< দ্বিতীয় রাজাবলি 2 >
1 সদাপ্রভু যখন ঘূর্ণিঝড়ের মধ্যে দিয়ে এলিয়কে এবার স্বর্গে প্রায় তুলে নেবেন, এমন সময় এলিয় ও ইলীশায় গিল্গল থেকে যাত্রা শুরু করলেন।
১পরে যখন সদাপ্রভু ঘুর্ণিঝড়ে এলিয়কে স্বর্গে তুলে নিতে চাইলেন তখন এলিয় ও ইলীশায় গিল্গল থেকে বের হলেন।
2 এলিয় ইলীশায়কে বললেন, “তুমি এখানে থাকো; সদাপ্রভু আমাকে বেথেলে পাঠিয়েছেন।” কিন্তু ইলীশায় বললেন, “জীবন্ত সদাপ্রভুর দিব্যি এবং আপনারও প্রাণের দিব্যি, আমি আপনাকে ছাড়ব না।” অতএব তারা বেথেলের দিকে নেমে গেলেন।
২আর এলিয় ইলীশায়কে বললেন, “অনুরোধ করি, তুমি এখানে থাক; কারণ সদাপ্রভু আমাকে বৈথেল পর্যন্ত পাঠালেন।” ইলীশায় বললেন, “যতদিন সদাপ্রভু আছেন ও আপনি আছেন, আমি আপনাকে ছাড়ব না।” কাজেই তাঁরা বৈথেলে নেমে গেলেন।
3 বেথেলে ভাববাদী সম্প্রদায়ের লোকেরা ইলীশায়ের কাছে এসে জিজ্ঞাসা করলেন, “আপনি কি জানেন যে সদাপ্রভু আপনার মনিবকে আজ আপনার কাছ থেকে তুলে নেবেন?” “হ্যাঁ, আমি তা জানি,” ইলীশায় উত্তর দিলেন, “তাই চুপ করে থাকুন।”
৩তখন বৈথেলের ভাববাদীদের সন্তানেরা ইলীশায়ের কাছে গিয়ে বলল, “আপনি কি জানেন যে, সদাপ্রভু আপনার প্রভুকে আজ আপনার কাছ থেকে নিয়ে যাবেন?” উত্তরে ইলীশায় বললেন, “হ্যাঁ, আমি জানি। তোমরা চুপ করো।”
4 তখন এলিয় তাঁকে বললেন, “ইলীশায়, তুমি এখানেই থাকো; সদাপ্রভু আমাকে যিরীহোতে পাঠিয়েছেন।” তিনি উত্তর দিলেন, “জীবন্ত সদাপ্রভুর দিব্যি ও আপনারও প্রাণের দিব্যি, আমি আপনাকে ছাড়ব না।” অতএব তারা যিরীহোতে চলে গেলেন।
৪এরপর এলিয় তাঁকে বললেন, “ইলীশায়, অনুরোধ করি, তুমি এখানে থাক; কারণ সদাপ্রভু আমাকে যিরীহোতে পাঠালেন।” ইলীশায় বললেন, “যতদিন সদাপ্রভু আছেন ও আপনি আছেন, আমি আপনাকে ছাড়ব না।” সুতরাং তাঁরা যিরীহোতে গেলেন।
5 যিরীহোতেও ভাববাদী সম্প্রদায়ের লোকেরা ইলীশায়ের কাছে গিয়ে তাঁকে জিজ্ঞাসা করলেন, “আপনি কি জানেন যে সদাপ্রভু আপনার মনিবকে আজ আপনার কাছ থেকে তুলে নেবেন?” “হ্যাঁ, আমি তা জানি,” তিনি উত্তর দিলেন, “তাই চুপ করে থাকুন।”
৫তখন যিরীহোর ভাববাদীদের সন্তানেরা ইলীশায়ের কাছে গিয়ে বললেন, “আপনি কি জানেন যে, সদাপ্রভু আপনার প্রভুকে আজ আপনার কাছ থেকে নিয়ে যাবেন?” উত্তরে ইলীশায় বললেন, “হ্যাঁ, আমি জানি। তোমরা চুপ করো।”
6 তখন এলিয় তাঁকে বললেন, “তুমি এখানে থাকো; সদাপ্রভু আমাকে জর্ডনে পাঠিয়েছেন।” তিনি উত্তর দিলেন, “জীবন্ত সদাপ্রভুর দিব্যি ও আপনারও প্রাণের দিব্যি, আমি আপনাকে ছাড়ব না।” অতএব তারা দুজন হাঁটতেই থাকলেন।
