< রূতের বিবরণ 2 >

1 নয়মীর স্বামী ইলীমেলকের গোষ্ঠীর এক জন ভদ্র ধনী লোক ছিলেন; তাঁর নাম বোয়স।
নয়মীর স্বামী ইলীমেলকের পরিবারের একজন সম্ভ্রান্ত লোক ছিলেন, যাঁর নাম বোয়স।
2 পরে মোয়াবীয়া রূত নয়মীকে বলল, “অনুরোধ করি, আমি ক্ষেত্রে গিয়ে যার দৃষ্টিতে অনুগ্রহ পাই, তার পিছনে পিছনে শস্যের পড়ে থাকা শীষ কুড়াই।” নয়মী বলল, “বৎসে, যাও।”
আর মোয়াবীয় রূত তার শাশুড়িকে বলল, “দয়া করে আমাকে যে কোনো জমিতে শিষ কুড়াতে অনুমতি দিন। যাতে জমিতে পড়ে থাকা শিষ কুড়ানোর জন্য আমি যার পিছনে যাই তার কাছেই দয়া পাই।” নয়মী তাকে বলল, “বাছা আমার, যাও।”
3 পরে সে গিয়ে এক ক্ষেত্রে উপস্থিত হয়ে ছেদকদের পিছনে পিছনে পড়ে থাকা শীষ কুড়াতে লাগল; আর ঘটনাক্রমে সে ইলীমেলকের গোষ্ঠীর ঐ বোয়সের ভূমিতেই গিয়ে পড়ল।
তাই রূত বাইরে গেল, যেখানে মজুরেরা যব কেটে জমা করছিল, এবং তাদের পিছনে পিছনে গিয়ে জমিতে পড়ে থাকা যবের শিষ কুড়াতে লাগল। সেদিন ঘটনাক্রমে, সে জানতে পারল, যে জমির অংশটিতে সে কুড়াচ্ছে, সেই জমিটি বোয়সের ছিল, যিনি নয়মীর স্বামী ইলীমেলকের পরিবারের একজন।
4 আর দেখ, বোয়স বৈৎলেহম থেকে এসে ছেদকদেরকে বললেন, “সদাপ্রভু তোমাদের সহবর্ত্তী হোন।” তারা উত্তর করল, “সদাপ্রভু আপনাকে আশীর্বাদ করুন।”
ঠিক সেই সময় বোয়স বেথলেহেম থেকে আসলেন। যে মজুরেরা শস্য কেটে জমা করছিল, তিনি তাদের উদ্দেশে বললেন, “সদাপ্রভু তোমাদের সঙ্গে থাকুন!” আর তারাও উত্তরে বলল, “সদাপ্রভু আপনাকে আশীর্বাদ করুন!”
5 পরে বোয়স ছেদকদের উপরে নিযুক্ত নিজের চাকরকে জিজ্ঞাসা করলেন, “এ যুবতী কার?”
তখন বোয়স মজুরদের উপরে নিযুক্ত প্রধানকে বললেন, “কে এই যুবতী মহিলা?”
6 তখন ছেদকদের উপর নিযুক্ত চাকর বলল, “এ সেই মোয়াবীয়া যুবতী, যে নয়মীর সঙ্গে মোয়াব দেশ থেকে এসেছে;”
মজুরদের উপরে নিযুক্ত প্রধান বলল, “এই যুবতী সেই মোয়াবীয় মহিলা যে নয়মীর সঙ্গে মোয়াব দেশ থেকে এসেছে।”
7 সে বলল, “অনুগ্রহ করে আমাকে ছেদকদের পিছনে পিছনে আঁটির মধ্যে শীষ কুড়াতে দাও;” অতএব সে এসে সকাল থেকে এখন পর্যন্ত রয়েছে; কেবল বিশ্রামের ঘরে (বিশ্রাম নিতে) অল্পক্ষণ ছিল।
সে বলেছিল, “দয়া করে আমাকে মজুরদের পিছনে পিছনে গিয়ে জমিতে পড়ে থাকা যবের শিষ কুড়াতে দিন। সে জমিতে গেছে এবং ঘরে খুব কম সময় আরাম করা ছাড়া, সকাল থেকে এখন পর্যন্ত অনবরত কাজ করে চলেছে।”
8 পরে বোয়স রূতকে বললেন, “বৎসে, বলি শুন; তুমি কুড়াতে অন্য ক্ষেত্রে যেও না, এখান থেকে চলে যেও না, এখানে আমার যুবতী দাসীদের সঙ্গে সঙ্গে থাক।
তাই বোয়স রূতকে বললেন, “বাছা আমার, খুব মন দিয়ে আমার কথা শোনো, এই জমি ছেড়ে আর অন্য কোনো লোকের জমিতে শিষ কুড়াতে যেয়ো না। এখানে আমার দাসীদের সঙ্গে থাকো।
9 ছেদকেরা যে ক্ষেত্রের শস্য কাটবে, তার প্রতি চোখ রেখে তুমি দাসীদের পিছনে যেও; তোমাকে স্পর্শ করতে আমি কি যুবকদেরকে নিষেধ করিনি? আর পিপাসা পেলে তুমি পাত্রের কাছে গিয়ে, যুবকরা যে জল তুলেছে, তা থেকে পান কোরো।”
তারা যে জমিতে শস্য জমা করছে, সেই জমির উপর তোমার চোখ রেখে, তাদের পিছনে পিছনে শিষ কুড়াও। আমি আমার দাসদের বলে দিয়েছি, যেন তারা তোমার গায়ে হাত না দেয়। আর যখন তোমার পিপাসা পাবে তখন আমার দাসেরা যে জল ভরে রেখেছে সেই জলের পাত্রের কাছে গিয়ে জল পান করবে।”
10 ১০ তাতে সে উপুর হয়ে মাটিতে নত হয়ে তাঁকে বলল, “আমি তো বিদেশিনী, তবুও আপনি আমার বিষয় জানতে চাইছেন, আপনার দৃষ্টিতে এ অনুগ্রহ আমি কিসের জন্য পেলাম?”
