< প্রথম রাজাবলি 20 >

1 ইত্যবসরে অরামের রাজা বিন্‌হদদ তাঁর সমগ্র সৈন্যদল একত্রিত করলেন। বত্রিশজন রাজা ও তাদের ঘোড়া ও রথ সঙ্গে নিয়ে গিয়ে তিনি চারদিক থেকে শমরিয়া নগরটিকে ঘিরে ধরে সেখানে আক্রমণ চালিয়েছিলেন।
অরামের রাজা বিনহদদ তাঁর সমস্ত সৈন্য জড়ো করলেন। তিনি বত্রিশজন রাজা ও অনেক ঘোড়া আর রথ সঙ্গে নিয়ে শমরিয়া আক্রমণ করবার জন্য ঘেরাও করলেন এবং যুদ্ধ করলেন।
2 তিনি এই কথা বলার জন্য নগরে ইস্রায়েলের রাজা আহাবের কাছে দূত পাঠালেন, “বিনহদদ এই কথা বলেন:
তিনি কয়েকজন লোককে শহরে পাঠিয়ে ইস্রায়েলের রাজা আহাবকে এই কথা জানালেন, “বিনহদদ বলছেন,
3 ‘আপনার রুপো ও সোনাদানা সব আমার, এবং আপনার বাছাই করা স্ত্রী ও সন্তানেরাও আমার।’”
‘তোমার সোনা ও তোমার রূপা আমার, আর তোমার স্ত্রী ও ছেলে মেয়েদের মধ্যে যারা ভালো, তারা আমার’।”
4 ইস্রায়েলের রাজা উত্তর দিলেন, “হে আমার প্রভু মহারাজ, আপনি ঠিকই বলেছেন। আমি ও আমার সবকিছুই আপনার।”
উত্তরে ইস্রায়েলের রাজা বললেন, “হে আমার প্রভু মহারাজ, আপনার কথা ঠিক। আমি এবং আমার সব কিছুই আপনার।”
5 দূতেরা আরেকবার এসে বলল, “বিন্‌হদদ একথাই বলেন: ‘আমি আপনার রুপো ও সোনাদানা, আপনার স্ত্রী ও সন্তানদের চেয়ে নেওয়ার জন্য লোক পাঠিয়েছিলাম।
পরে দূতেরা আহাবের কাছে আবার এসে বলল, “বিনহদদ বলছেন, ‘তোমার সোনা রূপা, স্ত্রীদের ও ছেলে মেয়েদের যে আমাকে দিতে হবে আমি লোক পাঠিয়ে বলে দিয়েছিলাম।
6 কিন্তু আগামীকাল মোটামুটি এসময় আপনার রাজপ্রাসাদে ও আপনার কর্মকর্তাদের বাড়িতে তল্লাসি চালানোর জন্য আমি আমার কর্মকর্তাদের পাঠাতে যাচ্ছি। আপনার কাছে যা যা মূল্যবান, সেসবকিছু তারা বাজেয়াপ্ত করে নিয়ে চলে যাবে।’”
কিন্তু আগামী কাল এই দিনের আমার দাসদেরকে আমি তোমার কাছে পাঠাব। তারা আপনার রাজবাড়ী ও আপনার কর্মচারীদের বাড়িতে খোঁজ করবে এবং যে সমস্ত জিনিস আপনার চোখে মূল্যবান তা সবই নিয়ে আসবে।’”
7 ইস্রায়েলের রাজা আহাব দেশের সব প্রাচীনকে ডেকে পাঠালেন এবং তাদের বললেন, “দেখুন কীভাবে এই লোকটি অনিষ্ট করার চেষ্টা করছেন! তিনি যখন আমার স্ত্রী ও সন্তানদের, আমার রুপো ও সোনাদানা চেয়ে পাঠালেন, আমি তাঁর কথা অমান্য করিনি।”
