< দ্বিতীয় রাজাবলি 3 >
1 যিহূদার রাজা যিহোশাফটের রাজত্বের অষ্টাদশ বছরে আহাবের ছেলে যোরাম শমরিয়ায় ইস্রায়েলের রাজা হলেন, এবং তিনি বারো বছর রাজত্ব করলেন।
১যিহূদার রাজা যিহোশাফটের রাজত্বের আঠারো বছরে আহাবের ছেলে যিহোরাম শমরিয়ায় ইস্রায়েলের উপরে রাজত্ব করতে শুরু করেন এবং বারো বছর রাজত্ব করেন।
2 সদাপ্রভুর দৃষ্টিতে তিনিও যা মন্দ, তাই করলেন, তবে তাঁর বাবা ও মায়ের মতো করেননি। তাঁর বাবার তৈরি করা বায়ালের পুণ্য পাথরটিকে তিনি ফেলে দিলেন।
২সদাপ্রভুর চোখে যা মন্দ, তিনি তাই করতেন; তবে তাঁর বাবা মায়ের মত ছিলেন না; কারণ তাঁর বাবার তৈরী বাল দেবতার মূর্ত্তি তিনি দূর করে দিলেন।
3 তা সত্ত্বেও নবাটের ছেলে যারবিয়াম ইস্রায়েলকে দিয়ে যেসব পাপ করিয়েছিলেন, তিনি সেগুলির প্রতি আসক্ত হয়েই ছিলেন; তিনি সেগুলি ছেড়ে ফিরে আসেননি।
৩কিন্তু নবাটের ছেলে যারবিয়াম ইস্রায়েলকে দিয়ে যে সব পাপ করিয়েছিলেন, তাঁর সেই সব পাপে তিনি মেতে থাকলেন, সেই সব থেকে ফিরলেন না।
4 ইত্যবসরে মোয়াবের রাজা মেশা মেষের বংশবৃদ্ধি করে যাচ্ছিলেন, এবং কর-বাবদ ইস্রায়েলের রাজাকে তিনি এক লক্ষ মেষশাবক ও এক লক্ষ মদ্দা মেষের লোম দিতেন।
৪মোয়াবের রাজা মেশার অনেক ভেড়া ছিল; তিনি ইস্রায়েলের রাজাকে কর হিসাবে এক লক্ষ ভেড়ার বাচ্চা ও এক লক্ষ ভেড়ার লোম দিতেন।
5 কিন্তু আহাব মারা যাওয়ার পর, মোয়াবের রাজা ইস্রায়েলের রাজার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে বসেছিলেন।
৫কিন্তু আহাবের মৃত্যুর পর মোয়াবের রাজা ইস্রায়েলের রাজার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করলেন।
6 অতএব সেই সময় রাজা যোরাম শমরিয়া থেকে বের হয়ে যুদ্ধের জন্য সমস্ত ইস্রায়েলকে একত্রিত করলেন।
৬তখন রাজা যিহোরাম শমরিয়া থেকে বের হয়ে সমস্ত ইস্রায়েলকে জড়ো করলেন।
7 যিহূদার রাজা যিহোশাফটের কাছেও তিনি এই খবর পাঠালেন: “মোয়াবের রাজা আমার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেছে। আপনি কি মোয়াবের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য আমার সাথে যাবেন?” “আমি আপনার সাথে যাব,” তিনি উত্তর দিলেন। “আমি—আপনি, আমার লোকজন—আপনার লোকজন, আমার ঘোড়া—আপনার ঘোড়া, সবই তো এক।”
৭পরে তিনি যিহূদার রাজা যিহোশাফটের কাছে দূত পাঠিয়ে বললেন, “মোয়াবের রাজা আমার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেছে, আপনি কি আমার সঙ্গে মোয়াবের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবেন?” তিনি বললেন, “করবো, আমি ও আপনি, আমার লোক ও আপনার লোক, আমার ঘোড়া ও আপনার ঘোড়া, সবই এক।”
8 “কোনও পথ ধরে আমরা আক্রমণ করব?” যোরাম জিজ্ঞাসা করলেন। “ইদোমের মরুভূমির মধ্যে দিয়ে,” যিহোশাফট উত্তর দিলেন।
৮তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, “আমরা কোন্ পথ দিয়ে যাব?” যিহোরাম বললেন, “ইদোমের মরুপ্রান্তের পথ দিয়ে।”
9 অতএব ইস্রায়েলের রাজা যিহূদার রাজা ও ইদোমের রাজাকে সাথে নিয়ে বেরিয়ে পড়েছিলেন। সাত দিন ঘুরপথে কুচকাওয়াজ করার পর, সৈন্যদের কাছে, নিজেদের জন্য বা তাদের সাথে থাকা পশুদের জন্য আর জল ছিল না।
৯পরে যিহূদার রাজা ও ইদোমের রাজার সঙ্গে ইস্রায়েলের রাজা বের হলেন; তাঁরা সাত দিনের র পথ ঘুরে গেলেন; তখন তাঁদের সৈন্যদলের ও তাদের সঙ্গে আসা পশুদের জন্য জল পাওয়া গেল না।
10 “হায় রে!” ইস্রায়েলের রাজা হঠাৎ জোরে চেঁচিয়ে উঠেছিলেন। “সদাপ্রভু মোয়াবের হাতে আমাদের সঁপে দেওয়ার জন্যই কি আমাদের—এই তিনজন রাজাকে ডেকে এনেছেন?”
