< শমূয়েলের প্রথম বই 18 >
1 শৌলের সঙ্গে দাউদের কথাবার্তা শেষ হতে না হতেই যোনাথন দাউদের সঙ্গে একাত্ম হয়ে গেলেন, এবং তিনি দাউদকে নিজের মতো করে ভালোবাসলেন।
2 সেদিন থেকেই শৌল দাউদকে নিজের কাছে রেখে দিলেন এবং তাঁকে ঘরে তাঁর পরিবারের কাছে ফিরে যেতে দেননি।
3 যোনাথনও দাউদের সঙ্গে এক চুক্তি করলেন, কারণ তিনি তাঁকে নিজের মতো করে ভালোবেসেছিলেন।
4 যোনাথন তাঁর পরনের পোশাকটি খুলে দাউদকে দিলেন, সঙ্গে নিজের আলখাল্লাটি, এমনকি নিজের তরোয়াল, ধনুক ও কোমরবন্ধটিও দিয়ে দিলেন।
5 শৌল যে কোনো কাজের দায়িত্ব দিয়ে দাউদকে পাঠাতেন, তাতে তিনি এতটাই সফল হতেন যে শৌল সৈন্যদলে তাঁকে আরও উঁচু পদে নিযুক্ত করে দিলেন। এতে সৈনিকরা সবাই খুব খুশি হল ও শৌলের কর্মকর্তারাও খুব খুশি হল।
6 দাউদ সেই ফিলিস্তিনীকে হত্যা করার পর যখন লোকজন ঘরে ফিরে আসছিল, তখন ইস্রায়েলের সব নগর থেকে স্ত্রীলোকেরা নাচ-গান করতে করতে, খঞ্জনি ও সুরবাহার বাজিয়ে আনন্দগান গাইতে গাইতে রাজা শৌলের সঙ্গে দেখা করতে বের হয়ে এল।
7 নাচতে নাচতে তারা গাইল: “শৌল মারলেন হাজার হাজার, আর দাউদ মারলেন অযুত অযুত।”
8 শৌলের খুব রাগ হল; এই গানের ধুয়া তাঁকে খুব অসন্তুষ্ট করল। “এরা দাউদকে অযুত অযুতের কথা বলে কৃতিত্ব দিয়েছে,” তিনি ভাবলেন, “কিন্তু আমার বিষয়ে শুধুই হাজার হাজার। পরে আর রাজ্য ছাড়া তার কী-ই বা পাওয়ার আছে?”
9 আর সেই সময় থেকেই শৌল দাউদের উপর সজাগ দৃষ্টি রাখতে শুরু করলেন।
10 পরদিনই ঈশ্বরের কাছ থেকে একটি মন্দ আত্মা সবলে শৌলের উপর নেমে এল। তিনি তাঁর বাড়িতে বসে ভাববাণী বলছিলেন, অন্যদিকে দাউদ সচরাচর যেমনটি করতেন, সেভাবে বীণা বাজিয়ে যাচ্ছিলেন। শৌলের হাতে ছিল একটি বর্শা
11 এবং “আমি দাউদকে দেওয়ালে গেঁথে ফেলব,” আপনমনে একথা বলে তিনি সেটি ছুঁড়ে দিলেন। কিন্তু দাউদ দু-দুবার তাঁর হাত ফসকে পালিয়ে গেলেন।
12 শৌল দাউদকে ভয় পেতে শুরু করলেন, কারণ সদাপ্রভু দাউদের সঙ্গে ছিলেন কিন্তু শৌলকে ছেড়ে গিয়েছিলেন।
13 অতএব তিনি দাউদকে নিজের কাছ থেকে সরিয়ে দিয়ে তাঁকে সহস্র-সেনাপতি পদে নিযুক্ত করলেন, এবং দাউদ যুদ্ধে সেনাবাহিনীর নেতৃত্ব দিলেন।
14 সবকাজেই তিনি মহাসাফল্য লাভ করলেন, কারণ সদাপ্রভু তাঁর সঙ্গে ছিলেন।
15 শৌল তাঁকে এত বেশি সফল হতে দেখে তাঁকে ভয় করতে শুরু করলেন।
16 কিন্তু ইস্রায়েল ও যিহূদার সব লোকজন দাউদকে ভালোবেসেছিল, কারণ যুদ্ধে তিনি তাদের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন।
17 শৌল দাউদকে বললেন, “এই আমার বড়ো মেয়ে মেরব। আমি এর সঙ্গে তোমার বিয়ে দেব; তুমি শুধু নির্ভীকভাবে আমার সেবা করে যাও ও সদাপ্রভুর জন্য যুদ্ধ করে যাও।” কারণ শৌল মনে মনে বললেন, “আমি এর বিরুদ্ধে হাত উঠাব না। ফিলিস্তিনীরাই এ কাজটি করুক!”
