< শমূয়েলের দ্বিতীয় বই 3 >
1 শৌল গোষ্ঠী ও দাউদ গোষ্ঠীর মধ্যে চলা যুদ্ধ দীর্ঘদিন স্থায়ী হল। দাউদ দিন দিন শক্তিশালী হয়ে উঠছিলেন, অথচ শৌল গোষ্ঠী দিন দিন দুর্বল হয়ে পড়ছিল।
2 হিব্রোণে দাউদের কয়েকটি ছেলের জন্ম হল: তাঁর বড়ো ছেলের নাম অম্নোন, যিনি যিষ্রিয়েলীয় অহীনোয়মের ছেলে;
3 তাঁর দ্বিতীয় ছেলে কিলাব, যিনি কর্মিলীয় নাবলের বিধবা অবীগলের সন্তান; তৃতীয় ছেলে অবশালোম, যিনি গশূরের রাজা তলময়ের মেয়ে মাখার সন্তান;
4 চতুর্থ ছেলে আদোনিয়, যিনি হগীতের সন্তান; পঞ্চম ছেলে শফটিয়, যিনি অবীটলের সন্তান;
5 ষষ্ঠ ছেলে যিত্রিয়ম, যিনি দাউদের স্ত্রী ইগ্লার সন্তান। দাউদের এইসব ছেলের জন্ম হল হিব্রোণে।
6 শৌল গোষ্ঠী ও দাউদ গোষ্ঠীর মধ্যে যখন যুদ্ধ চলছিল তখন অবনের শৌল গোষ্ঠীতে নিজের পদ শক্তপোক্ত করে যাচ্ছিলেন।
7 ইত্যবসরে রিস্পা বলে শৌলের এক উপপত্নী ছিল। সে ছিল অয়ার মেয়ে। ঈশ্বোশত অবনেরকে বললেন, “আপনি কেন আমার বাবার উপপত্নীর সঙ্গে বিছানায় শুয়েছেন?”
8 ঈশ্বোশতের কথা শুনে অবনের খুব রেগে গেলেন। তাই তিনি উত্তর দিলেন, “যিহূদার পক্ষে আমি কি কুকুরের মুণ্ডু? আজও পর্যন্ত আমি তোমার বাবা শৌলের গোষ্ঠীর ও তাঁর পরিবারের ও বন্ধুবান্ধবদের প্রতি আনুগত্য দেখিয়ে এসেছি। তোমাকে আমি দাউদের হাতেও তুলে দিইনি। অথচ এখন কি না তুমি এই মহিলাটির সঙ্গে নাম জড়িয়ে আমাকে অপবাদ দিচ্ছ!
9 ঈশ্বর যেন অবনেরকে দণ্ড দেন, যেন কঠোর দণ্ড দেন। সদাপ্রভু শপথ করে দাউদের কাছে যে প্রতিজ্ঞা করলেন, আমি যদি তাঁর হয়ে তা না করি
10 ও শৌল গোষ্ঠীর হাত থেকে রাজ্য কেড়ে নিয়ে দান থেকে বের-শেবা পর্যন্ত ইস্রায়েল ও যিহূদার উপরে দাউদের সিংহাসন স্থির না করি।”
11 ঈশ্বোশত অবনেরকে আর একটিও কথা বলার সাহস পাননি, কারণ তিনি তাঁকে ভয় পেয়েছিলেন।
12 পরে অবনের তাঁর হয়ে এই কথা বলার জন্য দাউদের কাছে দূত পাঠালেন, “এই দেশটি কার? আমার সঙ্গে একটি চুক্তি করুন, সম্পূর্ণ ইস্রায়েলকে আপনার পক্ষে আনার জন্য আমি আপনাকে সাহায্য করব।”
13 “ভালো,” দাউদ বললেন, “আমি আপনার সঙ্গে চুক্তি করব। কিন্তু আমি আপনার কাছে একটি দাবি জানাচ্ছি: আমার সঙ্গে দেখা করার সময় যদি শৌলের মেয়ে মীখলকে নিয়ে আসতে না পারেন, তবে আমার সামনে আর আসবেন না।”
