< নহিমিয়ের বই 5 >
1 ১ পরে নিজের ভাই ইহুদীদের বিরুদ্ধে লোকদের ও তাদের স্ত্রীদের মহাকোলাহল শোনা গেল।
পরে লোকেরা ও তাদের স্ত্রীরা ইহুদি ভাইদের বিরুদ্ধে খুব হইচই করতে লাগল।
2 ২ কেউ কেউ বলল, “আমরা ছেলেমেয়ে সমেত অনেক জন, খাবার খেয়ে বেঁচে থাকার জন্য শস্য নেব।”
কেউ কেউ বলল, “আমরা আমাদের ছেলেমেয়ে নিয়ে সংখ্যায় অনেক, খেয়ে বেঁচে থাকার জন্য আমাদের শস্যের প্রয়োজন।”
3 ৩ আর কেউ কেউ বলল, “আমরা নিজের জমি, আঙ্গুর ক্ষেত ও বাড়ি বন্ধক দিচ্ছি দূর্ভিক্ষের দিনের শস্য নেব।”
কেউ কেউ বলল, “দুর্ভিক্ষের সময় শস্য নেওয়ার জন্য আমরা আমাদের জমি, দ্রাক্ষাক্ষেত্র ও বাড়ি বন্ধক রাখছি।”
4 ৪ আর কেউ কেউ বলল, “রাজকরের জন্য আমরা নিজের নিজের জমি ও আঙ্গুর ক্ষেত বন্ধক রেখে রূপা নিয়েছি।
আবার অন্যেরা বলল, “আমাদের জমি ও দ্রাক্ষাক্ষেত্রের উপর রাজার কর দেবার জন্য ধার করতে হয়েছে।
5 ৫ কিন্তু আমাদের মাংস আমাদের ভাইদের মাংসের সমান, আমাদের ছেলেমেয়েরা তাদের ছেলে মেয়েদের সমান; তবুও সত্বেও দেখুন, আমরা নিজের নিজের ছেলেমেয়েদেরকে দাসত্বে আনছি, আমাদের মেয়েদের মধ্যে কেউ কেউ তো দাসী হয়ে গেছে; আমাদের কিছু ক্ষমতা নেই এবং আমাদের জমি ও আঙ্গুর ক্ষেত সব অন্য লোকদের হয়েছে।”
যদিও আমরা একই জাতির লোক এবং আমাদের ছেলেমেয়েরা তাদের ছেলেমেয়েদের মতোই তবুও আমাদের ছেলেদের এবং আমাদের মেয়েদের দাসত্বের জন্য দিয়েছি। আমাদের কিছু মেয়ে আগেই দাসী হয়ে গেছে, কিন্তু আমরা ক্ষমতাহীন, কারণ আমাদের জমি ও দ্রাক্ষাক্ষেত্র এখন অন্যদের হয়ে গেছে।”
6 ৬ তখন আমি তাদের মহাকোলাহল ও এই সব কথা শুনে ভীষণ রেগে গেলাম।
আমি যখন তাদের হইচই ও নালিশ শুনলাম তখন ভীষণ রেগে গেলাম।
7 ৭ আর আমি মনে মনে ভেবে দেখলাম এবং প্রধান লোকদেরকে শাসনকর্তাদেরকে তিরস্কার করে বললাম, “তোমরা প্রত্যেকজন নিজের নিজের ভাইয়ের কাছে সুদ আদায় করে থাক।” পরে তাদের বিরুদ্ধে মহা সমাজ জড়ো করলাম।
আমি তাদের কথাগুলি মনে মনে বিবেচনা করলাম এবং গণ্যমান্য লোকদের ও উচ্চপদস্থ কর্মচারীদের ভীষণ বকাবকি করলাম। আমি তাদের বললাম, “তোমরা তোমাদের নিজের দেশের লোকদের কাছ থেকে সুদ আদায় করছ!” সেইজন্য আমি তাদের বিচার করার জন্য এক মহাসভা ডাকলাম
8 ৮ আর আমি তাদেরকে বললাম, “জাতিদের কাছে আমাদের যে যিহূদী ভাইয়েরা বিক্রি হয়েছিল, তাদেরকে আমরা ক্ষমতা অনুসারে মুক্ত করেছি; এখন তোমাদের ভাইদেরকে তোমরাই কি বিক্রি করবে? আমাদের কাছে কি তাদেরকে বিক্রি করা হবে?” তাতে তারা চুপ হল, কিছু উত্তর দিতে পারল না।
এবং বললাম “ওই অইহুদিদের কাছে আমাদের যেসব লোকেরা বিক্রি হয়েছিল যতদূর সম্ভব তাদের আমরা ছাড়িয়ে এনেছি। এখন তোমরা তোমাদের লোকদের বিক্রি করছ, যেন আমাদের কাছে তারা আবার বিক্রি হয়!” তারা চুপ করে থাকল, কারণ তারা উত্তর দেবার জন্য কিছুই খুঁজে পেল না।
9 ৯ আমি আরও বললাম, “তোমাদের এই কাজ ভালো না; আমাদের শত্রু জাতিদের টিটকারির জন্য তোমরা আমাদের ঈশ্বরের ভয়ে চলবে না?