১০ইস্রায়েলের রাজা বললেন, “হায়, হায়! সদাপ্রভু মোয়াবের হাতে তুলে দেবার জন্যই কি এই তিন রাজাকে একসঙ্গে ডেকেছেন?”
11 কিন্তু যিহোশাফট জিজ্ঞাসা করলেন, “এখানে কি সদাপ্রভুর কোনও ভাববাদী নেই, যাঁর মাধ্যমে আমরা সদাপ্রভুর কাছে একটু খোঁজখবর নিতে পারি?” ইস্রায়েলের রাজার একজন কর্মকর্তা উত্তর দিলেন, “শাফটের ছেলে ইলীশায় এখানে আছেন। তিনি এলিয়র হাতে জল ঢালার কাজ করতেন।”
১১কিন্তু যিহোশাফট বললেন, “এখানে কি সদাপ্রভুর কোনো ভাববাদী নেই যে, তাঁর মাধ্যমে আমরা সদাপ্রভুর খোঁজ করতে পারি?” ইস্রায়েলের রাজার একজন দাস উত্তরে বলল, “শাফটের ছেলে ইলীশায় যে এলিয়ের হাতের উপর জল ঢালতেন, তিনি এখানে আছেন।”
12 যিহোশাফট বললেন, “সদাপ্রভুর বাক্য তাঁর কাছে আছে।” অতএব ইস্রায়েলের রাজা ও যিহোশাফট এবং ইদোমের রাজা তাঁর কাছে গেলেন।
১২যিহোশাফট বললেন, “সদাপ্রভুর বাক্য তাঁর কাছে আছে।” পরে ইস্রায়েলের রাজা, ইদোমের রাজা ও যিহোশাফট তাঁর কাছে নেমে গেলেন।
13 ইলীশায় ইস্রায়েলের রাজাকে বললেন, “আপনি কেন আমাকে এই ব্যাপারে জড়াতে চাইছেন? আপনার বাবার ও আপনার মায়ের ভাববাদীদের কাছে যান।” “না,” ইস্রায়েলের রাজা উত্তর দিলেন, “কারণ সদাপ্রভুই আমাদের—এই তিনজন রাজাকে একসঙ্গে মোয়াবের হাতে সঁপে দেওয়ার জন্য ডেকে এনেছেন।”
১৩তখন ইলীশায় ইস্রায়েলের রাজাকে বললেন, “আপনার সঙ্গে আমার কিসের সম্পর্ক? আপনি আপনার বাবা অথবা মায়ের ভাববাদীদের কাছে যান।” ইস্রায়েলের রাজা বললেন, “তা নয়, কারণ মোয়াবের হাতে তুলে দেবার জন্য সদাপ্রভু এই তিন রাজাকে একসঙ্গে ডেকেছেন।”
14 ইলীশায় বললেন, “আমি যাঁর সেবা করি, সেই সর্বশক্তিমান সদাপ্রভুর দিব্যি, আমি যদি যিহূদার রাজা যিহোশাফটের উপস্থিতিকে মর্যাদা না দিতাম, তবে আমি আপনার কথায় মনোযোগই দিতাম না।
১৪ইলীশায় বললেন, “আমি যাঁর সামনে দাঁড়িয়ে আছি, সেই বাহিনীগনের জীবন্ত সদাপ্রভুর দিব্যি যদি, যিহূদার রাজা যিহোশাফটের মুখের দিকে না চাইতাম, তবে আমি আপনার দিকে চেয়েও দেখতাম না, খেয়ালও করতাম না।
15 তবে এখন আমার কাছে বীণা বাজায়, এমন একজন লোক নিয়ে আসুন।” সেই লোকটি যখন বীণা বাজাচ্ছিল, তখন সদাপ্রভুর হাত ইলীশায়ের উপর নেমে এসেছিল
১৫যাই হোক, এখন বীণা বাজায় এমন একজন লোককে আমার কাছে নিয়ে আসুন।” পরে লোকটি যখন বীণা বাজাচ্ছিল তখন সদাপ্রভুর হাত ইলীশায়ের উপর আসল।
16 এবং তিনি বলে উঠেছিলেন, “সদাপ্রভু একথাই বলেন: আমি এই উপত্যকা জলভরা পুকুরে পরিণত করব।
