< প্রথম রাজাবলি 10 >
1 শিবার রানি শলোমনের সুনামের ও সদাপ্রভুর সঙ্গে তাঁর সম্পর্কের কথা শুনে কঠিন কঠিন প্রশ্ন নিয়ে তাঁকে পরীক্ষা করতে এলেন।
2 বিশাল দলবল নিয়ে—সুগন্ধি মশলা বহনকারী উট, প্রচুর পরিমাণ সোনা ও দামি মণিমুক্তো নিয়ে—তিনি জেরুশালেমে শলোমনের কাছে এলেন ও তাঁর মনের সব কথা তিনি শলোমনকে খুলে বললেন।
3 শলোমন তাঁর সব প্রশ্নের উত্তর দিলেন; রানিকে ব্যাখ্যা করে বুঝিয়ে দেওয়ার পক্ষে কোনো কিছুই রাজার কাছে কঠিন বলে মনে হয়নি।
4 শিবার রানি শলোমনের প্রজ্ঞা ও তাঁর নির্মিত করা প্রাসাদ,
5 তাঁর টেবিলে রাখা খাদ্যসম্ভার, তাঁর কর্মকর্তাদের বসার ব্যবস্থা, সেবক-দাসেদের পোশাক-পরিচ্ছদ, তাঁর পানপাত্র বহনকারীদের, এবং সদাপ্রভুর মন্দিরে তাঁর উৎসর্গ করা হোমবলি দেখে আবেগবিহ্বল হয়ে গেলেন।
6 তিনি রাজাকে বললেন, “নিজের দেশে থাকার সময় আমি আপনার কীর্তির ও প্রজ্ঞার বিষয়ে যা যা শুনেছিলাম, সেসবই সত্যি।
7 কিন্তু এখানে এসে স্বচক্ষে না দেখা পর্যন্ত আমি সেসব বিশ্বাস করিনি। আসলে, অর্ধেক কথাও আমাকে বলা হয়নি; আমি যে খবর শুনেছিলাম, আপনার প্রজ্ঞা ও ধনসম্পদ তার তুলনায় পরিমাণে অনেক বেশি।
8 আপনার প্রজারা কতই না সুখী! আপনার সেই কর্মকর্তারাও কতই না সুখী, যারা অনবরত আপনার সামনে দাঁড়িয়ে থাকে ও আপনার প্রজ্ঞার কথা শোনে!
9 আপনার ঈশ্বর সদাপ্রভুর গৌরব হোক, যিনি আপনার উপর সন্তুষ্ট হয়ে আপনাকে ইস্রায়েলের সিংহাসনে বসিয়েছেন। ইস্রায়েলের প্রতি সদাপ্রভুর অনন্ত প্রেমের কারণে, ন্যায় ও ধার্মিকতা বজায় রাখার জন্য তিনি আপনাকে রাজা করেছেন।”
10 আর তিনি রাজামশাইকে একশো কুড়ি তালন্ত সোনা, প্রচুর পরিমাণ সুগন্ধি মশলা, ও দামি মণিমুক্তো দিলেন। শিবার রানি রাজা শলোমনকে যত সুগন্ধি মশলা দিলেন, তত সুগন্ধি মশলা আর কখনও সেখানে আনা হয়নি।
11 (হীরমের জাহাজগুলি ওফীর থেকে সোনা নিয়ে আসত; আর সেখান থেকেই তারা বড়ো বড়ো জাহাজে ভরে চন্দনকাঠ ও দামি মণিমুক্তোও নিয়ে আসত।
12 রাজামশাই সদাপ্রভুর মন্দিরের ও রাজপ্রাসাদের খুঁটি নির্মাণ করার জন্য, এবং সুদক্ষ বাদ্যকরদের জন্য বীণা ও সুরবাহার তৈরি করার কাজে চন্দনকাঠ ব্যবহার করতেন। সেদিন থেকে আজ পর্যন্ত এত চন্দনকাঠ আর কখনও আমদানি করা হয়নি বা চোখে দেখাও যায়নি।)
13 রাজা শলোমন শিবা দেশের রানির মনোবাঞ্ছা ও তাঁর চাহিদা অনুসারে তাঁকে সবকিছু দিলেন, এছাড়াও তিনি তাঁর রাজকীয় দানশীলতা দেখিয়ে আরও অনেক কিছু তাঁকে দিলেন। পরে রানি তাঁর লোকলস্কর সঙ্গে নিয়ে নিজের দেশে ফিরে গেলেন।
14 প্রতি বছর শলোমন যে পরিমাণ সোনা সংগ্রহ করতেন তার ওজন 666 তালন্ত,
