< শমূয়েলের প্রথম বই 14 >

1 একদিন শৌলের ছেলে যোনাথন তাঁর অস্ত্র বহনকারী যুবক ছেলেটিকে বললেন, “এসো, অন্যদিকে অবস্থিত ফিলিস্তিনীদের সৈন্যশিবিরে যাওয়া যাক।” কিন্তু একথা তিনি তাঁর বাবাকে বলেননি।
একদিন এই ঘটনা ঘটল, শৌলের ছেলে যোনাথন তাঁর অস্ত্র বহনকারী যুবকটিকে বললেন, “চল, আমরা ওপাশে পলেষ্টীয়দের সৈন্যদের ছাউনিতে যাই,” কিন্তু তিনি এই কথা তাঁর বাবাকে জানালেন না।
2 শৌল গিবিয়ার প্রান্তদেশে মিগ্রোণে একটি ডালিম গাছের তলায় বসেছিলেন। তাঁর সঙ্গে ছিল প্রায় 600 জন,
তখন শৌল গিবিয়ার সীমানায় মিগ্রোণের একটা ডালিম গাছের তলায় ছিলেন এবং তাঁর সঙ্গে প্রায় ছয়শো লোক ছিল।
3 তাদের মধ্যে ছিলেন অহিয়, যাঁর পরনে ছিল এফোদ। তিনি ছিলেন অহীটূবের ছেলে, অহীটূব ছিলেন ঈখাবোদের ভাই, ঈখাবোদ ছিলেন পীনহসের ছেলে, এবং পীনহস ছিলেন সেই এলির ছেলে, যিনি শীলোতে সদাপ্রভুর যাজক ছিলেন। কেউই বুঝতে পারেনি যে যোনাথন বের হয়ে গিয়েছেন।
আর এলি, যিনি শীলোতে সদাপ্রভুর যাজক ছিলেন, তার সন্তান পীনহসের ছেলে ঈখাবোদের ভাই অহীটূবের ছেলে যে অহিয়, তিনি এফোদ পরেছিলেন। আর যোনাথন যে বের হয়ে গেছেন, সেই কথা লোকেরা জানত না।
4 যে গিরিপথটি পেরিয়ে যোনাথন ফিলিস্তিনীদের সৈন্যশিবিরে পৌঁছাতে চেয়েছিলেন সেটির দুধারেই একটি করে খাড়া বাঁধ ছিল; একটির নাম বোৎসেস ও অন্যটির নাম সেনি।
যোনাথন যে গিরিপথ দিয়ে পলেষ্টীয়দের সৈন্য-ছাউনির কাছে যাওয়ার চেষ্টা করলেন, সেই ঘাটের মাঝখানের একপাশে একটি খাড়া উঁচু পাহাড়ের দেওয়াল এবং অন্য পাশে আর একটি খাড়া উঁচু পাহাড়ের দেওয়াল ছিল; তার একটির নাম বোৎসেস ও অন্যটির নাম সেনি।
5 একটি খাড়া বাঁধ উত্তর দিকে মিক্‌মসের মুখোমুখি ছিল, অন্যটি ছিল দক্ষিণ দিকে গেবার মুখোমুখি।
তার মধ্য একটি পাহাড়ের দেওয়াল ছিল উত্তরের মিক্‌মসের দিকে আর অন্যটি ছিল দক্ষিণে গেবার দিকে।
6 যোনাথন তাঁর অস্ত্র বহনকারী যুবকটিকে বললেন, “চলো, আমরা ইত্যবসরে সেইসব লোকজনের ঘাঁটিতে যাই, যারা নেহাতই অধার্মিক। হয়তো সদাপ্রভু আমাদের হয়ে কাজ করবেন। বেশি লোক দিয়েই হোক বা অল্প লোক দিয়েই হোক, ঈশ্বর উদ্ধার করবেনই, কোনো কিছুই তাঁকে আটকাতে পারবে না।”