৬এরপর এলিয় তাঁকে বললেন, “অনুরোধ করি, তুমি এখানে থাক; কারণ সদাপ্রভু আমাকে যর্দ্দন নদীর পারে পাঠালেন।” উত্তরে তিনি বললেন, “যতদিন সদাপ্রভু আছেন ও আপনি আছেন, আমি আপনাকে ছাড়ব না।” সুতরাং তাঁরা দুজন চলতে লাগলেন।
7 ভাববাদী সম্প্রদায়ের মধ্যে থেকে পঞ্চাশ জন লোক একটু দূরে গিয়ে, এলিয় ও ইলীশায় জর্ডনের পাড়ে যেখানে দাঁড়িয়েছিলেন, সেদিকে মুখ করে দাঁড়িয়ে পড়েছিলেন।
৭তখন পঞ্চাশজন ভাববাদীদের সন্তানেরা এসে তাঁদের সামনে দাঁড়ালো, আর যর্দ্দন নদীর ধারে ঐ দুজন দাঁড়ালেন।
8 এলিয় তাঁর ঢিলা আলখাল্লাটি খুলে, গোল করে গুটিয়ে নিয়ে সেটি দিয়ে জলে আঘাত করলেন। জল ডাইনে ও বাঁয়ে দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে গেল, এবং তারা দুজন শুকনো জমির উপর দিয়ে নদী পার হয়ে গেলেন।
৮পরে এলিয় তাঁর গায়ের চাদরটা গুটিয়ে নিয়ে তা দিয়ে জলের উপর আঘাত করলেন, তাতে জল দুদিকে ভাগ হয়ে গেল আর তাঁরা দুজনে শুকনো মাটির উপর দিয়ে পার হয়ে গেলেন।
9 নদী পার হওয়ার পর এলিয় ইলীশায়কে বললেন, “আমায় বলো, তোমার কাছ থেকে আমাকে তুলে নেওয়ার আগে আমি তোমার জন্য কী করতে পারি?” “আমি যেন আপনার আত্মার দ্বিগুণ অংশ পাই,” ইলীশায় উত্তর দিলেন।
৯পার হয়ে এসে এলিয় ইলীশায়কে বললেন, “আমাকে বল, তোমার কাছ থেকে আমাকে তুলে নেবার আগে আমি তোমার জন্য কি করব?” উত্তরে ইলীশায় বললেন, “অনুরোধ করি, আপনার আত্মার দ্বিগুন শক্তি যেন আমি পাই।”
10 “তুমি দুঃসাধ্য জিনিস চেয়ে বসলে,” এলিয় বললেন, “তবুও যদি তোমার কাছ থেকে আমাকে তুলে নেওয়ার সময় তুমি আমাকে দেখতে পাও, তবে তুমি সেটি পাবে—তা না হলে নয়।”
১০তিনি বললেন, “তুমি একটি কঠিন জিনিস চেয়েছ; তোমার কাছ থেকে আমাকে নিয়ে যাবার দিন যদি তুমি আমাকে দেখতে পাও তবে তুমি তা পাবে; দেখতে না পেলে পাবে না।”
11 পাশাপাশি হাঁটতে হাঁটতে যখন তারা দুজন কথা বলছিলেন, হঠাৎ অগ্নিময় একটি রথ ও কয়েকটি ঘোড়া আবির্ভূত হল ও তাদের দুজনকে আলাদা করে দিল, এবং ঘূর্ণিঝড়ের মধ্যে দিয়ে এলিয় স্বর্গে উঠে গেলেন।
১১পরে এইরকম ঘটল; তাঁরা যেতে যেতে কথা বলছেন, এমন দিন হঠাৎ একটা আগুনের রথ ও আগুনের কতগুলি ঘোড়া এসে তাঁদের দুজনকে আলাদা করে দিল এবং এলিয় একটা ঘূর্ণিঝড়ে স্বর্গে চলে গেলেন।
12 এই দৃশ্য দেখে ইলীশায় চিৎকার করে উঠেছিলেন, “হে আমার বাবা! হে আমার বাবা! ইস্রায়েলের রথ ও অশ্বারোহীরা!” ইলীশায় আর তাঁকে দেখতে পাননি। তখন তিনি নিজের পোশাক ছিঁড়ে দু-টুকরো করে ফেলেছিলেন।
