< শমূয়েলের প্রথম বই 1 >

1 ইফ্রয়িমের পার্বত্য এলাকায় রামাথয়িম-সোফিম নগরে ইল্‌কানা নামে ইফ্রয়িম গোষ্ঠীভুক্ত এক ব্যক্তি বসবাস করতেন। তাঁর বাবার নাম যিরোহম, যিরোহম ইলীহূর ছেলে, ইলীহূ তোহের ছেলে এবং তোহ ছিলেন সূফের ছেলে।
ইফ্রয়িমের পাহাড়ী এলাকায় রামাথয়িম (গ্রামের) সোফীম শহরে ইলকানা নামে একজন লোক ইফ্রয়িম গোষ্ঠীর লোকদের সঙ্গে বাস করতেন। তাঁর বাবার নাম ছিল যিরোহম। যিরোহম ছিলেন ইলীহূর ছেলে, ইলীহূ ছিলেন তোহের ছেলে এবং তোহ ছিলেন সুফের ছেলে।
2 ইল্‌কানার দু্‌ই স্ত্রী ছিল; একজনের নাম হান্না, অন্যজনের নাম পনিন্না। পনিন্না সন্তানের জন্ম দিয়েছিলেন, কিন্তু হান্নার কোনও সন্তান ছিল না।
তাঁর দুইজন স্ত্রী ছিল; এক জনের নাম হান্না আর অন্য জনের নাম পনিন্না। পনিন্নার ছেলেমেয়ে হয়েছিল, কিন্তু হান্নার কোনো ছেলেমেয়ে হয়নি।
3 প্রত্যেক বছর ইল্‌কানা নিজের নগর থেকে শীলোতে গিয়ে সর্বশক্তিমান সদাপ্রভুর আরাধনা করতেন ও বলিদান সম্পন্ন করতেন। সেখানে এলির দুই ছেলে, হফনি ও পীনহস সদাপ্রভুর যাজকের কাজ করত।
এই ব্যক্তি প্রত্যেক বছর তাঁর শহর থেকে শীলোতে গিয়ে বাহিনীগণের সদাপ্রভুর উপাসনা ও বলিদান করতেন। সেখানে এলির দুই ছেলে হফ্‌নি ও পীনহস সদাপ্রভুর যাজক ছিল।
4 বলিদানের নিরূপিত দিন এলে ইল্‌কানা তাঁর স্ত্রী পনিন্না ও তাঁর সব ছেলেমেয়েকে বলিকৃত মাংসের ভাগ দিতেন।
যজ্ঞের দিনের ইলকানা তাঁর স্ত্রী পনিন্না ও তাঁর সব ছেলে মেয়েদের ভাগ দিতেন।
5 কিন্তু হান্নাকে তিনি দ্বিগুণ অংশ দিতেন, যেহেতু তিনি তাঁকে ভালোবাসতেন, এবং সদাপ্রভু হান্নাকে বন্ধ্যা করে রেখেছিলেন।
কিন্তু হান্নাকে দুই ভাগ দিতেন, কারণ তিনি হান্নাকে ভালবাসতেন। কিন্তু সদাপ্রভু হান্নাকে বন্ধ্যা করে রেখেছিলেন।
6 যেহেতু সদাপ্রভু হান্নাকে বন্ধ্যা করে রেখেছিলেন তাই তাঁর সতীন তাঁকে বিরক্ত করার জন্য অনবরত তাঁকে প্ররোচিত করে যেত।
সদাপ্রভু তাঁকে বন্ধ্যা রেখেছিলেন বলে তাঁর সতীন (প্রতিদ্বন্দী স্ত্রী) তাঁকে দুঃখ দেবার চেষ্টায় বিরক্ত করে তুলত।
7 বছরের পর বছর এরকম হয়েই চলেছিল। যখনই হান্না সদাপ্রভুর মন্দিরে যেতেন, তাঁর সতীন তাঁকে প্ররোচিত করত এবং তিনি অশ্রুপাত করতেন ও ভোজনপানও করতেন না।
বছরের পর বছর হান্না যখনই সদাপ্রভুর ঘরে যেতেন তখন তাঁর স্বামী ঐরকম করতেন এবং পনিন্না তাঁকে ঐভাবে বিরক্ত করতেন; তাই তিনি কিছু না খেয়ে কান্নাকাটি করতেন।
8 তাঁর স্বামী ইল্‌কানা তাঁকে বলতেন, “হান্না, তুমি কেন অশ্রুপাত করছ? তুমি ভোজনপান করছ না কেন? তুমি মন খারাপই বা করে আছ কেন? তোমার কাছে দশ ছেলের চেয়ে আমি কি বেশি নই?”
