< রূতের বিবরণ 1 >
1 ১ আর বিচারকর্ত্তৃগনের শাসনের দিনের একবার দেশে দূর্ভিক্ষ হয়। আর বৈৎলেহম-যিহূদার একটি লোক, তার স্ত্রী ও দুই ছেলে মোয়াব দেশে বাস করতে যায়।
বিচারকরা যখন দেশ শাসন করছিলেন সেই সময় দেশে দুর্ভিক্ষ হয়। যিহূদিয়ার বেথলেহেম থেকে একটি লোক তার স্ত্রী ও দুই ছেলে নিয়ে কিছুদিনের জন্য মোয়াব দেশে থাকবে বলে সেখানে যায়।
2 ২ সেই লোকটী নাম ইলীমেলক, তার স্ত্রীর নাম নয়মী এবং তার দুই ছেলের নাম মহলোন ও কিলিয়োন; এরা বৈৎলেহম-যিহূদা নিবাসী ইফ্রাথীয়। এরা মোয়াব দেশে গিয়ে সেখানে থেকে গেল।
সেই লোকটির নাম ছিল ইলীমেলক, তার স্ত্রীর নাম নয়মী এবং তাঁর দুই পুত্রের নাম মহলোন ও কিলিয়োন। তারা যিহূদিয়ার বেথলেহেমের অধিবাসী ইফ্রাথীয় ছিল। তারা মোয়াব দেশে গিয়া বসবাস করতে লাগল।
3 ৩ পরে নয়মীর স্বামী ইলীমেলক মারা গেল, তাতে সে ও তার দুই ছেলে অবশিষ্ট থাকল।
কিন্তু ঘটনাক্রমে নয়মীর স্বামী ইলীমেলক মারা গেল। তাই সে দুই ছেলে নিয়ে একা বসবাস করতে লাগল।
4 ৪ পরে সেই দুইজনে দুই মোয়াবীয়া মেয়েকে বিয়ে করল। এক জনের নাম অর্পা আরেকজনের নাম রূত। আর তারা অনুমান দশ বছর ধরে সেই জায়গায় বাস করল।
নয়মীর দুই ছেলে মোয়াবের মেয়েদের বিয়ে করল। সেই দুই মোয়াবীয় মহিলার নাম ছিল অর্পা ও রূত। মোয়াব দেশে এরা দশ বছর থাকার পর,
5 ৫ পরে মহলোন ও কিলিয়োন এই দুই জনই মরে গেল, তাতে নয়মী স্বামীহীন ও পুত্রহীন হয়ে অবশিষ্টা থাকল।
নয়মীর দুই ছেলে মহলোন ও কিলিয়োনও মারা গেল। তাই নয়মী স্বামী ও দুই ছেলে হারিয়ে একা হয়ে গেল।
6 ৬ তখন সেই দুই ছেলের স্ত্রীদেরকে সঙ্গে নিয়ে মোয়াব দেশ থেকে ফিরে যাবার জন্য উঠল; কারণ সে মোয়াব দেশে শুনতে পেয়েছিল যে, সদাপ্রভু নিজের প্রজাদের সাহায্য করে তাদেরকে খাবার দিয়েছেন।
এরপর নয়মী তার দুই ছেলের স্ত্রীদের নিয়ে মোয়াব দেশ থেকে ফিরে আসার জন্য তৈরি হল। মোয়াব দেশে থাকার সময় সে শুনেছিল যে সদাপ্রভু দুর্ভিক্ষের সময় তাঁর লোকদের খাবার জুগিয়েছেন।
7 ৭ সে ও তার দুই ছেলের স্ত্রী নিজের বাসস্থান থেকে বের হল এবং যিহূদা দেশে ফিরে যাবার জন্য পথে চলতে লাগল।
