< প্রেরিত 27 >
1 যখন স্থির হল যে আমরা জাহাজে করে ইতালি যাত্রা করব, পৌল ও আরও কয়েকজন বন্দিকে সম্রাট অগাস্টাসের সৈন্যদলের একজন শত-সেনাপতি জুলিয়াসের হাতে সমর্পণ করা হল।
2 আমরা আদ্রামুত্তিয়ামের একটি জাহাজে উঠলাম, যেটা এশিয়া প্রদেশের উপকূলবর্তী বিভিন্ন বন্দরে যাত্রা করার জন্য প্রস্তুত ছিল। আমরা সমুদ্রযাত্রা শুরু করলাম। থিষলনিকা থেকে আসা আরিষ্টার্খ নামে একজন ম্যাসিডোনিয়াবাসী আমাদের সঙ্গে ছিলেন।
3 পরের দিন, আমরা সীদোনে পৌঁছালাম। জুলিয়াস পৌলের প্রতি দয়া দেখিয়ে বন্ধুদের কাছে তাঁকে যাওয়ার অনুমতি দিলেন, যেন তারা তাঁর সব প্রয়োজনীয় উপকরণ জোগাতে পারে।
4 সেখান থেকে আমরা আবার সমুদ্রযাত্রা শুরু করলাম এবং বাতাস যেহেতু আমাদের প্রতিকূলে বইছিল, আমরা সাইপ্রাস দ্বীপের আড়ালে আড়ালে যেতে লাগলাম।
5 যখন আমরা কিলিকিয়া ও পাম্ফুলিয়া উপকূলের সম্মুখবর্তী সমুদ্র অতিক্রম করলাম, আমরা লুসিয়া প্রদেশের ম্যুরা নামক স্থানে পৌঁছালাম।
6 সেখানে একটি আলেকজান্দ্রীয় জাহাজকে ইতালির উদ্দেশে যাত্রা করতে দেখে শত-সেনাপতি আমাদের সেই জাহাজে তুলে দিলেন।
7 বহুদিন যাবৎ ধীর গতিতে চলার পর আমরা কষ্টের সঙ্গে ক্নীদের কাছে এসে পৌঁছালাম। বাতাস যখন আমাদের নির্ধারিত পথে যাত্রা করতে দিল না, আমরা সলমোনির বিপরীত দিকে ক্রীট দ্বীপের আড়ালে আড়ালে পাড়ি দিলাম।
8 কষ্ট করে উপকূল বরাবর যেতে যেতে, আমরা লাসেয়া নগরের কাছে সুন্দর পোতাশ্রয় নামে একটি স্থানে এসে পৌঁছালাম।
9 এভাবে অনেক সময় নষ্ট হয়েছিল। উপবাস-পর্ব শেষ হওয়ার পরে সমুদ্রযাত্রা বিপদসংকুল হয়ে উঠেছিল। তাই পৌল তাদের সতর্ক করে দিয়ে বললেন,
10 “মহাশয়েরা, আমি দেখতে পাচ্ছি, আমাদের সমুদ্রযাত্রা দুর্দশাজনক হবে, জাহাজ ও মালপত্রের প্রচণ্ড ক্ষয়ক্ষতি হবে, আবার আমাদেরও প্রাণসংশয় হতে পারে।”
11 কিন্তু শত-সেনাপতি, পৌলের কথায় কান না দিয়ে, নাবিকের ও জাহাজের মালিকের পরামর্শ মেনে চললেন।
12 যেহেতু বন্দরটি শীতকাল কাটানোর জন্য উপযুক্ত ছিল না তাই অধিকাংশ লোকই সমুদ্রযাত্রায় এগিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিল। তারা আশা করছিল যে ফিনিক্সে পৌঁছে সেখানে শীতকাল কাটাবে। সেটা ছিল ক্রীটের একটি বন্দর, যার দক্ষিণ-পশ্চিম ও উত্তর-পশ্চিম দুই দিকই ছিল খোলা।