তাতে তাঁর স্বামী ইলকানা তাঁকে বলতেন, “হান্না, কেন কাঁদছ? কেন কিছু খাচ্ছ না? তোমার মনে এত দুঃখ কেন? আমি কি তোমার কাছে দশটা ছেলের চেয়েও বেশী না?”
9 একবার শীলোতে তাঁদের ভোজনপান শেষ হয়ে যাওয়ার পর হান্না উঠে দাঁড়িয়েছিলেন। যাজক এলি তখন সদাপ্রভুর গৃহের দ্বারে, তাঁর আসনে বসেছিলেন।
এক দিন শীলোতে খাওয়া দাওয়া শেষ করে হান্না উঠলেন৷ তখন এলি সদাপ্রভুর মন্দিরের দরজার কাছে যাজকের আসনে বসে ছিলেন।
10 গভীর মনোবেদনা নিয়ে হান্না অশ্রুপাত করে সদাপ্রভুর কাছে প্রার্থনা করলেন।
১০হান্না প্রচণ্ড দুঃখে সদাপ্রভুর কাছে কাতর স্বরে কেঁদে প্রার্থনা করতে লাগলেন।
11 তিনি শপথ করে বললেন, “হে সর্বশক্তিমান সদাপ্রভু, যদি তুমি শুধু তোমার এই দাসীর দুর্দশা দেখে আমাকে স্মরণ করো, এবং তোমার এই দাসীকে ভুলে না গিয়ে আমাকে একটি ছেলে দাও, তবে আমি তাকে সারাটি জীবনের জন্য সদাপ্রভুর হাতে সমর্পণ করে দেব, এবং তার মাথায় কখনও ক্ষুর ব্যবহার করা হবে না।”
১১তিনি মানত করে বললেন, “হে বাহিনীগণের সদাপ্রভু, যদি তুমি তোমার এই দাসীর দুঃখের প্রতি মনোযোগ দাও, আমাকে স্মরণ কর এবং তোমার দাসীকে ভুলে না গিয়ে তোমার এই দাসীকে যদি একটা ছেলে দাও তবে সারা জীবনের জন্য আমি তাকে সদাপ্রভুর উদ্দেশ্যে দান করব; তার মাথায় ক্ষুর লাগানো হবে না।”
12 তিনি যখন সদাপ্রভুর কাছে প্রার্থনা করেই যাচ্ছিলেন তখন এলি তাঁর মুখটি নিরীক্ষণ করছিলেন।
১২যতক্ষণ হান্না সদাপ্রভুর কাছে দীর্ঘ প্রার্থনা করলেন ততক্ষণ এলি তাঁর মুখের দিকে তাকিয়ে থাকলেন।
13 হান্না মনে মনে প্রার্থনা করছিলেন, এবং তাঁর ঠোঁট দুটি কাঁপছিল কিন্তু তাঁর কণ্ঠস্বর শোনা যাচ্ছিল না। এলি ভেবেছিলেন, হান্না মদ্যপান করেছেন।
১৩হান্না মনে মনে কথা বলছিলেন, তাঁর ঠোঁট নড়ছিল, কিন্তু গলার আওয়াজ শোনা যাচ্ছিল না। সেইজন্য এলি তাঁকে মাতাল ভাবলেন।
14 তিনি তাঁকে বললেন, “আর কত কাল তুমি মদ্যপ অবস্থায় থাকবে? মদ্যপান করা বন্ধ করো।”
১৪তাই এলি তাঁকে বললেন, “তুমি কতক্ষণ মাতাল হয়ে থাকবে? আঙ্গুর রস তোমার থেকে দূর কর।”
15 হান্না উত্তর দিলেন, “হে আমার প্রভু, এমনটি নয়; আমি এমন এক নারী, যে বড়োই দুঃখিনী। আমি দ্রাক্ষারস পান করিনি বা মদ্যপানও করিনি; আমি সদাপ্রভুর উদ্দেশে আমার অন্তর উজাড় করে দিচ্ছিলাম।