তাই নয়মী তার দুই পুত্রবধূকে নিয়ে যিহূদা দেশের রাস্তার দিকে গেল।
8 ৮ তখন নয়মী দুই ছেলের স্ত্রীদেরকে বলল, “তোমরা নিজের নিজের মায়ের বাড়িতে ফিরে যাও; মৃতদের প্রতি ও আমার প্রতি তোমরা যেমন দয়া করেছ, সদাপ্রভু তোমাদের প্রতি সেরকম দয়া করুন।
কিন্তু নয়মী তার দুই পুত্রবধূকে বলল, “তোমরা যে যার মায়ের বাড়িতে ফিরে যাও। সদাপ্রভু তোমাদের দয়া দেখান, যেমন তোমরা যারা মারা গেছে তাদের উপর ও আমার উপর দয়া দেখিয়েছ।
9 ৯ তোমরা উভয়ে যেন স্বামীর বাড়িতে বিশ্রাম পাও, সদাপ্রভু তোমাদেরকে এই বর দিন।” পরে সে তাদেরকে চুম্বন করল; তাতে তারা উচ্চঃস্বরে কাঁদল।
সদাপ্রভু তোমাদের দুজনকে নিজের নিজের স্বামীর ঘর পেতে সাহায্য করুন!” তারপর সে তাদের চুমু খেল আর তারা জোরে জোরে কাঁদতে লাগল
10 ১০ আর তারা তাকে বলল, “না, আমরা তোমারই সাথে তোমার লোকেদের কাছে ফিরে যাব।”
এবং তারা নয়মীকে বলল, “না, আমরা তোমার সঙ্গে তোমার লোকদের কাছে ফিরে যাব।”
11 ১১ নয়মী বলল, “হে আমার বত্সারা, ফিরে যাও; তোমরা আমার সঙ্গে কেন যাবে? তোমাদের স্বামী হবার জন্য এখনো কি আমার গর্ভে সন্তান আছে?
কিন্তু নয়মী বলল, “বাছা তোমরা ফিরে যাও। কেন তোমরা আমার সঙ্গে যাবে? আমার সঙ্গে আর কি কোনও ছেলে আছে যে তোমাদের স্বামী হতে পারবে?
12 ১২ হে আমার বত্সরা, ফিরে চলে যাও; কারণ আমি বৃদ্ধা, আবার বিয়ে করতে পারি না; আর আমার প্রত্যাশা আছে, এই বলে যদি আমি আজ রাতে বিয়ে করি আর যদি ছেলেও প্রসব করি,
বাছা, ফিরে যাও। কারণ আমি যে বৃদ্ধা, বিয়ে করে আরেকটি স্বামী পাওয়ার বয়স আর নেই। যদি আমার আশাও থাকে, যদি আজ রাতেই আমি বিয়ে করে স্বামী পাই এবং ছেলেদের জন্ম দিই,
13 ১৩ তবে তোমরা কি তাদের বয়ঃপ্রাপ্তি পর্যন্ত অপেক্ষা করবে? তোমরা কি সে জন্য বিয়ে করতে নিবৃত্তা থাকবে? হে আমার বত্সরা, তা নয়, তোমাদের জন্য আমার বড় দুঃখ হয়েছে; কারণ সদাপ্রভুর হাত আমার বিরুদ্ধে প্রসারিত হয়েছে।”
তারা যতদিন পর্যন্ত না বড়ো হচ্ছে ততদিন পর্যন্ত তোমরা কি তাদের জন্য বিয়ে না করে অপেক্ষা করবে? না বাছা, এরকম করা তোমাদের থেকে আমার জন্য খুবই শক্ত কাজ। কারণ সদাপ্রভু আমার বিরোধী হয়েছেন!”
