< প্রেরিত 7 >
1 তখন মহাযাজক স্তিফানকে জিজ্ঞাসা করলেন, “এসব অভিযোগ কি সত্যি?”
2 এর উত্তরে তিনি বললেন, “হে আমার ভাইরা ও পিতৃতুল্য ব্যক্তিরা, আমার কথা শুনুন। আমাদের পিতৃপুরুষ অব্রাহাম, হারণে বসবাস করার পূর্বে তিনি যখন মেসোপটেমিয়ায় বাস করছিলেন, তখন প্রতাপের ঈশ্বর তাঁর কাছে আবির্ভূত হয়েছিলেন।
3 ঈশ্বর বলেছিলেন, ‘তুমি তোমার দেশ ও তোমার আত্মীয়স্বজন ত্যাগ করো এবং আমি যে দেশ তোমাকে দেখাব, সেই দেশে যাও।’
4 “তাই তিনি কলদীয়দের দেশ ত্যাগ করে হারণে গিয়ে বসতি স্থাপন করলেন। তাঁর পিতার মৃত্যুর পর ঈশ্বর তাঁকে এই দেশে পাঠালেন, যেখানে এখন আপনারা বসবাস করছেন।
5 তিনি তাঁকে এখানে কোনও অধিকার, এমনকি, পা রাখার মতো একখণ্ড জমিও দান করেননি। কিন্তু ঈশ্বর তাঁকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন যে, তিনি ও তাঁর পরে তাঁর উত্তরপুরুষেরা সেই দেশের অধিকারী হবেন, যদিও সেই সময় অব্রাহামের কোনো সন্তান ছিল না।
6 ঈশ্বর তাঁর সঙ্গে এভাবে কথা বলেছিলেন, ‘জেনে রাখো যে তোমার বংশধরেরা চারশো বছর এমন একটি দেশে অপরিচিত হয়ে বসবাস করবে, যা তাদের নিজস্ব নয়; তারা সেখানে ক্রীতদাসে পরিণত হবে এবং তাদের সাথে দুর্ব্যবহার করা হবে।
7 কিন্তু যে দেশে তারা ক্রীতদাস হয়ে থাকবে, সেই দেশটিকে আমি শাস্তি দেব।’ ঈশ্বর বলেছিলেন, ‘শেষ পর্যন্ত তারা সেই দেশ থেকে বেরিয়ে আসবে ও এই স্থানে এসে আমার উপাসনা করবে।’
8 তারপর তিনি অব্রাহামকে নিয়মের চিহ্নস্বরূপ সুন্নতের সংস্কার দান করলেন। আর অব্রাহাম, তাঁর ছেলে ইস্হাকের জন্ম দিলেন ও আট দিন পরে তাঁর সুন্নত করলেন। পরে ইস্হাক যাকোবের জন্ম দিলেন ও যাকোব সেই বারোজন পিতৃকুলপতির জন্ম দিলেন।
9 “যেহেতু পিতৃকুলপতিরা যোষেফের প্রতি ঈর্ষান্বিত হয়েছিলেন, তারা তাঁকে মিশরে ক্রীতদাসরূপে বিক্রি করে দিলেন। কিন্তু ঈশ্বর তাঁর সহবর্তী ছিলেন।
10 তিনি তাঁকে সমস্ত সংকট থেকে উদ্ধার করলেন। তিনি যোষেফকে প্রজ্ঞা দান করলেন এবং মিশরের রাজা ফরৌণের আনুকূল্য অর্জন করতে সক্ষমতা দিলেন। সেই কারণে, ফরৌণ তাঁকে মিশর ও তাঁর সমস্ত প্রাসাদের উপরে প্রশাসকরূপে নিযুক্ত করলেন।
11 “তারপরে সমস্ত মিশরে ও কনানে এক দুর্ভিক্ষ হল এবং ভীষণ কষ্ট উপস্থিত হল। আমাদের পিতৃপুরুষেরা খাদ্যের সন্ধান পেলেন না।
12 যাকোব যখন শুনলেন যে মিশরে শস্য সঞ্চিত আছে, তিনি আমাদের পিতৃপুরুষদের প্রথমবার সেই যাত্রায় পাঠালেন।