আর যোনাথন তাঁর অস্ত্র বহনকারী যুবকটিকে বললেন, “চল, আমরা ওপাশে ঐ অচ্ছিন্নত্বক লোকদের ছাউনিতে যাই; হয়তো সদাপ্রভু আমাদের জন্য কিছু করবেন, কারণ অনেক লোক দিয়ে হোক বা কম লোক দিয়ে হোক, উদ্ধার করতে কোন কিছুই সদাপ্রভুকে বাধা দিতে পারে না।”
7 তাঁর অস্ত্র বহনকারী বলল, “আপনার যা মনে হয় তাই করুন। এগিয়ে যান, আমি মনেপ্রাণে আপনার সঙ্গে সঙ্গে আছি।”
তখন তাঁর অস্ত্র বহনকারী লোকটি বলল, “আপনার মন যা বলে, তাই করুন; সেই দিকে যান, দেখুন, আপনার ইচ্ছামতই আমি আপনার সঙ্গে সঙ্গে আছি।”
8 যোনাথন বললেন, “তবে, এসো; আমরা পার হয়ে ওদের দিকে যাব এবং ওরাও আমাদের দেখুক।
যোনাথন বললেন, “দেখ, আমরা ঐ লোকেদের দিকে এগিয়ে যাব, ওদের দেখা দেব।
9 যদি ওরা আমাদের বলে, ‘আমরা তোমাদের কাছে না আসা পর্যন্ত ওখানে অপেক্ষা করো,’ তবে আমরা যেখানে আছি সেখানেই থাকব ও ওদের কাছে উঠে যাব না।
যদি তারা আমাদের এই কথা বলে, ‘থাক, আমরা তোমাদের কাছে আসছি,’ তাহলে আমরা আমাদের জায়গায় দাঁড়িয়ে থাকব, ওদের কাছে উঠে যাব না।
10 কিন্তু ওরা যদি বলে, ‘আমাদের কাছে উঠে এসে লড়ো,’ তবে আমরা উপরে উঠে যাব, কারণ সেটিই আমাদের কাছে এই চিহ্ন হয়ে যাবে যে সদাপ্রভু ওদের আমাদের হাতে তুলে দিয়েছেন।”
১০কিন্তু যদি এই কথা বলে, ‘আমাদের কাছে উঠে এস,’ তাহলে আমরা উঠে যাব, কারণ সদাপ্রভু আমাদের হাতে ওদের তুলে দিয়েছেন; ওটাই আমাদের চিহ্ন হবে।”
11 অতএব তাঁরা দুজনেই ফিলিস্তিনী সেনা-ঘাঁটির সামনে গিয়ে নিজেদের দর্শন দিলেন। ফিলিস্তিনীরা বলল, “ওই দেখো, গর্তে লুকিয়ে থাকা হিব্রুরা হামাগুড়ি দিয়ে বের হয়ে আসছে।”
১১পরে তাঁরা দুই জন পলেষ্টীয় সৈন্যদের সামনে গিয়ে দেখা দিলে পলেষ্টীয়েরা বলল, “দেখ, ইব্রীয়েরা যারা গর্তে লুকিয়ে ছিল, তা থেকে এখন বের হয়ে আসছে।”
12 সেনা-ঘাঁটির লোকজন চিৎকার করে যোনাথন ও তাঁর অস্ত্র-বহনকারীকে বলল, “আমাদের কাছে উঠে এসে লড়ো, আমরা তোমাদের উচিত শিক্ষা দেব।” অতএব যোনাথন তাঁর অস্ত্র-বহনকারীকে বললেন, “আমার পিছু পিছু উপরে উঠে এসো; সদাপ্রভু ইস্রায়েলের হাতে ওদের তুলে দিয়েছেন।”
১২পরে সেই সৈন্য-ছাউনির লোকেরা যোনাথন ও তাঁর অস্ত্র বহনকারী লোকটিকে বলল, “আমাদের কাছে উঠে এস, আমরা তোমাদের কিছু দেখাব।” যোনাথন তাঁর অস্ত্র বহনকারীকে বললেন, “আমার পিছনে পিছনে উঠে এস, কারণ সদাপ্রভু ওদেরকে ইস্রায়েলীয়দের হাতে দিয়েছেন।”
