< প্রেরিত 13 >
1 আন্তিয়খের মণ্ডলীতে কয়েকজন ভাববাদী ও শিক্ষক ছিলেন: বার্ণবা, নিগের নামে আখ্যাত শিমোন, কুরীণ প্রদেশের লুসিয়াস, মনায়েন (ইনি সামন্তরাজ হেরোদের সঙ্গে প্রতিপালিত হয়েছিলেন) ও শৌল।
2 তাঁরা যখন প্রভুর উপাসনা ও উপোস করছিলেন, পবিত্র আত্মা বললেন, “বার্ণবা ও শৌলকে আমি যে কাজের জন্য আহ্বান করেছি, সেই কাজের জন্য আমার উদ্দেশ্যে তাদের পৃথক করে দাও।”
3 এভাবে তাঁরা উপোস ও প্রার্থনা শেষ করার পর, তাঁরা তাঁদের উপরে হাত রাখলেন ও তাঁদের বিদায় দিলেন।
4 এইভাবে তাঁরা দুজন পবিত্র আত্মার দ্বারা প্রেরিত হয়ে সিলুকিয়াতে গেলেন এবং সেখান থেকে জাহাজে সাইপ্রাস গেলেন।
5 তাঁরা সালামিতে পৌঁছে ইহুদি সমাজভবনগুলিতে ঈশ্বরের বাক্য প্রচার করলেন। যোহনও তাঁদের সঙ্গে সাহায্যকারীরূপে ছিলেন।
6 সম্পূর্ণ দ্বীপটির এদিক-ওদিক যাতায়াত করে তাঁরা পাফোতে পৌঁছালেন। সেখানে তাঁরা বর-যীশু নামে একজন ইহুদি জাদুকর ও ভণ্ড ভাববাদীর সাক্ষাৎ পেলেন।
7 সে ছিল প্রদেশপাল সের্গীয় পৌলের একজন পরিচারক। প্রদেশপাল ছিলেন একজন বুদ্ধিমান ব্যক্তি। তিনি বার্ণবা ও শৌলকে ডেকে পাঠালেন, কারণ তিনি ঈশ্বরের বাক্য শুনতে চাইছিলেন।
8 কিন্তু ইলুমা, সেই জাদুকর (কারণ সেই ছিল তার নামের অর্থ), তাদের বিরোধিতা করল এবং প্রদেশপালকে বিশ্বাস থেকে ফেরাতে চাইল।
9 তখন শৌল, যাঁকে পৌল নামেও অভিহিত করা হত, পবিত্র আত্মায় পরিপূর্ণ হয়ে ইলুমার দিকে একদৃষ্টে তাকিয়ে বললেন,
10 “তুমি দিয়াবলের সন্তান এবং সর্বপ্রকার ধার্মিকতার বিপক্ষ! তুমি সর্বপ্রকার ছলনা ও ধূর্ততায় পরিপূর্ণ। প্রভুর প্রকৃত পথকে বিকৃত করতে তুমি কি কখনোই ক্ষান্ত হবে না?
11 এখন প্রভুর হাত তোমার বিপক্ষে রয়েছে। তুমি দৃষ্টিহীন হবে এবং কিছু সময় পর্যন্ত তুমি সূর্যের আলো দেখতে পাবে না।” সঙ্গে সঙ্গে ঘন কুয়াশা ও অন্ধকার তাকে আচ্ছন্ন করল। সে হাতড়ে বেড়াতে লাগল, খুঁজতে লাগল, কেউ যেন তার হাত ধরে নিয়ে যায়।
12 যা ঘটেছে, প্রদেশপাল তা লক্ষ্য করে বিশ্বাস করলেন, কারণ তিনি প্রভুর সম্পর্কিত উপদেশে চমৎকৃত হয়েছিলেন।
13 পাফো থেকে পৌল ও তাঁর সঙ্গীরা জাহাজে করে পাম্ফুলিয়ার পর্গা নগরে গেলেন। সেখানে যোহন তাঁদের ছেড়ে দিয়ে জেরুশালেমে ফিরে গেলেন।
14 পর্গা থেকে তাঁরা গেলেন পিষিদিয়ার আন্তিয়খে। বিশ্রামদিনে তাঁরা সমাজভবনে প্রবেশ করে আসন গ্রহণ করলেন।
15 বিধানশাস্ত্র ও ভাববাদী গ্রন্থ পাঠ করা হলে পর, সমাজভবনের অধ্যক্ষেরা তাঁদের কাছে বলে পাঠালেন, “ভাইরা, জনগণের জন্য আপনাদের কাছে যদি কোনও উৎসাহ দেওয়ার বার্তা থাকে, তাহলে অনুগ্রহ করে বলুন।”
16 পৌল উঠে দাঁড়িয়ে হাত দিয়ে ইঙ্গিত করলেন ও বললেন, “হে ইস্রায়েলবাসী ও ঈশ্বরের উপাসক অইহুদি জনগণ, আমার কথা শোনো।