আমি আরও বললাম, “তোমরা যা করছ তা ঠিক না। অইহুদি যাতে আমাদের বিদ্রুপ না করতে পারে সেইজন্য আমাদের ঈশ্বরের প্রতি ভয় রেখে চলা কি উচিত নয়?
10 ১০ আমি, আমার ভাই ও যুবকেরা, আমরাও সুদের জন্য ওদেরকে রূপা ও শস্য ঋণ দিই; এস, আমরা এই সুদ ছেড়ে দিই।
আমি, আমার ভাইয়েরা ও আমার লোকেরা তাদের অর্থ এবং শস্য ধার দিই। এসো আমরা এই সুদ নেওয়া বন্ধ করি!
11 ১১ তোমরা ওদের শস্য ক্ষেত, আঙ্গুর ক্ষেত, জিতবৃক্ষের বাগান ও ঘর বাড়ি সব এবং রূপোর, শস্যের, আঙ্গুর রসের ও তেলের শতকরা যে বাড়িয়ে নিয়ে তাদেরকে ঋণ দিয়েছ, তা আজই তাদেরকে ফিরিয়ে দাও।”
তোমরা এখনই তাদের শস্যক্ষেত্র, দ্রাক্ষাক্ষেত্র, জলপাইক্ষেত্র এবং গৃহ সকল ফিরিয়ে দাও। আর অর্থের, শস্যের, নতুন দ্রাক্ষারসের এবং তেলের শতকার যে বৃদ্ধি নিয়ে ঋণ দিয়েছ তা তাদের ফিরিয়ে দাও।”
12 ১২ তখন তারা বলল, “আমরা তা ফিরিয়ে দেব। তাদের কাছে কিছুই চাইব না; আপনি যা বলবেন, সেই অনুযায়ী করব।” তখন আমি যাজকদের ডেকে এই প্রতিজ্ঞা অনুসারে কাজ করতে ওদেরকে শপথ করালাম।
তারা বলল, “আমরা তা ফিরিয়ে দেব এবং আমরা তাদের কাছে আর কিছুই দাবি করব না। আপনি যা বললেন আমরা তাই করব।” তারপর আমি যাজকদের ডেকে গণ্যমান্য লোকদের ও উচ্চপদস্থ কর্মচারীদের শপথ করালাম যে তারা প্রতিজ্ঞানুসারে কাজ করবে।
13 ১৩ আবার আমি আমার পোশাকের সামনের দিকটা ঝেড়ে বললাম, “যারা এই প্রতিজ্ঞা পালন না করে, ঈশ্বর তাদের ঘর বাড়ি ও পরিশ্রমের ফল থেকে তাকে এই ভাবে ঝেড়ে ফেলুন, এই ভাবে সে ঝাড়া ও শূন্য হোক।” তাতে সমস্ত সমাজ বলল, “আমেন,” এবং সদাপ্রভুর ধন্যবাদ করল। পরে লোকেরা সেই প্রতিজ্ঞা অনুসারে কাজ করলেন।
আমার পোশাকের সামনের দিকটা ঝাড়া দিয়ে বললাম, “যারা এই প্রতিজ্ঞা রক্ষা করবে না, ঈশ্বর তাদের প্রত্যেককে তাদের বাড়ি ও সম্পত্তি থেকে এইভাবে ঝেড়ে ফেলবেন। এরকম লোকদের এইভাবেই ঝেড়ে ফেলা হবে এবং তাদের সবকিছু শেষ করা হবে।” এই কথা শুনে সমস্ত সমাজ বলল, “আমেন,” এবং সদাপ্রভুর গৌরব করল। আর লোকেরা তাদের প্রতিজ্ঞানুসারে কাজ করল।
14 ১৪ সুতরাং আমি যে দিনের যিহূদা দেশে তাদের শাসনকর্ত্তা পদে নিযুক্ত হয়েছিলাম, সেই থেকে অর্থাৎ অর্তক্ষস্ত রাজার কুড়ি বছর থেকে বত্রিশ বছর পর্যন্ত, বারো বছর আমি ও আমার ভাইরা রাজ্যপালের খাবার গ্রহণ করিনি।