13 যোনাথন তাঁর হাত পা ব্যবহার করে উপরে উঠে গেলেন, এবং তাঁর অস্ত্র বহনকারী ছিল ঠিক তাঁর পিছনেই। ফিলিস্তিনীরা যোনাথনের সামনে পড়ে যাচ্ছিল, ও তাঁর অস্ত্র-বহনকারীও তাঁকে অনুসরণ করে তাদের হত্যা করে যাচ্ছিল।
১৩পরে যোনাথন হামাগুড়ি দিয়ে উঠে গেলেন এবং তাঁর অস্ত্র বহনকারী লোকটিও তাঁর পিছনে পিছনে উঠে গেল; তাতে সেই লোকেরা যোনাথনের সামনে মারা পড়তে লাগল এবং তাঁর অস্ত্র বহনকারী লোকটিও তাঁর পিছনে পিছনে তাদের মারতে লাগল।
14 প্রথম আক্রমণেই যোনাথন ও তাঁর অস্ত্র বহনকারী লোকটি কমবেশি অর্ধেক একর এলাকা জুড়ে প্রায় কুড়ি জনকে হত্যা করলেন।
১৪যোনাথন ও তাঁর অস্ত্র বহনকারী লোকটী আক্রমণের শুরুতেই এক বিঘে (অর্ধেক একর) জমির অর্ধেক হাল দেওয়া জমির মধ্যে প্রায় কুড়ি জন লোক মারা পড়ল।
15 তখন সমগ্র সৈন্যদলে—যারা শিবিরে ও যুদ্ধক্ষেত্রে ছিল, এবং যারা সেনা-ঘাঁটিতে ছিল ও যারা হামলা চালাচ্ছিল, তাদের মধ্যেও—আতঙ্ক ছেয়ে গেল, এবং ভূমিকম্প হল। সেই আতঙ্ক ঈশ্বরই পাঠালেন।
১৫শিবিরের মধ্যে, ক্ষেতে ও সমস্ত সৈন্যদের মধ্যে ভীষণ ভয় উপস্থিত হল; পাহারাদার ও বিনাশকারীর দলও ভয় পেল, ভূমিকম্প হল, আর এই ভাবে ঈশ্বরের কাছ থেকে মহাভয় উপস্থিত হল।
16 বিন্যামীনের গিবিয়ায় শৌলের প্রহরীরা দেখতে পেয়েছিল যে সৈন্যদল চর্তুদিকে কমে যাচ্ছে।
১৬তখন বিন্যামীনের গিবিয়াতে শৌলের যে পাহারাদার সৈন্যেরা ছিল তারা দেখতে পেল, দেখ, লোকের ভীড় ভেঙে গেল তারা চারদিকে ছড়িয়ে পড়ছে।
17 তখন শৌল তাঁর সঙ্গে থাকা লোকজনকে বললেন, “সৈন্যদের জমায়েত করে গুনে দেখো, কে কে আমাদের ছেড়ে গিয়েছে।” যখন তারা এমনটি করল, দেখা গেল যোনাথন ও তাঁর অস্ত্র বহনকারী সেখানে অনুপস্থিত।
১৭তখন শৌল তাঁর সঙ্গের লোকদের বললেন, “একবার লোক গুনে দেখ, কে আমাদের মধ্য থেকে চলে গেছে।” পরে তারা লোক গুনে দেখতে পেল, আর দেখ যোনাথন ও তাঁর অস্ত্র বহনকারী লোকটি সেখানে নেই।
18 শৌল অহিয়কে বললেন, “ঈশ্বরের নিয়ম-সিন্দুকটি এখানে আনুন।” (সেই সময় সেটি ইস্রায়েলীদের সঙ্গেই ছিল)
১৮তখন শৌল অহিয়কে বললেন, “ঈশ্বরের সিন্দুকটি এই জায়গায় নিয়ে এস,” কারণ সেই দিন ঈশ্বরের সিন্দুক ইস্রায়েলীয়দের কাছেই ছিল।
19 শৌল যখন যাজকের সঙ্গে কথা বলছিলেন, ফিলিস্তিনী-শিবিরে তখন ক্রমাগত হৈ হট্টগোল বেড়েই চলেছিল। তাই শৌল যাজককে বললেন, “আপনার হাত সরিয়ে নিন।”