১২আর ইলীশায় তা দেখে চিৎকার করে বললেন, “হে আমার পিতা, হে আমার পিতা, হে ইস্রায়েলের সমস্ত রথ ও তার ঘোড়াচালকরা।” পরে তিনি আর তাঁকে দেখতে পেলেন না; তখন তিনি নিজের কাপড় ধরে ছিঁড়ে দুভাগ করলেন।
13 ইলীশায় পরে এলিয়র গা থেকে পড়ে যাওয়া আলখাল্লাটি কুড়িয়ে নিয়ে ফিরে গেলেন এবং জর্ডন নদীর পাড়ে গিয়ে দাঁড়ালেন।
১৩আর তিনি এলিয়ের গা থেকে পড়ে যাওয়া চাদরখানা তুলে নিলেন এবং ফিরে যর্দ্দনের ধারে গিয়ে দাঁড়ালেন।
14 এলিয়র গা থেকে পড়ে যাওয়া আলখাল্লাটি নিয়ে তিনি সেটি দিয়ে জলে আঘাত করলেন। “এলিয়র ঈশ্বর সদাপ্রভু এখন কোথায়?” তিনি জিজ্ঞাসা করলেন। জলে আঘাত করায় তা ডাইনে ও বাঁয়ে দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে গেল, এবং তিনি নদী পার হয়ে গেলেন।
১৪পরে সেই চাদরখানা দিয়ে তিনি জলে আঘাত করে বললেন, “এলিয়ের ঈশ্বর সদাপ্রভু কোথায়?” আর তিনিও জলে আঘাত করলে জল দুদিকে ভাগ হয়ে গেল এবং ইলীশায় পার হয়ে গেলেন।
15 যিরীহোর ভাববাদী সম্প্রদায়ের যে লোকেরা কড়া নজরদারি রেখেছিলেন, তারা তখন বললেন, “এলিয়র আত্মা ইলীশায়ের উপর ভর করেছে।” আর তারা ইলীশায়ের সাথে দেখা করতে গেলেন ও তাঁর সামনে মাটিতে মাথা ঠেকিয়েছিলেন।
১৫তখন যিরীহোর যে ভাববাদীদের সন্তানেরা সেখানে দাঁড়িয়ে ছিল তারা বলল, “এলিয়ের আত্মা ইলীশায়ের উপর এসেছে।” পরে তারা তাঁর সঙ্গে দেখা করে তাঁর সামনে মাটিতে প্রণাম করল।
16 “দেখুন,” তারা বললেন, “আপনার এই দাসেদের, অর্থাৎ আমাদের কাছে পঞ্চাশ জন যোগ্য লোক আছে। তারা আপনার মনিবের খোঁজ করতে যাক। হয়তো সদাপ্রভুর আত্মা তাঁকে নিয়ে গিয়ে কোনও পর্বতে বা উপত্যকায় দাঁড় করিয়ে রেখেছেন।” “না,” ইলীশায় উত্তর দিলেন, “তাদের পাঠাবেন না।”
১৬আর তাঁকে বলল, “দেখুন, এখানে আপনার পঞ্চাশজন শক্তিশালী দাস আছে; অনুরোধ করি, তারা আপনার প্রভুকে খুঁজতে যাক; কি জানি, সদাপ্রভুর আত্মা তাঁকে তুলে নিয়ে গিয়ে কোন পর্বতে কিংবা কোন উপত্যকায় ফেলে গেছেন।” তিনি বললেন, “পাঠিও না।”
17 কিন্তু তারা তাঁকে পীড়াপীড়ি করে এমন অপ্রস্তুতে ফেলে দিলেন যে তিনি আর প্রত্যাখ্যান করতে পারেননি। তাই তিনি বললেন, “ওদের পাঠিয়ে দিন।” আর তারাও পঞ্চাশ জনকে পাঠিয়ে দিলেন। তারা তিন দিন ধরে খোঁজ চালিয়েছিল, কিন্তু এলিয়কে খুঁজে পায়নি।
১৭তবুও তারা তাঁকে পীড়াপীড়ি করলে তিনি লজ্জায় পড়ে বললেন, “পাঠাও।” অতএব তারা পঞ্চাশজন লোক পাঠালো; তারা তিন দিন ধরে খোঁজ করেও তাঁকে পেল না।
18 ইলীশায় যিরীহোতে ছিলেন এবং তারা যখন সেখানে তাঁর কাছে ফিরে এসেছিল, তিনি তাদের বললেন, “আমি কি তোমাদের যেতে বারণ করিনি?”
