< শমূয়েলের দ্বিতীয় বই 11 >

1 বসন্তকালে, রাজারা সাধারাণত যখন যুদ্ধে যেতেন, দাউদ তখন রাজার লোকজন ও সমস্ত ইস্রায়েলী সৈন্যদলের সঙ্গে যোয়াবকেই সেখানে পাঠালেন। তারা অম্মোনীয়দের ধ্বংস করে রব্বা অবরোধ করল। কিন্তু দাউদ জেরুশালেমেই থেকে গেলেন।
পরে বছর ফিরে এলে রাজাদের যুদ্ধে যাবার দিনের দায়ূদ যোয়াবকে, তাঁর সঙ্গে নিজের দাসদেরকে ও সমস্ত ইস্রায়েলকে পাঠালেন; তারা গিয়ে অম্মোনীয়দের হত্যা করে রব্বা নগর ঘিরে ফেলল; কিন্তু দায়ূদ যিরূশালেমে থাকলেন৷
2 একদিন বিকেলবেলায় দাউদ তাঁর বিছানা ছেড়ে উঠে রাজপ্রাসাদের ছাদে পায়চারি করছিলেন। ছাদ থেকে তিনি দেখতে পেয়েছিলেন, একজন মহিলা স্নান করছেন। মহিলাটি অপরূপ সুন্দরী ছিলেন,
একদিনের বিকালে দায়ূদ বিছানা থেকে উঠে রাজবাড়ির ছাদে বেড়াচ্ছিলেন, আর ছাদ থেকে দেখতে পেলেন যে, একটি মহিলা স্নান করছে; মহিলাটি দেখতে খুব সুন্দরী ছিল৷
3 তাই দাউদ কাউকে পাঠিয়ে তাঁর বিষয়ে খোঁজখবর নিয়েছিলেন। লোকটি বলল, “ইনি ইলিয়ামের মেয়ে ও হিত্তীয় ঊরিয়ের স্ত্রী বৎশেবা।”
দায়ূদ তার বিষয়ে জিজ্ঞাসা করতে লোক পাঠালেন৷ একজন বলল, “এ কি ইলীয়ামের মেয়ে, হিত্তীয় ঊরিয়ের স্ত্রী বৎশেবা নয়?”
4 তখন দাউদ তাঁকে কাছে পাওয়ার জন্য তাঁর কাছে কয়েকজন দূত পাঠালেন। তিনি তাঁর কাছে এলেন, ও দাউদ তাঁর সঙ্গে শুয়েছিলেন। (ইত্যবসরে মহিলাটি মাসিক-ধর্মের অশুচিতা থেকে নিজেকে শুচিশুদ্ধ করছিলেন) পরে তিনি ঘরে ফিরে গেলেন।
তখন দায়ূদ লোক পাঠিয়ে তাকে আনলেন এবং সে তাঁর কাছে আসলে দায়ূদ তার সঙ্গে শয়ন করলেন; সে স্ত্রী ঋতুস্নান করে শুচি হয়েছিল৷ পরে সে নিজের ঘরে ফিরে গেলে,
5 মহিলাটি গর্ভবতী হয়ে পড়ায় এই বলে দাউদকে খবর পাঠালেন, “দেখুন, আমি অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়েছি।”
পরে সেই স্ত্রী গর্ভবতী হল; আর লোক পাঠিয়ে দায়ূদকে এই খবর দিল, “আমার গর্ভ হয়েছে৷”
6 তখন দাউদ যোয়াবকে একথা বলে পাঠালেন: “হিত্তীয় ঊরিয়কে আমার কাছে পাঠিয়ে দাও।” যোয়াব তখন তাঁকে দাউদের কাছে পাঠিয়ে দিলেন।
তখন দায়ূদ যোয়াবের কাছে লোক পাঠিয়ে এই আদেশ দিলেন, “হিত্তীয় ঊরিয়কে আমার কাছে পাঠিয়ে দাও৷” তাতে যোয়াব দায়ূদের কাছে ঊরিয়কে পাঠালেন৷