13 তাদের দ্বিতীয় যাত্রায় যোষেফ তাঁর ভাইদের কাছে আত্মপরিচয় দিলেন, আর ফরৌণ যোষেফের পরিবারের বিষয়ে জানতে পারলেন।
14 এরপরে যোষেফ নিজের পিতা যাকোব ও তাঁর সমগ্র পরিবারের সব মিলিয়ে পঁচাত্তর জনকে তাঁর কাছে ডেকে পাঠালেন।
15 তারপরে যাকোব মিশরে গেলেন। সেখানে তাঁর ও আমাদের পিতৃপুরুষদের মৃত্যু হল।
16 তাঁদের শবদেহ শিখিমে নিয়ে আসা হল এবং অব্রাহাম শিখিমে, হমোরের ছেলেদের কাছ থেকে কিছু অর্থের বিনিময়ে যে কবর কিনেছিলেন, সেখানে তাদের কবর দেওয়া হল।
17 “ঈশ্বর অব্রাহামের কাছে যে প্রতিশ্রুতি করেছিলেন, তা পূর্ণ হওয়ার সময় সন্নিকট হলে, মিশরে আমাদের লোকদের সংখ্যা অত্যন্ত বৃদ্ধি পেল।
18 পরে ‘এমন এক নতুন রাজা মিশরের ক্ষমতায় এলেন, যাঁর কাছে যোষেফের কোনও গুরুত্বই ছিল না।’
19 তিনি আমাদের পিতৃপুরুষদের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতাপূর্ণ আচরণ করলেন এবং তিনি বলপ্রয়োগ করে তাদের নবজাত সন্তানদের বাইরে ফেলে দিতে বললেন, যেন তারা মারা যায়। এভাবে তারা আমাদের পূর্বপুরুষদের উপরে অত্যাচার করলেন।
20 “সেই সময়ে মোশির জন্ম হয়। তিনি কোনো সাধারণ শিশু ছিলেন না। তিন মাস পর্যন্ত তিনি তাঁর বাবার বাড়িতে প্রতিপালিত হলেন।
21 তাঁকে যখন বাইরে রেখে দেওয়া হল, ফরৌণের মেয়ে তাঁকে তুলে নিলেন ও তাঁর নিজের ছেলের মতো তাঁকে প্রতিপালন করলেন।
22 মোশি মিশরীয় সমস্ত জ্ঞান-বিদ্যায় শিক্ষিত হয়ে উঠলেন। কথায় ও কাজে তিনি পরাক্রমী ছিলেন।
23 “মোশির বয়স যখন চল্লিশ বছর, তিনি তাঁর সহ-ইস্রায়েলীদের খোঁজ করবেন বলে স্থির করলেন।
24 তিনি দেখলেন, তাদের একজনের প্রতি এক মিশরীয় অন্যায় আচরণ করছে। তাই তিনি তার প্রতিরক্ষায় গেলেন এবং সেই মিশরীয়কে হত্যা করে তার প্রতিশোধ নিলেন।
25 মোশি ভেবেছিলেন যে, তাঁর স্বজাতির লোকেরা উপলব্ধি করতে পারবে যে, তাদের উদ্ধারের জন্য ঈশ্বর তাঁকে ব্যবহার করছেন, কিন্তু তারা বুঝতে পারল না।
26 পরের দিন, দুজন ইস্রায়েলী যখন পরস্পর মারামারি করছিল, মোশি তাদের কাছে এলেন। তিনি এই কথা বলে তাদের পুনর্মিলনের চেষ্টা করলেন, ‘ওহে, তোমরা পরস্পর ভাই ভাই, কেন তোমাদের একজন অন্যজনকে আহত করতে চাইছ?’
27 “কিন্তু যে লোকটি অপরজনের প্রতি অন্যায় আচরণ করছিল, সে মোশিকে এক পাশে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে বলল, ‘কে তোমাকে আমাদের উপরে শাসক ও বিচারকর্তা নিযুক্ত করেছে?
28 গতকাল সেই মিশরীয়টিকে যেমন হত্যা করেছিলে, আমাকেও কি তেমনই হত্যা করতে চাও?’