১৯পরে যখন শৌল যাজকের সঙ্গে কথা বলছিলেন, তখন পলেষ্টীয়দের সৈন্যদের মধ্য গোলমাল বেড়েই চলল। তাতে শৌল যাজককে বললেন, “হাত সরিয়ে নাও।”
20 পরে শৌল ও তাঁর সব লোকজন একত্রিত হয়ে যুদ্ধে গেলেন। তাঁরা দেখেছিলেন যে ফিলিস্তিনীরা পুরোপুরি এলোমেলো হয়ে গিয়ে নিজেদেরই তরোয়াল দিয়ে পরস্পরকে আঘাত হেনে চলেছে।
২০তারপর শৌল ও তাঁর সমস্ত সঙ্গীরা একত্র হয়ে যুদ্ধ করতে গেলেন; আর দেখ, প্রত্যেক জনের তরোয়াল তার বন্ধুর বিরুদ্ধে যাওয়াতে ভীষণ কোলাহল শোনা যাচ্ছিল।
21 যেসব হিব্রু লোকজন ইতিপূর্বে ফিলিস্তিনীদের সঙ্গে ছিল ও তাদের সাথে মিলে তাদের সৈন্যশিবিরে চলে গিয়েছিল, তারাও সেইসব ইস্রায়েলীর কাছে ফিরে এসেছিল, যারা শৌল ও যোনাথনের সঙ্গে ছিল।
২১আর যে সব ইব্রীয়েরা আগে পলেষ্টীয়দের পক্ষে ছিল, যারা চারিদিক থেকে তাদের সঙ্গে শিবিরে গিয়েছিল তারাও শৌল ও যোনাথনের সঙ্গী ইস্রায়েলীয়দের সঙ্গে যোগ দিল।
22 ইফ্রয়িমের পার্বত্য এলাকায় লুকিয়ে থাকা ইস্রায়েলীরা যখন শুনেছিল যে ফিলিস্তিনীরা পালিয়ে যাচ্ছে, তখন তারাও যুদ্ধে যোগ দিয়ে প্রচণ্ড বেগে তাদের পশ্চাদ্ধাবন করল।
২২আর ইস্রায়েলের যে সব লোক ইফ্রয়িমের পাহাড়ী এলাকায় লুকিয়ে ছিল, তারাও পলেষ্টীয়দের পালানোর খবর পেয়ে যুদ্ধে যোগ দিল এবং তারা তাদের তাড়া করতে লাগল।
23 অতএব সেদিন সদাপ্রভু ইস্রায়েলকে রক্ষা করলেন, এবং যুদ্ধ বেথ-আবন পার করে ছড়িয়ে পড়েছিল।
২৩এই ভাবে সদাপ্রভু সেই দিন ইস্রায়েলীয়দের উদ্ধার করলেন এবং বৈৎ-আবন পার পর্যন্ত যুদ্ধ ছড়িয়ে পড়ল।
24 সেদিন ইস্রায়েলীরা গুরুতর অসুবিধায় পড়েছিল, কারণ শৌল এই বলে লোকজনকে এক শপথের অধীনে বেঁধে দিলেন, “সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসার আগে, আমার শত্রুদের উপর আমি প্রতিশোধ নেওয়ার আগে যদি কেউ খাবার খায়, তবে সে শাপগ্রস্ত হোক!” তাই সৈন্যদলের কেউই খাবার মুখে তোলেনি।
২৪সেই দিন ইস্রায়েলের লোকেরা খুব কষ্টের মধ্যে ছিল, কারণ শৌল লোকদের এই দিব্যি করিয়ে নিয়েছিলেন যে, তিনি সন্ধ্যার আগে, আমি যে পর্যন্ত আমার শত্রুদের উপর প্রতিশোধ না নেওয়া পর্যন্ত, যে কেউ খাবার গ্রহণ করবে সে শাপগ্রস্ত হোক। এই জন্য লোকেদের মধ্য কেউই খাদ্য গ্রহণ করল না।
