অর্থ বলে দিতে পারবে?”
27 দানিয়েল উত্তরে বললেন, “কোনো জ্ঞানী, মায়াবী, মন্ত্রবেত্তা বা গনকের পক্ষে আপনার স্বপ্নের রহস্য ব্যাখ্যা করা সম্ভব নয়।
২৭দানিয়েল রাজাকে উত্তর দিয়ে বললেন, যে গুপ্ত বিষয়ে মহারাজ দাবি করেছেন তা কোন জ্ঞানী ব্যক্তি, বা যারা মৃতদের সঙ্গে কথা বলে, বা যাদুকর কিম্বা জ্যোতিষীও বলতে পারবে না।
28 কিন্তু স্বর্গে এক ঈশ্বর আছেন যিনি রহস্য প্রকাশ করেন। তিনি ভবিষ্যতে যা ঘটবে তা রাজা নেবুখাদনেজারকে দেখিয়েছেন। আপনি যখন বিছানায় শুয়েছিলেন তখন যে স্বপ্ন ও দর্শন দেখেছেন তা এই:
২৮কিন্তু একমাত্র, একজন ঈশ্বর আছেন যিনি স্বর্গে থাকেন, তিনিই গুপ্ত বিষয় প্রকাশ করেন এবং ভবিষ্যতে যা ঘটবে তা তিনি আপনাকে, রাজা নবূখদনিৎসরকে জানিয়েছেন। যখন আপনি বিছানায় শুয়েছিলেন তখন আপনি যে স্বপ্ন ও আপনার মনের যে দর্শন দেখেছেন তা হল এই,
29 “হে মহারাজ, যখন আপনি শুয়েছিলেন, আপনি স্বপ্নে আগত ঘটনাসকল দেখলেন। ঈশ্বর যিনি রহস্য প্রকাশ করেন, ভবিষ্যতে কী ঘটতে চলেছে তা আপনাকে দেখিয়েছেন।
২৯মহারাজ, আপনি যখন বিছানায় শুয়ে ছিলেন তখন ভবিষ্যতে কি হবে সেই বিষয়ে চিন্তা করছিলেন এবং যিনি গুপ্ত বিষয় প্রকাশ করেন তিনি আপনাকে কি ঘটতে চলেছে সেই বিষয়ে জানিয়েছেন।
30 অন্য কোনো জীবিত মানুষের থেকে আমার বেশি জ্ঞান আছে বলে যে আপনার স্বপ্নের রহস্য আমার কাছে প্রকাশিত হয়েছে এমন নয়; কিন্তু উদ্দেশ্য এই, যেন আপনি মহারাজ এর মানে বুঝতে পারেন এবং আপনার মনের মধ্যে কী হয়েছিল তা বুঝতে পারেন।
৩০অন্যান্য লোকদের চেয়ে আমার বেশী জ্ঞান আছে বলেই যে আমার কাছে এই গুপ্ত বিষয় প্রকাশিত হয়েছে তা নয়। এই গুপ্ত বিষয় আমার কাছে প্রকাশ করা হয়েছে যেন মহারাজ, আপনি সেই অর্থ বুঝতে পারেন এবং যেন আপনি আপনার মনের গভীরের সমস্ত চিন্তা জানতে পারেন।
31 “মহারাজ, আপনি দেখলেন যে আপনার সামনে একটি প্রকাণ্ড মূর্তি; বৃহৎ, অতিশয় তেজোবিশিষ্ট ও দেখতে ভয়ংকর।
৩১মহারাজ, আপনি উপরের দিকে তাকিয়ে ছিলেন এবং আপনি একটা বিরাট মূর্ত্তি দেখতে পেয়েছিলেন; এই মূর্তিটা বিরাট ও খুব উজ্জ্বল, আপনার সামনে দাঁড়িয়ে ছিল। তার উজ্জ্বলতা খুবই ভয়ঙ্কর ছিল।
32 মূর্তিটির মাথা ছিল বিশুদ্ধ সোনার, বুক ও বাহু রুপোর, পেট ও ঊরু পিতলের,
