< প্রথম রাজাবলি 9 >
1 শলোমন যখন সদাপ্রভুর মন্দির ও রাজপ্রাসাদ নির্মাণ করার কাজ সমাপ্ত করলেন, এবং তাঁর যা যা করার বাসনা ছিল, সেসব অর্জন করে ফেলেছিলেন,
১এই ভাবে শলোমন সদাপ্রভুর ঘর, রাজবাড়ী আর নিজের ইচ্ছামত যে সব কাজ করতে চেয়েছিলেন তা শেষ করলেন।
2 সদাপ্রভু তখন দ্বিতীয়বার তাঁর কাছে আবির্ভূত হলেন, যেভাবে একবার তিনি গিবিয়োনে তাঁর কাছে আবির্ভূত হলেন।
২তখন এইরূপ হলো যে, সদাপ্রভু দ্বিতীয়বার তাঁকে দেখা দিলেন যেমন গিবিয়োনে একবার তাঁকে দেখা দিয়েছিলেন।
3 সদাপ্রভু তাঁকে বললেন: “তুমি আমার কাছে যে প্রার্থনা ও মিনতি জানিয়েছ, আমি তা শুনেছি; আমার নাম চিরকালের জন্য তোমার নির্মাণ করা মন্দিরে স্থাপন করে আমি সেটি পবিত্র করে দিয়েছি। আমার চোখের দৃষ্টি ও আমার অন্তর সবসময় সেখানে থাকবে।
৩সদাপ্রভু তাঁকে বললেন, “তুমি যে প্রার্থনা ও অনুরোধ আমার কাছে করেছ তা আমি শুনেছি। এই যে ঘর তুমি তৈরী করেছ; এর মধ্যে চিরকালের জন্য আমার নাম স্থাপনের জন্য আমি এটা পবিত্র করলাম এবং এই জায়গায় সব দিন আমার চোখ ও মন থাকবে।
4 “আর তোমায় বলছি, তোমার বাবা দাউদের মতো তুমিও যদি আমার সামনে অন্তরের সততা ও ন্যায়পরায়ণতা সমেত বিশ্বস্ততাপূর্বক চলো, এবং আমি যা যা আদেশ দিয়েছি, সেসব করো ও আমার বিধিবিধান ও নিয়মকানুনগুলি পালন করো,
৪আর তুমি, তুমি যদি তোমার বাবা দায়ূদের মত হৃদয়ের বিশুদ্ধতা, সৎভাবে আমার সামনে চল এবং আমার সব আদেশ, নিয়ম ও নির্দেশ পালন কর,
5 তবে চিরকালের জন্য আমি ইস্রায়েলের উপর তোমার রাজসিংহাসন স্থায়ী করব, ঠিক যেমনটি আমি তোমার বাবা দাউদের কাছে এই কথা বলে প্রতিজ্ঞা করলাম, ‘ইস্রায়েলের সিংহাসনে তোমার স্থলাভিষিক্ত হওয়ার জন্য কোনও লোকের অভাব হবে না।’
৫তবে আমি চিরকালের জন্য ইস্রায়েলের উপর তোমার রাজসিংহাসন স্থায়ী করব। এই কথা আমি তোমার বাবা দায়ূদকে প্রতিজ্ঞা করে বলেছিলাম, ‘ইস্রায়েলের সিংহাসনে বসবার জন্য তোমার বংশে লোকের অভাব হবে না।’
6 “কিন্তু যদি তুমি বা তোমার বংশধররা আমার কাছ থেকে দূরে সরে যাও ও আমি তোমাকে যে যে আদেশ ও বিধিবিধান দিয়েছি, সেগুলি পালন না করো ও অন্যান্য দেবদেবীর সেবা ও আরাধনা করতে থাকো,
৬কিন্তু যদি তোমরা কিম্বা তোমাদের সন্তানেরা আমার কাছ থেকে ফিরে যাও এবং তোমাদের কাছে দেওয়া আমার আদেশ ও নিয়ম পালন না করে অন্য দেব দেবতার সেবা ও পূজা কর,
7 তবে আমি ইস্রায়েলকে যে দেশ দিয়েছি, সেই দেশ থেকে তাদের উৎখাত করব ও এই যে মন্দিরটি আমি আমার নামের উদ্দেশে পবিত্র করেছি, সেটিও অগ্রাহ্য করব। ইস্রায়েল তখন সব লোকজনের কাছে অবজ্ঞার ও উপহাসের এক পাত্রে পরিণত হবে।
৭তবে ইস্রায়েলীয়দের যে দেশ আমি দিয়েছি তা থেকে আমি তাদের দূর করে দেব। এই যে উপাসনা ঘরটি আমি আমার বাসস্থান হিসাবে আলাদা করেছি সেটাও আমার চোখের সামনে থেকে দূর করে দেব। তখন ইস্রায়েল অন্যান্য সব জাতির কাছে টিট্কারির ও তামাশার পাত্র হবে।
8 এই মন্দিরটি ভাঙা ইটপাথরের এক স্তূপে পরিণত হবে। যারা যারা তখন এখান দিয়ে যাবে, তারা সবাই মর্মাহত হবে, টিটকিরি করবে ও বলবে, ‘সদাপ্রভু কেন এই দেশের ও এই মন্দিরটির প্রতি এমনটি করলেন?’