১৫হান্না উত্তরে বললেন, “হে আমার প্রভু, তা নয়। আমি দুঃখিনী স্ত্রী, আমি আংগুর-রস কিংবা মদ পান করি নি। সদাপ্রভুর সামনে আমার মনের কথা ভেঙে বলেছি।
16 আপনার এই দাসীকে বদ মহিলা বলে মনে করবেন না; আমি গভীর দুঃখ ও মনস্তাপ নিয়ে এখানে প্রার্থনা করে চলেছি।”
১৬আপনার এই দাসীকে আপনি একজন মন্দ স্ত্রীলোক মনে করবেন না। আসলে আমার চিন্তা ও মনের দুঃখের জন্য আমি এতক্ষণ কথা বলছিলাম।”
17 এলি উত্তর দিলেন, “শান্তিপূর্বক চলে যাও, এবং ইস্রায়েলের ঈশ্বরের কাছে তুমি যা চেয়েছ, তিনি তা তোমাকে দান করুন।”
১৭তখন এলি উত্তর দিলেন, “তুমি শান্তিতে যাও; ইস্রায়েলীয়দের ঈশ্বরের কাছে তুমি যা চাইলে, তা যেন তিনি তোমাকে দেন।”
18 হান্না বললেন, “আপনার এই দাসী আপনার দৃষ্টিতে অনুগ্রহপ্রাপ্ত হোক।” পরে তিনি ফিরে গিয়ে ভোজনপান করলেন, এবং তাঁর মুখ আর বিষণ্ণ থাকেনি।
১৮হান্না বললেন, “আপনার দৃষ্টিতে আপনার এই দাসী অনুগ্রহ পাক।” এই বলে তিনি তার পথে চলে গেলেন এবং খাওয়া দাওয়া করলেন। তাঁর মুখে আর দুঃখের ছায়া থাকল না।
19 পরদিন ভোরবেলায় তাঁরা উঠে সদাপ্রভুর আরাধনা করলেন এবং পরে রামায় তাঁদের বাড়িতে ফিরে গেলেন। ইল্‌কানা তাঁর স্ত্রী হান্নার সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করলেন, এবং সদাপ্রভু হান্নাকে স্মরণ করলেন।
১৯পরে তাঁরা খুব ভোরে উঠে সদাপ্রভুর উপাসনা করলেন এবং রামায় তাঁদের নিজেদের বাড়িতে ফিরে গেলেন। পরে ইলকানা তাঁর স্ত্রী হান্নার সঙ্গে মিলিত হলে সদাপ্রভু তাঁকে স্মরণ করলেন।
20 যথাসময়ে হান্না গর্ভবতী হলেন এবং এক ছেলের জন্ম দিলেন। তিনি এই বলে ছেলের নাম রাখলেন শমূয়েল যে, “আমি সদাপ্রভুর কাছ থেকে তাকে চেয়ে নিয়েছি।”
২০তাতে নির্দিষ্ট দিনের হান্না গর্ভবতী হয়ে একটি ছেলের জন্ম দিলেন, আর আমি সদাপ্রভুর কাছ থেকে তাকে চেয়ে নিয়েছি, এই বলে তার নাম শমূয়েল রাখলেন।
21 হান্নার স্বামী ইল্‌কানা যখন তাঁর সম্পূর্ণ পরিবারসহ সদাপ্রভুর উদ্দেশে বাৎসরিক বলিদান উৎসর্গ করতে ও তাঁর মানত পূরণ করতে গেলেন,
২১পরে তাঁর স্বামী ইলকানা ও তাঁর সমস্ত পরিবার সদাপ্রভুর উদ্দেশ্যে বার্ষিক বলিদান ও মানত নিবেদন করতে গেলেন,
22 হান্না সঙ্গে যাননি। তিনি তাঁর স্বামীকে বললেন, “বালকটির স্তন্য-ত্যাগ করানোর পরই আমি তাকে নিয়ে গিয়ে সদাপ্রভুর সামনে উপস্থিত করব, এবং সে আজীবন সেখানে বসবাস করবে।”
