< প্রেরিত 19 >
1 আপল্লো যখন করিন্থে ছিলেন, পৌল তখন দেশের ভিতরের পথ দিয়ে ইফিষে পৌঁছালেন। সেখানে তিনি কয়েকজন শিষ্যের সন্ধান পেলেন।
2 তিনি তাদের জিজ্ঞাসা করলেন, “তোমরা যখন বিশ্বাস করেছিলে, তখন কি পবিত্র আত্মা লাভ করেছিলে?” তারা উত্তর দিল, “না, এমনকি কোনো পবিত্র আত্মা যে আছেন, সেকথা, আমরা শুনিনি।”
3 তখন পৌল জিজ্ঞাসা করলেন, “তাহলে তোমরা কোন বাপ্তিষ্ম গ্রহণ করেছিলে?” তারা উত্তর দিল, “যোহনের বাপ্তিষ্ম।”
4 পৌল বললেন, “যোহনের বাপ্তিষ্ম ছিল মন পরিবর্তনের বাপ্তিষ্ম। তিনি লোকদের বলেছিলেন, যিনি তাঁর পরে আসছেন, সেই যীশুর উপরে তারা যেন বিশ্বাস করে।”
5 একথা শুনে তারা প্রভু যীশুর নামে বাপ্তিষ্ম গ্রহণ করল।
6 পৌল যখন তাদের উপরে হাত রাখলেন, পবিত্র আত্মা তাদের উপরে নেমে এলেন। তারা ভিন্ন ভিন্ন ভাষায় কথা ও ভাববাণী বলতে লাগল।
7 সেখানে মোট বারোজন পুরুষ ছিল।
8 পরে পৌল সমাজভবনে প্রবেশ করে সেখানে তিন মাস যাবৎ সাহসের সঙ্গে প্রচার করলেন। তিনি যুক্তিতর্কের মাধ্যমে ঈশ্বরের রাজ্যের বিষয়ে তাদের বিশ্বাস করতে অনুপ্রেরণা দিলেন।
9 কিন্তু তাদের মধ্যে কয়েকজন জেদি মনোভাবাপন্ন হল। তারা বিশ্বাস করতে চাইল না এবং সেই পথ সম্পর্কে প্রকাশ্যে নিন্দা করতে লাগল। তাই পৌল তাদের ত্যাগ করে চলে গেলেন। তিনি তাঁর সঙ্গে শিষ্যদের নিয়ে গেলেন এবং তুরান্নের বক্তৃতা দেওয়ার স্থানে প্রতিদিন আলোচনা করতে লাগলেন।
10 এভাবে দুই বছর অতিক্রান্ত হল। ফলে এশিয়া প্রদেশে বসবাসকারী ইহুদি ও গ্রিক সবাই প্রভুর বাক্য শুনতে পেল।
11 ঈশ্বর পৌলের মাধ্যমে অনন্যসাধারণ সব অলৌকিক কাজ সাধন করতেন।
12 এমনকি, তাঁর স্পর্শ করা রুমাল ও পোশাক অসুস্থ ব্যক্তিদের কাছে নিয়ে গেলে তারা সুস্থ হত এবং মন্দ-আত্মা তাদের ছেড়ে যেত।
13 কয়েকজন ইহুদি ওঝা, যারা এদিক-ওদিক ঘোরাঘুরি করে মন্দ-আত্মাদের তাড়ানোর কাজ করত, তারা মন্দ-আত্মাগ্রস্তদের উপরে প্রভু যীশুর নাম প্রয়োগ করতে চেষ্টা করল। তারা বলত, “পৌল যাঁকে প্রচার করেন, সেই যীশুর নামে আমরা তোমাদের বেরিয়ে আসার জন্য আদেশ করছি।”
14 স্কিবা নামে এক ইহুদি প্রধান যাজকের সাত ছেলে এই কাজ করে যাচ্ছিল।
15 তাতে সেই মন্দ-আত্মা তাদের উত্তর দিল, “আমি যীশুকে জানি, পৌলের বিষয়েও জানি, কিন্তু তোমরা কারা?”