তখন ইস্রায়েলের রাজা দেশের সমস্ত প্রাচীনদের ডেকে বললেন, “অনুরোধ করি, বিবেচনা করে দেখ, এই লোকটি শুধু ক্ষতি করবার চেষ্টা করছে, কারণ সে যখন আমার স্ত্রীদের ও ছেলে মেয়েদের এবং সোনা রূপার জন্য আদেশ পাঠালে আমি তা দিতে অস্বীকার করিনি।”
8 প্রাচীনেরা ও সব লোকজন উত্তর দিয়েছিল, “তাঁর কথা শুনবেন না বা তাঁর দাবি মানবেন না।”
সব প্রাচীনরা এবং সমস্ত লোকেরা তাঁকে বলল, “আপনি শুনবেন না কিম্বা রাজি হবেন না।”
9 অতএব তিনি বিনহদদের দূতদের জবাব দিলেন, “আমার প্রভু মহারাজকে গিয়ে বলো, ‘আপনি প্রথমবার যে যে দাবি জানিয়েছিলেন, আপনার দাস সেসব মানবে, কিন্তু আপনার এই দাবিটি আমি মানতে পারছি না।’” তারা এই উত্তর নিয়ে বিন্‌হদদের কাছে ফিরে গেল।
তখন আহাব বিনহদদের দূতদেরকে বললেন, “আমার প্রভু মহারাজকে বলবে যে, তাঁর প্রথম দাবি অনুসারে আমি সবই করব, কিন্তু এই কাজ করতে পারব না।” পরে দূতেরা তখন সেই খবর নিয়ে বিনহদদের কাছে চলে গেল।
10 পরে বিন্‌হদদ আহাবের কাছে অন্য একটি খবর দিয়ে পাঠালেন: “আমার লোকজনের হাতে দেওয়ার মতো ধুলোও যদি শমরিয়ায় পড়ে থাকে, তবে যেন দেবদেবীরা আমায় কঠোর থেকে কঠোরতর দণ্ড দেন।”
১০তখন বিনহদদ আহাবের কাছে এই সংবাদ পাঠালেন, “আমার অনুসরণকারী সব লোককে এক এক মুঠো করে দেবার মত ধূলোও যদি শমরিয়াতে থেকে যায় তাহলে দেবতারা যেন আমাকে শাস্তি দেন আর তা ভীষণভাবেই দেন।”
11 ইস্রায়েলের রাজা উত্তর দিলেন, “তাঁকে গিয়ে বলো: ‘যিনি রক্ষাকবচ ধারণ করলেন, তাঁর এমন কোনও লোকের মতো অহংকার করা উচিত নয়, যিনি তা খুলে ফেলেছেন।’”
১১তাতে উত্তরে ইস্রায়েলের রাজা বললেন, “তাঁকে বলবে, ‘যে লোক যুদ্ধের সজ্জা পরে, সে সজ্জা খুলে রাখা লোকের মত গর্ব না করুক’।”
12 বিনহদদ ও অন্যান্য রাজারা যখন তাঁবুতে বসে মদ্যপান করছিলেন, তখনই তিনি এই খবরটি পেয়েছিলেন, এবং তিনি তাঁর লোকজনকে আদেশ দিলেন: “আক্রমণ করার জন্য প্রস্তুত হও।” অতএব তারা নগরটি আক্রমণ করার জন্য প্রস্তুত হল।
১২বিনহদদের কাছে এই খবর গিয়ে যখন পৌঁছাল তখন তিনি ও অন্যান্য রাজারা তাঁদের তাঁবুতে পান করছিলেন। তিনি তাঁর লোকদের আদেশ দিলেন, “যুদ্ধের জন্য তোমরা তৈরী হও।” কাজেই তারা শহরটা আক্রমণ করবার জন্য তৈরী হল।
13 এদিকে একজন ভাববাদী ইস্রায়েলের রাজা আহাবের কাছে এসে ঘোষণা করলেন, “সদাপ্রভু একথাই বলেন: ‘তুমি কি এই বিশাল সৈন্যদল দেখছ? আজই আমি এদের তোমার হাতে তুলে দেব, আর তখনই তুমি জানতে পারবে যে আমিই সদাপ্রভু।’”