১৬আর তিনি বললেন, “সদাপ্রভু এই কথা বলেন, তোমরা এই উপত্যকায় অনেক খাদ তৈরী কর।
17 কারণ সদাপ্রভু একথাই বলেন: তোমরা বাতাস বা বৃষ্টি, কিছুই দেখতে পাবে না, তবু এই উপত্যকা জলে পরিপূর্ণ হয়ে যাবে, আর তোমরা, তোমাদের গবাদি পশুরা ও তোমাদের অন্যান্য পশুরাও জলপান করবে।
১৭কারণ সদাপ্রভু এই কথা বলেন, তোমরা বাতাস কিংবা বৃষ্টি দেখতে না পেলেও এই উপত্যকা জলে ভরে যাবে; তাতে তোমরা, তোমাদের গৃহপালিতেরা ও অন্যান্য সব পশুও জল খাবে।
18 সদাপ্রভুর দৃষ্টিতে এ তো তুচ্ছ এক ব্যাপার; তিনি তোমাদের হাতে মোয়াবকেও সঁপে দেবেন।
১৮আর সদাপ্রভুর চোখে এটা খুব ছোট বিষয়, তিনি মোয়াবকেও তোমাদের হাতে তুলে দেবেন।
19 তোমরা প্রত্যেকটি বড়ো বড়ো সুরক্ষিত নগর ও প্রত্যেকটি মুখ্য নগর উৎপাটিত করবে। তোমরা প্রত্যেকটি ভালো ভালো গাছ কেটে ফেলবে, জলের উৎসগুলি বুজিয়ে ফেলবে, ও প্রত্যেকটি ভালো ভালো ক্ষেতজমিতে পাথর ফেলে সেগুলি নষ্ট করে দেবে।”
১৯তখন তোমরা দেওয়াল ঘেরা নগর এবং প্রত্যেকটি ভালো নগরে আঘাত করবে, আর প্রত্যেকটি ভাল গাছ কেটে ফেলবে ও জলের সমস্ত উনুই বুজিয়ে দেবে এবং সব ভাল ক্ষেত পাথর দিয়ে নষ্ট করে দেবে।”
20 পরদিন সকালে, বলিদান উৎসর্গ করার সময় নাগাদ, দেখা গেল—ইদোমের দিক থেকে জল বয়ে আসছে! আর জমি জলে পরিপূর্ণ হয়ে গেল।
২০পরে সকালবেলায় নৈবেদ্য উৎসর্গের দিন ইদোমের পথ দিয়ে জল বয়ে এসে দেশটা ভরে গেল।
21 ইত্যবসরে মোয়াবীয়রা সবাই শুনেছিল যে রাজারা তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে এসেছেন; তাই যুবক হোক কি বৃদ্ধ, যে কেউ অস্ত্রশস্ত্র বহন করতে পারত, সবাইকে ডেকে দেশের সীমানায় মোতায়েন করে দেওয়া হল।
২১সমস্ত মোয়াবীয়েরা শুনতে পেল যে, সেই রাজারা তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে এসেছেন, তখন যারা যুদ্ধসজ্জা পরতে পারত, তারা সবাই এবং তার থেকে বেশি বয়সের সবাই জড়ো হয়ে দেশের সীমানায় দাঁড়িয়ে থাকলো।
22 তারা যখন সকালে ঘুম থেকে উঠেছিল, সূর্য তখন জলের উপর চকচক করছিল। মোয়াবীয়দের কাছে পথের ওপারে, জল রক্তের মতো লাল দেখাচ্ছিল।
২২পরে তারা খুব সকালে ঘুম থেকে উঠল, তখন সূর্য্য জলের উপর চক্মক্ করছিল, তাতে মোয়াবীয়রা তাদের সামনের জলকে লাল রক্তের মত দেখল।
23 “এ যে রক্ত!” তারা বলে উঠেছিল। “সেই রাজারা নিশ্চয় নিজেদের মধ্যে যুদ্ধ করে একে অপরকে মেরে ফেলেছেন। হে মোয়াব, এখন তবে লুটপাট চালাও!”