25 গোটা সৈন্যদল অরণ্যে প্রবেশ করল, আর সেখানে জমির উপর মধু পড়েছিল।
২৫পরে সবাই (সকল সৈনিক) বনের মধ্যে গেল, সেখানে মাটির উপর মধু ছিল।
26 অরণ্যে প্রবেশ করে তারা দেখেছিল যে মধু চুঁইয়ে পড়ছে; তবুও কেউ মুখে হাত ঠেকায়নি, কারণ তারা শপথের ভয় করছিল।
২৬আর লোকেরা যখন বনে উপস্থিত হল, দেখ, মধু ঝরে পড়ছে, কিন্তু কেউ তা মুখে দিল না, কারণ তারা সেই শপথে ভয় পেয়েছিল।
27 কিন্তু যোনাথন শোনেননি যে তাঁর বাবা প্রজাদের শপথে বেঁধে রেখেছেন, তাই তিনি তাঁর হাতে থাকা ছড়ির ডগাটি বাড়িয়ে মৌচাকে ডুবিয়ে দিলেন। তিনি হাত বাড়িয়ে মুখে দেওয়ামাত্র তাঁর চোখদুটি উজ্জ্বল হয়ে উঠেছিল।
২৭কিন্তু যোনাথনের বাবা লোকদেরকে যে শপথ করিয়েছিলেন, যোনাথন তা শোনেন নি, তাই তিনি তাঁর হাতের লাঠির আগাটা বাড়িয়ে মৌচাকে ঢুকালেন এবং মধু হাতে নিয়ে মুখে দিলেন; তাতে তাঁর চোখ সতেজ হল।
28 তখন সৈন্যদের মধ্যে একজন তাঁকে বলল, “আপনার বাবা এই বলে সৈন্যদলকে কঠোর নিয়মানুবর্তী এক শপথে বেঁধে রেখেছেন যে, ‘আজ যে কেউ খাবার খাবে সে শাপগ্রস্ত হোক!’ তাইতো লোকেরা দুর্বল হয়ে পড়েছে।”
২৮তখন লোকেদের মধ্য একজন বলল, “তোমার বাবা শপথের সঙ্গে একটি দৃঢ় আদেশ দিয়েছেন, ‘যে ব্যক্তি আজ খাবার গ্রহণ করবে সে শাপগ্রস্ত হোক,’ কিন্তু লোকেরা দুর্বল হয়ে পড়েছে।”
29 যোনাথন বললেন, “আমার বাবা দেশে কষ্ট ডেকে এনেছেন। দেখো তো, এই মধুর কিছুটা চাখাতেই কীভাবে আমার চোখদুটি উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে।
২৯যোনাথন বললেন, “আমার বাবা তো লোকদের কষ্ট দিচ্ছেন, অনুরোধ করি, দেখ, এই মধু একটুখানি মুখে দেওয়াতে আমার চোখ সতেজ হল।
30 লোকেরা আজ যদি তাদের শত্রুদের কাছ থেকে কেড়ে নেওয়া লুন্ঠিত জিনিসপত্রের কিছুটা খেতে পারত তবে কতই না ভালো হত। ফিলিস্তিনীদের সংহার আরও বড়ো মাপের হত নাকি?”
৩০আজ যদি লোকেরা শত্রুদের কাছ থেকে লুটে নেওয়া খাবার থেকে যদি আজ লোকেরা খেতে পারত তাহলে আরো সতেজ হত। কারণ এখনও পলেষ্টীয়দের মধ্য মহাসংহার হয়নি।”
31 সেদিন, মিক্‌মস থেকে অয়ালোন পর্যন্ত ফিলিস্তিনীদের আঘাত করতে করতে ইস্রায়েলীরা ক্লান্ত হয়ে পড়েছিল।
৩১সেই দিন তারা মিক্‌মস থেকে অয়ালোন পর্যন্ত পলেষ্টীয়দের আঘাত করল; আর লোকেরা খুবই ক্লান্ত হয়ে পড়ল।
