< শমূয়েলের প্রথম বই 10 >

1 একথা বলে শমূয়েল এক কুপি জলপাইয়ের তেল নিয়ে শৌলের মাথায় তা ঢেলে দিলেন ও তাঁকে চুমু দিয়ে বললেন, “সদাপ্রভুই কি তোমাকে তাঁর অধিকারের উপর শাসনকর্তা পদে অভিষিক্ত করেননি?
তারপর শমূয়েল একটা তেলের শিশি নিয়ে শৌলের মাথার উপর ঢেলে দিলেন এবং তাঁকে চুমু দিয়ে বললেন, “সদাপ্রভু কি তোমাকে তাঁর সমস্ত কিছুর (উত্তরাধিকারের) উপর রাজা হিসাবে অভিষেক করেন নি?
2 আজ আমায় ছেড়ে যাওয়ার পর, বিন্যামীন গোষ্ঠীভুক্ত এলাকার সীমানায় সেলসহ বলে একটি স্থানে রাহেলের সমাধির কাছে তুমি দুজন লোকের দেখা পাবে। তারা তোমাকে বলবে, ‘যে গাধিগুলির খোঁজে আপনি গিয়েছিলেন, সেগুলি পাওয়া গিয়েছে। এখন আপনার বাবা সেগুলির কথা না ভেবে বরং আপনার কথা ভেবেই দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন। তিনি জানতে চাইছেন, “আমার ছেলের জন্য আমি কী করব?”’
তুমি আমার কাছ থেকে চলে যাবার পর আজ বিন্যামীন এলাকার সীমানায় সেল্‌সহে রাহেলের কবরের কাছে দুইজন লোকের দেখা পাবে; তারা তোমাকে বলবে, ‘তুমি যে সব গাধীগুলোর খোঁজে বেরিয়েছিলে সেগুলো পাওয়া গেছে, কিন্তু এখন, তোমার বাবা গাধীগুলোর চিন্তা ছেড়ে তোমার জন্য চিন্তা করছেন, বলছেন, আমার ছেলের জন্য কি করব’?”
3 “তারপর তুমি সেখান থেকে তাবোরের ওক গাছটির কাছাকাছি গিয়ে পৌঁছাবে। বেথেলে আরাধনা করতে যাচ্ছে, এমন তিনটি লোকের সঙ্গে সেখানে তোমার দেখা হবে। দেখবে একজন তিনটি ছাগলছানা, অন্যজন তিনটি রুটি, আর একজন এক মশক ভর্তি দ্রাক্ষারস বহন করে নিয়ে যাচ্ছে।
তারপর তুমি সেখান থেকে এগিয়ে গিয়ে তাবোর এলাকার এলোন গাছের কাছে গেলে দেখতে পাবে, তিনজন লোক যারা বৈথেলে ঈশ্বরের কাছে যাচ্ছে, তুমি দেখবে, তাদের একজন তিনটি ছাগলের বাচ্চা, আর একজন তিনটি রুটি ও আর একজন এক পাত্র আঙুর-রস বয়ে নিয়ে যাচ্ছে।
4 তারা তোমায় শুভেচ্ছা জানাবে এবং তোমাকে দুটি রুটি নিতে বলবে, যা তুমি তাদের কাছ থেকে গ্রহণও করবে।
তারা তোমাকে শুভেচ্ছা জানাবে ও দুইটি রুটি দেবে এবং তুমি তা তাদের হাত থেকে নেবে।
5 “পরে তুমি ঈশ্বরের গিবিয়াতে যাবে, যেখানে ফিলিস্তিনীদের একটি সেনা-ছাউনি আছে। নগরে পৌঁছাতে না পৌঁছাতেই, তুমি একদল ভাববাদীকে শোভাযাত্রা করে টিলা থেকে নেমে আসতে দেখবে। তাঁদের সামনে সামনে লোকেরা দোতারা, খোল, বাঁশি ও বীণা বাজাবে, এবং তাঁরা ভাববাণী বলবেন।
তারপর পলেষ্টীয়দের সৈন্যরা যেখানে আছে, ঈশ্বরের সেই পাহাড়ে উপস্থিত হবে, সেই শহরে পৌঁছালে পর, এমন এক দল ভাববাদীর সঙ্গে তোমার দেখা হবে যারা বীণা, খঞ্জনি, বাঁশী ও তবলা নিয়ে উঁচু স্থান থেকে নেমে আসছে, আর ভাববাণী প্রচার করছে।
