< দ্বিতীয় রাজাবলি 7 >
1 ইলীশায় উত্তর দিলেন, “সদাপ্রভুর বাক্য শুনুন। সদাপ্রভু একথাই বলেন: আগামীকাল মোটামুটি এসময়, শমরিয়ার সিংহদুয়ারে এক পসুরি মিহি ময়দা এক শেকলে এবং দুই পসুরি যব এক শেকলে বিক্রি হবে।”
১ইলীশায় বললেন, “তোমরা সদাপ্রভুর বাক্য শোনো। তিনি এই কথা বলেন, ‘আগামী কাল এই দিনের শমরিয়ার ফটকে শেকলে এক পসুরী সূজী ও শেকলে দুই পসুরী যব বিক্রি হবে’।”
2 যে কর্মকর্তার হাতে ভর দিয়ে রাজা দাঁড়িয়েছিলেন, তিনি ঈশ্বরের লোককে বললেন, “দেখুন, সদাপ্রভু আকাশের রুদ্ধদ্বার যদি খুলেও দেন, তাও কি এরকম হতে পারে?” “আপনি নিজের চোখেই তা দেখতে পাবেন,” ইলীশায় উত্তর দিলেন, “কিন্তু আপনি তার কিছুই খেতে পারবেন না!”
২তখন রাজা যে সেনাপতির ওপর নির্ভর করেছিলেন, তিনি উত্তরে ঈশ্বরের লোককে বললেন, “দেখ, সদাপ্রভু যদি আকাশের জানালাও খুলে দেন, তবুও কি এটা হতে পারে?” ইলীশায় উত্তর দিলেন, “তুমি নিজের চোখেই তা দেখতে পাবে, কিন্তু তার কিছুই তুমি খেতে পারবে না।”
3 ইত্যবসরে নগরের প্রবেশদ্বারে কুষ্ঠরোগগ্রস্ত চারজন লোক দাঁড়িয়েছিল। তারা নিজেদের মধ্যে বলাবলি করল, “এখানে দাঁড়িয়ে থেকে মরতে যাব কেন?
৩তখন নগরের ফটকে ঢোকার পথে চারজন কুষ্ঠরোগী ছিল। তারা একে অন্যকে বলল, “আমরা এখানে বসে থেকে কেন মরব?
4 যদি বলি, ‘নগরে যাব,’ সেখানে তো দুর্ভিক্ষ চলছে, আর সেখানে গেলে তো আমাদের মরতে হবে। আর যদি এখানে দাঁড়িয়ে থাকি, তাও তো মরব। তাই অরামীয়দের সৈন্যশিবিরে গিয়ে আত্মসমর্পণ করাই ভালো। তারা যদি আমাদের ছেড়ে দেয়, তবে আমরা বাঁচব; তারা যদি আমাদের হত্যা করে, তবে মরব।”
৪যদি বলি, নগরে যাব, তবে নগরের মধ্যে দূর্ভিক্ষ আছে, সেখানে মরব; আর যদি এখানে বসে থাকি তবুও মরব। এখন এস, আমরা অরামীয়দের শিবিরে যাই, যদি তারা আমাদের বাঁচায় তো বাঁচব, মেরে ফেলে তো মরব।”
5 গোধূলিবেলায় তারা উঠে অরামীয়দের সৈন্যশিবিরে চলে গেল। যখন তারা শিবিরের ধারে পৌঁছেছিল, সেখানে কেউ ছিল না,
৫তখন তারা অরামীয়দের শিবিরে যাবার জন্য সন্ধ্যার দিন উঠল; যখন তারা অরামীয়দের শিবিরের শেষ প্রান্তে গিয়ে উপস্থিত হল, তখন সেখানে কেউ ছিল না।
6 কারণ সদাপ্রভু অরামীয়দের রথ, ঘোড়া ও বিশাল এক সৈন্যদলের শব্দ শুনিয়েছিলেন, তাই তারা নিজেদের মধ্যে বলাবলি করল, “দেখো, ইস্রায়েলের রাজা আমাদের আক্রমণ করার জন্য হিত্তীয় ও মিশরীয় রাজাদের ভাড়া করেছেন!”