১৩এর মধ্যে ইস্রায়েলের রাজা আহাবের কাছে একজন ভাববাদী এসে এই কথা ঘোষণা করলেন, “সদাপ্রভু বলছেন, ‘তুমি ঐ বিশাল সৈন্যবাহিনীকে দেখতে পাচ্ছ কি? আজই আমি ওদের তোমার হাতে তুলে দেব আর তখন তুমি জানতে পারবে যে, আমিই সদাপ্রভু’।”
14 “কিন্তু কে এ কাজ করবে?” আহাব জিজ্ঞাসা করলেন। ভাববাদীমশাই উত্তরে বললেন, “সদাপ্রভু একথাই বলেন: ‘প্রাদেশিক সেনাপতিদের অধীনে থাকা নিম্নপদস্থ কর্মকর্তারা এ কাজ করবে।’” “আর যুদ্ধ কে শুরু করবে?” তিনি জিজ্ঞাসা করলেন। ভাববাদীমশাই উত্তর দিলেন, “আপনিই করবেন।”
১৪আহাব বললেন, “কিন্তু কাকে দিয়ে তিনি তা করাবেন?” ভাববাদী উত্তরে বললেন, “সদাপ্রভু বলছেন যে, বিভিন্ন এলাকার শাসনকর্ত্তাদের অধীনে যে যুবক সৈন্যেরা আছে তারাই তা করবে।” আহাব জিজ্ঞাসা করলেন, “যুদ্ধটা শুরু করবে কে?” উত্তরে ভাববাদী বললেন, “আপনিই করবেন।”
15 অতএব আহাব প্রাদেশিক সেনাপতিদের অধীনে থাকা 232 জন নিম্নপদস্থ কর্মকর্তাকে ডেকে পাঠালেন। পরে তিনি অবশিষ্ট মোট 7,000 ইস্রায়েলী লোক একত্রিত করলেন।
১৫আহাব এই কথা শুনে বিভিন্ন এলাকার শাসনকর্ত্তাদের অধীন যুবক সৈন্যদের জড়ো করলেন। তাতে তারা মোট দুশো বত্রিশজন হল। তারপর তিনি সব ইস্রায়েলীয় সৈন্যদের জড়ো করলে পর সাত হাজার সৈন্য হল।
16 বিন্‌হদদ ও তাঁর মিত্রপক্ষের বত্রিশজন রাজা যখন দুপুরবেলায় তাঁবুতে মাতাল হয়ে পড়েছিলেন, তখনই তারা রওনা হল।
১৬তারা দুপুর বেলায় বেরিয়ে পড়ল। বিনহদদ ও তাঁর সঙ্গে যুক্ত বত্রিশজন রাজা তাদের তাঁবুর মধ্যে পান করে মাতাল হয়েছিলেন।
17 প্রাদেশিক সেনাপতিদের অধীনে থাকা নিম্নপদস্থ কর্মকর্তারাই প্রথমে রওনা হল। ইত্যবসরে বিন্‌হদদ শত্রুপক্ষের খবর নেওয়ার জন্য লোক পাঠালেন, এবং তারা খবর দিয়েছিল, “শমরিয়া থেকে লোকজন এগিয়ে আসছে।”
১৭রাজ্যপালদের সেই যুবকরা বাইরে গেল; সেই দিন বিনহদদ খোঁজ নেবার জন্য লোক পাঠিয়ে দিলে তারা তাঁকে খবর দিল, “শমরিয়া থেকে লোকেরা এগিয়ে এসেছে।”
18 তিনি বললেন, “তারা যদি সন্ধি করার জন্য আসছে, তবে তাদের জ্যান্ত অবস্থায় ধরো; যদি তারা যুদ্ধ করার জন্য আসছে, তাও তাদের জ্যান্ত অবস্থায় ধরো।”