৩২সেই মূর্তির মাথাটা খাঁটি সোনার, বুক ও হাত রূপার। পেট ও ঊরু ব্রোঞ্জের তৈরী
33 পা-দুটি লোহার, আর পায়ের পাতা লোহা ও মাটি দিয়ে তৈরি ছিল।
৩৩এবং তার পাগুলি লোহার ছিল। পায়ের পাতা অর্ধেক লোহা ও অর্ধেক মাটি দিয়ে তৈরী।
34 আপনি যখন মূর্তিটির দিকে তাকিয়েছিলেন, তখন একটি বিরাট পাথরখণ্ড কাটা হল কিন্তু মানুষের হাত দিয়ে নয়; যা মূর্তিটির লোহা ও মাটি দিয়ে গঠিত পায়ের পাতায় আঘাত করে চূর্ণ করল।
৩৪আপনি উপরের দিকে তাকিয়ে ছিলেন এবং একটা পাথর কেটে নেওয়া হল, কিন্তু সেটা মানুষের হাতে কাটা নয় এবং সেই পাথরটা লোহা ও মাটি মেশানো পায়ে আঘাত করল এবং সেটি তাদের চূর্ণবিচূর্ণ করে ফেলল।
35 এরপরে লোহা, মাটি, পিতল, রুপো ও সোনা সবকিছুই চূর্ণবিচূর্ণ হল ও গ্রীষ্মকালে খামারের তুষের মতো গুঁড়ো হল। বাতাস সেগুলি সব উড়িয়ে নিয়ে গেল, কিছুই পড়ে রইল না। কিন্তু ওই পাথরখণ্ডটি, যেটি মূর্তিটিকে আঘাত করেছিল, ক্রমে এক বিশাল পাহাড়ে পরিণত হয়ে সারা পৃথিবী পূর্ণ করল।
৩৫তখন লোহা, মাটি, ব্রোঞ্জ, রূপা ও সোনা একই সঙ্গে ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে গেল এবং গরমকালের খামারের তূষে পরিণত হল। বাতাস তাদের উড়িয়ে নিয়ে গেল এবং তাদের আর কোন চিহ্নই থাকল না। কিন্তু যে পাথরটা মূর্তিটাকে আঘাত করেছিল সেটা একটা বিরাট পাহাড়ে পরিণত হল এবং সমস্ত পৃথিবী দখল করল।
36 “এটিই ছিল সেই স্বপ্ন এবং এখন আমরা এর মানে রাজাকে ব্যাখ্যা করব।
৩৬এটিই আপনার স্বপ্ন ছিল। এখন আমরা তার অর্থ মহারাজের কাছে বলব।
37 মহারাজ, আপনি রাজাদের রাজা। স্বর্গের ঈশ্বর আপনাকে আধিপত্য, শক্তি, প্রতাপ ও মহিমা দিয়েছেন;
৩৭মহারাজ, আপনি রাজাদের রাজা যাঁকে স্বর্গের ঈশ্বর রাজ্য, ক্ষমতা, শক্তি এবং সম্মান দান করেছেন।
38 এমনকি তিনি সমস্ত মানবজাতি, মাঠের পশু ও আকাশের পাখি আপনার অধীন করেছেন। তাদের সকলের উপরে আপনাকে কর্তৃত্ব দিয়েছেন। সেই সোনার মাথা হলেন আপনিই।
৩৮তিনিই আপনার হাতে সমস্ত লোকদের বাসস্থান দিয়েছেন। তিনিই মাঠের পশুদের আর পাখীদের উপরে আপনাকে কর্তৃত্ব দিয়েছেন এবং তিনি তাদের সবার উপরে আপনাকে কর্তৃত্ব করার জন্য দিয়েছেন। আপনিই সেই মূর্তিটির সোনার মাথা।
39 “আপনার পর আরেকটি রাজ্য আসবে, তবে তা আপনার থেকে নিকৃষ্ট হবে। তারপর, তৃতীয় এক রাজ্য, পিতলের তৈরি, জগতে আধিপত্য করবে।