এছাড়াও, রাজা অর্তক্ষস্তের বিংশতিতম বছরের সময় যখন আমি যিহূদা দেশে শাসনকর্তা পদে নিযুক্ত হয়েছিলাম, তখন থেকে তার রাজত্বের বত্রিশ বছর পর্যন্ত—বারো বছর—আমি ও আমার ভাইয়েরা দেশাধ্যক্ষর পাওনা খাবার গ্রহণ করিনি।
15 ১৫ আমার আগে যে সব রাজ্যপাল ছিলেন, তারা লোকদের ভারী বোঝা চাপিয়ে দিতেন এবং তাদের থেকে নগদ চল্লিশ শেকল রূপা ছাড়াও খাবার ও আঙ্গুর রস নিতেন, এমনকি, তাঁদের চাকরেরাও লোকদের উপরে নিপীড়ন করত; কিন্তু আমি ঈশ্বর ভয়ের জন্য তা করতাম না।
কিন্তু আমার আগে যে শাসনকর্তারা ছিলেন, তারা লোকদের উপর ভারী বোঝা চাপিয়ে দিয়েছিলেন এবং খাবারদাবার ও দ্রাক্ষারস ছাড়াও তাদের কাছ থেকে চল্লিশ শেকল রুপো নিতেন। তাদের চাকরেরাও লোকদের উপর কর্তৃত্ব করত। কিন্তু ঈশ্বরের প্রতি আমার ভক্তিমূলক ভয় থাকাতে আমি সেইরকম কাজ করিনি।
16 ১৬ আবার আমি এই দেওয়ালের কাজেও নিযুক্ত ছিলাম; আমরা জমি কিনতাম না এবং আমার সমস্ত যুবক সেই জায়গায় কাজে জড়ো হত।
বরং, আমি এই প্রাচীরের কাজে নিজেকে ব্যস্ত রাখতাম। আমার সকল চাকরেরা কাজ করার জন্য সেখানে জড়ো হত, আমরা কেউ কোনো জমি কিনিনি।
17 ১৭ আর আমাদের চারদিকে অবস্থিত জাতিদের মধ্যে থেকে যারা আমাদের কাছে আসত, তাদের ছাড়া যিহূদী ও শাসনকর্ত্তা দেড়শো জন আমার সঙ্গে টেবিলে বসতো।
এছাড়াও, 150 জন ইহুদি ও উচ্চপদস্থ কর্মচারী এবং আমাদের চারিদিকের জাতিগণের মধ্যে যারা আমাদের কাছে আসত তারা আমার সঙ্গে খাওয়াদাওয়া করত।
18 ১৮ সেই দিন প্রত্যেক দিন এই সব খাবার তৈরী হত, একটা ষাঁড়, ছয়টা বাছাই করা ভেড়া ও কতগুলো পাখি আমার জন্য রান্না করা হত, আর প্রতি দশ দিন পর সব রকমের আঙ্গুর রস, এই সমস্ত সত্বেও লোকদের দাসত্বের ভার বেশি হওয়াতে আমি রাজ্যপালের খাবার চাইতাম না।
প্রতিদিন একটি করে বলদ ও ছয়টি বাছাই করা মেষ ও কতগুলি পাখিও আমার জন্য রান্না করা হত, আর প্রতি দশদিন অন্তর যথেষ্ট পরিমাণ সব রকম দ্রাক্ষারস দেওয়া হত। এই সমস্ত সত্ত্বেও লোকদের উপর ভারী বোঝা থাকার দরুন আমি প্রদেশপালের কিছু দাবি করিনি।
19 ১৯ হে আমার ঈশ্বর, আমি এই লোকদের জন্য যে সব কাজ করেছি, মঙ্গলের জন্য আমার পক্ষে তা মনে কর।
হে আমার ঈশ্বর, আমি এই লোকদের জন্য যে সকল কাজ করেছি, তুমি আমার মঙ্গলের জন্য তা স্মরণ করো।