১৮তিনি বললেন, “তারা সন্ধির জন্য এসে থাকলে তাদের জীবন্ত ধরবে, আবার যুদ্ধের জন্য এসে থাকলেও তাদের জীবন্ত ধরবে।”
19 প্রাদেশিক সেনাপতিদের অধীনে থাকা নিম্নপদস্থ কর্মকর্তারা নগর ছেড়ে কুচকাওয়াজ করে বের হয়ে এসেছিল। সৈন্যদল ছিল তাদের পিছনে
১৯এর মধ্যে ওরা অর্থাৎ রাজ্যপালদের সেই যুবকরা ও তাদের পিছনে আসা সৈন্যদল শহর থেকে বের হল।
20 এবং এক একজন তাদের প্রতিপক্ষকে আঘাত করল। তাতে অরামীয়রা পালিয়ে গেল, এবং ইস্রায়েলীরা তাদের পিছু ধাওয়া করল। কিন্তু অরামের রাজা বিন্‌হদদ কয়েকজন অশ্বারোহী সৈন্য সাথে নিয়ে ঘোড়ার পিঠে চেপে পালিয়ে গেলেন।
২০তারা প্রত্যেকে তাদের নিজের নিজের বাধাদানকারীকে মেরে ফেলল। তা দেখে অরামীয়েরা পালিয়ে গেল আর ইস্রায়েলীয়েরা তাদের পিছনে তাড়া করল এবং অরামের রাজা বিনহদদ তাঁর কয়েকজন ঘোড়সওয়ারকে সঙ্গে নিয়ে ঘোড়ার পিঠে করে পালিয়ে গেলেন।
21 ইস্রায়েলের রাজা এগিয়ে গিয়ে ঘোড়া ও রথগুলি কাবু করলেন এবং অরামীয়দের উপর ভারী ক্ষয়ক্ষতির বোঝা চাপিয়ে দিলেন।
২১পরে ইস্রায়েলের রাজা বের হয়ে তাদের ঘোড়া ও রথ সব ধ্বংস করে দিলেন এবং প্রচুর অরামীয়দের হত্যা করলেন।
22 পরে, সেই ভাববাদী ইস্রায়েলের রাজার কাছে এসে বললেন, “নিজের অবস্থান মজবুত করুন এবং দেখুন কী করতে হবে, কারণ আগামী বছর বসন্তকালে অরামের রাজা আবার আপনাকে আক্রমণ করবেন।”
২২পরে ঐ ভাববাদী ইস্রায়েলের রাজার কাছে এসে বললেন, “আপনার শক্তি বাড়ান এবং কি করতে হবে তা ভেবে দেখুন, কারণ আগামী বছর আসলে অরামের রাজা আপনাকে আবার আক্রমণ করবেন।”
23 এদিকে, অরামের রাজার কর্মকর্তারা তাঁকে পরামর্শ দিয়েছিল, “ওদের দেবদেবীরা পাহাড়ের দেবদেবী। এজন্যই ওরা আমাদের তুলনায় বেশি শক্তিশালী হয়ে গিয়েছে। কিন্তু আমরা যদি সমতলে নেমে ওদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করি, নিঃসন্দেহে আমরা ওদের তুলনায় বেশি শক্তিশালী হব।
২৩আর অরামের রাজার দাসেরা তাঁকে বলল, “ওদের দেবতাগুলো পাহাড়ের দেবতা, তাই আমাদের চেয়ে ওরা বেশী শক্তিশালী। কিন্তু আমরা যদি সমভূমিতে ওদের সঙ্গে যুদ্ধ করি তবে নিশ্চয়ই আমরা ওদের চেয়ে শক্তিশালী হব।
24 আপনি এক কাজ করুন: রাজাদের সরিয়ে দিয়ে তাদের স্থানে অন্যান্য কর্মকর্তাদের কাজে লাগান।