16 তখন যে ব্যক্তির মধ্যে মন্দ-আত্মা ছিল, সে তাদের উপরে ঝাঁপিয়ে পড়ে তাদের সবাইকে পর্যুদস্ত করে তুলল। সে তাদের এমন মার দিল যে, তারা পোশাক ফেলে রক্তাক্ত ও নগ্ন দেহে সেই বাড়ি থেকে ছুটে পালিয়ে গেল।
17 ইফিষে বসবাসকারী ইহুদি ও গ্রিকেরা একথা জানতে পেরে সবাই ভয়ে আড়ষ্ট হয়ে পড়ল এবং প্রভু যীশুর নাম মহিমান্বিত হয়ে উঠল।
18 যারা বিশ্বাস করেছিল, তাদের অনেকেই তখন এসে প্রকাশ্যে তাদের সব অপকর্মের কথা স্বীকার করল।
19 যারা জাদুবিদ্যার অনুশীলন করছিল, তাদের মধ্যে অনেকে তাদের পুঁথিপত্র নিয়ে এসে একত্র করে সেগুলি প্রকাশ্যে আগুনে পুড়িয়ে দিল। পুঁথিগুলির মূল্য নির্ধারণ করে তারা দেখল, সেগুলির মোট মূল্য পঞ্চাশ হাজার দ্রাকমা।
20 এইভাবে প্রভুর বাক্য ব্যাপক আকারে বিস্তার লাভ করল এবং পরাক্রমে বৃদ্ধি পেতে থাকল।
21 এই সমস্ত ঘটনা ঘটে যাওয়ার পর পৌল ম্যাসিডোনিয়া ও আখায়া পরিক্রমা করে জেরুশালেম যাবেন বলে স্থির করলেন। তিনি বললেন, “সেখানে উপস্থিত হওয়ার পর আমি অবশ্যই রোম-ও পরিদর্শন করতে যাব।”
22 তিনি তাঁর দুই সাহায্যকারী, তিমথি ও ইরাস্তকে ম্যাসিডোনিয়ায় পাঠিয়ে দিলেন এবং স্বয়ং এশিয়া প্রদেশে আরও কিছুকাল থেকে গেলেন।
23 প্রায় সেই সময়ে, সেই পথের বিষয়ে এক মহা গোলযোগ দেখা দিল।
24 দিমিত্রীয় নামে একজন রুপোর কারিগর, যে আর্তেমিসের মন্দিরের মতো রুপোর ছোটো ছোটো মন্দির নির্মাণ করত ও শিল্পীদের প্রচুর কাজের জোগান দিত,
25 সে তার সহকর্মীদের ও একই ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত অন্যান্য শ্রমিকদের ডেকে একত্র করল ও বলল, “জনগণ, আপনারা জানেন, এই ব্যবসা থেকে আমরা ভালোরকম অর্থ উপার্জন করি।
26 আর আপনারা দেখছেন ও শুনতে পাচ্ছেন, এই পৌল কেমনভাবে লোকদের প্রভাবিত করছে এবং এখানে ইফিষের, বস্তুত সমগ্র এশিয়া প্রদেশের বিপুল সংখ্যক মানুষকে ভুল পথে নিয়ে যাচ্ছে। সে বলে যে, মানুষের হাতে তৈরি দেবতারা আদৌ কোনো দেবতা নয়।
27 এর ফলে এই বিপদের আশঙ্কা হচ্ছে যে, এতে কেবলমাত্র আমাদের ব্যবসার সুনাম নষ্ট হবে তা নয়, মহাদেবী আর্তেমিসের মন্দিরেরও অখ্যাতি হবে এবং যিনি সমগ্র এশিয়া প্রদেশে, এমনকি সারা পৃথিবীতে পূজিত হন, তারও অখ্যাতি হবে এবং তিনি তার মহিমা হারাবেন।”
28 একথা শুনে তারা ক্রোধে উন্মত্ত হয়ে উঠল ও চিৎকার করতে লাগল, “ইফিষীয়দের আর্তেমিস-ই মহাদেবী!”