বোয়সের সব কথা শোনার পর রূত মাটিতে উবুড় হয়ে প্রণাম করল। সে জিজ্ঞাসা করল, “কেন আমি আপনার চোখে এত দয়া পেয়েছি? কেনই বা আপনি আমার এত যত্ন নিচ্ছেন? আমি তো অন্য দেশের লোক, আপনার কাছে বিদেশিনী।”
11 ১১ বোয়স উত্তর করলেন, “তোমার স্বামীর মৃত্যুর পরে তুমি তোমার শাশুড়ীর সঙ্গে যেমন ব্যবহার করেছ এবং নিজের বাবা মা ও জন্মদেশ ছেড়ে, আগে যাদেরকে জানতে না, এমন লোকদের কাছে এসেছ, এ সব কথা আমার শোনা আছে।
বোয়স উত্তরে বললেন, “তোমার স্বামীর মৃত্যুর পর তুমি তোমার শাশুড়ির জন্য যা কিছু করেছ, এবং কীভাবে তুমি তোমার জন্মভূমি, তোমার বাবা ও মাকে ছেড়ে, যে লোকদের তুমি আগে জানতে না, তাদের সঙ্গে বসবাস করতে এসেছ, সেই বিষয়ে তোমার সব কথা আমি লোকের মুখে শুনেছি।
12 ১২ সদাপ্রভু তোমার কাজের উপযোগী ফল দিন; তুমি ইস্রায়েলের ঈশ্বর যে সদাপ্রভুর পক্ষের নীচে শরণ নিতে এসেছ, তিনি তোমাকে সম্পূর্ণ পুরষ্কার দিন।”
সদাপ্রভু তোমার কাজের পুরস্কার দিন। সদাপ্রভু ইস্রায়েলের ঈশ্বর তোমাকে তোমার কাজের পুরো দাম দিন, যাঁর কাছে আশ্রয় নিয়ে সুরক্ষা পেতে তুমি এখানে এসেছ।”
13 ১৩ সে বলল, “হে আমার প্রভু, আপনার দৃষ্টিতে যেন আমি অনুগ্রহ পাই; আপনি আমাকে সান্ত্বনা করলেন এবং আপনার এই দাসীর কাছে মঙ্গলকাঙ্খী কথা বললেন; আমি তো আপনার একটি দাসীর মতোও নই।”
তখন রূত বোয়সকে বলল, “হে আমার প্রভু, এখন আমি যেমন আপনার কাছে দয়া পেয়েছি, তেমনি দয়া যেন এর পরেও পেতে পারি। আপনি আমাকে সান্ত্বনা দিয়েছেন এবং আপনার এই দাসীর সঙ্গে দয়ালু ভাব দেখিয়েছেন—যদিও আমি আপনার যত দাসী আছে তাদের একজনেরও যোগ্য নই।”
14 ১৪ পরে ভোজন দিনের বোয়স তাকে বললেন, “তুমি এই জায়গায় এসে রুটি খাও এবং তোমার রুটির খন্ড সিরকায় ডুবিয়ে নাও।” তখন সে ছেদককের পাশে বসলে তারা তাকে ভাজা শস্য দিল; তাতে সে খেয়ে তৃপ্ত হল এবং কিছু রেখে দিল।
দুপুরবেলায় খাবার সময় বোয়স রূতকে ডেকে বললেন, “এখানে উঠে এসো, কিছু রুটি নিয়ে সিরকায় ডুবিয়ে নাও।” যখন সে শস্যচ্ছেদকদের কাছে গিয়ে বসল, তখন বোয়স তাকে কিছুটা ভাজা শস্য দিলেন। মনের ইচ্ছামতো পেট পুরে সে খেল এবং কিছু রেখে দিল।
15 ১৫ পরে সে কুড়াতে উঠলে বোয়স নিজের চাকরদেরকে আজ্ঞা করলেন, “ওকে আঁটির মধ্যেও কুড়াতে দাও এবং ওকে তিরস্কার করও না;
যখন সে আবার শস্য কুড়াতে উঠল, তখন বোয়স তার দাসদের আদেশ দিয়ে বললেন, “বরং একে তোমাদের আঁটির মধ্যে থেকে কুড়াতে দিয়ো, তার বিরুদ্ধে কিছু কথা বলবে না।
16 ১৬ আবার ওর জন্য বাঁধা আঁটি থেকে কিছু টেনে রেখে দাও, ওকে কুড়াতে দাও, ধমকীয়ও না।”