32 তারা লুন্ঠিত জিনিসপত্রের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে মেষ, গবাদি পশু ও বাছুরদের ধরে ধরে জমির উপরেই সেগুলি বধ করে রক্ত সমেত খেয়ে ফেলেছিল।
৩২পরে লোকেরা লুটের জিনিসের দিকে দৌড়িয়ে ভেড়া, গরু ও বাছুর ধরে মাটিতে ফেলে কেটে রক্ত শুদ্ধই খেতে লাগল।
33 তখন কেউ একজন গিয়ে শৌলকে বলল, “দেখুন, রক্ত সমেত মাংস খেয়ে লোকেরা সদাপ্রভুর বিরুদ্ধে পাপ করছে।” তিনি বললেন, “তোমরা বিশ্বাস ভঙ্গ করেছ। এখনই এখানে একটি বড়ো পাথর গড়িয়ে আনো।”
৩৩তখন কেউ কেউ শৌলকে বলল, “দেখুন, লোকেরা রক্ত শুদ্ধ মাংস খেয়ে সদাপ্রভুর বিরুদ্ধে পাপ করছে।” তাতে তিনি বললেন, “তোমরা অবিশ্বস্ত হয়েছ; আজ আমার কাছে একটা বড় পাথর গড়িয়ে নিয়ে এস।”
34 পরে তিনি বললেন, “লোকদের মধ্যে গিয়ে তাদের বলো, ‘তোমাদের মধ্যে প্রত্যেকে আমার কাছে তোমাদের গবাদি পশু ও মেষপাল নিয়ে এসো, ও সেগুলি এখানে বধ করে খেয়ে ফেলো। রক্ত সমেত মাংস খেয়ে তোমরা সদাপ্রভুর বিরুদ্ধে পাপ কোরো না।’” অতএব প্রত্যেকে সেরাত্রে যে যার বলদ নিয়ে এসে সেখানে বধ করল।
৩৪শৌল আরো বললেন, “তোমরা লোকদের মধ্যে চারিদিকে গিয়ে তাদেরকে বল, তোমরা প্রত্যেক জন নিজেদের গরু ও প্রত্যেকে নিজের নিজের ভেড়া আমার কাছে নিয়ে এস, আর এখানে মেরে খাও; রক্ত সমেত খেয়ে সদাপ্রভুর বিরুদ্ধে পাপ করো না।” সেই রাতে প্রত্যেকে যে যার গরু নিয়ে এসে সেখানে কাটল।
35 তখন শৌল সদাপ্রভুর উদ্দেশে এক যজ্ঞবেদি তৈরি করলেন; এই প্রথমবার তিনি এমনটি করলেন।
৩৫আর শৌল সদাপ্রভুর উদ্দেশ্যে একটা যজ্ঞবেদী তৈরী করলেন, তা সদাপ্রভুর উদ্দেশ্যে তাঁর তৈরী প্রথম বেদী।
36 শৌল বললেন, “চলো, আজ রাতেই আমরা ফিলিস্তিনীদের পিছনে তাড়া করে ভোর পর্যন্ত তাদের উপর লুটপাট চালাই, এবং তাদের মধ্যে একজনকেও প্রাণে বাঁচিয়ে না রাখি।” তারা উত্তর দিয়েছিল, “আপনার যা ভালো মনে হয় তাই করুন।” কিন্তু যাজক বললেন, “আসুন, আমরা এখানে ঈশ্বরের কাছে খোঁজ করি।”
৩৬পরে শৌল বললেন, “চল, আমরা রাতে পলেষ্টীয়দের তাড়া করি এবং সকাল পর্যন্ত তাদের জিনিসপত্র লুট করি এবং তাদের একজনকেও বাঁচিয়ে রাখব না।” তারা বলল, “আপনি যা ভাল মনে করেন তাই করুন।” পরে যাজক বললেন, “এস, আমরা এখানে ঈশ্বরের কাছে উপস্থিত হই।”