৮এই উপাসনা ঘরটি এখন মহান হলেও তখন যারা তার মন্দিরের পাশ দিয়ে যাবে তারা চমকে উঠবে এবং ঠাট্টা করে বলবে, ‘কেন সদাপ্রভু এই দেশ ও এই উপাসনা ঘরটির প্রতি এই রকম করলেন?’
9 লোকেরা উত্তর দেবে, ‘যেহেতু তারা তাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুকে পরিত্যাগ করল, যিনি মিশর থেকে তাদের পূর্বপুরুষদের বের করে এনেছিলেন, এবং যেহেতু তারা অন্যান্য দেবতাদের সাগ্রহে গ্রহণ করল, ও তাদের আরাধনা ও সেবা করল—তাইতো তিনি তাদের উপর এইসব দুর্বিপাক নিয়ে এসেছেন।’”
৯এর উত্তরে লোকে বলবে, ‘এর কারণ হল, যিনি তাদের পূর্বপুরুষদের মিশর দেশ থেকে বের করে এনেছিলেন সেই পূর্বপূরুষদের ঈশ্বর সদাপ্রভুকে তারা ত্যাগ করেছে। তারা অন্য দেব দেবতার পিছনে গিয়ে তাদের পূজা ও সেবা করেছে। সেইজন্যই সদাপ্রভু এই সব অমঙ্গল তাদের উপর এনেছেন’।”
10 যে কুড়ি বছর ধরে শলোমন এই দুটি ভবন—সদাপ্রভুর মন্দির ও রাজপ্রাসাদ—নির্মাণ করলেন, তা পার হয়ে যাওয়ার পর
১০সদাপ্রভুর ঘর ও রাজবাড়ী তৈরী করতে শলোমনের কুড়ি বছর লেগেছিল।
11 রাজা শলোমন গালীল প্রদেশের কুড়িটি নগর সোরের রাজা হীরমকে দিলেন, কারণ হীরম তাঁর চাহিদানুসারে যাবতীয় দেবদারু ও চিরহরিৎ কাঠ এবং সোনাদানা সরবরাহ করলেন।
১১সোরের রাজা হীরম শলোমনের ইচ্ছামত এরস ও দেবদারু কাঠ ও সোনা জুগিয়েছিলেন বলে রাজা শলোমন গালীল দেশের কুড়িটা গ্রাম তাঁকে দান করলেন।
12 কিন্তু যে নগরগুলি শলোমন হীরমকে দিলেন, তিনি যখন সেগুলি দেখতে গেলেন, তখন সেগুলি তাঁর খুব একটি পছন্দ হয়নি।
১২হীরম শলোমনের দেওয়া সেই শহরগুলো দেখবার জন্য সোর থেকে আসলেন, কিন্তু সেগুলো দেখে তিনি সন্তুষ্ট হলেন না।
13 “ভাইটি, আপনি আমাকে এসব কী নগর দিয়েছেন?” তিনি জিজ্ঞাসা করলেন। আর তিনি সেগুলির নাম দিলেন কাবুল দেশ, আর এই নামটিই আজও পর্যন্ত রয়ে গিয়েছে।
১৩তিনি শলোমনকে বললেন, “ভাই, এগুলো কি রকম শহর আপনি আমাকে দিলেন?” তিনি সেগুলোর নাম দিলেন কাবূল দেশ যার মানে “কোনো কাজের নয়”। আজও সেগুলোর সেই নামই রয়ে গেছে।
14 ইত্যবসরে হীরম রাজামশাইকে একশো কুড়ি তালন্ত সোনা পাঠালেন।
১৪হীরম মোট সাড়ে চার টনেরও বেশী সোনা রাজাকে পাঠিয়ে দিয়েছিলেন।
