< প্রেরিত 2 >
1 যখন পঞ্চাশত্তমীর দিন উপস্থিত হল, তাঁরা সকলেই এক স্থানে সমবেত ছিলেন।
2 হঠাৎই আকাশ থেকে প্রবল বায়ুপ্রবাহের মতো একটি শব্দ ভেসে এল এবং তাঁরা যেখানে বসেছিলেন, সেই ঘরের সর্বত্র ব্যাপ্ত হল।
3 তাঁরা দেখতে পেলেন, যেন জিভের মতো আগুনের শিখা, যা ভাগ ভাগ হয়ে তাঁদের প্রত্যেকের উপরে অধিষ্ঠান করল।
4 আর তাঁরা সবাই পবিত্র আত্মায় পরিপূর্ণ হলেন এবং আত্মা যেমন সক্ষমতা দিলেন, তাঁরা সেইরূপ অন্য অন্য ভাষায় কথা বলতে লাগলেন।
5 সেই সময় আকাশের নিচে অবস্থিত সমস্ত দেশ থেকে ঈশ্বরভয়শীল ইহুদিরা জেরুশালেমে বাস করছিলেন।
6 তারা যখন এই শব্দ শুনল, তারা হতচকিত হয়ে সেই স্থানে এসে ভিড় করল, কারণ তাদের মধ্যে প্রত্যেকেই নিজস্ব ভাষায় তাঁদের কথা বলতে শুনল।
7 অত্যন্ত চমৎকৃত হয়ে তারা জিজ্ঞাসা করল, “এই যে লোকেরা কথা বলছে, এরা সবাই কি গালীলীয় নয়?
8 তাহলে কীভাবে আমরা প্রত্যেকেই তার নিজস্ব জন্মদেশীয় ভাষায় তাঁদের কথা বলতে শুনছি?
9 পার্থীয়, মাদীয়, এলমীয় এবং মেসোপটেমিয়া, যিহূদিয়া ও কাপ্পাদোকিয়া, পন্ত ও এশিয়ার অধিবাসীরা,
10 ফরুগিয়া ও পাম্ফুলিয়া, মিশর ও কুরীণের কাছাকাছি লিবিয়ার অংশবিশেষ, রোম থেকে আগত পরিদর্শকেরা,
11 (ইহুদি ও ইহুদি ধর্মে ধর্মান্তরিত, উভয়ই); ক্রীটিয় ও আরবীয়েরা, আমরা শুনতে পাচ্ছি, আমাদের নিজস্ব ভাষায় তাঁরা ঈশ্বরের বিস্ময়কর কীর্তির কথা ঘোষণা করছেন!”
12 চমৎকৃত ও হতভম্ব হয়ে তারা পরস্পরকে জিজ্ঞাসা করল, “এর অর্থ কী?”
13 কেউ কেউ অবশ্য তাদের পরিহাস করে বলল, “এরা অত্যধিক সুরাপান করে ফেলেছে।”
14 তখন পিতর সেই এগারোজনের সঙ্গে উঠে দাঁড়িয়ে উচ্চকণ্ঠে জনসাধারণকে সম্বোধন করলেন, “হে ইহুদি জনমণ্ডলী ও জেরুশালেমে বসবাসকারী আপনারা সকলে, আমাকে এই ঘটনার কথা আপনাদের কাছে ব্যাখ্যা করতে দিন; আমি যা বলি, তা মনোযোগ দিয়ে শুনুন।
15 এই লোকেরা নেশাগ্রস্ত নয়, যেমন আপনারা মনে করছেন। এখন সকাল নয়টা মাত্র!