6 সদাপ্রভুর আত্মা প্রবল পরাক্রমে তোমার উপর নেমে আসবেন, এবং তুমিও তাঁদের সঙ্গে সঙ্গে ভাববাণী বলবে; আর তুমি পরিবর্তিত হয়ে গিয়ে একদম অন্যরকম মানুষ হয়ে যাবে।
তখন সদাপ্রভুর আত্মা সম্পূর্ণভাবে তোমার উপরে আসবেন, তাতে তুমিও তাদের সঙ্গে ভাববাণী প্রচার করবে এবং অন্য ধরনের মানুষ হয়ে যাবে।
7 একবার এই চিহ্নগুলি সার্থক হতে দাও, পরে তুমি যা যা করতে চাও, সব কোরো, কারণ ঈশ্বর তোমার সঙ্গে আছেন।
এই সব চিহ্ন তোমার প্রতি ঘটলে পর তোমার তখন যা করা উচিত তুমি তাই কোরো; কারণ ঈশ্বর তোমার সঙ্গে থাকবেন।
8 “আমার আগে আগেই তুমি গিল্‌গলে নেমে যাও। আমিও অবশ্যই হোমবলি ও মঙ্গলার্থক-নৈবেদ্য উৎসর্গ করার জন্য তোমার কাছে নেমে আসব, কিন্তু আমি এসে তোমাকে কী করতে হবে, তা না বলা পর্যন্ত তোমাকে সাত দিন অপেক্ষা করতেই হবে।”
“আর তুমি আমার আগে নেমে গিল্‌গলে যাবে, আর দেখ হোমবলি ও মঙ্গলার্থক বলি উত্সর্গ করবার জন্য আমি তোমার কাছে যাব; আমি যতক্ষণ না তোমার কাছে গিয়ে তোমার কর্তব্য তোমাকে না জানাই সেই পর্যন্ত তুমি সাত দিন অপেক্ষা করবে।”
9 শমূয়েলের কাছ থেকে চলে যাওয়ার জন্য শৌল ঘুরে দাঁড়াতে না দাঁড়াতেই, ঈশ্বর শৌলের অন্তর পরিবর্তিত করে দিলেন, এবং সেদিনই সেইসব চিহ্ন সার্থক হল।
পরে তিনি শমূয়েলের কাছ থেকে চলে যাবার উদ্দেশ্যে ঘুরে দাঁড়াতেই ঈশ্বর তাঁর মন বদলে দিলেন এবং সেই দিন ই সেই সমস্ত চিহ্ন সফল হল।
10 যখন তিনি ও তাঁর দাস গিবিয়াতে পৌঁছালেন, শোভাযাত্রা করে আসা ভাববাদীদের সঙ্গে তাঁর দেখা হল; ঈশ্বরের আত্মা প্রবল পরাক্রমে তাঁর উপর নেমে এলেন, এবং তিনিও তাঁদের সঙ্গে যোগ দিয়ে ভাববাণী বললেন।
১০তাঁরা সেখানে, সেই পাহাড়ে উপস্থিত হলে, দেখ, এক দল ভাববাদী তাঁর সামনে পড়ল এবং ঈশ্বরের আত্মা শৌলের উপর সবলে এলেন ও তাঁদের মাঝখানে তিনি ভাববাণী প্রচার করতে লাগলেন।
11 যখন তাঁর পূর্বপরিচিত লোকেরা ভাববাদীদের সঙ্গে সঙ্গে তাঁকেও ভাববাণী বলতে দেখল, তারা তখন পরস্পরকে জিজ্ঞাসা করল, “কীশের ছেলের হোলো-টা কী? শৌলও কি ভাববাদীদের মধ্যে একজন?”
১১আর যারা তাঁকে আগে থেকেই চিনত, তারা সবাই যখন দেখল যে, তিনিও ভাববাদীদের সঙ্গে ভাববাণী প্রচার করছেন, তখন লোকেরা একে অন্যকে বলতে লাগল, “কিসের ছেলের কি হল? শৌলও কি ভাববাদীদের মধ্যে একজন?”
12 সেখানে বসবাসকারী একজন উত্তর দিল, “আর এদের বাবাই বা কে?” অতএব এটি এক প্রবাদবাক্যে পরিণত হল: “শৌলও কি ভাববাদীদের মধ্যে একজন?”