14 ১৪ পরে তারা আবার উচ্চঃস্বরে কাঁদল এবং অর্পা নিজের শাশুড়ীকে চুম্বন করল, কিন্তু রূত তার প্রতি অনুরক্তা থাকল।
নয়মীর কথা শুনে, আবার তারা জোরে জোরে চিৎকার করে কাঁদতে লাগল। তারপর অর্পা তার শাশুড়িকে চুমু দিয়ে তার পথে চলে গেল, কিন্তু রূত তাকে ধরে থাকল।
15 ১৫ তখন সে বলল, “ঐ দেখ, তোমার যা নিজের লোকেদের ও নিজের দেবতার কাছে ফিরে গেল, তুমিও তোমার জাএর পিছনে পিছনে ফিরে যাও।”
নয়মী তাকে বলল, “দেখো, তোমার জা তার লোকজনের ও তার দেবতাদের কাছে ফিরে গেল। তাই তুমিও তার সঙ্গে ফিরে যাও।”
16 ১৬ কিন্তু রূত বলল, “তোমাকে ত্যাগ করে যেতে, তোমার পিছনে চলার থেকে ফিরে যেতে, আমাকে অনুরোধ কর না; তুমি যেখানে যাবে, আমিও সেখানে যাব এবং তুমি যেখানে থাকবে, আমিও সেখানে থাকব; তোমার লোকই আমার লোক,
কিন্তু রূত বলল, “আপনার কাছ থেকে ফিরে যেতে বা আপনাকে ছেড়ে যেতে আর আমাকে অনুরোধ করবেন না। আপনি যেখানে যাবেন আমিও সেখানে যাব। আপনি যেখানে থাকবেন আমিও সেখানে থাকব। আপনার লোকেরা আমার লোক এবং আপনার ঈশ্বর হবেন আমার ঈশ্বর।
17 ১৭ তোমার ঈশ্বরই আমার ঈশ্বর; তুমি যেখানে মারা যাবে, আমিও সেখানে মারা যাব, সে জায়গায় (পরে) কবর প্রাপ্ত হব; কেবল মৃত্যু ব্যতীত আর কিছুই যদি আমাকে ও তোমাকে পৃথক করতে পারে, তবে সদাপ্রভু আমাকে অমুক ও ততোধিক দন্ড দিন।”
আপনি যেখানে মরবেন আমিও সেখানে মরব, এবং সেখানেই আমার কবর হবে। তাই সদাপ্রভুই এই বিষয়ে আমার বিচার করে শাস্তি দিন। আর যাই হোক শুধু মৃত্যুই যেন আমাকে আপনার থেকে আলাদা করে।”
18 ১৮ যখন সে দেখল, তার সঙ্গে যেতে রূত সুনিশ্চিত আছে, তখন সে তাকে আর কিছু বলল না।
যখন নয়মী দেখলো যে, রূত কোনোমতেই তাকে ছেড়ে যাবে না, তাই সে আর কিছু বলল না।
19 ১৯ পরে তারা দুই জন চলতে চলতে শেষে যখন বৈৎলেহমে উপস্থিত হল, তখন তাদের বিষয়ে সমস্ত নগরে জনরব হল; স্ত্রী লোকেরা বলল, “এ কি নয়মী?”
তাই তারা দুজন চলতে লাগল, যতক্ষণ পর্যন্ত না তারা বেথলেহেমে পৌঁছাল। তারা যখন বেথলেহেমে পৌঁছাল, তখন তাদের কারণে সমগ্র নগর আলোড়িত হল, এবং মহিলারা বলল, “এ মহিলাটি কি নয়মী?”
20 ২০ সে তাদেরকে বলল, “আমাকে নয়মী [মনোরমা] বল না, বরং মারা [তিক্তা] বলে ডাক, কারণ সর্বশক্তিমান আমার প্রতি খুব তিক্ত ব্যবহার করেছেন।
নয়মী তাদের বলল, “আমাকে নয়মী বোলো না। আমাকে মারা বলে ডাকো। কারণ সর্বশক্তিমান ঈশ্বর আমার জীবনে অনেক সমস্যা নিয়ে এসেছেন।
21 ২১ আমি পরিপূর্ণা হয়ে যাত্রা করেছিলাম, এখন সদাপ্রভু আমাকে শূন্যা করে ফিরিয়ে আনলেন। তোমরা কেন আমাকে নয়মী বলে ডাকছ? সদাপ্রভু তো আমার বিপক্ষে প্রমাণ দিয়েছেন, সর্বশক্তিমান আমাকে নিগ্রহ করেছেন।”
আমি পরিপূর্ণা হয়ে মোয়াবে গিয়েছিলাম, কিন্তু সদাপ্রভু আমাকে শূন্য করে ফিরিয়ে নিয়ে এসেছেন। কেন আমাকে নয়মী বলছ? সদাপ্রভু আমার বিরুদ্ধে কথা বলেছেন। সর্বশক্তিমান আমাকে দুঃখভোগ করতে অনুমতি দিয়েছেন।”
22 ২২ এই ভাবে নয়মী ফিরে আসল, তার সঙ্গে তার ছেলের স্ত্রী মোয়াবীয়া রূত মোয়াব দেশ থেকে আসল; যব কাটা আরম্ভ হলেই তারা বৈৎলেহমে উপস্থিত হল।
তাই নয়মী তার বউমা মোয়াবীয় রূতের সঙ্গে মোয়াব দেশ থেকে বেথলেহেমে ফিরে এল। যব কাটা শুরু হওয়ার সময় তারা বেথলেহেমে এসে পৌঁছাল।