14 পরে দাউদ শৌলের ছেলে ঈশ্বোশতের কাছে দূত পাঠিয়ে দাবি জানিয়েছিলেন, “আমার স্ত্রী সেই মীখলকে ফিরিয়ে দাও, যাকে আমি একশো জন ফিলিস্তিনীর লিঙ্গত্বকরূপী মেয়েপণ দিয়ে বিয়ে করেছি।”
15 তখন ঈশ্বোশত আদেশ দিয়ে মীখলকে তাঁর স্বামী, লয়িশের ছেলে পল্টিয়েলের কাছ থেকে আনিয়েছিলেন।
16 তাঁর স্বামী অবশ্য পিছন পিছন বহুরীম পর্যন্ত কাঁদতে কাঁদতে তাঁর সঙ্গে গেলেন। তখন অবনের তাঁকে বললেন, “তুমি ঘরে ফিরে যাও!” তাই তিনি ফিরে গেলেন।
17 অবনের ইস্রায়েলের প্রাচীনদের সঙ্গে আলোচনা করে তাদের বললেন, “বেশ কিছুদিন থেকেই আপনারা দাউদকে আপনাদের রাজা বানাতে চাইছেন।
18 এখনই তা করে ফেলুন! কারণ সদাপ্রভু দাউদের কাছে প্রতিজ্ঞা করেছেন, ‘আমার দাস দাউদকে দিয়েই ফিলিস্তিনীদের ও আমার প্রজা ইস্রায়েলের সব শত্রুর হাত থেকে আমি তাদের উদ্ধার করব।’”
19 অবনের আবার আলাদা করে বিন্যামিনীয়দের সঙ্গেও কথা বললেন। পরে তিনি হিব্রোণে দাউদের কাছে সবকিছু বলতে গেলেন, যা ইস্রায়েল ও বিন্যামীনের কূলজাত সব লোকজন করতে চেয়েছিল।
20 অবনের যখন কুড়ি জন লোক সঙ্গে নিয়ে হিব্রোণে দাউদের কাছে এলেন, দাউদ তখন তাঁর ও তাঁর লোকজনের জন্য ভোজসভার আয়োজন করলেন।
21 অবনের দাউদকে বললেন, “আমাকে এখনই যেতে দিন। আমি আমার প্রভু মহারাজের জন্য সমস্ত ইস্রায়েলকে একত্রিত করব, যেন তারা আপনার সঙ্গে এক নিয়মবদ্ধ হয়, ও আপনি যেন আপনার অন্তরের বাসনানুসারে সবার উপর রাজত্ব করতে পারেন।” তখন দাউদ অবনেরকে বিদায় দিলেন, ও তিনি শান্তিতে ফিরে চলে গেলেন।
22 ঠিক তখনই দাউদের লোকজন ও যোয়াব কোথাও থেকে অতর্কিত আক্রমণ সেরে ফিরছিলেন ও সঙ্গে করে প্রচুর লুন্ঠিত জিনিসপত্রও নিয়ে আসছিলেন। কিন্তু অবনের তখন আর হিব্রোণে দাউদের সঙ্গে ছিলেন না, কারণ দাউদ তাঁকে বিদায় দিলেন, ও তিনি শান্তিতে চলে গেলেন।
23 যোয়াব যখন তাঁর সঙ্গে থাকা সব সৈন্যসামন্ত নিয়ে সেখানে পৌঁছেছিলেন, তিনি খবর পেয়েছিলেন যে নেরের ছেলে অবনের রাজার কাছে এসেছিলেন এবং রাজা তাঁকে বিদায় দিয়েছেন ও তিনিও শান্তিতে চলে গিয়েছেন।
24 তখন যোয়াব রাজার কাছে গিয়ে বললেন, “এ আপনি কী করেছেন? দেখুন, অবনের আপনার কাছে এলেন। আপনি কেন তাঁকে যেতে দিলেন? এখন তো তিনি চলেই গিয়েছেন!