13 যখন দক্ষিণ দিক থেকে হালকা এক বাতাস বইতে লাগল, তারা ভাবল যে তারা যা চেয়েছিল তাই হয়েছে। ফলে তারা নোঙর তুলে ক্রীটের উপকূল বরাবর যাত্রা করল।
14 কিন্তু খুব অল্প সময়ের মধ্যেই উরাকুলো নামে প্রচণ্ড এক ঘূর্ণিঝড় দ্বীপের দিক থেকে আছড়ে পড়ল।
15 জাহাজটি ঝড়ের মুখে পড়ল এবং বাতাসের মধ্য দিয়ে যেতে পারল না। তাই আমরা তা ভেসে যেতে দিলাম।
16 যখন আমরা কৌদা নামের ছোটো একটি দ্বীপের আড়াল দিয়ে যাচ্ছিলাম, আমরা অনেক কষ্টে জাহাজের জীবন-রক্ষাকারী নৌকাটি নিজেদের আয়ত্তে আনতে পারলাম।
17 মাঝিমাল্লারা যখন সেটাকে পাটাতনের উপরে তুলল, তারা নিচ থেকে দড়ি দিয়ে সেটাকে জাহাজের সঙ্গে বাঁধল। সূর্তির বালির চড়ায় আটকে পড়ার ভয়ে তারা সমুদ্রে নোঙর নামিয়ে দিল এবং জাহাজটিকে ভেসে যেতে দিল।
18 আমরা ঝড়ের এমন প্রচণ্ড দাপটের মুখে পড়লাম যে পরের দিন তারা জাহাজের মালপত্র ফেলে দিতে লাগল।
19 তৃতীয় দিনে তারা নিজের হাতে জাহাজের সাজসরঞ্জাম জলে ফেলে দিল।
20 যখন অনেকদিন পর্যন্ত সূর্য বা আকাশের তারা দেখা গেল না এবং ঝড়ের তাণ্ডব অব্যাহত রইল, আমরা বেঁচে থাকার সব আশা ছেড়ে দিলাম।
21 লোকেরা অনেকদিন অনাহারে থাকার পর, পৌল তাদের সামনে দাঁড়িয়ে বললেন, “মহাশয়েরা, আমার পরামর্শ গ্রহণ করে ক্রীট থেকে আপনাদের যাত্রা না করাই উচিত ছিল; তাহলে আপনাদের এই ক্ষয়ক্ষতি হত না।
22 কিন্তু এখন আমি আপনাদের অনুনয় করছি, আপনারা সাহস রাখুন, কারণ আপনাদের কারও প্রাণহানি হবে না, কেবলমাত্র জাহাজটি ধ্বংস হবে।
23 আমি যে ঈশ্বরের দাস ও আমি যাঁর উপাসনা করি, তাঁর এক দূত গত রাত্রে আমার পাশে দাঁড়িয়ে
24 বললেন, ‘পৌল, তুমি ভয় পেয়ো না। তোমাকে কৈসরের সামনে বিচারের জন্য উপস্থিত হতেই হবে। আর ঈশ্বর দয়া করে যারা তোমার সঙ্গে সমুদ্রযাত্রা করছে, তাদের সকলের জীবন তোমায় দান করেছেন।’
25 সেই কারণে মহাশয়েরা সাহস রাখুন, কারণ ঈশ্বরের উপরে আমার বিশ্বাস আছে যে, তিনি আমার কাছে যেমন ব্যক্ত করেছেন, তেমনই ঘটবে।
26 তবুও, আমাদের কোনো দ্বীপে গিয়ে উঠতেই হবে।”
27 চোদ্দো দিন পরে রাত্রিবেলায়, আমরা তখনও আদ্রিয়া সমুদ্রের উপর দিয়ে ভেসে চলেছি, এমন সময়ে, প্রায় মাঝরাতে, নাবিকরা অনুমান করল যে তারা কোনও ডাঙার কাছাকাছি এসে পড়েছে।
28 তারা মেপে দেখল যে, জলের গভীরতা একশো কুড়ি ফুট। অল্প কিছুক্ষণ পরে তারা আবার মেপে দেখল, জলের গভীরতা নব্বই ফুট।