16 আসলে ভাববাদী যোয়েল এই ঘটনার কথাই ব্যক্ত করেছিলেন:
17 “ঈশ্বর বলেন, ‘অন্তিমকালে, আমি সমস্ত মানুষের উপরে আমার আত্মা ঢেলে দেব। তোমাদের ছেলে ও মেয়েরা ভাববাণী বলবে, তোমাদের প্রবীণেরা স্বপ্ন দেখবে, তোমাদের যুবকেরা দর্শন পাবে।
18 এমনকি, আমার দাস-দাসীদেরও উপরে, সেইসব দিনে আমি আমার আত্মা ঢেলে দেব, আর তারা ভবিষ্যদ্বাণী করবে।
19 ঊর্ধ্বাকাশে আমি দেখাব বিস্ময়কর সব লক্ষণ এবং নিচে পৃথিবীতে বিভিন্ন নিদর্শন, রক্ত ও আগুন এবং ধোঁয়ার কুণ্ডলী।
20 প্রভুর সেই মহৎ ও মহিমাময় দিনের আগমনের পূর্বে, সূর্য অন্ধকার এবং চাঁদ রক্তবর্ণ হয়ে যাবে।
21 আর যে কেউ প্রভুর নামে ডাকবে, সেই পরিত্রাণ পাবে।’
22 “হে ইস্রায়েলবাসী, একথা শুনুন, নাসরতীয় যীশু অনেক অলৌকিক কাজ, বিস্ময়কর ঘটনা ও নিদর্শনের মাধ্যমে প্রকাশ্যে আপনাদের কাছে ঈশ্বরের দ্বারা স্বীকৃত মানুষ ছিলেন। সেইসব কাজ ঈশ্বর তাঁরই মাধ্যমে সম্পন্ন করেছেন, যেমন আপনারা নিজেরাই অবগত আছেন।
23 সেই ব্যক্তিকে ঈশ্বর তাঁর নিরূপিত পরিকল্পনা ও পূর্বজ্ঞান অনুসারে তোমাদের হাতে সমর্পণ করেছিলেন, আর তোমরা দুর্জন ব্যক্তিদের সহায়তায় তাঁকে ক্রুশবিদ্ধ করে হত্যা করেছ।
24 কিন্তু ঈশ্বর তাঁকে মৃত্যুযন্ত্রণা থেকে মুক্ত করে মৃত্যুর কবল থেকে উত্থাপিত করেছেন, কারণ মৃত্যুর পক্ষে তাঁকে ধরে রাখা অসম্ভব ছিল।
25 দাউদ তাঁর সম্পর্কে বলেছেন, “‘আমি প্রভুকে নিয়ত, আমার সামনে দেখেছি। কারণ, তিনি তো আমার ডানপাশে, আমি বিচলিত হব না।
26 তাই আমার হৃদয় আনন্দিত এবং আমার জিভ উল্লাস করে; আমার দেহ প্রত্যাশায় বিশ্রাম নেবে,
27 কারণ তুমি কখনও আমাকে পাতালের গর্ভে পরিত্যাগ করবে না, তুমি তোমার পবিত্রজনকে ক্ষয় দেখতে দেবে না। (Hadēs )
28 তুমি আমার কাছে জীবনের পথ অবগত করেছ, তোমার সামনে আমায় আনন্দে পূর্ণ করবে।’
29 “হে ইস্রায়েলবাসী, আমি আপনাদের মুক্তকণ্ঠে বলতে পারি যে, পূর্বপুরুষ দাউদ মৃত্যুবরণ করেছিলেন ও তাঁকে কবর দেওয়া হয়েছিল; তাঁর কবর আজও এখানে আমাদের মধ্যে বিদ্যমান রয়েছে।
30 কিন্তু তিনি একজন ভাববাদী ছিলেন, আর তিনি জানতেন যে, ঈশ্বর শপথপূর্বক তাঁকে প্রতিশ্রুতি দান করেছেন, তিনি তাঁর এক সন্তানকে তাঁর সিংহাসনে স্থাপন করবেন।
31 ভবিষ্যতে কী ঘটবে তা আগেই দেখতে পেয়ে তিনি মশীহের পুনরুত্থান সম্পর্কে বলেছেন যে, তিনি পাতালের গর্ভে পরিত্যক্ত হবেন না, কিংবা তাঁর শরীর ক্ষয় দেখবে না। (Hadēs )