7 ঊরিয় যখন দাউদের কাছে এলেন, দাউদ তাঁর কাছে জানতে চেয়েছিলেন যোয়াব কেমন আছেন, সৈন্যরা সব কেমন আছে ও যুদ্ধ কেমন চলছে।
ঊরিয় তাঁর কাছে উপস্থিত হলে দায়ূদ তাকে যোয়াবের খবর, লোকদের খবর ও যুদ্ধের খবর জিজ্ঞাসা করলেন৷
8 পরে দাউদ ঊরিয়কে বললেন, “তোমার বাসায় গিয়ে পা-টা ধুয়ে নাও।” তাই ঊরিয় রাজপ্রাসাদ ত্যাগ করে চলে গেলেন, ও তাঁর পিছু পিছু রাজার কাছ থেকে কিছু উপহারও পাঠানো হল।
পরে দায়ূদ ঊরিয়কে বললেন, “তুমি নিজের বাড়িতে গিয়ে পা ধোও৷” তখন ঊরিয় রাজবাড়ি থেকে বেরিয়ে গেল, আর রাজার কাছ থেকে তার পিছনে পিছনে উপহার গেল৷
9 কিন্তু ঊরিয় তাঁর মনিবের সব দাসের সঙ্গে মিলে রাজপ্রাসাদের সিংহদুয়ারেই ঘুমিয়েছিলেন ও নিজের বাসায় আর যাননি।
কিন্তু ঊরিয় নিজের প্রভুর দাসদের সঙ্গে রাজবাড়ির ফটকে ঘুমিয়ে পড়ল, ঘরে গেল না৷
10 দাউদকে বলা হল, “ঊরিয় ঘরে যাননি।” তাই তিনি ঊরিয়কে জিজ্ঞাসা করলেন, “এইমাত্র কি তুমি যুদ্ধক্ষেত্র থেকে ফিরে আসোনি? তবে কেন তুমি ঘরে গেলে না?”
১০পরে এই কথা দায়ূদকে বলা হল যে, “ঊরিয় ঘরে যায় নি৷” দায়ূদ ঊরিয়কে বললেন, “তুমি কি পথ ঘুরে আসো নি? তবে কেন বাড়িতে গেলে না?”
11 ঊরিয় দাউদকে বললেন, “সেই নিয়ম-সিন্দুক এবং ইস্রায়েল ও যিহূদা তাঁবুতে আছে, এবং আমার সেনাপতি যোয়াব ও আমার প্রভুর লোকজন খোলা মাঠে শিবির করে আছেন। তবে আমিই বা কেমন করে বাসায় গিয়ে ভোজনপান করব ও আমার স্ত্রীকে সোহাগ করব? আপনার প্রাণের দিব্যি, আমি এ কাজ করতে পারব না!”
১১ঊরিয় দায়ূদকে বলল, “সিন্দুক, ইস্রায়েল ও যিহূদা কুটীরে বাস করছে এবং আমার প্রভু যোয়াব ও আমার প্রভুর দাসরা খোলা মাঠে ছাউনী করে আছেন; তবে আমি কি খাওয়া দাওয়া করতে ও স্ত্রীর সঙ্গে শুতে নিজের ঘরে যেতে পারি? আপনার জীবনের ও আপনার জীবিত প্রাণের দিব্যি, আমি এমন কাজ করব না৷”
12 তখন দাউদ তাঁকে বললেন, “আরও একদিন এখানে থাকো, আগামীকাল আমি তোমাকে ফেরত পাঠাব।” অতএব ঊরিয় সেদিন ও পরদিন জেরুশালেমে থেকে গেলেন।
১২তখন দায়ূদ ঊরিয়কে বললেন, “আজও তুমি এখানে থাক, কাল তোমাকে বিদায় করব৷” তাতে ঊরিয় সে দিন ও পরের দিন যিরূশালেমে থাকল৷
13 দাউদ তাঁকে নিমন্ত্রণ করায় তিনি তাঁর সঙ্গে ভোজনপান করলেন ও দাউদ তাঁকে মাতাল করে ছেড়েছিলেন। কিন্তু সন্ধ্যাবেলায় ঊরিয় তাঁর মনিবের দাসদের মাঝে গিয়ে মেঝেতে পাতা মাদুরে শুয়ে পড়েছিলেন; তিনি ঘরে যাননি।