29 মোশি যখন একথা শুনলেন, তিনি মিদিয়ন দেশে পালিয়ে গেলেন। সেখানে তিনি প্রবাসী হয়ে বসবাস করে দুই ছেলের জন্ম দিলেন।
30 “চল্লিশ বছর অতিক্রান্ত হওয়ার পর, সীনয় পর্বতের কাছে মরুপ্রান্তরে এক প্রজ্বলিত ঝোপের আগুনের শিখায় এক স্বর্গদূত মোশিকে চাক্ষুষ দর্শন দিলেন।
31 তিনি যখন তা দেখলেন, সেই দৃশ্যে তিনি চমৎকৃত হলেন। আরও নিবিড়ভাবে লক্ষ্য করার জন্য যেই তিনি এগিয়ে গেলেন, তিনি প্রভুর কণ্ঠস্বর শুনতে পেলেন:
32 ‘আমি তোমার পিতৃপুরুষদের ঈশ্বর, অব্রাহাম, ইস্হাক ও যাকোবের ঈশ্বর।’ মোশি ভয়ে কাঁপতে লাগলেন, সেদিকে তাকানোর সাহস তাঁর রইল না।
33 “তখন প্রভু তাঁকে বললেন, ‘তোমার চটিজুতো খুলে ফেলো, কারণ তুমি যে স্থানে দাঁড়িয়ে আছ সেটি পবিত্র ভূমি।
34 আমি প্রকৃতই মিশরে আমার প্রজাদের উপরে নির্যাতন লক্ষ্য করেছি। আমি তাদের আর্তনাদ শুনেছি ও তাদের মুক্ত করার জন্যই নেমে এসেছি। এখন এসো, আমি তোমাকে মিশরে ফেরত পাঠাই।’
35 “ইনিই সেই মোশি, যাঁকে তারা এই কথা বলে প্রত্যাখ্যান করেছিল, ‘কে তোমাকে শাসক ও বিচারকর্তা নিযুক্ত করেছে’? স্বয়ং ঈশ্বর তাঁকে তাদের শাসক ও উদ্ধারকারীরূপে পাঠিয়েছিলেন সেই স্বর্গদূতের মাধ্যমে, যিনি ঝোপের মধ্যে তাঁকে দর্শন দিয়েছিলেন।
36 তিনি তাদের মিশর থেকে বের করে আনলেন এবং মিশরে, লোহিত সাগরে ও চল্লিশ বছর যাবৎ মরুপ্রান্তরে বিভিন্ন বিস্ময়কর কাজ ও অলৌকিক চিহ্নকাজ সম্পন্ন করলেন।
37 “ইনিই সেই মোশি, যিনি ইস্রায়েলীদের বলেছিলেন, ‘ঈশ্বর তোমাদের ভাইয়ের মধ্য থেকে আমার মতো একজন ভাববাদীর উত্থান ঘটাবেন।’
38 তিনি সেই মরুপ্রান্তরে জনমণ্ডলীর মধ্যে ছিলেন। তিনি ছিলেন সেই স্বর্গদূতের সঙ্গে, যিনি সীনয় পর্বতের উপরে তাঁর সঙ্গে কথা বলেছিলেন এবং যিনি আমাদের পিতৃপুরুষদের সঙ্গেও ছিলেন। তিনি জীবন্ত বাক্য আমাদের কাছে দেওয়ার জন্য গ্রহণ করেছিলেন।
39 “কিন্তু আমাদের পিতৃপুরুষেরা মোশির আদেশ পালন করতে চাইলেন না। পরিবর্তে, তাঁরা তাঁকে অগ্রাহ্য করলেন ও মনে মনে মিশরের প্রতি ফিরে গেলেন।
40 তাঁরা হারোণকে বললেন, ‘আমাদের আগে আগে যাওয়ার উদ্দেশে আমাদের জন্য দেবতা নির্মাণ করো। এই যে মোশি, যিনি আমাদের মিশর থেকে বের করে এনেছিলেন, তাঁর কী হয়েছে, তা আমরা জানি না!’
41 সেই সময় তাঁরা বাছুরের আকৃতিবিশিষ্ট একটি মূর্তি নির্মাণ করলেন। তাঁরা তার কাছে বিভিন্ন নৈবেদ্য নিয়ে এলেন এবং তাঁদের হাতে তৈরি মূর্তির সম্মানে এক আনন্দোৎসব পালন করলেন।
42 কিন্তু ঈশ্বর বিমুখ হলেন এবং আকাশের সূর্য, চাঁদ ও আকাশের তারা উপাসনা করার জন্য তাদের সমর্পণ করলেন। ভাববাদীদের গ্রন্থে যা লেখা আছে, এ তারই সঙ্গে সহমত পোষণ করে: “‘হে ইস্রায়েলের কুল, তোমরা কি মরুভূমিতে চল্লিশ বছর, আমার কাছে বিভিন্ন বলিদান ও নৈবেদ্য নিয়ে এসেছিলে?