17 ইস্রায়েল জাতির ঈশ্বর আমাদের পিতৃপুরুষদের মনোনীত করেছিলেন, মিশরে তাদের থাকার সময়ে তিনিই তাদের সমৃদ্ধ করেছিলেন। মহাপরাক্রমের সঙ্গে তিনি সেদেশ থেকে তাদের বের করেও এনেছিলেন।
18 চল্লিশ বছর পর্যন্ত মরুপ্রান্তরে তিনি তাদের আচরণ সহ্য করেছিলেন।
19 কনানে সাতটি জাতিকে উৎখাত করে তিনি অধিকাররূপে তাদের দেশ তাঁর প্রজাদের দান করেছিলেন।
20 এসব সম্পন্ন হতে প্রায় চারশো পঞ্চাশ বছর লেগেছিল। “এরপর, ভাববাদী শমূয়েলের আমল পর্যন্ত ঈশ্বর তাদের জন্য বিচারকর্তৃগণ দিলেন।
21 তারপর প্রজারা একজন রাজা চাইল। তিনি তাদের বিন্যামীন গোষ্ঠীভুক্ত কীশের ছেলে শৌলকে দিলেন। তিনি চল্লিশ বছর রাজত্ব করলেন।
22 শৌলকে পদচ্যুত করে, তিনি দাউদকে তাদের রাজা করলেন। তিনি তাঁর সম্পর্কে সাক্ষ্য দিয়েছিলেন: ‘আমি আমার মনের মতো মানুষ, যিশয়ের ছেলে দাউদকে খুঁজে পেয়েছি। আমি যা চাই, সে আমার জন্য তাই করবে।’
23 “তাঁর প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী, ঈশ্বর তাঁরই বংশধরদের মধ্য থেকে পরিত্রাতা যীশুকে ইস্রায়েলের কাছে উপস্থিত করলেন।
24 যীশুর আগমনের পূর্বে যোহন ইস্রায়েলী প্রজাদের কাছে মন পরিবর্তন ও বাপ্তিষ্মের কথা প্রচার করলেন।
25 যোহন তাঁর কাজ সম্পূর্ণ করার সময় বলেছিলেন, ‘তোমরা কী মনে করো, আমি কে? আমি সেই ব্যক্তি নই। না, কিন্তু তিনি আমার পরে আসছেন, যাঁর চটিজুতোর বাঁধন খোলারও যোগ্যতা আমার নেই।’
26 “ভাইরা, অব্রাহামের সন্তানেরা এবং ঈশ্বরভয়শীল অইহুদি তোমরা, আমাদেরই কাছে পরিত্রাণের এই বাণী পাঠানো হয়েছে।
27 জেরুশালেমের লোকেরা ও তাদের অধ্যক্ষেরা যীশুকে চিনতে পারেনি, তবুও তাঁকে দোষী সাব্যস্ত করে তারা ভাববাদীদের বাণী পূর্ণ করেছে, যা প্রতি বিশ্রামদিনে পড়া হয়।
28 যদিও তাঁকে প্রাণদণ্ড দেওয়ার জন্য তারা কোনো যথাযথ কারণ খুঁজে পায়নি, তবুও তারা পীলাতের কাছে নিবেদন করেছিল যেন তাঁকে হত্যা করা হয়।
29 তাঁর সম্পর্কে লিখিত সব কথা তারা সম্পূর্ণ করলে, তারা তাঁকে ক্রুশ থেকে নামিয়ে একটি কবরে সমাধি দিল।
30 কিন্তু ঈশ্বর তাঁকে মৃতলোক থেকে উত্থাপিত করলেন।
31 যাঁরা তাঁর সঙ্গে গালীল থেকে জেরুশালেমে যাত্রা করেছিলেন, তিনি তাঁদের কাছে দেখা দিয়েছিলেন। তাঁরা এখন জনসমক্ষে তাঁর সাক্ষী হয়েছেন।
32 “আমরা তোমাদের এই সুসমাচার বলি: ঈশ্বর আমাদের পিতৃপুরুষদের যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন,
33 যীশুকে উত্থাপিত করে তিনি তাদের বংশধরদের, অর্থাৎ আমাদের কাছে তা পূর্ণ করেছেন। দ্বিতীয় গীতে যেমন লেখা আছে, “‘তুমি আমার পুত্র, আজ আমি তোমার পিতা হয়েছি।’
34 ঈশ্বর তাঁকে মৃতলোক থেকে উত্থাপিত করেছেন, কবরে পচে যাওয়ার জন্য ছেড়ে দেননি। এই সত্য এসব বচনে ব্যক্ত হয়েছে: “‘আমি তোমাকে দাউদের কাছে প্রতিশ্রুত পবিত্র ও সুনিশ্চিত সব আশীর্বাদ দান করব।’