১৮পরে তারা ইলীশায়ের কাছে ফিরে এলো; ইলীশায় তখন যিরীহোতে ছিলেন। তিনি বললেন, “আমি তোমাদেরকে বলেছিলাম যে যেতে হবে না।”
19 সেই নগরের লোকজন ইলীশায়কে বলল, “হে আমাদের প্রভু, আপনি তো দেখতেই পাচ্ছেন যে এই নগরটি বেশ ভালো স্থানতেই অবস্থিত, কিন্তু এখানকার জল খুব খারাপ ও জমিও অনুৎপাদক।”
১৯পরে নগরের লোকেরা ইলীশায়কে বলল, “অনুরোধ করি, দেখুন, এই নগরের জায়গাটা চমৎকার ঠিকই, এটা তো প্রভু দেখছেন; কিন্তু এর জল ভাল নয় আর জমি ফলবান না।”
20 “আমার কাছে একটি নতুন গামলা নিয়ে এসো,” তিনি বললেন, “এবং তাতে একটু লবণ রাখো।” অতএব তারা তাঁর কাছে গামলাটি এনেছিল।
২০তিনি বললেন, “আমার কাছে একটা নতুন ভাঁড় এনে তাতে লবণ রাখ।” পরে তাঁর কাছে তা আনল।
21 পরে তিনি জলের উৎসের কাছে গিয়ে এই বলে তাতে কিছুটা লবণ ঢেলে দিলেন, “সদাপ্রভু একথাই বলেন: ‘আমি এই জল শুদ্ধ করলাম। আর কখনও এই জল মৃত্যুর কারণ হবে না বা জমিকেও অনুৎপাদক হয়ে থাকতে দেবে না।’”
২১তিনি বাইরে বেরিয়ে জলের উনুইর কাছে গিয়ে তার মধ্যে লবণ ফেলে দিয়ে বললেন, “সদাপ্রভু বলেন, ‘আমি এই জল ভাল করে দিলাম, আজ থেকে এটা আর মৃত্যু ঘটাবে না এবং ফলও নষ্ট হবে না’।”
22 ইলীশায়ের বলা কথানুসারে আজও পর্যন্ত সেই জল শুদ্ধই আছে।
২২ইলীশায়ের সেই কথামত আজ পর্যন্ত সেই জল ভালই আছে।
23 যিরীহো থেকে ইলীশায় বেথেলে চলে গেলেন। তিনি পথে হেঁটে যাচ্ছিলেন, এমন সময় কয়েকটি ছেলে নগর থেকে বেরিয়ে এসে তাঁকে ব্যঙ্গবিদ্রুপ করতে শুরু করল। “ওহে টাকলু, এখান থেকে পালাও!” তারা বলল। “ওহে টাকলু, এখান থেকে পালাও!”
২৩পরে তিনি সেখান থেকে বৈথেলে গেলেন; আর তিনি পথে যাওয়ার দিন নগর থেকে অনেকগুলো ছেলে এসে তাঁকে ঠাট্টা করে বলতে লাগল, “ও টাকপড়া, উঠে আয়; ও টাকপড়া, উঠে আয়।”
24 তিনি ঘুরে তাদের দিকে তাকিয়েছিলেন এবং সদাপ্রভুর নামে তাদের অভিশাপ দিলেন। তখন বন থেকে দুটি ভালুক বেরিয়ে এসে সেই ছেলেদের মধ্যে বিয়াল্লিশ জনকে তুলোধোনা করল।
২৪তখন তিনি পিছনের দিকে মুখ ফিরিয়ে তাদেরকে দেখলেন এবং সদাপ্রভুর নামে তাদেরকে অভিশাপ দিলেন; আর বন থেকে দুটি ভাল্লূকী বেরিয়ে এসে তাদের মধ্য থেকে বিয়াল্লিশজন বালককে আহত করলো।
25 তিনি কর্মিল পাহাড়ে চলে গেলেন ও সেখান থেকে শমরিয়ায় ফিরে গেলেন।
২৫এরপর তিনি সেখান থেকে কর্মিল পর্বতে গেলেন এবং সেখান থেকে শমরিয়াতে ফিরে আসলেন।