43 তোমরা তুলে ধরেছিলে মোলকের সেই সমাগম তাঁবু ও তোমাদের দেবতা রিফনের প্রতীক, তারকা— যে দুই মূর্তি তোমরা উপাসনার জন্য নির্মাণ করেছিলে। আমি তাই তোমাদের ব্যাবিলনের সীমানার ওপারে নির্বাসনে পাঠাব।’
44 “মরুপ্রান্তরে আমাদের পিতৃপুরুষদের সঙ্গে ছিল সেই সাক্ষ্য-তাঁবু। মোশি যে নকশা দেখেছিলেন, সেই অনুযায়ী তাঁকে ঈশ্বরের দেওয়া নির্দেশমতো তা নির্মিত হয়েছিল।
45 পরবর্তীকালে যিহোশূয়ের আমলে আমাদের পিতৃপুরুষেরা যখন ঈশ্বর দ্বারা তাড়িয়ে দেওয়া জাতিকে উচ্ছেদ করে তাদের দেশ অধিকার করলেন, তখনও তাঁরা সেই সমাগম তাঁবুটি সঙ্গে নিয়ে গেলেন। সেই তাঁবু দাউদের সময় পর্যন্ত সেখানেই ছিল।
46 তিনি ঈশ্বরের অনুগ্রহ উপভোগ করলেন এবং যাকোবের ঈশ্বরের জন্য একটি আবাসগৃহ নির্মাণ করার জন্য অনুমতি চাইলেন।
47 কিন্তু প্রকৃতপক্ষে শলোমন তাঁর জন্য সেই আবাসগৃহ নির্মাণ করেন।
48 “যাই হোক, পরাৎপর মানুষের হাতে তৈরি গৃহে বসবাস করেন না। ভাববাদী যেমন বলেন:
49 “‘স্বর্গ আমার সিংহাসন ও পৃথিবী আমার পাদপীঠ। প্রভু বলেন, তোমরা আমার জন্য কী ধরনের আবাস নির্মাণ করবে? অথবা, আমার বিশ্রামস্থানই বা হবে কোথায়?
50 আমার হাতই কি এই সমস্ত নির্মাণ করেনি?’
51 “একগুঁয়ে মানুষ তোমরা, অচ্ছিন্নত্বক তোমাদের হৃদয় ও কান! তোমরাও তোমাদের পিতৃপুরুষদের মতো; তোমরা সবসময়ই পবিত্র আত্মাকে প্রতিরোধ করে থাকো!
52 তোমাদের পিতৃপুরুষেরা নির্যাতন করেনি, এমন কোনও ভাববাদী কি আছেন? তারা এমনকি, তাঁদেরও হত্যা করেছিল, যাঁরা সেই ধর্মময় পুরুষের আগমনবার্তা ঘোষণা করেছিলেন। আর এখন তোমরাও বিশ্বাসঘাতকতা করে তাঁকে হত্যা করেছ—
53 তোমরা, বিধান গ্রহণ করেছিলে, যা স্বর্গদূতদের মাধ্যমে দেওয়া হয়েছিল, কিন্তু তা পালন করোনি।”
54 মহাসভার সদস্যরা যখন একথা শুনল, তারা ক্রোধে উন্মত্ত হয়ে তাঁর প্রতি দন্তঘর্ষণ করতে লাগল।
55 কিন্তু স্তিফান, পবিত্র আত্মায় পূর্ণ হয়ে স্বর্গের প্রতি একদৃষ্টে চেয়ে রইলেন। তিনি ঈশ্বরের মহিমা দেখতে পেলেন। আরও দেখলেন যে যীশু ঈশ্বরের ডানদিকে দাঁড়িয়ে আছেন।
56 তিনি বললেন, “দেখো, আমি স্বর্গ খোলা দেখতে পাচ্ছি ও মনুষ্যপুত্র ঈশ্বরের ডানদিকে দাঁড়িয়ে আছেন।”
57 এতে তারা তাদের কান বন্ধ করল এবং উচ্চকণ্ঠে চিৎকার করে সকলে তাঁর দিকে এগিয়ে গেল।
58 তারা তাঁকে নগরের বাইরে টেনে নিয়ে গেল ও তাঁকে পাথর দিয়ে আঘাত করতে লাগল। ইতিমধ্যে, সাক্ষীরা নিজের নিজের পোশাক খুলে শৌল নামে এক যুবকের পায়ের কাছে রাখল।
59 তারা যখন তাঁকে পাথর দিয়ে আঘাত করছিল, স্তিফান প্রার্থনা করলেন, “প্রভু যীশু, আমার আত্মাকে তুমি গ্রহণ করো।”
60 তারপর তিনি নতজানু হয়ে চিৎকার করে বললেন, “প্রভু, এদের বিরুদ্ধে তুমি এই পাপ গণ্য করো না।” একথা বলার পর তিনি মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়লেন।