২২কিন্তু হান্না গেলেন না, কারণ তিনি স্বামীকে বললেন, “ছেলেটিকে বুকের দুধ ছাড়ানোর পর আমি তাকে নিয়ে যাব, তাতে সে সদাপ্রভুর সামনে উপস্থিত হয়ে সবদিন সেখানেই থাকবে।”
23 তাঁর স্বামী ইল্‌কানা তাঁকে বললেন, “তোমার যা ভালো বলে মনে হয়, তুমি তাই করো। তার স্তন্য-ত্যাগ না হওয়া পর্যন্ত তুমি এখানে থাকো; সদাপ্রভু শুধু যেন তাঁর বাক্য সুস্থির করেন।” অতএব হান্না ঘরে থেকে গিয়ে ছেলেটি স্তন্য-ত্যাগ না করা পর্যন্ত তাকে স্তন্যদান করে যেতে লাগলেন।
২৩তাঁর স্বামী ইলকানা তাঁকে বললেন, “তোমার দৃষ্টিতে যা ভাল মনে হয় তাই কর; তার দুধ ছাড়ানো পর্যন্ত তুমি অপেক্ষা কর; সদাপ্রভু শুধু তাঁর বাক্য পূরণ করুন।” অতএব সেই স্ত্রী বাড়ীতেই রয়ে গেলেন এবং ছেলেটিকে দুধ না ছাড়ানো পর্যন্ত তাকে দুধ পান করালেন।
24 সে স্তন্য-ত্যাগ করার পর তিনি একটি তিন বছর বয়স্ক বলদ, এক ঐফা ময়দা, এবং এক মশক দ্রাক্ষারস সমেত ছেলেটিকে শীলোতে সদাপ্রভুর গৃহে নিয়ে গেলেন।
২৪পরে তার দুধ ছাড়ার পর তিনি তিনটি ষাঁড়, এক ঐফা সুজী ও এক থলি আংগুর-রসের সঙ্গে তাকে শীলোতে সদাপ্রভুর বাড়িতে নিয়ে গেলেন; তখন ছেলেটির অল্প বয়স ছিল।
25 বলদটিকে বলি দেওয়ার পর তাঁরা ছেলেটিকে এলির কাছে নিয়ে গেলেন,
২৫পরে তাঁরা ষাঁড় বলিদান করলেন এবং ছেলেটিকে এলির কাছে নিয়ে গেলেন।
26 এবং হান্না তাঁকে বললেন, “হে আমার প্রভু, আমায় ক্ষমা করবেন। আপনার জীবনের দিব্যি, আমিই সেই নারী, যে এখানে আপনার পাশে দাঁড়িয়ে সদাপ্রভুর কাছে প্রার্থনা করছিল।
২৬আর হান্না বললেন, “হে আমার প্রভু, আপনার প্রাণের দিব্যি, হে আমার প্রভু, যে স্ত্রী সদাপ্রভুর উদ্দেশ্যে প্রার্থনা করতে করতে এখানে আপনার সামনে দাঁড়িয়েছিল, আমিই সেই।
27 আমি এই শিশুটির জন্য প্রার্থনা করেছিলাম, এবং সদাপ্রভুর কাছে আমি যা চেয়েছিলাম, তিনি আমাকে তাই দিয়েছেন।
২৭আমি এই ছেলেটির জন্য প্রার্থনা করেছিলাম আর সদাপ্রভুর কাছে যা চেয়েছিলাম তা তিনি আমাকে দিয়েছেন।
28 অতএব, এখন আমি একে সদাপ্রভুর হাতে সমর্পণ করছি। সারাটি জীবনের জন্য সে সদাপ্রভুর হয়েই থাকবে।” পরে তাঁরা সেখানে সদাপ্রভুর আরাধনা করলেন।
২৮সেইজন্য আমিও একে সদাপ্রভুকে দিলাম, এ সারা জিবনের জন্য সদাপ্রভুরই থাকবে।” পরে তাঁরা সেখানে সদাপ্রভুর উপাসনা করলেন।

< শমূয়েলের প্রথম বই 1 >