বরং আঁটির মধ্যে থেকে কিছু শিষ বের করে তার জন্য ফেলে দিয়ো যেন সে কুড়াতে পারে এবং তাকে বকাবকি করবে না।”
17 ১৭ আর সে সন্ধ্যা পর্যন্ত সেই ক্ষেত্রে কুড়াল; পরে সে নিজের কুড়ান শস্য মাড়াই করলে প্রায় এক ঐফা যব হল।
তাই রূত সন্ধ্যা পর্যন্ত বোয়সের জমিতে শিষ কুড়ালো। পরে সে কুড়ানো যব ঝাড়াই করলে তার পরিমাণ প্রায় এক ঐফা হল।
18 ১৮ পরে সে তা তুলে নিয়ে নগরে গেল এবং তার শাশুড়ী তার কুড়ান শস্য দেখল; আর সে আহার করে তৃপ্ত হলে পর যা রেখেছিল, তা বের করে তাকে দিল।
এরপর সে সেগুলি নিয়ে নগরে গেল আর তার শাশুড়ি দেখল যে সে কত কুড়িয়েছে। রূত যথেষ্ট খাওয়ার পর বেঁচে যাওয়া খাবার বের করে তার শাশুড়িকে দিল।
19 ১৯ তখন তার শাশুড়ী তাকে বলল, “তুমি আজ কোথায় কুড়িয়েছ? কোথায় কাজ করেছ? যে ব্যক্তি তোমার সাহায্য করেছেন, তিনি ধন্য হোন।” তখন সে কার কাছে কাজ করেছিলে, তা শাশুড়িকে জানিয়ে বলল, “যে ব্যক্তির কাছে আজ কাজ করেছি, তাঁর নাম বোয়স।”
তার শাশুড়ি তাকে জিজ্ঞাসা করল, “তুমি আজ কোথায় শিষ কুড়াতে গিয়েছিলে? আজ তুমি কোথায় কাজ করলে? যিনি তোমার উপর দয়া দেখিয়েছেন তাঁর মঙ্গল হোক!” তাই সে তার শাশুড়িকে বলল, “আমি আজ যার জমিতে কাজ করেছি সেই ব্যক্তির নাম বোয়স।”
20 ২০ তাতে নয়মী নিজের ছেলের স্ত্রীকে বলল, “তিনি সেই সদাপ্রভুর আশীর্বাদ লাভ করুন, যিনি জীবিত ও মৃতদের প্রতি দয়া নিবৃত্ত করেননি।” নয়মী আরও বলল, “সেই ব্যক্তি আমাদের কাছের আত্মীয়, তিনি আমাদের মুক্তিকর্তা জ্ঞাতিদের মধ্যে এক জন।”
তখন নয়মী রূতকে বলল, “ধন্য সদাপ্রভু যিনি তাঁর দয়া জীবিত ও মৃতদের উপর দেখিয়েছেন।” নয়মী রূতকে আরও বলল, “সে আমাদের পরিবারের এক নিকট আত্মীয় এবং আমাদের একজন মুক্তিকর্তা জ্ঞাতি।”
21 ২১ আর মোয়াবীয়া রূত বলল, “তিনি আমাকে এটাও বললেন, আমার সমস্ত ফসল কাটা শেষ না হওয়া পর্যন্ত তুমি আমার চাকরদের সঙ্গে সঙ্গে থাক।”
পরে মোয়াবীয় রূত বলল, “তিনি আমাকে আরও বললেন, তুমি আমার দাসদের সঙ্গে থেকো যতক্ষণ না তারা শস্য জমা করার কাজ শেষ করছে।”
22 ২২ তাতে নয়মী নিজের ছেলের স্ত্রী রূতকে বলল, “বৎসে, তুমি যে তার দাসীদের সঙ্গে যাও এবং অন্য কোনো জায়গায় কেউ যে তোমার দেখা না পায়, সে ভাল।”
নয়মী তার বউমা রূতকে বলল, “বাছা, তোমার পক্ষে এই ভালো যে তুমি তাঁর দাসীদের সঙ্গে ছিলে কারণ অন্যের জমি হলে তোমার ক্ষতি হত।”
23 ২৩ অতএব যব ও গম কাটা শেষ হওয়া পর্যন্ত সে কুড়াবার জন্য বোয়সের দাসীদের সঙ্গে থাকল এবং নিজের শাশুড়ীর সঙ্গে বাস করল।
তাই যব ও গম কুড়ানো শেষ না হওয়া পর্যন্ত রূত বোয়সের দাসীদের সঙ্গেই ছিল। এইভাবে সে তার শাশুড়ির সঙ্গে থাকতে লাগল।

< রূতের বিবরণ 2 >