< বংশাবলির দ্বিতীয় খণ্ড 9 >
1 শিবা দেশের রানি যখন শলোমনের নামডাক শুনতে পেয়েছিলেন, তখন কঠিন কঠিন সব প্রশ্ন সাথে নিয়ে তিনি তাঁকে পরীক্ষা করার জন্য জেরুশালেমে এলেন। বিশাল দলবল নিয়ে—উটের পিঠে মশলাপাতি চাপিয়ে, প্রচুর পরিমাণ সোনা, ও দামি মণিমুক্তো নিয়ে—তিনি শলোমনের কাছে এলেন এবং তাঁর মনে যা যা ছিল, সেসব বিষয়ে শলোমনের সাথে কথা বললেন।
2 শলোমন তাঁর সব প্রশ্নের উত্তর দিলেন; রানিকে ব্যাখ্যা করে বুঝিয়ে দেওয়ার পক্ষে কোনো কিছুই তাঁর কাছে কঠিন বলে মনে হয়নি।
3 শিবার রানি যখন শলোমনের প্রজ্ঞা, তথা তাঁর নির্মিত প্রাসাদটি,
4 তাঁর টেবিলে রাখা খাদ্যসম্ভার, তাঁর কর্মকর্তাদের বসার ব্যবস্থা, জমকালো পোশাক পরা সেবাকারী দাসেদের, জমকালো পোশাক পরা পানপাত্র বহনকারীদের এবং সদাপ্রভুর মন্দিরে তাঁর উৎসর্গ করা হোমবলিগুলি দেখেছিলেন, তখন তিনি অভিভূত হয়ে গেলেন।
5 তিনি রাজাকে বললেন, “নিজের দেশে থাকার সময় আমি আপনার কীর্তির ও প্রজ্ঞার বিষয়ে যা যা শুনেছিলাম, সেসবই সত্যি।
6 কিন্তু যতক্ষণ না আমি এখানে এসে নিজের চোখে তা দেখলাম, লোকেরা যা বলল, আমি তাতে বিশ্বাস করিনি। সত্যি বলতে কি, আপনার যে বিশাল প্রজ্ঞা, তার অর্ধেকও আমাকে বলা হয়নি; যে খবর আমি শুনেছিলাম, আপনি তার অনেক ঊর্ধ্বে।
7 আপনার প্রজারা কতই না সুখী! আপনার সেই কর্মকর্তারাও কতই না সুখী, যারা অনবরত আপনার সামনে দাঁড়িয়ে থাকে ও আপনার প্রজ্ঞার কথা শোনে!
8 আপনার ঈশ্বর সেই সদাপ্রভুর প্রশংসা হোক, যিনি আপনার উপর সন্তুষ্ট হয়ে রাজারূপে আপনার ঈশ্বর সদাপ্রভুর হয়ে রাজত্ব করার জন্য আপনাকে তাঁর সিংহাসনে বসিয়েছেন। ইস্রায়েলের প্রতি আপনার ঈশ্বরের প্রেমের ও চিরকাল তাদের সমর্থন করা সংক্রান্ত তাঁর যে এক বাসনা ছিল, তারই কারণে তিনি আপনাকে তাদের রাজা করেছেন, যেন ন্যায়বিচার ও ধার্মিকতা বজায় থাকে।”
9 পরে তিনি রাজাকে 120 তালন্ত সোনা, প্রচুর পরিমাণ মশলাপাতি, ও দামি মণিমুক্তো দিলেন। শিবা দেশের রানি রাজা শলোমনকে এত মশলাপাতি দিলেন, যা এর আগে কখনও দেখা যায়নি।
10 (হীরমের দাসেরা ও শলোমনের দাসেরা ওফীর থেকে সোনা নিয়ে আসত; এছাড়াও তারা আলগুম কাঠ ও দামি মণিমুক্তোও নিয়ে আসত।
11 রাজা সেই আলগুম কাঠ সদাপ্রভুর মন্দিরের ও রাজপ্রাসাদের সিঁড়ি নির্মাণ করার কাজে ও বাদ্যকরদের জন্য বীণা ও খঞ্জনি তৈরি করার ক্ষেত্রে ব্যবহার করতেন। যিহূদা দেশে এর আগে এত কিছু দেখা যায়নি।)
12 রাজা শলোমন শিবা দেশের রানিকে তাঁর বাসনা ও চাহিদামতোই সবকিছু দিলেন; রানি তাঁর কাছে যা কিছু এনেছিলেন, তিনি তার চেয়েও অনেক বেশি পরিমাণ জিনিসপত্র তাঁকে দিলেন। পরে রানি তাঁর লোকলস্কর সাথে নিয়ে নিজের দেশে ফিরে গেলেন।
13 প্রতি বছর শলোমন যে পরিমাণ সোনা সংগ্রহ করতেন তার ওজন 666 তালন্ত,
14 এতে অবশ্য বণিক ও ব্যবসায়ীদের আনা রাজস্ব ধরা হয়নি। এছাড়াও আরবের সব রাজা ও বিভিন্ন প্রদেশের শাসনকর্তারাও শলোমনের কাছে সোনা ও রুপো নিয়ে আসতেন।