৬কারণ প্রভু অরামীয়দের সৈন্যদলকে রথ, ঘোড়া, ও মস্ত বড় সৈন্যের আওয়াজ শুনিয়েছিলেন; তাতে তারা একে অন্যকে বলেছিল, “দেখ, ইস্রায়েলের রাজা হিত্তীয় ও মিশরীয় রাজাদের টাকা দিয়েছে, যেন তারা আমাদের আক্রমণ করে।”
7 অতএব তারা গোধূলি বেলাতেই উঠে পালিয়ে গেল এবং তাদের তাঁবু, ঘোড়া ও গাধাগুলি পরিত্যক্ত অবস্থায় ছেড়ে গেল। শিবির যে অবস্থায় ছিল, সেই অবস্থায় ফেলে রেখে, প্রাণ হাতে করে তারা দৌড় লাগাল।
৭তাই তারা সন্ধ্যাবেলা উঠে পালিয়েছিল; তাদের শিবির, ঘোড়া, গাধা সব যেমন ছিল, তেমনি ফেলে রেখে নিজের প্রাণ বাঁচানোর জন্য পালিয়ে গিয়েছিল।
8 কুষ্ঠরোগগ্রস্ত লোকগুলি শিবিরের ধারে পৌঁছে একটি তাঁবুতে ঢুকে ভোজনপান করল। পরে তারা রুপো, সোনা ও পোশাক-আশাক নিয়ে সেখান থেকে চলে গেল ও সেগুলি লুকিয়ে রেখেছিল। তারা ফিরে এসে অন্য একটি তাঁবুতে ঢুকে সেখান থেকেও কিছু জিনিসপত্র নিয়ে সেগুলি লুকিয়ে রেখেছিল।
৮পরে ঐ কুষ্ঠীরোগীরা শিবিরের শেষ প্রান্তে এসে একটি তাঁবুর ভিতরে গিয়ে খাওয়া দাওয়া করল এবং সেখান থেকে রূপা, সোনা ও পোশাক নিয়ে গিয়ে লুকিয়ে রাখল; পরে আবার এসে আর একটি তাঁবুতে মধ্যে ঢুকে সেখান থেকে জিনিসপত্র নিয়ে গিয়ে লুকিয়ে রাখল।
9 পরে তারা নিজেদের মধ্যে বলাবলি করল, “আমরা যা করছি, তা ভালো নয়। আজ সুখবরের একদিন আর আমরা তা নিজেদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ করে রেখেছি। দিনের আলো ফোটা পর্যন্ত যদি আমরা অপেক্ষা করি, তবে শাস্তি আমাদের উপর নেমে আসবেই। তাই এক্ষুনি রাজপ্রাসাদে গিয়ে খবর দেওয়া যাক।”
৯পরে তারা একে অন্যকে বলল, “আমাদের এই কাজটি করা ভাল নয়; আজ সুখবরের দিন, কিন্তু আমরা চুপ করে আছি; যদি সকাল পর্যন্ত দেরি করি, তবে শাস্তি আমাদের উপর নেমে আসবে। এখন এস, আমরা গিয়ে রাজবাড়ীতে খবরটা দিই।”
10 তাই তারা গিয়ে নগরের দারোয়ানদের খবর দিয়ে বলল, “আমরা অরামীয়দের সৈন্যশিবিরে গেলাম এবং সেখানে কেউ ছিল না—একজন লোকেরও শব্দ পাওয়া যায়নি—শুধু দড়ি দিয়ে বাঁধা ঘোড়া ও গাধার শব্দ শুনেছিলাম, এবং তাঁবুগুলি যে অবস্থায় ছিল, সেই অবস্থাতেই তারা ছেড়ে গিয়েছে।”
১০পরে তারা গিয়ে নগরের ফটকের পাহারাদারদের ডেকে তাদেরকে খবর দিল যে, “আমরা অরামীয়দের শিবিরে গিয়েছিলাম; আর দেখ, সেখানে কেউ নেই, মানুষের শব্দও নেই, কেবল ঘোড়াগুলি আর গাধাগুলি বাঁধা, আর তাঁবুগুলি যেমন ছিল, তেমনি আছে।”