২৪আপনি এই কাজ করুন, রাজাদের সরিয়ে দিয়ে তাদের জায়গায় সেনাপতিদের নিযুক্ত করুন।
25 যে সৈন্যদল আপনি হারিয়েছেন, সেটির মতো আরও একটি সৈন্যদল গড়ে তুলুন—ঘোড়ার পরিবর্তে ঘোড়া এবং রথের পরিবর্তে রথ—তবেই আমরা সমতলে ইস্রায়েলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে পারব। তখন নিঃসন্দেহে আমরা ওদের তুলনায় বেশি শক্তিশালী হয়ে যাব।” তিনি তাদের কথায় রাজি হয়ে সেইমতোই কাজ করলেন।
২৫আর আপনার নিজের যত সৈন্য, যত ঘোড়া ও রথ নষ্ট হয়েছে, তত সৈন্য, তত ঘোড়া ও রথ সংগ্রহ করুন; তাহলে আমরা সমভূমিতে ইস্রায়েলের সঙ্গে যুদ্ধ করতে পারব। তখন নিশ্চয়ই আমরা তাদের চেয়ে শক্তিশালী হব।” তিনি তাদের কথায় রাজি হয়ে সেইমতই কাজ করলেন।
26 পরের বছর বসন্তকালে বিন্‌হদদ অরামীয়দের একত্রিত করে অফেকে ইস্রায়েলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে গেলেন।
২৬পরের বছর আসলে বিনহদদ অরামীয়দেরকে জড়ো করে নিয়ে ইস্রায়েলের সঙ্গে যুদ্ধ করবার জন্য অফেকে গেলেন।
27 ইস্রায়েলীদেরও যখন একত্রিত করে সবকিছুর জোগান দেওয়া হল, তারা কুচকাওয়াজ করে অরামীয়দের সম্মুখীন হতে গেল। ইস্রায়েলীরা ছোটো দুটি ছাগপালের মতো তাদের বিপরীত দিকে শিবির স্থাপন করল, অন্যদিকে অরামীয়দের দ্বারা গ্রামাঞ্চলের সম্পূর্ণ এলাকা ঢাকা পড়ে গেল।
২৭এদিকে ইস্রায়েলীয়দের জড়ো করা হল। তাদের খাবার জোগান দেবার ব্যবস্থা করা হলে পর তারাও অরামীয়দের সঙ্গে যুদ্ধ করবার জন্য বেরিয়ে গেল। ইস্রায়েলীয়েরা অরামীয়দের সামনের দিকে দুটি ছাগলের পালের মত ছাউনি ফেলল। কিন্তু অরামীয়েরা গোটা দেশটা জুড়ে থাকল।
28 ঈশ্বরের সেই লোক এসে ইস্রায়েলের রাজাকে বললেন, “সদাপ্রভু একথাই বলেন: ‘যেহেতু অরামীয়রা মনে করেছে সদাপ্রভু পাহাড়ের দেবতা এবং তিনি উপত্যকার দেবতা নন, তাই আমি এই বিশাল সংখ্যক সৈন্যদল তোমাদের হাতে সমর্পণ করব, এবং তোমরা জানবে যে আমিই সদাপ্রভু।’”
২৮তখন ঈশ্বরের একজন লোক এসে ইস্রায়েলের রাজাকে বললেন, “সদাপ্রভু এই কথা বলছেন, ‘অরামীয়েরা বলেছে, সদাপ্রভু পাহাড়ের ঈশ্বর, উপত্যকার ঈশ্বর নন; সেইজন্য আমি এই বিরাট সৈন্যদলকে তোমার হাতে তুলে দেব, আর এতে তোমরা জানতে পারবে যে, আমিই সদাপ্রভু’।”