29 এর পরেই সমস্ত নগরে হট্টগোল ছড়িয়ে পড়ল। জনসাধারণ ম্যাসিডোনিয়া থেকে আগত পৌলের দুই ভ্রমণের সঙ্গী গায়ো ও আরিষ্টার্খকে ধরে একযোগে রঙ্গমঞ্চে নিয়ে গেল।
30 পৌল জনসাধারণের সম্মুখীন হতে চেয়েছিলেন, কিন্তু শিষ্যেরা তাঁকে যেতে দিলেন না।
31 এমনকি, পৌলের বন্ধুস্থানীয় কয়েকজন প্রাদেশিক কর্মকর্তা তাঁর কাছে বার্তা পাঠিয়ে অনুনয় করলেন, রঙ্গমঞ্চে গিয়ে তিনি যেন বিপদের ঝুঁকি না নেন।
32 তখন সভার মধ্যে বিভ্রান্তি দেখা দিল। কিছু লোক এক বিষয়ে, আবার কিছু লোক অন্য বিষয়ে চিৎকার করছিল। এমনকি, অধিকাংশ লোকই জানত না, কেন তারা সেখানে সমবেত হয়েছে।
33 ইহুদিরা আলেকজান্ডারকে সামনে এগিয়ে দিল। জনসাধারণের একাংশ চিৎকার করে তাকে নির্দেশ দিতে লাগল। এতে সে সকলের সামনে আত্মপক্ষ সমর্থনের জন্য হাত নেড়ে নীরব হওয়ার জন্য ইঙ্গিত করল।
34 কিন্তু যখন তারা তাকে ইহুদি বলে জানতে পারল, তারা প্রায় দুঘণ্টা ধরে একস্বরে চিৎকার করে গেল, “ইফিষীয়দের আর্তেমিস-ই মহাদেবী!”
35 নগরের ভারপ্রাপ্ত কর্মচারী সবাইকে শান্ত করে বললেন, “ইফিষের জনগণ, সমস্ত পৃথিবীর মানুষ কি জানে না যে, এই ইফিষ নগরই মহাদেবী আর্তেমিসের মন্দিরের ও তাঁর প্রতিমার রক্ষক, যা আকাশ থেকে পতিত হয়েছিল?
36 সেই কারণে, যেহেতু এই বিষয়টি কেউ অস্বীকার করতে পারে না, তোমাদের শান্ত থাকাই উচিত, হঠকারিতার বশে কিছু করা উচিত নয়।
37 তোমরা এই লোকগুলিকে এখানে নিয়ে এসেছ, এরা তো মন্দির লুট করেনি, আমাদের দেবীরও অবমাননা করেনি।
38 তাহলে, যদি দিমিত্রীয় ও তার সহযোগী শিল্পীদের কোনো অভিযোগ থাকে, আদালতের দরজা খোলা আছে, সেখানে প্রদেশপালেরাও আছেন। তারা সেখানে অভিযোগ দাখিল করতে পারে।
39 এছাড়া, আরও যদি অন্য কোনো বিষয় তোমাদের উত্থাপন করার থাকে, তাহলে বৈধ সভায় অবশ্যই তা নিষ্পত্তি করা হবে।
40 আজকের ঘটনার জন্য দাঙ্গা বাধানোর অভিযোগে আমরা অভিযুক্ত হওয়ার বিপদে পড়তে পারি। সেক্ষেত্রে, এই বিক্ষোভের পক্ষে আমরা কোনও যুক্তি দেখাতে পারব না।”
41 এই কথা বলে তিনি সভা ভেঙে দিলেন।