25 নেরের ছেলে অবনেরকে তো আপনি জানেনই; তিনি আপনাকে ঠকাতে ও আপনার সব গতিবিধি খুঁটিয়ে লক্ষ্য করতে তথা আপনি কী কী করছেন তার খোঁজ নেওয়ার জন্যই তিনি এলেন।”
26 যোয়াব পরে দাউদের কাছ থেকে চলে গিয়ে অবনেরের কাছে কয়েকজন দূত পাঠালেন, ও তারা সিরার জলাধারের কাছ থেকে তাঁকে ফিরিয়ে এনেছিল। কিন্তু দাউদ তা জানতে পারেননি।
27 অবনের যখন হিব্রোণে ফিরে এলেন, যোয়াব তখন তাঁর সঙ্গে গোপনে কথা বলার অছিলায় তাঁকে একান্তে ভিতরের একটি ঘরে নিয়ে গেলেন। সেখানে যোয়াব তাঁর ভাই অসাহেলের রক্তের প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য তাঁর পেটে ছোরা ঢুকিয়ে দিলেন, ও তিনি মরে গেলেন।
28 পরে, দাউদ যখন সেকথা শুনেছিলেন, তিনি বললেন, “নেরের ছেলে অবনেরের রক্তপাতের বিষয়ে আমি ও আমার রাজ্য চিরকাল সদাপ্রভুর সামনে নির্দোষ থাকব।
29 তাঁর রক্তপাতের দোষ যোয়াব ও তাঁর সম্পূর্ণ পরিবারের উপরেই বর্তুক! যোয়াবের পরিবারে যেন কখনও এমন কোনও লোকের অভাব না হয় যাদের শরীরে কাঁচা ঘা বা কুষ্ঠরোগ আছে অথবা যারা খঞ্জের লাঠিতে ভর দিয়ে চলে বা যারা তরোয়ালের আঘাতে মারা পড়ে বা খাবারের অভাবগ্রস্ত হয়।”
30 (যোয়াব ও তাঁর ভাই অবীশয় অবনেরকে হত্যা করলেন, কারণ তিনি তাদের ভাই অসাহেলকে গিবিয়োনের যুদ্ধক্ষেত্রে হত্যা করলেন।)
31 পরে দাউদ যোয়াব ও তাঁর সঙ্গে থাকা সব লোকজনকে বললেন, “নিজেদের কাপড়গুলি ছিঁড়ে ফেলো ও চটের কাপড় পরে অবনেরের আগে আগে শোকপ্রকাশ করতে করতে হাঁটতে থাকো।” রাজা দাউদ স্বয়ং শবাধারের পিছু পিছু হেঁটেছিলেন।
32 তারা হিব্রোণে অবনেরকে কবর দিলেন, এবং রাজামশাই অবনেরের সমাধিস্তম্ভের কাছে দাঁড়িয়ে জোরে জোরে কেঁদেছিলেন। সব লোকও কেঁদেছিল।
33 রাজামশাই অবনেরের জন্য এই বিলাপগাথা গেয়েছিলেন: “অবনেরকে কি বোকার মতো মরতেই হত?
34 তোমার হাত তো বাঁধা ছিল না, তোমার পা তো শিকলে বাঁধা ছিল না। তুমি এমন পড়লে যেভাবে কেউ দুষ্টলোকের সামনে পড়ে।” সব লোকজন আবার তাঁর জন্য কাঁদতে শুরু করল।
35 পরে তারা সবাই এসে দিন থাকতে থাকতেই দাউদকে কিছু খেয়ে নেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছিল; কিন্তু এই বলে দাউদ এক শপথ নিয়েছিলেন, “যদি আমি সূর্য অস্ত যাওয়ার আগে রুটি বা অন্য কিছুর স্বাদ নিই, তবে ঈশ্বর যেন আমায় দণ্ড দেন, কঠোর দণ্ড দেন!”
36 সব লোকজন তা লক্ষ্য করে সন্তুষ্ট হল; সত্যিই, রাজামশাই যা যা করলেন তা তাদের সন্তুষ্ট করল।
37 অতএব সেদিন সেখানকার সব লোকজন ও সমস্ত ইস্রায়েল জানতে পেরেছিল যে নেরের ছেলে অবনেরের খুন হয়ে যাওয়ার পিছনে রাজার কোনও ভূমিকা ছিল না।
38 তখন রাজা তাঁর লোকজনকে বললেন, “তোমরা কি বুঝতে পারছ না যে আজ ইস্রায়েলে এক সেনাপতি ও মহান এক ব্যক্তি পতিত হয়েছেন?
39 আর আজ, আমি যদিও অভিষিক্ত রাজা, তবুও আমি দুর্বল, সরূয়ার এই ছেলেরা আমার পক্ষে বড়োই শক্তিশালী। সদাপ্রভু পাপিষ্ঠকে তার পাপকাজের আধারেই প্রতিফল দিন!”