29 সাত দিন পর্যন্ত তারা পরস্পরের বিপরীতে শিবির স্থাপন করে বসেছিল, এবং সপ্তম দিনে যুদ্ধ বেধে গেল। একদিনেই ইস্রায়েলীরা অরামীয়দের এক লক্ষ পদাতিক সৈন্য মেরে ফেলেছিল।
২৯আর সাত দিন পর্যন্ত তারা একে অন্যের সামনাসামনি ছাউনি ফেলে থাকল, তারপর সপ্তম দিনের যুদ্ধ শুরু হয়ে গেল। ইস্রায়েলীয়েরা এক দিনের ই এক লক্ষ অরামীয় পদাতিক সৈন্য মেরে ফেলল।
30 অবশিষ্ট সৈন্যরা সেই অফেক নগরে পালিয়ে গেল, যেখানে সাতাশ হাজার সৈন্যের উপর প্রাচীর ভেঙে পড়েছিল। বিন্‌হদদ সেই নগরে পালিয়ে গিয়ে ভিতরের একটি ঘরে লুকিয়েছিলেন।
৩০বাদবাকী সৈন্যেরা অফেকে পালিয়ে গেল আর সেখানে তাদের সাতাশ হাজার সৈন্যের উপরে দেয়াল ধসে পড়ল। আর বিনহদদ সেখানে পালিয়ে গিয়ে বাড়ীর ভিতরের একটা কামরায় লুকিয়ে থাকলো।
31 তাঁর কর্মকর্তারা তাঁকে বলল, “দেখুন, আমরা শুনেছি যে ইস্রায়েলের রাজারা নাকি খুব দয়ালু। আসুন, আমরা সবাই কোমরের চারপাশে চট ঝুলিয়ে ও মাথার চারপাশে দড়ি বেঁধে ইস্রায়েলের রাজার কাছে যাই। হয়তো তিনি আপনার প্রাণভিক্ষা দেবেন।”
৩১পরে তাঁর দাসেরা তাঁকে বলল, “দেখুন, আমরা শুনেছি যে, ইস্রায়েলের রাজারা দয়ালু। চলুন, আমরা কোমরে চট পরে আর মাথায় দড়ি বেঁধে ইস্রায়েলের রাজার কাছে যাই। হয়তো তিনি আপনার প্রাণ রক্ষা করবেন।”
32 কোমরের চারপাশে চট ঝুলিয়ে ও মাথার চারপাশে দড়ি বেঁধে তারা ইস্রায়েলের রাজার কাছে গিয়ে বলল, “আপনার দাস বিন্‌হদদ বলছেন: ‘দয়া করে আমাকে বাঁচতে দিন।’” রাজামশাই উত্তর দিলেন, “তিনি কি এখনও বেঁচে আছেন? তিনি তো আমার ভাই।”
৩২পরে তাঁরা কোমরে চট পরে ও মাথায় দড়ি বেঁধে ইস্রায়েলের রাজার কাছে গিয়ে বললেন, “তোমার দাস বিনহদদ বলছেন যে, ‘অনুরোধ করি, আমার প্রাণ রক্ষা করুন’।” রাজা বললেন, “তিনি কি এখনও বেঁচে আছেন? তিনি আমার ভাই।”
33 লোকেরা এটি ভালো লক্ষণ বলে মনে করল এবং তৎক্ষণাৎ তাঁর কথা ধরে বলে উঠেছিল, “হ্যাঁ, আপনারই ভাই বিনহদদ!” “যাও, তাঁকে নিয়ে এসো,” রাজামশাই বললেন। বিন্‌হদদ যখন বের হয়ে এলেন, আহাব তাঁকে নিজের রথে উঠিয়ে নিয়েছিলেন।
৩৩সেই লোকেরা এটাকে ভাল লক্ষণ মনে করে তাড়াতাড়ি করে তাঁর কথা বুঝতে পেরে বলল, “হ্যাঁ, বিনহদদ নিশ্চয়ই আপনার ভাই।” রাজা বললেন, “আপনারা গিয়ে তাঁকে নিয়ে আসুন।” বিনহদদ বের হয়ে আসলে পর আহাব তাঁকে তাঁর রথে তুলে নিলেন।