15 রাজা শলোমন যেসব বেগার শ্রমিককে বাধ্যতামূলকভাবে সদাপ্রভুর মন্দির, তাঁর নিজের প্রাসাদ, উঁচু চাতাল, জেরুশালেমের প্রাচীর, এবং হাৎসোর, মগিদ্দো ও গেষর গাঁথার কাজে লাগলেন, এই হল তাদের বিবরণ।
১৫রাজা শলোমন সদাপ্রভুর ঘর, নিজের রাজবাড়ী, মিল্লো, যিরূশালেমের দেয়াল, হাৎসোর, মগিদ্দো ও গেষর তৈরী করবার জন্য অনেক লোকদের কাজ করতে বাধ্য করেছিলেন।
16 (মিশরের রাজা ফরৌণ গেষর আক্রমণ করে তা অধিকার করে নিয়েছিলেন। সেখানে তিনি আগুন ধরিয়ে দিলেন। তিনি সেখানকার কনানীয় অধিবাসীদের হত্যা করে সেটি তাঁর মেয়ে, শলোমনের স্ত্রীকে বিয়ের যৌতুকরূপে উপহার দিলেন।
১৬এর আগে মিশরের রাজা ফরৌণ গেষর অধিকার করে সেটা আগুনে পুড়িয়ে দিয়েছিলেন আর সেখানকার বাসিন্দা কনানীয়দের মেরে ফেলেছিলেন। পরে ফরৌণ জায়গাটা তাঁর মেয়েকে, অর্থাৎ শলোমনের স্ত্রীকে বিয়ের যৌতুক হিসাবে দিয়েছিলেন।
17 আর শলোমন গেষর নগরটি পুনর্নির্মাণ করলেন) তিনি নিচের দিকের বেথ-হোরোণ,
১৭সেইজন্য শলোমন গেষর আবার তৈরী করে নিয়েছিলেন। এছাড়া তিনি নীচের বৈৎ-হোরোণ,
18 বালৎ, ও তাঁর দেশের অন্তর্গত মরুভূমিতে অবস্থিত তামর,
১৮বালৎ, যিহূদার মরু এলাকার তামর,
19 তথা তাঁর সব গুদাম-নগর এবং তাঁর রথ ও ঘোড়া রাখার জন্য কয়েকটি নগর—জেরুশালেমে, লেবাননে ও তাঁর শাসিত গোটা এলাকা জুড়ে সর্বত্র যা যা তিনি তৈরি করতে চেয়েছিলেন, সেসব তিনি তৈরি করলেন।
১৯তাঁর সমস্ত ভান্ডার শহর এবং রথ ও ঘোড়সওয়ারদের জন্য শহর তৈরী করলেন, অর্থাৎ যিরূশালেম, লেবানন ও তাঁর শাসনের অধীনে যে সব রাজ্য ছিল সেগুলোর মধ্যে যা যা নিজের খুশির জন্য তিনি তৈরী করতে চেয়েছিলেন তা সবই করলেন।
20 ইমোরীয়, হিত্তীয়, পরিষীয়, হিব্বীয় ও যিবূষীয়দের মধ্যেও কিছু লোক সেখানে অবশিষ্ট রয়ে গেল। (এইসব লোক ইস্রায়েলী নয়)
২০যারা ইস্রায়েলীয় ছিল না, অর্থাৎ যে সব ইমোরীয়, হিত্তীয়, পরিষীয়, হিব্বীয় ও যিবূষীয়দের বংশধরেরা তখনও দেশে বেঁচে ছিল,
21 শলোমন দেশে থেকে যাওয়া এইসব লোকের বংশধরদের—যাদের ইস্রায়েলীরা উচ্ছেদ করতে পারেনি—বাধ্যতামূলকভাবে বেগার শ্রমিক রূপে কাজে লাগালেন, আজও পর্যন্ত যা তারা করে চলেছে।
২১যাদের ইস্রায়েলীয়েরা সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস করতে পারে নি, তাদেরকেই শলোমন দাস হিসাবে কাজ করতে বাধ্য করেছিলেন, আর তারা আজও সেই কাজ করছে।