১২তাতে সেখানকার একজন লোক বলল, “কিন্তু ওদের বাবা কে?” এই ভাবে, “শৌলও কি ভাববাদীদের মধ্যে একজন?” এই কথাটি প্রবাদ হয়ে উঠল৷
13 শৌল ভাববাণী বলা শেষ করে, টিলায় উঠে গেলেন।
১৩পরে তিনি ভাববাণী বলা শেষ করে উঁচু স্থানে উঠে গেলেন।
14 পরে শৌলের কাকা তাঁকে ও তাঁর দাসকে জিজ্ঞাসা করলেন, “তোমরা কোথায় গিয়েছিলে?” “গাধিগুলির খোঁজে,” তিনি উত্তর দিলেন। “কিন্তু সেগুলির খোঁজ না পেয়ে আমরা শমূয়েলের কাছে চলে গিয়েছিলাম।”
১৪পরে শৌলের কাকা শৌল ও তাঁর চাকরকে জিজ্ঞাসা করলেন, “তোমরা কোথায় গিয়েছিলে?” তিনি বললেন, “গাধীগুলো খুঁজতে গিয়েছিলাম, কিন্তু সেগুলো কোথাও না পেয়ে আমরা শমূয়েলের কাছে গিয়েছিলাম।”
15 শৌলের কাকা বললেন, “আমায় বলো শমূয়েল তোমায় কী বলেছেন।”
১৫শৌলের কাকা বললেন, “আমাকে বল, শমূয়েল তোমাদের কি বলেছেন?”
16 শৌল উত্তর দিলেন, “তিনি আমাদের আশ্বস্ত করে বললেন যে গাধিগুলি খুঁজে পাওয়া গিয়েছে।” কিন্তু শমূয়েল রাজপদের বিষয়ে কী বলেছিলেন তা তিনি তাঁর কাকাকে বলেননি।
১৬তখন শৌল তাঁর কাকাকে বললেন, “তিনি আমাদের স্পষ্টই বলে দিলেন যে, গাধীগুলো পাওয়া গেছে।” কিন্তু তাঁর রাজত্ব করার সম্বন্ধে শমূয়েল তাঁকে যে কথা বলেছিলেন তা তিনি তাঁকে বললেন না।
17 শমূয়েল লোকজনকে মিস্‌পাতে সদাপ্রভুর কাছে উপস্থিত হওয়ার ডাক দিলেন
১৭পরে শমূয়েল মিসপাতে সদাপ্রভুর সামনে লোকদের ডেকে জড়ো করলেন।
18 এবং তাদের বললেন, “ইস্রায়েলের ঈশ্বর সদাপ্রভু একথা বলেন: ‘আমি ইস্রায়েলকে মিশর থেকে বাইরে বের করে এনেছি, এবং তোমাদের উপর যারা অত্যাচার করত, সেই মিশরের ও অন্য সব রাজ্যের হাত থেকে আমিই তোমাদের মুক্ত করেছি।’
১৮আর ইস্রায়েল-সন্তানদের বললেন, “সদাপ্রভু ইস্রায়েলের ঈশ্বর এমন বলেন, ‘আমি ইস্রায়েলেকে মিশর থেকে নিয়ে এসেছি এবং মিশরীয়দের হাত থেকে ও যে রাজ্যগুলো তোমাদের উপর অত্যাচার করত তাদের হাত থেকে তোমাদের উদ্ধার করেছি’।”
19 কিন্তু এখন তোমরা তোমাদের সেই ঈশ্বরকেই নাকচ করে দিয়েছ, যিনি তোমাদের সব দুর্বিপাক ও বিপর্যয়ের হাত থেকে উদ্ধার করেছেন। আর তোমরা বলেছ, ‘না, আমাদের উপর একজন রাজা নিযুক্ত করে দিন।’ তাই এখন তোমাদের গোষ্ঠী ও বংশ অনুসারে সদাপ্রভুর সামনে নিজেদের পেশ করো।”
১৯“কিন্তু তোমরা আজ তোমাদের ঈশ্বরকে, যিনি সমস্ত বিপদ ও দুর্দশা থেকে তোমাদের উদ্ধার করে চলেছেন, তাঁকেই তোমরা অগ্রাহ্য করলে এবং তাঁকে বললে যে, ‘আমাদের উপরে একজন রাজা নিযুক্ত করুন,’ তাই তোমরা এখন নিজেদের বংশ অনুসারে ও হাজার-হাজার লোক অনুসারে সদাপ্রভুর সামনে উপস্থিত হও।”
20 শমূয়েল ইস্রায়েলের সব লোকজনকে তাদের গোষ্ঠী অনুসারে কাছে ডেকে আনার পর গুটিকাপাত করে বিন্যামীনের গোষ্ঠীকে বেছে নেওয়া হল।