18 কিন্তু দাউদ শৌলকে বললেন, “আমি কে, আর ইস্রায়েলে আমার পরিবার বা আমার বংশই বা কী এমন, যে আমি রাজার জামাই হব?”
19 অবশ্য যখন শৌলের মেয়ে মেরবকে দাউদের হাতে তুলে দেওয়ার সময় এল, তখন মেরবকে মহোলাতীয় অদ্রীয়েলের সঙ্গে বিয়ে দিয়ে দেওয়া হল।
20 ইত্যবসরে আবার শৌলের মেয়ে মীখল দাউদের প্রেমে পড়ে গেলেন, আর শৌলকে যখন খবরটি জানানো হল, তিনি খুশিই হলেন।
21 “আমি মীখলকে ওর হাতে তুলে দেব,” তিনি ভাবলেন, “এতে মীখল ওর কাছে এক ফাঁদ হয়ে দাঁড়াবে এবং ফিলিস্তিনীদের হাতও ওর বিরুদ্ধে উঠবে।” অতএব শৌল দাউদকে বললেন, “এখন দ্বিতীয়বার তোমার কাছে আমার জামাই হওয়ার সুযোগ এসেছে।”
22 পরে শৌল তাঁর কর্মচারীদের আদেশ দিলেন: “তোমরা গিয়ে গোপনে দাউদকে বলো, ‘দেখো, রাজামশাই তোমাকে পছন্দ করেন, আর তাঁর সব কর্মচারীও তোমাকে ভালোবাসে; এখন তুমি তাঁর জামাই হয়ে যাও।’”
23 তারা এইসব কথা দাউদকে বলে শোনাল। কিন্তু দাউদ বললেন, “তোমাদের কি মনে হয় রাজামশায়ের জামাই হওয়া সামান্য ব্যাপার? আমি তো এক গরিব মানুষ ও আমাকে বিশেষ কেউ চেনেও না।”
24 শৌলের দাসেরা যখন দাউদের বলা কথাগুলি শৌলকে গিয়ে শোনাল,
25 শৌল তখন উত্তর দিলেন, “দাউদকে গিয়ে বলো, ‘রাজামশাই আর কোনও কন্যাপণ চান না, শুধু ফিলিস্তিনীদের 100-টি লিঙ্গত্বক্ দিলেই হবে, যেন তাঁর শত্রুদের উপর প্রতিশোধ নেওয়া যায়।’” শৌল পরিকল্পনা করে রেখেছিলেন, যেন দাউদ ফিলিস্তিনীদের হাতেই মারা পড়েন।
26 কর্মকর্তারা যখন দাউদকে এসব কথা বলে শুনিয়েছিলেন, তিনি খুশিমনে রাজার জামাই হওয়ার জন্য প্রস্তুত হলেন। অতএব নিরূপিত সময় অতিবাহিত হওয়ার আগেই,
27 দাউদ তাঁর দলবল নিয়ে বাইরে বেরিয়ে গিয়ে 200 জন ফিলিস্তিনীকে হত্যা করে তাদের লিঙ্গত্বক্ নিয়ে এলেন। রাজামশায়ের কাছে তারা সেগুলি পূর্ণ সংখ্যায় গুনে দিল যেন দাউদ রাজার জামাই হতে পারেন। পরে শৌল তাঁর সঙ্গে নিজের মেয়ে মীখলের বিয়ে দিলেন।
28 শৌল যখন অনুভব করলেন যে সদাপ্রভু দাউদের সঙ্গে আছেন ও তাঁর মেয়ে মীখল দাউদকে ভালোবাসেন,
29 তখন তিনি দাউদকে আরও বেশি ভয় করতে শুরু করলেন, এবং জীবনের বাকি দিনগুলি তিনি দাউদের শত্রু হয়েই থেকে গেলেন।
30 ফিলিস্তিনী সহস্র-সেনাপতিরা যুদ্ধ করেই যেতে থাকল, এবং যতবার তারা তা করত, শৌলের অন্যান্য কর্মকর্তাদের তুলনায় দাউদ আরও বেশি সাফল্য অর্জন করতেন, ও তাঁর নাম সুপরিচিত হয়ে গেল।