32 এই যীশুকেই ঈশ্বর মৃত্যু থেকে জীবনে বাঁচিয়ে তুলেছেন এবং আমরা সকলেই এই ঘটনার সাক্ষী।
33 ঈশ্বরের ডানদিকে উন্নীত হয়ে তিনি পিতার কাছ থেকে প্রতিশ্রুত পবিত্র আত্মা লাভ করেছেন এবং আমাদের উপরে তাঁকে ঢেলে দিয়েছেন, যেমন আপনারা এখন দেখছেন ও শুনছেন।
34 কিন্তু দাউদ নিজে স্বর্গে যাননি, তবুও তিনি বলেছেন, “‘প্রভু আমার প্রভুকে বললেন, তুমি আমার ডানদিকে বসো,
35 যতক্ষণ না আমি তোমার শত্রুদের তোমার পাদপীঠ করি।’
36 “সেই কারণে, সমস্ত ইস্রায়েল এ বিষয়ে নিশ্চিত হোক: যে যীশুকে তোমরা ক্রুশে বিদ্ধ করেছ, ঈশ্বর তাঁকে প্রভু ও মশীহ, এই উভয়ই করেছেন।”
37 সকলে যখন একথা শুনল, তাদের হৃদয় ক্ষতবিক্ষত হল। তারা পিতর ও অন্য প্রেরিতশিষ্যদের বলল, “ভাইরা, আমরা কী করব?”
38 পিতর উত্তর দিলেন, “তোমরা প্রত্যেকে মন পরিবর্তন করো ও যীশু খ্রীষ্টের নামে বাপ্তিষ্ম গ্রহণ করো, যেন তোমাদের পাপ ক্ষমা হয়, তাহলে তোমরা ঈশ্বরের দানস্বরূপ পবিত্র আত্মা লাভ করবে।
39 এই প্রতিশ্রুতি তোমাদের ও তোমাদের সন্তানদের জন্য এবং যারা দূরে আছে তাদের সকলের জন্য—সকলের জন্য যাদেরকে আমাদের ঈশ্বর প্রভু আহ্বান করবেন।”
40 আরও অনেক কথায় তিনি তাদের সতর্ক করে দিলেন এবং তিনি তাদের উপদেশ দিয়ে বললেন, “এই কলুষিত প্রজন্ম থেকে তোমরা নিজেদের রক্ষা করো।”
41 যারা তাঁর বাণী গ্রাহ্য করল, তারা বাপ্তিষ্ম গ্রহণ করল, আর সেদিন প্রায় তিন হাজার লোক তাদের সঙ্গে যুক্ত হল।
42 আর তারা প্রেরিতশিষ্যদের শিক্ষায় ও সহভাগিতায়, রুটি-ভাঙায় ও প্রার্থনায় একান্তভাবে অংশগ্রহণ করল।
43 প্রেরিতশিষ্যদের মাধ্যমে বহু আশ্চর্য ঘটনা ও অলৌকিক নিদর্শন সম্পন্ন হতে দেখে প্রত্যেকে ভক্তিপূর্ণ ভয়ে পূর্ণ হয়ে উঠল।
44 যারা বিশ্বাস করল তারা সকলেই একসঙ্গে থাকত ও একই ভাণ্ডার থেকে তাদের প্রয়োজন মেটাতো।
45 তাদের বিষয়সম্পত্তি ও জিনিসপত্র বিক্রি করে তাদের প্রত্যেকের প্রয়োজন অনুযায়ী তা ভাগ করে দিত।
46 প্রতিদিন তারা একসঙ্গে মন্দির-প্রাঙ্গণে মিলিত হত। তারা নিজেদের ঘরে রুটি ভাঙত এবং আনন্দের সঙ্গে ও হৃদয়ের সরলতায় একসঙ্গে খাওয়াদাওয়া করত।
47 তারা ঈশ্বরের প্রশংসা করত এবং সব মানুষ তাদের শ্রদ্ধা করত। আর যারা পরিত্রাণ লাভ করল, প্রভু দিন-প্রতিদিন তাঁদের সঙ্গে পরিত্রাণপ্রাপ্তদের যুক্ত করে তাঁদের সংখ্যা বৃদ্ধি করলেন।