৩৯“আপনার পরে, আর একটি রাজ্য উঠবে তা আপনার মত মহান হবে না এবং তার পরে তৃতীয় ব্রোঞ্জের যে রাজ্য তা গোটা পৃথিবীর উপরে রাজত্ব করবে।
40 অবশেষে, চতুর্থ এক রাজ্য আসবে তা হবে লোহার মতো কঠিন। লোহা যেমন সমস্ত কিছু চূর্ণ করে ও পিষে ফেলে তেমনই এই রাজ্যও আগের সব রাজ্যগুলিকে চূর্ণ করবে ও পিষে ফেলবে।
৪০চতুর্থ একটা রাজ্য, যা লোহার মত শক্ত হবে, কারণ যেমন লোহা সমস্ত কিছু ভেঙে চূর্ণবিচূর্ণ এবং ধ্বংস করে, তেমনি এটিও সমস্ত কিছুকে ধ্বংস করবে এবং তাদের চূর্ণবিচূর্ণ করবে।
41 আপনি যেমন দেখেছেন, মূর্তিটির পায়ের পাতা ও আঙুলগুলি লোহা ও মাটি মিশিয়ে তৈরি সেইরূপ এটি একটি বিভক্ত রাজ্য হবে; অথচ লোহার মতো কিছুটা শক্ত হবে, কেননা আপনি দেখেছিলেন লোহার সঙ্গে মাটি মিশানো ছিল।
৪১যেমন আপনি দেখেছিলেন যে পায়ের পাতা ও পায়ের আঙ্গুলগুলি অর্ধেক মাটি ও অর্ধেক লোহা দিয়ে তৈরী, তেমনই এটিও একটা ভাগ করা রাজ্য হবে; যেমন আপনি নরম মাটির সঙ্গে লোহা মেশানো দেখেছিলেন, তেমনি সেই রাজ্যে লোহার মত কিছু শক্তি সেখানে থাকবে।
42 পায়ের আঙুলগুলি যেমন লোহা ও মাটি মিশিয়ে তৈরি করা ছিল, তাই এই রাজ্য লোহার মতো শক্ত হবে আর মাটির মতো দুর্বল হবে।
৪২পায়ের পাতা ও আঙ্গুলগুলি যেমনভাবে অর্ধেক মাটি ও অর্ধেক লোহা মিশিয়ে তৈরী হয়েছিল, তাই সেই রাজ্যের অর্ধেক শক্তিশালী হবে ও অর্ধেক দুর্বল হবে।
43 এবং আপনি যেমন দেখেছেন লোহার সঙ্গে মাটি মিশানো ছিল, সেইরূপ এই রাজ্যের সকলে মিশ্রিত হবে এবং একত্রে থাকবে না; লোহা যেমন মাটির সঙ্গে কখনোই মিশে যায় না, তেমনই তারাও এক হতে পারবে না।
৪৩যেমন আপনি দেখেছেন লোহা নরম মাটির সঙ্গে মেশানো, তেমনিই সেই সমস্ত লোকেরাও একজন অন্য জনের সঙ্গে মিশে যাবে এবং লোহা যেমন মাটির সঙ্গে মেশে না তেমনি তারাও এক সঙ্গে থাকবে না।
44 “এসব রাজাদের শাসনকালে স্বর্গের ঈশ্বর এমন একটি রাজ্যের প্রতিষ্ঠা করবেন, যা কেউ ধ্বংস করতে পারবে না বা কেউ অধিকার করতে পারবে না। কিন্তু এই রাজ্য অন্য সব রাজ্যের অবসান ঘটিয়ে চিরস্থায়ী হবে।
৪৪সেই সমস্ত রাজাদের দিনের, স্বর্গের ঈশ্বর এমন একটা রাজ্য স্থাপন করবেন যা কখনও ধ্বংস হবে না বা, অন্য লোকেরাও এটিকে অধিকার করবে না। এটি সেই সমস্ত রাজ্যগুলিকে চূর্ণবিচূর্ণ করবে এবং তাদেরকে নিশ্চিহ্ন করে দেবে এবং এটি চিরকাল থাকবে।