34 “আমার বাবা আপনার বাবার কাছ থেকে যেসব নগর ছিনিয়ে নিয়েছিলেন, আমি সেগুলি ফিরিয়ে দেব,” বিনহদদ প্রস্তাব দিলেন। “আমার বাবা যেভাবে শমরিয়ায় বাজারঘাট বসিয়েছিলেন, আপনিও দামাস্কাসে আপনার নিজস্ব বাজারঘাট বসাতে পারেন।” আহাব বললেন, “একটি সন্ধিচুক্তির শর্তস্বাপেক্ষে আমি আপনাকে মুক্ত করে দেব।” অতএব তিনি বিন্‌হদদের সঙ্গে একটি সন্ধিচুক্তি করলেন, এবং তাঁকে যেতে দিলেন।
৩৪বিনহদদ বললেন, “তোমার বাবার কাছ থেকে আমার বাবা যে সব গ্রাম নিয়ে নিয়েছেন আমি সেগুলো আপনাকে ফিরিয়ে দেব। আমার বাবা যেমন শমরিয়াতে বাজার বসিয়েছিলেন তেমনি আপনিও দম্মেশকের বিভিন্ন জায়গায় বাজার বসাতে পারবেন।” আহাব বললেন, “একটা সন্ধি করে আপনাকে আমি ছেড়ে দেব।” এই বলে তিনি বিনহদদের সঙ্গে একটা সন্ধি করে তাঁকে ছেড়ে দিলেন।
35 সদাপ্রভুর বাক্যানুসারে ভাববাদী সম্প্রদায়ের মধ্যে একজন তাঁর সহচরকে বললেন, “তোমার অস্ত্র দিয়ে আমাকে আঘাত করো,” কিন্তু তিনি রাজি হননি।
৩৫সদাপ্রভুর আদেশে শিষ্য ভাববাদীদের মধ্যে একজন তাঁর সঙ্গীকে বললেন, “দয়া করে আমাকে আঘাত কর।” কিন্তু লোকটি আঘাত করতে রাজি হল না।
36 অতএব সেই ভাববাদীমশাই বললেন, “যেহেতু তুমি সদাপ্রভুর কথার বাধ্য হওনি, তাই যে মুহূর্তে তুমি আমাকে ছেড়ে যাবে, একটি সিংহ তোমাকে মেরে ফেলবে।” সেই লোকটি চলে যাওয়ার পর মুহূর্তেই একটি সিংহ তাকে পেয়ে মেরে ফেলেছিল।
৩৬তখন সেই ভাববাদী তাঁকে বললেন, “তুমি সদাপ্রভুর কথার বাধ্য হলে না বলে আমাকে ছেড়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই একটা সিংহ তোমাকে মেরে ফেলবে।” লোকটি চলে যাওয়ার পরেই একটা সিংহ তাকে দেখতে পেয়ে মেরে ফেলল।
37 সেই ভাববাদীমশাই অন্য একজনকে পেয়ে তাকে বললেন, “দয়া করে আমাকে আঘাত করো।” তাই সে তাঁকে আঘাত করে তাঁকে ক্ষতবিক্ষত করে তুলেছিল।
৩৭সেই ভাববাদী আর একজন লোককে দেখতে পেয়ে তাকে বললেন, “দয়া করে আমাকে আঘাত কর।” লোকটি তাঁকে আঘাত করে ক্ষত করল।
38 তখন সেই ভাববাদীমশাই সেখান থেকে চলে গিয়ে পথে দাঁড়িয়ে রাজার আসার অপেক্ষা করছিলেন। তিনি মাথার পাগড়ি দিয়ে চোখ ঢেকে ছদ্মবেশ ধারণ করলেন।
৩৮তারপর সেই ভাববাদী রাস্তার পাশে গিয়ে দাঁড়িয়ে রাজার জন্য অপেক্ষা করতে লাগলেন। তিনি তাঁর মাথায় কাপড় বেঁধে তা চোখের উপরে নামিয়ে এনে নিজের পরিচয় গোপন করলেন।