29 পাথরের গায়ে আছড়ে পরার ভয়ে তারা জাহাজের পিছন দিক থেকে চারটি নোঙর ফেলে দিয়ে দিনের আলোর জন্য প্রার্থনা করতে লাগল।
30 আর জাহাজ থেকে পালিয়ে যাওয়ার উদ্দেশে নাবিকেরা জাহাজের সামনের দিকে কয়েকটি নোঙর নামিয়ে দেওয়ার ছল করল ও সমুদ্রে জীবন-রক্ষাকারী নৌকাটিকে নামিয়ে দিল।
31 পৌল তখন শত-সেনাপতি ও সৈন্যদের বললেন, “এই লোকেরা জাহাজে না থাকলে আপনারা কিছুতেই রক্ষা পাবেন না।”
32 তখন সৈন্যরা নৌকার দড়ি কেটে দিয়ে সেটাকে জলে পড়ে যেতে দিল।
33 ভোরের ঠিক আগে, পৌল তাদের সবাইকে কিছু খেয়ে নেওয়ার জন্য অনুনয় করলেন। তিনি বললেন, “গত চোদ্দো দিন যাবৎ আপনারা ক্রমাগত উদ্বেগের মধ্যে আছেন এবং অনাহারে কাটিয়েছেন, আপনারা কিছুই আহার করেননি।
34 এখন কিছু খাওয়ার জন্য আমি আপনাদের অনুরোধ করছি। বেঁচে থাকার জন্য আপনাদের খাবার প্রয়োজন আছে। আপনাদের একজনের মাথার একটি চুলও নষ্ট হবে না।”
35 একথা বলার পর, তিনি কিছু রুটি নিয়ে তাদের সকলের সামনে ঈশ্বরকে ধন্যবাদ দিলেন। তারপর তা ভেঙে তিনি খেতে লাগলেন।
36 এতে তারা সকলেই উৎসাহিত হয়ে কিছু কিছু খাবার গ্রহণ করল।
37 জাহাজে আমরা সর্বমোট দুশো ছিয়াত্তর জন ছিলাম।
38 তারা যখন নিজেদের ইচ্ছামতো পর্যাপ্ত খাবার গ্রহণ করল, তারা খাদ্যশস্য সমুদ্রে ফেলে দিয়ে জাহাজের ভার হালকা করল।
39 দিনের আলো ফুটে উঠলে তারা জায়গাটা চিনতে পারল না। কিন্তু তারা একটি উপসাগর দেখতে পেল, যার তীর বালিতে ভর্তি ছিল। তারা স্থির করল, সম্ভব হলে তারা জাহাজটিকে চড়ায় আটকে দেবে।
40 নোঙরগুলি কেটে দিয়ে তারা সেগুলি সমুদ্রে ফেলে দিল। সেই সঙ্গে তারা হালের সঙ্গে বাঁধা দড়িগুলিও খুলে দিল। এরপর তারা বাতাসের অনুকূলে পাল তুলে দিয়ে তীরের দিকে এগিয়ে চলল।
41 কিন্তু জাহাজ একটি বালির চড়ায় ধাক্কা মারল এবং আটকে গেল। জাহাজের সামনের দিকটি জোরে ধাক্কা মারল ও তা অচল হয়ে গেল। কিন্তু পিছনের দিকটি ঢেউয়ের প্রবল আঘাতে টুকরো টুকরো হয়ে গেল।
42 বন্দিরা কেউ যেন সাঁতার কেটে পালিয়ে যেতে না পারে, সেজন্য সৈন্যরা তাদের হত্যা করার পরামর্শ করল।
43 কিন্তু শত-সেনাপতি পৌলের প্রাণ বাঁচানোর ইচ্ছায় তাদের সেই পরিকল্পনা কার্যকর হতে দিলেন না। তিনি আদেশ দিলেন, যারা সাঁতার জানে, প্রথমে তারাই যেন জলে ঝাঁপ দিয়ে তীরে ওঠে।
44 অবশিষ্ট সকলে যেন তক্তা বা জাহাজের ভাঙা অংশ নিয়ে সেখানে পৌঁছায়। এভাবে প্রত্যেকেই নিরাপদে তীরে পৌঁছে গেল।