35 অন্যত্রও এই কথার এভাবে বর্ণনা করা হয়েছে: “‘তুমি তোমার পবিত্রজনকে ক্ষয় দেখতে দেবে না।’
36 “কারণ দাউদ যখন তাঁর প্রজন্মে ঈশ্বরের উদ্দেশ্য পূর্ণ করলেন, তিনি নিদ্রাগত হলেন। তিনি তাঁর পিতৃপুরুষদের সঙ্গে কবরপ্রাপ্ত হলেন ও তাঁর শরীর ক্ষয় পেল।
37 কিন্তু ঈশ্বর যাঁকে মৃতলোক থেকে উত্থাপিত করেছেন, তিনি ক্ষয় দেখেননি।
38 “সেই কারণে, আমার ভাইরা, আমি চাই তোমরা অবগত হও যে যীশুর মাধ্যমে সব পাপের ক্ষমা হয়, যা তোমাদের কাছে ঘোষণা করা হচ্ছে। মোশির বিধান যে সমস্ত বিষয় থেকে তোমাদের নির্দোষ করতে পারেনি,
39 যীশুর মাধ্যমে প্রত্যেকজন, যারা বিশ্বাস করে, তারা সেইসব বিষয় থেকে নির্দোষ গণ্য হয়।
40 সাবধান হও, ভাববাদীরা যা বলে গেছেন, তোমাদের ক্ষেত্রে যেন সেরকম না হয়:
41 “‘ওহে বিদ্রুপকারীর দল, তোমরা বিস্ময়চকিত হয়ে ধ্বংস হও, কারণ আমি তোমাদের দিনে এমন কিছু করব, যা তোমাদের বলা হলেও, তোমরা কখনও তা বিশ্বাস করবে না।’”
42 পৌল ও বার্ণবা সমাজভবন থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সময়, লোকেরা পরবর্তী বিশ্রামদিনে এ প্রসঙ্গে আরও কথা বলার জন্য তাঁদের আমন্ত্রণ জানাল।
43 সভা শেষ হওয়ার পর বহু ইহুদি ও ইহুদি ধর্মে ধর্মান্তরিত ব্যক্তিরা পৌল ও বার্ণবাকে অনুসরণ করল। তাঁরা তাদের সঙ্গে কথা বললেন এবং ঈশ্বরের অনুগ্রহে অবিচল থাকার জন্য তাদের উৎসাহিত করলেন।
44 পরবর্তী বিশ্রামদিনে নগরের প্রায় সমস্ত মানুষ প্রভুর বাক্য শোনার জন্য একত্র হল।
45 ইহুদিরা সেই জনসমাগম দেখে ঈর্ষায় পরিপূর্ণ হল। তারা পৌলের বক্তব্যের বিরুদ্ধে কটূক্তি করতে লাগল।
46 তখন পৌল ও বার্ণবা সাহসের সঙ্গে উত্তর দিলেন, “প্রথমে আপনাদের কাছে আমাদের ঈশ্বরের বাক্য বলতে হয়েছে। আপনারা যেহেতু তা অগ্রাহ্য করছেন ও নিজেদের অনন্ত জীবন লাভের জন্য অযোগ্য বিবেচনা করছেন, আমরা এখন অইহুদিদের কাছেই যাচ্ছি। (aiōnios )
47 কারণ প্রভু আমাদের এই আদেশই দিয়েছেন: “‘আমি তোমাকে অইহুদিদের জন্য দীপ্তিস্বরূপ করেছি, যেন পৃথিবীর প্রান্ত পর্যন্ত তুমি পরিত্রাণ নিয়ে যেতে পারো।’”
48 অইহুদিরা একথা শুনে আনন্দিত হল। তারা প্রভুর বাক্যের সমাদর করল। যারাই অনন্ত জীবনের জন্য নিরূপিত হয়েছিল, তারা সকলে বিশ্বাস করল। (aiōnios )
49 প্রভুর বাক্য সেই সমস্ত অঞ্চল জুড়ে ছড়িয়ে পড়ল।
50 কিন্তু ইহুদিরা সম্ভ্রান্ত ঘরের ঈশ্বরভয়শীল মহিলাদের ও নগরের নেতৃস্থানীয় লোকদের উত্তেজিত করে তুলল। তারা পৌল ও বার্ণবার প্রতি নির্যাতন করা শুরু করল এবং তাদের এলাকা থেকে তাঁদের বের করে দিল।
51 তাঁরা তখন তাদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদস্বরূপ তাঁদের পায়ের ধুলো ঝেড়ে ইকনিয়তে চলে গেলেন।
52 আর শিষ্যরা আনন্দে ও পবিত্র আত্মায় পূর্ণ হয়ে উঠল।