২০পরে শমূয়েল ইস্রায়েলের সমস্ত গোষ্ঠীকে কাছে নিয়ে আসলে বিন্যামীন বংশকে নির্দিষ্ট করা হল।
21 পরে এক-একটি বংশ ধরে ধরে তিনি বিন্যামীনের গোষ্ঠীকে কাছে ডেকে এনেছিলেন, এবং মট্রীয় বংশকে মনোনীত করা হল। সবশেষে কীশের ছেলে শৌলকে মনোনীত করা হল। কিন্তু যখন তারা তাঁর খোঁজ করল, তাঁকে খুঁজে পাওয়া গেল না।
২১আর এক এক বংশ অনুসারে বিন্যামীন বংশকে কাছে নিয়ে এলে, মট্রীয়ের বংশকে বেছে নেওয়া হল এবং তাদের মধ্য কীশের ছেলে শৌলকে বেছে নেওয়া হল। কিন্তু তাঁর খোঁজ করা হলে তাঁকে পাওয়া গেল না।
22 অতএব তারা আরেকবার সদাপ্রভুর কাছে জানতে চাইল, “লোকটি কি এখনও এখানে আসেনি?” সদাপ্রভু বললেন, “হ্যাঁ, সে মালপত্রের মধ্যে নিজেকে লুকিয়ে রেখেছে।”
২২সেইজন্য তারা আবার সদাপ্রভুকে জিজ্ঞাসা করল, “আর কেউ কি এখানে আছে?” সদাপ্রভু বললেন, “দেখ, সে মালপত্রের মধ্যে লুকিয়ে আছে।”
23 তারা দৌড়ে গিয়ে তাঁকে বের করে আনল, এবং তিনি লোকজনের মাঝখানে দাঁড়ালে দেখা গেল, তিনি অন্য সবার চেয়ে বেশ কিছুটা লম্বা।
২৩তখন তারা দৌড়ে গিয়ে সেখান থেকে শৌলকে নিয়ে আসল। আর তিনি এসে লোকদের মধ্যে দাঁড়ালে পর দেখা গেল তিনি সবার থেকে লম্বা ও সবাই তাঁর কাঁধ পর্যন্ত।
24 শমূয়েল সব লোকজনকে বললেন, “সদাপ্রভু যাঁকে মনোনীত করেছেন তাঁকে কি তোমরা দেখতে পাচ্ছ? সব লোকজনের মধ্যে তাঁর সমতুল্য কেউই নেই।” তখন লোকেরা চিৎকার করে বলে উঠল, “রাজা চিরজীবী হোন!”
২৪পরে শমূয়েল সবাইকে বললেন, “তোমরা কি একে দেখতে পাচ্ছ? ইনিই সদাপ্রভুর মনোনীত; সমস্ত লোকের মধ্যে তাঁর মত আর কেউ নেই।” তখন সমস্ত লোকেরা জয়ধ্বনি দিয়ে বলল, “রাজা চিরজীবী হোন।”
25 শমূয়েল লোকজনের কাছে রাজপদের অধিকার ও দায়িত্ব-কর্তব্যগুলি ব্যাখ্যা করে দিলেন। একটি পুঁথিতে সেগুলি লিখে রেখে তিনি সেটি সদাপ্রভুর সামনে গচ্ছিত রাখলেন। পরে শমূয়েল নিজের নিজের বাড়িতে ফিরে যাওয়ার জন্য লোকদের অনুমতি দিলেন।
২৫পরে শমূয়েল লোকদেরকে রাজ্য শাসনের নিয়ম-কানুনগুলো বললেন এবং সেগুলো একটা বইয়ে লিখে সদাপ্রভুর সামনে রাখলেন। তারপর শমূয়েল সমস্ত লোককে যার যার বাড়িতে পাঠিয়ে দিলেন।
26 শৌলও গিবিয়াতে নিজের ঘরে ফিরে গেলেন, ও তাঁর সঙ্গে গেলেন এমন কয়েকজন অসমসাহসী লোক, যাদের অন্তর ঈশ্বর স্পর্শ করেছিলেন।
২৬আর শৌলও গিবিয়াতে তাঁর নিজের বাড়িতে ফিরে গেলেন এবং ঈশ্বর যাদের হৃদয় স্পর্শ করলেন এমন একদল সৈন্য তাঁর সঙ্গে গেল।
27 কিন্তু কয়েকজন নীচমনা লোক বলল, “এ ‘ব্যাটা’ কীভাবে আমাদের রক্ষা করবে?” তারা তাঁকে অবজ্ঞা করল ও তাঁর জন্য কোনও উপহার আনল না। কিন্তু শৌল নীরব থেকে গেলেন।
২৭কিন্তু কতগুলো বাজে লোক বলল, “এই লোকটা কি করে আমাদের রক্ষা করবে?” তারা তাঁকে তুচ্ছ করল এবং কোন উপহার দিল না; তবুও তিনি বধিরের (চুপ করে) মত থাকলেন।

< শমূয়েলের প্রথম বই 10 >