১৩আর দায়ূদ তাকে নিমন্ত্রণ করলে সে তাঁর সামনে খাওয়া দাওয়া করল; আর তিনি তাকে মাতাল করলেন; কিন্তু সে সন্ধ্যাবেলা নিজের প্রভুর দাসদের সঙ্গে নিজের বিছানায় ঘুমানোর জন্য বাইরে গেল, ঘরে গেল না৷
14 সকালবেলায় দাউদ যোয়াবকে একটি চিঠি লিখে, সেটি ঊরিয়ের হাতে দিয়ে পাঠালেন।
১৪সকালে দায়ূদ যোয়াবের কাছে এক চিঠি লিখে ঊরিয়ের হাতে দিয়ে পাঠালেন৷
15 সেই চিঠিতে তিনি লিখেছিলেন, “ঊরিয়কে তুমি একদম প্রথম সারিতে রেখো, যেখানে যুদ্ধের পরিস্থিতি খুব ভয়ংকর। পরে তার পাশ থেকে সরে যেয়ো, যেন সে যন্ত্রণা পেয়ে মারা যায়।”
১৫চিঠিতে তিনি লিখেছিলেন, “তোমরা এই ঊরিয়কে তুমুল যুদ্ধের সামনে নিযুক্ত কর, পরে এর পিছন থেকে সরে যাও, যেন এ আহত হয়ে মারা যায়৷”
16 অতএব নগর অবরোধ করার সময় যোয়াব ঊরিয়কে এমন এক স্থানে দাঁড় করিয়ে রেখেছিলেন, যেখানে তিনি জানতেন সবচেয়ে শক্তিশালী প্রতিরোধকারীরা মজুত আছে।
১৬পরে কোন জায়গায় শক্তিশালী লোক আছে, তা জানাতে যোয়াব নগর অবরোধের দিন সেই জায়গায় ঊরিয়কে নিযুক্ত করলেন৷
17 নগরের লোকজন বেরিয়ে এসে যখন যোয়াবের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করল, তখন দাউদের সৈন্যদলের মধ্যেও কেউ কেউ মরেছিল; এছাড়া, হিত্তীয় ঊরিয়ও মারা গেল।
১৭পরে নগরের লোকেরা বেরিয়ে গিয়ে যোয়াবের সঙ্গে যুদ্ধ করলে কয়েক জন লোক, দায়ূদের দাসদের মধ্যে কয়েক জন, পড়ে গেল, বিশেষত হিত্তীয় ঊরিয়ও মারা গেল৷
18 যোয়াব যুদ্ধের এক পূর্ণ বিবরণ দাউদের কাছে পাঠালেন।
১৮পরে যোয়াব বার্তা বাহক লোক পাঠিয়ে যুদ্ধের সমস্ত ঘটনা দায়ূদকে জানালেন,
19 তিনি দূতকে নির্দেশ দিয়ে রেখেছিলেন: “রাজামশাইকে যুদ্ধের এই বিবরণ দেওয়ার পর,
১৯আর দূত আদেশ করলেন, “তুমি রাজার সামনে যুদ্ধের সমস্ত ঘটনা শেষ করলে,
20 রাজা হয়তো রাগে জ্বলে উঠতে পারেন, ও তিনি হয়তো তোমাকে জিজ্ঞাসা করতে পারেন, ‘যুদ্ধ করার জন্য তোমরা নগরের এত কাছে গেলে কেন? তোমরা কি জানতে না যে তারা প্রাচীরের উপর থেকে তির ছুঁড়বে?
২০যদি রাজা রেগে যায়, আর যদি তিনি বলেন, তোমরা যুদ্ধ করতে নগরের এত কাছে কেন গিয়েছিলে? তারা দেওয়ালের উপর থেকে তির মারবে এটা কি জানতে না?