11 দারোয়ানরা জোরে চিৎকার করে তাঁকে সেই খবরটি জানিয়েছিল, এবং প্রাসাদের ভিতরে খবর পৌঁছে গেল।
১১তাতে পাহারাদারদের ডাকা হলে তারা ভিতরে রাজবাড়ীতে খবর দিল।
12 রাজামশাই রাতেই উঠে তাঁর কর্মকর্তাদের বললেন, “অরামীয়রা আমাদের প্রতি কী করেছে, তা আমি তোমাদের বলছি। তারা জানে যে আমরা অনাহারে আছি; তাই এই ভেবে তারা শিবির ছেড়ে গ্রামাঞ্চলে গিয়ে লুকিয়েছে, ‘তারা অবশ্যই বেরিয়ে আসবে, এবং পরে আমরা তাদের জ্যান্ত ধরব ও নগরের মধ্যে ঢুকে পড়ব।’”
১২পরে রাজা রাতের বেলা উঠে তাঁর দাসেদের বললেন, “অরামীয়েরা আমাদের প্রতি যা করেছে, তা আমি তোমাদের বলি; তারা জানে, আমরা যে না খেয়ে আছি, তাই তারা মাঠে গিয়ে লুকিয়ে থাকার জন্য শিবির থেকে বাইরে গেছে, আর বলেছে, ‘ওরা যখন নগর থেকে বাইরে আসবে, তখন আমরা তাদের জীবিত ধরব ও নগরের মধ্যে ঢুকব’।”
13 তাঁর কর্মকর্তাদের মধ্যে একজন উত্তর দিলেন, “নগরে যে কটি ঘোড়া অবশিষ্ট আছে, সেগুলির মধ্যে পাঁচটি ঘোড়া কয়েকজন লোকের হাতে তুলে দেওয়া যাক। তাদের দুরাবস্থা এখানকার বাদবাকি সব ইস্রায়েলীর মতোই হবে—হ্যাঁ, তারা শুধু এইসব ইস্রায়েলীর মতোই হবে, যাদের সর্বনাশ হয়েই গিয়েছে। তাই কী হয়েছে তা জানার জন্য তাদের পাঠিয়ে দেওয়া যাক।”
১৩তখন তাঁর দাসেদের মধ্যে একজন দাস উত্তর দিয়ে বলল, “তবে অনুরোধ করি, কয়েকজন লোক শহরে যে ঘোড়াগুলি অবশিষ্ট আছে তার মধ্য থেকে পাঁচটা ঘোড়া নিয়ে দেখুক যে, তারা এবং নগরের বাকি সব ইস্রায়েলের অবশিষ্ট লোকের সমান, অনেকে তো এখন মৃত, কাজেই আমরা তাদের একবার পাঠিয়ে দেখি।”
14 অতএব তারা ঘোড়া সমেত দুটি রথ বেছে নিয়েছিলেন, এবং রাজামশাই অরামীয় সৈন্যদলের খোঁজে তাদের পাঠিয়ে দিলেন। তিনি সারথিদের আদেশ দিলেন, “যাও, গিয়ে খুঁজে বের করো, কী হয়েছে।”
১৪পরে তারা ঘোড়া সুদ্ধ দুটি রথ বেছে নিল; রাজা অরামীয় সৈন্যদের খোঁজে তাদের পাঠিয়ে বললেন, “যাও, গিয়ে দেখ।”
15 জর্ডন নদী পর্যন্ত তারা অরামীয়দের অনুসরণ করল, এবং তারা খুঁজে পেয়েছিল যে অরামীয়রা তাড়াহুড়ো করে পালাতে গিয়ে যেসব পোশাক-আশাক ও যন্ত্রপাতি ফেলে দিয়েছিল, সেগুলি পথের সর্বত্র ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়ে আছে। অতএব দূতেরা ফিরে এসে রাজামশাইকে খবর দিয়েছিল।