২৩তখন তারা বলল, “এ যে রক্ত! সেই রাজারা নিশ্চয়ই ধ্বংস হয়েছে, আর লোকেরা নিজেদের মধ্যে মারামারি করে মারা গেছে; কাজেই হে মোয়াব, এখন লুট করতে চল।”
24 কিন্তু মোয়াবীয়রা যখন ইস্রায়েলের সৈন্যশিবিরে এসেছিল, ইস্রায়েলীরা উঠে এসেছিল ও যতক্ষণ না মোয়াবীয়রা পালিয়েছিল, তাদের বিরুদ্ধে তারা যুদ্ধ চালিয়ে গেল। ইস্রায়েলীরা দেশে সশস্ত্র আক্রমণ চালিয়ে মোয়াবীয়দের খতম করে দিয়েছিল।
২৪পরে তারা ইস্রায়েলের শিবিরের কাছে গেল তখন ইস্রায়েলীয়েরা বের হয়ে মোয়াবীয়দের আক্রমণ করল, তাতে তারা তাদের সামনে থেকে পালিয়ে গেল এবং তারা মোয়াবীয়দের মারতে মারতে এগিয়ে গিয়ে তাদের দেশে ঢুকে পড়ল।
25 তারা নগরগুলি ধ্বংস করে দিয়েছিল, এবং প্রত্যেকটি লোক সেখানে যত ভালো ভালো ক্ষেতজমি ছিল, তার প্রত্যেকটিতে পাথর ফেলে সেগুলি ঢেকে দিয়েছিল। তারা প্রত্যেকটি জলের উৎস বুজিয়ে দিয়েছিল ও প্রত্যেকটি ভালো ভালো গাছ কেটে দিয়েছিল। একমাত্র কীর-হরাসতে, সেখানকার পাথরগুলি যথাস্থানে ছেড়ে দেওয়া হল, কিন্তু গুলতিধারী কয়েকজন লোক নগরটি ঘিরে ধরে সেখানে আক্রমণ চালিয়েছিল।
২৫তারা নগরগুলি ধ্বংস করল ও প্রত্যেকে পাথর ফেলে সমস্ত ভাল ক্ষেতগুলি ভর্তি করল এবং জলের সমস্ত উনুইগুলি বুজিয়ে দিল ও ভাল ভাল গাছপালা সব কেটে ফেলল, কেবল কীর্-হরাসতের সেখানকার পাথরগুলি বাকি রাখল, কিন্তু ফিঙ্গা হাতে সৈন্যেরা চারিদিকে ঘেরাও করে আঘাত করল।
26 মোয়াবের রাজা যখন দেখেছিলেন যে যুদ্ধের গতিপ্রকৃতি তাঁর বিরুদ্ধে চলে গিয়েছে, তখন তিনি সাতশো তরোয়ালধারী সৈন্য সাথে নিয়ে শত্রুপক্ষের ব্যূহভেদ করে ইদোমের রাজার দিকে এগিয়ে যেতে চেয়েছিলেন, কিন্তু তারা ব্যর্থ হল।
২৬মোয়াবের রাজা যখন দেখলেন যে, তিনি যুদ্ধে হেরে যাচ্ছেন, তখন সৈন্যদলের মধ্য দিয়ে ইদোমের রাজার কাছে যাবার জন্য তাঁর সঙ্গে সাতশো তলোয়ারধারীকে নিলেন, কিন্তু তারা পারল না।
27 তখন যিনি রাজারূপে তাঁর স্থলাভিষিক্ত হতে যাচ্ছিলেন, তিনি তাঁর সেই বড়ো ছেলেকে নিয়ে তাঁকে নগরের প্রাচীরের উপর এক বলিরূপে উৎসর্গ করে দিলেন। ইস্রায়েলের বিরুদ্ধে প্রচণ্ড রাগে সবাই ফুঁসছিল; তাই তারা পিছিয়ে এসে নিজেদের দেশে ফিরে গেল।
২৭পরে যে তাঁর জায়গায় রাজা হত, তাঁর সেই বড় ছেলেকে নিয়ে তিনি প্রাচীরের উপরে হোমবলি হিসাবে উৎসর্গ করলেন। আর ইস্রায়েলের উপর ভয়ঙ্কর রাগ হল; পরে তারা তাঁর কাছ থেকে চলে গিয়ে নিজেদের দেশে ফিরে গেল।