21 কে যিরূব্বেশতের ছেলে অবীমেলককে হত্যা করেছিল? প্রাচীরের উপর থেকেই কি একজন স্ত্রীলোক জাঁতার উপরের পাটটি এমনভাবে তার উপর ফেলেনি, যে সে তেবেষেই মারা গিয়েছিল? তবে কেন তোমরা প্রাচীরের এত কাছে গেলে?’ তিনি যদি তোমাকে একথা জিজ্ঞাসা করলেন, তবে তাঁকে তুমি বোলো, ‘এছাড়া, আপনার দাস হিত্তীয় ঊরিয়ও মারা গিয়েছে।’”
২১যিরূব্বেশতের ছেলে অবীমেলককে কে আঘাত করেছিল? তেবেষে একটা মহিলা যাঁতার একটি উপরের পাট প্রাচীর থেকে তার উপরে ফেলে দিলে সে কি তাতেই মারা যায় নি? তোমরা কেন দেওয়ালের কাছে গিয়েছিলে? তা হলে তুমি বলবে, আপনার দাস হিত্তীয় ঊরিয় মারা গেছে৷”
22 সেই দূত বেরিয়ে পড়েছিল, এবং দাউদের কাছে পৌঁছে গিয়ে সে তাঁকে সেসব কথাই বলল, যা যোয়াব তাকে বলতে বললেন।
২২পরে সেই দূত সেখান থেকে গিয়ে যোয়াবের প্রেরিত সমস্ত কথা দায়ূদকে জানাল৷
23 দূতটি দাউদকে বলল, “লোকেরা আমাদের কাবু করে ফেলেছিল ও খোলা মাঠে আমাদের বিরুদ্ধে নেমে পড়েছিল, কিন্তু আমরা তাদের নগরের সিংহদুয়ার পর্যন্ত তাড়িয়ে দিয়েছিলাম।
২৩দূত দায়ূদকে বলল, “সেই লোকেরা আমাদের বিপক্ষে প্রবল হয়ে মাঠে আমাদের কাছে বাইরে এসেছিল; তখন আমাদের ফটকের দরজা পর্যন্ত তাদের পিছু পিছু তাড়া করেছিলাম৷
24 পরে তিরন্দাজরা প্রাচীরের উপর থেকে আপনার দাসদের দিকে তির নিক্ষেপ করল, ও রাজার লোকজনের মধ্যে কয়েকজন মারা গিয়েছে। এছাড়া, আপনার দাস হিত্তীয় ঊরিয়ও মারা গিয়েছে।”
২৪তখন ধনুকধারীরা প্রাচীর থেকে আপনার দাসদের উপরে তির ছুড়ল; তাই মহারাজের কিছু দাস মারা পড়েছে; আর আপনার দাস হিত্তীয় ঊরিয়ও মারা গেছে৷”
25 দাউদ দূতকে বললেন, “যোয়াবকে একথা বোলো: ‘এতে যেন তোমার মন খারাপ না হয়; তরোয়াল যেমন একজনকে গ্রাস করে, তেমনি তা অন্যজনকেও গ্রাস করে। নগরটির বিরুদ্ধে আক্রমণ জোরালো করো ও সেটি ধ্বংস করে দাও।’ যোয়াবকে উৎসাহিত করার জন্য একথা বোলো।”
২৫তখন দায়ূদ দূতকে বললেন, “যোয়াবকে এই কথা বলো, ‘তুমি এতে অসন্তুষ্ট হয়ো না, কারণ তরোয়াল যেমন এক জনকে তেমনি আরও এক জনকেও গ্রাস করে; তুমি নগরের বিরুদ্ধে আরও পরাক্রমের সঙ্গে যুদ্ধ কর, নগর উচ্ছেদ কর,’ এই ভাবে তাকে আশ্বাস দেবে৷”
26 ঊরিয়ের স্ত্রী যখন শুনেছিলেন যে তাঁর স্বামী মারা গিয়েছেন, তখন তিনি তাঁর জন্য শোকপ্রকাশ করলেন।
২৬আর ঊরিয়ের স্ত্রী নিজের স্বামী ঊরিয়ের মৃত্যুর খবর পেয়ে স্বামীর জন্য শোক করল৷
27 শোকপ্রকাশকাল সম্পূর্ণ হওয়ার পর দাউদ তাঁকে নিজের বাসায় নিয়ে এলেন, ও তিনি দাউদের স্ত্রী হলেন ও তাঁর ছেলের জন্ম দিলেন। কিন্তু দাউদের এই কাজটি সদাপ্রভুকে অসন্তুষ্ট করল।
২৭পরে শোক অতীত হলে, দায়ূদ লোক পাঠিয়ে তাকে নিজের বাড়িতে আনলেন, তাতে সে তাঁর স্ত্রী হল ও তাঁর জন্য ছেলের জন্ম দিল৷ কিন্তু দায়ূদের করা এই কাজ সদাপ্রভু খারাপ চোখে দেখলেন৷

< শমূয়েলের দ্বিতীয় বই 11 >