45 মানুষের সাহায্য ছাড়াই যেভাবে পাহাড় থেকে একটি পাথর কেটে লোহা, পিতল, মাটি, রুপো ও সোনা ধ্বংস করা হল, আপনার সেই দর্শনের অর্থ এই। “এ সবকিছুর মাধ্যমে মহান ঈশ্বর ভবিষ্যতে কী ঘটবে তা আপনাকে দেখিয়েছেন। মহারাজ, আপনার স্বপ্ন সত্য ও তার ব্যাখ্যা নিশ্চিত।”
৪৫যেমন আপনি দেখেছিলেন একটি পাথর পাহাড় থেকে কেটে নেওয়া হয়েছিল, কিন্তু যা মানুষের হাতে কাটা হয়নি। তা লোহা, ব্রোঞ্জ, মাটি, রূপা ও সোনাকে চূর্ণবিচূর্ণ করেছিল। ভবিষ্যতে কি হবে তা মহান ঈশ্বর আপনাকে জানিয়েছেন। স্বপ্নটা সত্যি এবং তার ব্যাখ্যাও বিশ্বাসযোগ্য।”
46 তারপর রাজা নেবুখাদনেজার উপুড় হয়ে দানিয়েলকে প্রণাম ও আরাধনা করলেন এবং তার উদ্দেশ্যে নৈবেদ্য ও সুগন্ধিদ্রব্য উৎসর্গ করতে আদেশ দিলেন।
৪৬রাজা নবূখদনিৎসর দানিয়েলের সামনে উপুড় হয়ে পড়লেন এবং তাঁকে সম্মান দিলেন এবং তিনি আদেশ দিলেন যেন তাঁর উদ্দেশ্যে উপহার ও ধূপ উৎসর্গ করা হয়।
47 রাজা দানিয়েলকে বললেন, “তোমার ঈশ্বর সব দেবতাগনের ঊর্ধ্বে শ্রেষ্ঠ ঈশ্বর ও রাজাদের ঊর্ধ্বে প্রভু এবং রহস্য প্রকাশকারী, কারণ তুমি এই রহস্য প্রকাশ করতে সক্ষম হয়েছ।”
৪৭রাজা দানিয়েলকে বললেন, “সত্যিই তোমার ঈশ্বর দেবতাদের ঈশ্বর এবং রাজাদের প্রভু এবং তিনি সেই যিনি গুপ্ত বিষয়গুলি প্রকাশ করেন, কারণ তুমিই এই গুপ্ত বিষয়টা প্রকাশ করতে পেরেছ।”
48 তখন রাজা দানিয়েলকে উচ্চপদে প্রতিষ্ঠিত করলেন এবং অনেক মূল্যবান উপহার দিলেন। রাজা তাকে ব্যাবিলন প্রদেশের শাসক করলেন এবং সব জ্ঞানী লোকেদের প্রধান হিসেবে নিযুক্ত করলেন।
৪৮তারপর রাজা দানিয়েলকে এক উচ্চ সম্মান দিলেন এবং তাঁকে অনেক সুন্দর সুন্দর উপহার দিলেন। তিনি তাঁকে সমস্ত ব্যাবিলন রাজ্যর উপরে শাসনকর্ত্তা হিসাবে নিযুক্ত করলেন। দানিয়েল সমস্ত জ্ঞানী লোকদের উপরে প্রধান রাজ্যপাল হিসাবে নিযুক্ত হলেন।
49 এছাড়াও, দানিয়েলের অনুরোধে রাজা শদ্রক, মৈশক ও অবেদনগোকে ব্যাবিলনের বিভিন্ন প্রদেশের প্রশাসক নিযুক্ত করলেন, যদিও দানিয়েল রাজসভাতেই রইলেন।
৪৯দানিয়েল রাজার কাছে অনুরোধ করলেন এবং রাজা শদ্রক, মৈশক ও অবেদনগোকে ব্যাবিলন রাজ্যর উপরে পরিচালক হিসাবে নিযুক্ত করলেন। কিন্তু দানিয়েল রাজবাড়িতে থাকলেন।