15 এতে বণিক ও ব্যবসায়ীদের এবং আরবীয় সব রাজার ও সেই অঞ্চলের শাসনকর্তাদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা রাজস্ব ধরা হয়নি।
16 পিটানো সোনার পাত দিয়ে রাজা শলোমন 200-টি বড়ো বড়ো ঢাল তৈরি করলেন; প্রত্যেকটি ঢাল তৈরি করতে 600 শেকল করে পিটানো সোনা লেগেছিল।
17 পিটানো সোনার পাত দিয়ে তিনি আরও তিনশোটি ছোটো ছোটো ঢাল তৈরি করলেন, এবং প্রত্যেকটি ঢালে তিন মানি করে সোনা ছিল। রাজা সেগুলি লেবাননের অরণ্য-প্রাসাদে নিয়ে গিয়ে রেখেছিলেন।
18 পরে রাজামশাই হাতির দাঁত দিয়ে একটি বড়ো সিংহাসন বানিয়ে, সেটি খাঁটি সোনা দিয়ে মুড়ে দিলেন।
19 সিংহাসনে ওঠার জন্য সিঁড়ির ছয়টি ধাপ ছিল, এবং সেটির পিছন দিকের উপরের অংশটি গোলাকার ছিল। বসার স্থানটির দুই দিকেই হাতল ছিল, এবং দুটিরই পাশে একটি করে সিংহমূর্তি দাঁড় করানো ছিল।
20 বারোটি সিংহমূর্তি সিঁড়ির ছয়টি ধাপের উপরে দাঁড় করানো ছিল, এক-একটি মূর্তি প্রত্যেকটি ধাপের এক এক পাশে রাখা ছিল। অন্য কোনও রাজ্যে আগে কখনও এরকম কিছু তৈরি করা হয়নি।
21 রাজা শলোমনের কাছে থাকা ভিত থেকে ওঠা ডাঁটিযুক্ত হাতলবিহীন সব পানপাত্র ছিল সোনার, এবং লেবাননের অরণ্য-প্রাসাদে রাখা সব গৃহস্থালি জিনিসপত্র খাঁটি সোনা দিয়ে তৈরি হল। কোনো কিছুই রুপো দিয়ে তৈরি করা হয়নি, কারণ শলোমনের রাজত্বকালে রুপোকে দামি বলে গণ্যই করা হত না।
22 হীরমের জাহাজগুলির পাশাপাশি সমুদ্রে রাজারও তর্শীশের বাণিজ্যতরির একটি নৌবহর ছিল। তিন বছরে একবার সেই নৌবহর সোনা, রুপো, হাতির দাঁত, এবং বনমানুষ ও ময়ূর নিয়ে ফিরে আসত।
23 পৃথিবীর অন্য সব রাজার তুলনায় রাজা শলোমন ধনসম্পদে ও প্রজ্ঞায় বৃহত্তর হলেন।
24 শলোমনের অন্তরে ঈশ্বর যে প্রজ্ঞা ভরে দিলেন, তা শোনার জন্য গোটা জগৎ তাঁর সঙ্গে আনুষ্ঠানিক সাক্ষাৎকার লাভের চেষ্টা করত।
25 বছরের পর বছর, যে কেউ তাঁর কাছে আসত, সে কোনও না কোনো উপহার—রুপো ও সোনার তৈরি জিনিসপত্র, কাপড়চোপড়, অস্ত্রশস্ত্র ও মশলাপাতি, এবং ঘোড়া ও খচ্চর নিয়ে আসত।
26 শলোমন প্রচুর রথ ও ঘোড়া একত্রিত করলেন; তাঁর কাছে এক হাজার চারশো রথ ও 12,000 ঘোড়া ছিল, যা তিনি বিভিন্ন রথ-নগরীতে রেখেছিলেন এবং কয়েকটিকে তিনি নিজের কাছে জেরুশালেমেও রেখেছিলেন।
27 জেরুশালেমে রাজা, রুপোকে পাথরের মতো সাধারণ স্তরে নামিয়ে এনেছিলেন, এবং দেবদারু কাঠকে পর্বতমালার পাদদেশে উৎপন্ন ডুমুর গাছের মতো পর্যাপ্ত করে তুলেছিলেন।
28 শলোমনের ঘোড়াগুলি মিশর ও কুই থেকে আমদানি করা হত—রাজকীয় বণিকেরা বাজার দরে সেগুলি কুই থেকে কিনে আনত।
29 তারা মিশর থেকে এক-একটি রথ আমদানি করত ছয়শো শেকল রুপো দিয়ে, এবং এক-একটি ঘোড়া আমদানি করত একশো 50 শেকলে। এছাড়াও হিত্তীয় ও অরামীয় সব রাজার কাছে তারা সেগুলি রপ্তানিও করত।