22 কিন্তু শলোমন ইস্রায়েলীদের কাউকে ক্রীতদাস করেননি; তারা তাঁর যোদ্ধা, কর্মকর্তা, সেনাপতি, এবং তাঁর রথের সারথি ও অশ্বারোহীদের সেনাপতি হল।
২২কিন্তু তিনি কোনো ইস্রায়েলীয়কে দাস করেন নি; তারা ছিল তাঁর যোদ্ধা, তাঁর কর্মচারী, তাঁর অধীন শাসনকর্ত্তা, তাঁর সেনাপতি এবং তাঁর রথচালক ও ঘোড়সওয়ারদের সেনাপতি।
23 এছাড়াও তারা শলোমনের বিভিন্ন প্রকল্পের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান কর্মকর্তা হল 550 জন কর্মকর্তা এই কাজে লিপ্ত লোকজনের কাজ দেখাশোনা করত।
২৩এছাড়া শলোমনের সব কাজের দেখাশোনার ভার পাওয়া পাঁচশো পঞ্চাশ জন প্রধান কর্মচারী ছিল। যে লোকেরা কাজ করত এরা তাদের কাজ তদারক করত।
24 শলোমন ফরৌণের মেয়ের জন্য যে প্রাসাদটি নির্মাণ করলেন, তিনি দাউদ-নগর থেকে সেখানে চলে আসার পর শলোমন সেখানে কয়েকটি উঁচু চাতালও নির্মাণ করে দিলেন।
২৪ফরৌণের মেয়ে দায়ূদ শহর ছেড়ে তাঁর জন্য শলোমনের তৈরী করা রাজবাড়ীতে চলে আসলে পর শলোমন মিল্লো শহর তৈরী করলেন।
25 শলোমন সদাপ্রভুর উদ্দেশে যে যজ্ঞবেদিটি তৈরি করলেন, সেখানে তিনি বছরে তিনবার হোমবলি ও মঙ্গলার্থক বলি উৎসর্গ করতেন, এবং সেগুলির সাথে সাথে সদাপ্রভুর সামনে ধূপও জ্বালাতেন, আর এভাবেই তিনি মন্দির নির্মাণের কাজ সম্পূর্ণ করলেন।
২৫সদাপ্রভুর উদ্দেশ্যে শলোমন যে বেদীটা তৈরী করেছিলেন সেখানে বছরে তিনবার তিনি হোমবলি ও মঙ্গলার্থক বলি উত্সর্গ করতেন। সেই সঙ্গে তিনি সদাপ্রভুর সামনে ধূপও জ্বালাতেন। এই ভাবে, শলোমন উপাসনা ঘরের সব কাজ শেষ করেছিলেন।
26 এছাড়াও রাজা শলোমন লোহিত সাগরের তীরে, ইদোমের এলতের কাছে অবস্থিত ইৎসিয়োন-গেবরে কয়েকটি জাহাজ তৈরি করলেন।
২৬রাজা শলোমন সুফসাগরের তীরে ইদোমের এলৎ শহরের কাছে ইৎসিয়োন গেবরে কিছু জাহাজ তৈরী করলেন।
27 হীরম শলোমনের লোকজনের সঙ্গে থেকে নৌবাহিনীতে সেবাকাজ করার জন্য তাঁর সেইসব নাবিককে পাঠিয়ে দিলেন, যারা সমুদ্রের ব্যাপারে অভিজ্ঞ ছিল।
২৭শলোমনের লোকদের সঙ্গে নৌবহরে কাজ করবার জন্য হীরম তাঁর কয়েকজন দক্ষ নাবিক সেই সব জাহাজে পাঠিয়ে দিলেন।
28 তারা জাহাজে চড়ে ওফীরে গেল ও সেখান থেকে 420 তালন্ত সোনা এনে রাজা শলোমনের কাছে পৌঁছে দিয়েছিল।
২৮তারা ওফীরে গিয়ে প্রায় সাড়ে ষোল টন সোনা নিয়ে এসে রাজা শলোমনকে দিল।