39 রাজামশাই যেই না পথ দিয়ে পার হয়ে যাচ্ছিলেন, সেই ভাববাদীমশাই তাঁকে ডেকে বলে উঠেছিলেন, “আপনার এই দাস আমি যুদ্ধক্ষেত্রের মাঝামাঝি চলে গেলাম, এবং কেউ একজন আমার কাছে একজন বন্দিকে নিয়ে এসে বলল, ‘এই লোকটিকে পাহারা দাও। যদি একে খুঁজে পাওয়া না যায়, তবে এর প্রাণের পরিবর্তে তোমার প্রাণ যাবে, অথবা তোমাকে এক তালন্ত রুপো দিতে হবে।’
৩৯রাজা ঐ পথে যাওয়ার দিন সেই ভাববাদী কেঁদে তাঁকে বললেন, “আপনার দাস আমি যুদ্ধের মাঝখানে গিয়েছিলাম। তখন একজন লোক একজন বন্দীকে আমার কাছে এনে বলল, ‘এই লোকটাকে পাহারা দিয়ে রাখ। যদি সে হারিয়ে যায় তবে তার প্রাণের বদলে তোমার প্রাণ নেওয়া হবে, আর তা না হলে ঊনচল্লিশ কেজি রূপা দিতে হবে।’
40 আপনার এই দাস যখন এদিক-ওদিক একটু ব্যস্ত হয়ে পড়েছিল, লোকটি উধাও হয়ে গেল।” “তোমাকে ওই শাস্তিই পেতে হবে,” ইস্রায়েলের রাজা বললেন। “তুমি নিজেই নিজের শাস্তি ঘোষণা করেছ।”
৪০কিন্তু আপনার দাস আমি এদিকে ওদিকে ব্যস্ত ছিলাম, এর মধ্যে সে কোথায় চলে গেছে।” তখন ইস্রায়েলের রাজা বললেন, “ঐ শাস্তিই তোমার হবে। তুমি নিজের মুখেই তা বলেছ।”
41 তখন সেই ভাববাদীমশাই তাড়াতাড়ি তাঁর চোখের উপর থেকে পাগড়িটি সরিয়ে ফেলেছিলেন, এবং ইস্রায়েলের রাজা চিনতে পেরেছিলেন যে তিনি ভাববাদীদের মধ্যেই একজন।
৪১তখন সেই ভাববাদী তাড়াতাড়ি চোখের উপর থেকে মাথার কাপড়টা সরিয়ে ফেললেন আর ইস্রায়েলের রাজা তাঁকে ভাববাদীদের একজন বলে চিনতে পারলেন।
42 তিনি রাজামশাইকে বললেন, “সদাপ্রভু একথাই বলেন: ‘তুমি এমন একজন লোককে মুক্ত করে দিয়েছ, যাকে মরতে হবে বলে আমি স্থির করে রেখেছিলাম। অতএব তার প্রাণের পরিবর্তে তোমার প্রাণ যাবে, তার লোকজনের পরিবর্তে তোমার লোকজন যাবে।’”
৪২সেই ভাববাদী রাজাকে বললেন, “সদাপ্রভু এই কথা বলছেন, ‘আমি যে লোককে ধ্বংসের অভিশাপের অধীন করেছিলাম তুমি তাকে ছেড়ে দিয়েছ। কাজেই তার প্রাণের বদলে তোমার প্রাণ আর তার লোকদের বদলে তোমার লোকদের প্রাণ যাবে।’”
43 বিষণ্ণ-গম্ভীর ও ক্রুদ্ধ হয়ে ইস্রায়েলের রাজা শমরিয়ায় তাঁর প্রাসাদে চলে গেলেন।
৪৩এতে ইস্রায়েলের রাজা বিষন্ন ও বিরক্ত হয়ে তাঁর নিজের বাড়িতে চলে গেলেন ও পরে তিনি শমরিয়াতে পৌঁছালেন।

< প্রথম রাজাবলি 20 >