15 পিটানো সোনার পাত দিয়ে রাজা শলোমন 200-টি বড়ো বড়ো ঢাল তৈরি করলেন; প্রত্যেকটি ঢাল তৈরি করতে 600 শেকল করে পিটানো সোনা লেগেছিল।
16 পিটানো সোনার পাত দিয়ে তিনি আরও তিনশোটি ছোটো ছোটো ঢাল তৈরি করলেন, এবং প্রত্যেকটি ঢালে তিনশো শেকল করে সোনা ছিল। রাজা সেগুলি লেবাননের অরণ্য-প্রাসাদে নিয়ে গিয়ে রেখেছিলেন।
17 পরে রাজামশাই হাতির দাঁত দিয়ে একটি বড়ো সিংহাসন বানিয়ে, সেটি খাঁটি সোনা দিয়ে মুড়ে দিলেন।
18 সিংহাসনে ওঠার জন্য সিঁড়ির ছয়টি ধাপ ছিল, ও সোনার একটি পাদানি সিংহাসনের সাথে জোড়া ছিল। বসার স্থানটির দুই দিকেই হাতল ছিল, এবং দুটিরই পাশে একটি করে সিংহমূর্তি দাঁড় করানো ছিল।
19 বারোটি সিংহমূর্তি সিঁড়ির ছয়টি ধাপের উপরে দাঁড় করানো ছিল, এক-একটি মূর্তি প্রত্যেকটি ধাপের এক এক পাশে রাখা ছিল। অন্য কোনও রাজ্যে আগে কখনও এরকম কিছু তৈরি করা হয়নি।
20 রাজা শলোমনের কাছে থাকা ভিত থেকে ওঠা ডাঁটিযুক্ত হাতলবিহীন সব পানপাত্র ছিল সোনার, এবং লেবাননের অরণ্য-প্রাসাদে রাখা সব গৃহস্থালি জিনিসপত্র খাঁটি সোনা দিয়ে তৈরি হল। কোনো কিছুই রুপো দিয়ে তৈরি করা হয়নি, কারণ শলোমনের রাজত্বকালে রুপোকে দামি বলে গণ্যই করা হত না।
21 রাজার কাছে তর্শীশের বাণিজ্যতরির এক নৌবহর ছিল, যেটি পরিচালনার দায়িত্বে ছিল হীরমের দাসেরা। তিন বছরে একবার জাহাজগুলি সোনা, রুপো এবং হাতির দাঁত, বনমানুষ ও বেবুন নিয়ে ফিরে আসত।
22 পৃথিবীর অন্য সব রাজার তুলনায় রাজা শলোমন ধনসম্পদে ও প্রজ্ঞায় বৃহত্তর হলেন।
23 ঈশ্বর রাজা শলোমনের অন্তরে যে প্রজ্ঞা ভরে দিলেন, সেই প্রজ্ঞার কথা শোনার জন্য পৃথিবীর রাজারা সবাই তাঁর সাথে দেখা করতে চাইতেন।
24 বছরের পর বছর, যে কেউ তাঁর কাছে আসত, সে কোনও না কোনো উপহার—রুপো ও সোনার তৈরি জিনিসপত্র, কাপড়চোপড়, অস্ত্রশস্ত্র ও মশলাপাতি, এবং ঘোড়া ও খচ্চর নিয়ে আসত।
25 ঘোড়া ও রথের জন্য শলোমনের 4,000 আস্তাবল ছিল, এবং তাঁর কাছে 12,000 ঘোড়া ছিল, যাদের তিনি রথ-নগরীগুলিতে এবং নিজের কাছে, অর্থাৎ জেরুশালেমেও রেখেছিলেন।
26 ইউফ্রেটিস নদীর পার থেকে শুরু করে মিশরের সীমানা পর্যন্ত বিস্তৃত ফিলিস্তিনীদের দেশ অবধি গোটা এলাকায়, সব রাজার উপর তিনি রাজত্ব করতেন।
27 জেরুশালেমে রাজা রুপোকে পাথরের মতো সাধারণ স্তরে নামিয়ে এনেছিলেন, এবং দেবদারু কাঠকে পর্বতমালার পাদদেশে উৎপন্ন ডুমুর গাছের মতো পর্যাপ্ত করে তুলেছিলেন।
28 শলোমনের ঘোড়াগুলি মিশর থেকে ও অন্যান্য সব দেশ থেকে আমদানি করা হত।
29 শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত শলোমনের রাজত্বকালের সব ঘটনা কি ভাববাদী নাথনের রচনায়, শীলোনীয় অহিয়ের ভাববাণীতে এবং নবাটের ছেলে যারবিয়ামের বিষয়ে লেখা দর্শক ইদ্দোর দর্শন-গ্রন্থে লেখা নেই?
30 শলোমন জেরুশালেমে সমগ্র ইস্রায়েলের উপর চল্লিশ বছর রাজত্ব করলেন।
31 পরে তিনি তাঁর পূর্বপুরুষদের সাথে চিরবিশ্রামে শায়িত হলেন এবং তাঁকে তাঁর বাবা দাউদের নগরেই কবর দেওয়া হল। তাঁর ছেলে রহবিয়াম রাজারূপে তাঁর স্থলাভিষিক্ত হলেন।