37 অতএব শৌল ঈশ্বরকে জিজ্ঞাসা করলেন, “আমি কি ফিলিস্তিনীদের পিছনে তাড়া করব? তুমি কি তাদের ইস্রায়েলের হাতে তুলে দেবে?” কিন্তু ঈশ্বর সেদিন তাঁকে কোনও উত্তর দেননি।
৩৭তাতে শৌল ঈশ্বরকে জিজ্ঞাসা করলেন, “আমি কি পলেষ্টীয়দের তাড়া করব? তুমি কি তাদের ইস্রায়েলীয়দের হাতে তুলে দেবে?” কিন্তু সেই দিন তিনি তাঁকে উত্তর দিলেন না।
38 অতএব শৌল বললেন, “তোমরা যারা সৈন্যদলের নেতা, তারা এখানে এসো, এবং খুঁজে দেখা যাক আজ কী পাপ ঘটেছে।
৩৮সেইজন্য শৌল বললেন, “সৈন্যদলের সমস্ত নেতারা, তোমরা কাছে এস এবং আজকের এই পাপ কি করে হল, জানো ও তার খোঁজ করে দেখ।
39 ইস্রায়েলের রক্ষাকর্তা সদাপ্রভুর দিব্যি, দোষ যদি আমার ছেলে যোনাথন করে থাকে, তবে তাকেই মরতে হবে।” কিন্তু তাদের কেউই কোনও কথা বলেনি।
৩৯ইস্রায়েলের উদ্ধারকর্তা জীবন্ত সদাপ্রভুর দিব্য, এমনকি আমার ছেলে যোনাথনও যদি তা করে থাকে তবে নিশ্চয়ই তাকেও মরতে হবে।” কিন্তু সমস্ত লোকের মধ্য কেউই তাঁকে উত্তর দিল না।
40 শৌল তখন সব ইস্রায়েলীকে বললেন, “তোমরা সব ওখানে দাঁড়িয়ে থাকো; আমি ও আমার ছেলে যোনাথন এখানে এসে দাঁড়াব।” “আপনার যা ভালো মনে হয়, তাই করুন,” তারা উত্তর দিয়েছিল।
৪০পরে তিনি সমস্ত ইস্রায়েলকে বললেন, “তোমরা এক দিকে থাক, আমি ও আমার ছেলে যোনাথন অন্য দিকে থাকি।” তাতে লোকেরা শৌলকে বলল, “আপনি যা ভাল মনে করেন তাই করুন।”
41 তখন শৌল ইস্রায়েলের ঈশ্বর সদাপ্রভুর কাছে প্রার্থনা করলেন, “আজ তুমি কেন তোমার দাসকে উত্তর দিলে না? আমি বা আমার ছেলে যোনাথন যদি দোষ করে থাকি, তবে ঊরীমের মাধ্যমে উত্তর দাও, কিন্তু ইস্রায়েলের জনতা যদি ভুল করে থাকে, তবে তূম্মীমের মাধ্যমে উত্তর দাও।” গুটিকাপাতের মাধ্যমে যোনাথন ও শৌল ধরা পড়েছিলেন, এবং জনতা মুক্ত হল।
৪১পরে শৌল সদাপ্রভুকে বললেন, “হে ইস্রায়েলের ঈশ্বর সঠিক কি তা দেখিয়ে দিন,” তখন যোনাথন ও শৌল ধরা পড়লেন, কিন্তু লোকেরা মুক্ত হল।
42 শৌল বললেন, “আমার ও আমার ছেলে যোনাথনের মধ্যে গুটিকাপাতের দান চালো।” তাতে যোনাথন ধরা পড়েছিলেন।
৪২পরে শৌল বললেন, “আমার ও আমার ছেলে যোনাথনের মধ্যে গুলিবাঁট করা হোক।” তাতে যোনাথন ধরা পড়ল।
43 তখন শৌল যোনাথনকে বললেন, “তুমি কী করেছ তা আমায় বলো।” যোনাথন তাঁকে বললেন, “আমি আমার লাঠির ডগায় করে একটু মধু চেখেছি। এখন আমায় মরতে হবে!”