১৫তাতে তারা যর্দ্দন পর্যন্ত তাদের পিছু পিছু গেল, আর দেখল অরামীয়েরা তাড়াতাড়িতে যা যা ফেলে গেছে, সেই সব পোশাক ও পাত্রে সমস্ত রাস্তা ভর্তি। তখন দূতেরা ফিরে এসে রাজাকে সব খবর দিল।
16 তখন লোকেরা বাইরে গিয়ে অরামীয়দের সৈন্যশিবিরে লুঠতরাজ চালিয়েছিল। তাই সদাপ্রভুর বলা কথানুসারে এক পসুরি মিহি ময়দা এক শেকলে, এবং দুই পসুরি যব এক শেকলে বিক্রি হল।
১৬আর লোকেরা বাইরে গিয়ে অরামীয়দের শিবির লুট করল; তাতে সদাপ্রভুর বাক্য অনুসারে শেকলে এক পসুরী সূজী এবং শেকলে দুই পসুরী যব বিক্রি হল।
17 ইত্যবসরে রাজামশাই যে কর্মকর্তার হাতে ভর দিয়ে দাঁড়াতেন, তাঁকেই সিংহদুয়ার সামলানোর দায়িত্ব দিলেন, এবং লোকজন সিংহদুয়ারেই সেই কর্মকর্তাকে পায়ের তলায় পিষে দিয়েছিল, ও তিনি মারা গেলেন, ঠিক যেমনটি রাজামশাই যখন ঈশ্বরের লোকের বাড়িতে গেলেন, তখন ঈশ্বরের লোক তাঁকে আগাম বলে দিলেন।
১৭আর রাজা যে সেনাপতির ওপর নির্ভর করেছিলেন, তাঁকে তিনি নগরের ফটকের অধ্যক্ষ করে দিলেন; কিন্তু লোকেরা ফটকের কাছে তাদের পায়ের তলায় চাপা দিয়ে তাকে মেরে ফেলল; ঈশ্বরের লোকের কাছে রাজা যখন গিয়েছিলেন, তখন ঈশ্বরের লোক যা বলেছিলেন, তাই সফল হল।
18 রাজামশাইকে বলা ঈশ্বরের লোকের কথানুসারে ঘটনাটি ঘটেছিল: “আগামীকাল মোটামুটি এই সময়ে শমরিয়ার সিংহদুয়ারে এক পসুরি মিহি ময়দা এক শেকলে এবং দুই পসুরি যব এক শেকলে বিক্রি হবে।”
১৮ঈশ্বরের লোক রাজাকে বলেছিলেন, “আগামী কাল এই দিনের শমরিয়ার ফটকে শেকলে দুই পসুরী যব এবং শেকলে এক পসুরী সূজী বিক্রি হবে।”
19 সেই কর্মকর্তা ঈশ্বরের লোককে বললেন, “দেখুন, সদাপ্রভু যদি আকাশের রুদ্ধদ্বার খুলেও দেন, তাও কি এরকম হতে পারে?” ঈশ্বরের লোক উত্তর দিলেন, “আপনি নিজের চোখেই তা দেখবেন, কিন্তু আপনি তার কিছুই খেতে পারবেন না!”
১৯আর ঐ সেনাপতি উত্তরে ঈশ্বরের লোককে বলেছিলেন, “দেখ, সদাপ্রভু যদি আকাশের জানালাও খুলে দেন তবুও কি এটা হতে পারে?” ইলীশায় বলেছিলেন, “তুমি নিজের চোখেই তা দেখতে পাবে, কিন্তু তার কিছুই তুমি খেতে পারবে না।”
20 আর তাঁর দশা ঠিক সেরকমই হল, কারণ লোকজন তাঁকে সিংহদুয়ারেই পায়ের তলায় পিষে দিয়েছিল, এবং তিনি মারা গেলেন।
২০তাঁর, সেই দশা ঘটল, কারণ ফটকে লোকদের পায়ের তলায় চাপা পড়ার ফলে তিনি মারা গেলেন৷