৪৩তখন শৌল যোনাথনকে বললেন, “বল দেখি, তুমি কি করেছ?” যোনাথন তাঁকে বললেন, “আমার লাঠির আগা দিয়ে আমি একটুখানি মধু নিয়ে খেয়েছি, দেখুন, তাই আমাকে মরতে হবে।”
44 শৌল বললেন, “যোনাথন, তুমি যদি মারা না যাও, তবে ঈশ্বর যেন আমায় আরও বেশি শাস্তি দেন।”
৪৪শৌল বললেন, “ঈশ্বর তোমাকে তেমন ও তার বেশি শাস্তি দিন; যোনাথন, তুমি অবশ্যই মারা যাবে।”
45 কিন্তু লোকেরা শৌলকে বলল, “যিনি ইস্রায়েলে এমন মহা উদ্ধার এনে দিয়েছেন—সেই যোনাথন মরবেন? তা হবে না! জীবন্ত সদাপ্রভুর দিব্যি, তাঁর মাথার একটি চুলও মাটিতে পড়বে না, কারণ ঈশ্বরের সাহায্য নিয়ে তিনিই আজ এমনটি করেছেন।” অতএব লোকেরা যোনাথনকে রক্ষা করল, এবং তাঁকে মরতে হয়নি।
৪৫কিন্তু লোকেরা শৌলকে বলল, “ইস্রায়েলের মধ্য যিনি এই মহান উদ্ধার করেছেন, সেই যোনাথন কি মারা যাবেন? এমন না হোক; জীবন্ত সদাপ্রভুর দিব্য, তাঁর মাথার একটা চুলও মাটিতে পড়বে না, কারণ তিনি আজ ঈশ্বরের সঙ্গে কাজ করেছেন।” এই ভাবে লোকেরা যোনাথনকে রক্ষা করল, তাঁর মৃত্যু হল না।
46 পরে শৌল আর ফিলিস্তিনীদের পশ্চাদ্ধাবন করেননি, এবং তারাও তাদের দেশে ফিরে গেল।
৪৬পরে শৌল পলেষ্টীয়দের তাড়া করলেন না, আর পলেষ্টীয়েরাও নিজেদের দেশে চলে গেল।
47 শৌল ইস্রায়েলের উপর রাজত্ব করা শুরু করার পরপরই তিনি তাদের সব শত্রুর: মোয়াব, অম্মোনীয়, ইদোমীয়, সোবার রাজাদের ও ফিলিস্তিনীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করলেন। তিনি যেদিকেই যেতেন, তাদের শাস্তি দিয়ে যেতেন।
৪৭ইস্রায়েলীয়দের উপর রাজা হবার পর শৌল সমস্ত দিকে সমস্ত শত্রুদের সঙ্গে, মোয়াবের, অম্মোন সন্তানদের, ইদোমের, সোবার রাজাদের ও পলেষ্টীয়দের সঙ্গে যুদ্ধ করলেন; তিনি যেদিকে যেতেন সেদিকেই ভীষণ ক্ষতি করতেন।
48 তিনি বীরের মতো যুদ্ধ করে অমালেকীয়দের পরাস্ত করলেন, ও ইস্রায়েলকে তাদের হাত থেকে মুক্ত করলেন, যারা তাদের উপর লুঠতরাজ চালিয়েছিল।
৪৮তিনি বীরের মত কাজ করতেন, অমালেকীয়দের আঘাত করলেন এবং লুটকারীদের হাত থেকে ইস্রায়েলকে রক্ষা করলেন।
49 শৌলের ছেলেদের নাম যোনাথন, যিশবি ও মল্কীশূয়। তাঁর বড়ো মেয়ের নাম মেরব ও ছোটোটির নাম মীখল।
৪৯যোনাথন, যিশ্‌বি ও মল্কীশূয় নামে শৌলের তিনজন ছেলে ছিল; তাঁর বড় মেয়ের নাম ছিল মেরব ও ছোট মেয়ের নাম ছিল মীখল।
50 তাঁর স্ত্রীর নাম অহীনোয়ম, যিনি অহীমাসের মেয়ে। শৌলের সৈন্যদলের সেনাপতির নাম অবনের, তিনি নেরের ছেলে, এবং নের ছিলেন শৌলের কাকা।
৫০আর শৌলের স্ত্রীর নাম ছিল অহীনোয়ম, তিনি অহীমাসের মেয়ে; এবং তাঁর সেনাপতির নাম অব্‌নের; তিনি শৌলের কাকা নেরের ছেলে।
51 শৌলের বাবা কীশ ও অবনেরের বাবা নের ছিলেন অবীয়েলের ছেলে।
৫১আর কীশ শৌলের বাবা এবং অব্‌নেরের বাবা নের ছিলেন অবীয়েলের ছেলে।
52 শৌলের সমগ্র রাজত্বকাল জুড়ে ফিলিস্তিনীদের সঙ্গে তাদের ভীষণ যুদ্ধ লেগেই থাকত, এবং শৌল যখনই কোনও মহান বা সাহসী লোক দেখতেন, তিনি তাকে তাঁর সৈন্যদলে ভর্তি করে নিতেন।
৫২শৌলের রাজত্বকালে পলেষ্টীয়দের সঙ্গে ভীষণ যুদ্ধ হয়েছিল। আর শৌল কোন শক্তিশালী লোক বা কোন বীর পুরুষকে দেখলেই গ্রহণ করতেন।

< শমূয়েলের প্রথম বই 14 >