< নহূম ভাববাদীর বই 3 >
1 ১ ধিক, সেই রক্তপাতের শহরকে, সম্পূর্ণ মিথ্যা ও চুরি করা সম্পত্তি, লুট করা ছাড়ে না।
ধিক্ সেই রক্তপাতকারী নগর, যা মিথ্যায় পরিপূর্ণ, যা লুঠতরাজে পরিপূর্ণ, যেখানে কখনোই ক্ষতিগ্রস্তের অভাব হয় না!
2 ২ শোন, চাবুকের শব্দ, চাকার ঘড়ঘড় শব্দ; সেখানে দ্রুততম ঘোড়া চলার শব্দ, লাফিয়ে চলা ঘোড়া।
চাবুকের জোরালো শব্দ, চাকার ঝনঝনানি, দ্রুতগতি ঘোড়ার ক্ষুরের শব্দ ও ধুলো ওড়ানো রথের শব্দ!
3 ৩ ঘোড়াচালক যোদ্ধা, তলোয়ার চকচক করছে, বর্শা চমকাছে। দেখ, অনেক আহত লোক আর মৃতদেহের ঢিবি, মৃতদেহের শেষ নেই, লোকে মৃতদেহের উপরে হোঁচট খাচ্ছে।
অশ্বারোহী সৈন্যদলের আক্রমণ! তরোয়ালের ঝলকানি ও বর্শার ঝনঝনানি! প্রচুর মানুষের মৃত্যু, মৃতদেহের স্তূপ, অসংখ্য মৃতদেহ, মানুষজন শবে হোঁচট খায়—
4 ৪ এই সবই হচ্ছে সেই সুন্দরী বেশ্যার অনেক বেশ্যাবৃত্তির জন্য; আকর্ষণীয়া এবং তার নানারকম যাদুকরি কাজ। তার বেশ্যার কাজ দিয়ে সে জাতিদের এবং যাদুবিদ্যা দিয়ে লোকদের বন্দী করে।
এসবই সেই এক বেশ্যার উচ্ছৃঙ্খল লালসার, লোভনীয়, ডাকিনীবিদ্যায় নিপুণ মহিলার কারণে হয়েছে, যে তার বেশ্যাবৃত্তি দ্বারা জাতিদের এবং তার জাদুবিদ্যা দ্বারা মানুষজনকে বন্দি করে রেখেছে।
5 ৫ বাহিনীদের সদাপ্রভু বলছেন, হে নীনবী, আমি তোমার বিরুদ্ধে, আমি মুখ পর্যন্ত তোমার কাপড় ওঠাব। জাতিগণকে তোমার উলঙ্গতা ও নানা রাজ্যের লোকেদের তোমার লজ্জা দেখাবো।
“আমি তোমার বিপক্ষ,” সর্বশক্তিমান সদাপ্রভু ঘোষণা করেন। “আমি তোমার মুখের উপর তোমার ঘাঘরা তুলে ধরব। আমি জাতিদের তোমার উলঙ্গতা দেখাব ও রাজ্যগুলির কাছে তোমার লজ্জা প্রকাশ করব।
6 ৬ আমি তোমার উপর আবর্জনা ছুঁড়ে ফেলব, তোমাকে ঘৃণার চোখে দেখব এবং তোমাকে ঠাট্টার পাত্র করব।
আমি অশ্লীলতা দিয়ে তোমাকে আঘাত করব, আমি তোমাকে ঘৃণার দৃষ্টিতে দেখব এবং তোমাকে এক প্রদর্শনীতে পরিণত করব।
7 ৭ তাই যে কেউ তোমাকে দেখবে, সে তোমার কাছ থেকে পালাবে, আর বলবে, “নীনবী ধ্বংস হয়ে গেছে, কে তার জন্য কাঁদবে? আমি তোমার জন্য কোথায় সান্ত্বনাকারী খুঁজে পাব?”
যারা তোমাকে দেখবে তারা সবাই তোমার কাছ থেকে পালাবে ও বলবে, ‘নীনবী ধ্বংসাবশেষে পরিণত হয়েছে—তার জন্যে কে বিলাপ করবে?’ তোমাকে সান্তনা দেওয়ার জন্য আমি কোথায় লোক খুঁজে পাব?”
8 ৮ হে নীনবী, তুমি কি নো-আমোনের চেয়ে ভাল? সে তো নীল নদীর ধারে ছিল আর তার চারপাশ ঘিরে ছিল জল। সাগর ছিল তার রক্ষার দেয়াল।
তুমি কি সেই থিব্সের চেয়ে শ্রেষ্ঠ, যা নীলনদের তীরে অবস্থিত, ও যার চতুর্দিক জলে ঘেরা? নদী তার সুরক্ষাবলয়, জলরাশি তার প্রাচীর ছিল।
9 ৯ কূশ আর মিশর তাকে সীমাহীন শক্তি যোগাত, তার বন্ধুদের মধ্যে ছিল পূট ও লিবিয়া।
কূশ ও মিশর ছিল তার অপার শক্তি; পূট ও লিবিয়া তার মিত্রশক্তির মধ্যে গণ্য হত।
10 ১০ তবুও তার লোকদের বন্দী করে অন্য দেশে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। প্রত্যেকটি রাস্তার মোড়ে তার শিশুদের আছাড় মারা হয়েছিল। তার গণ্যমান্য লোকদের জন্য গুলিবাঁট করে তাদের শিকল দিয়ে বেঁধে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল।
তাও তাকে বন্দি করা হল ও সে নির্বাসনে গেল। তার শিশু সন্তানদের প্রত্যেকটি রাস্তার মোড়ে মোড়ে ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে ছিন্নভিন্ন করা হল। তার গণ্যমান্য লোকদের জন্য গুটিকাপাত করা হল, এবং তার সব মহান লোককে শিকল দিয়ে বাঁধা হল।
11 ১১ তুমি মাতাল হয়ে পড়বে, তুমি শত্রুদের কাছ থেকে লুকাবার চেষ্টা করবে।
তুমিও মাতাল হয়ে যাবে; তুমি আত্মগোপন করবে ও শত্রুর নাগাল এড়িয়ে থাকার জন্য আশ্রয়স্থল খুঁজবে।
12 ১২ তোমার সমস্ত দুর্গগুলো পাকা ফলে ভরা ডুমুর গাছের মত, যদি সেগুলো নাড়ানো হয় ডুমুরগুলো তারই মুখে পড়বে।
তোমার সব দুর্গ এমন ডুমুর গাছের মতো, যেগুলির ফল পাকতে চলেছে; যখন সেগুলিকে নাড়ানো হয়, তখন ডুমুরগুলি ভক্ষকদের মুখে গিয়ে পড়ে।
13 ১৩ দেখ, তোমার লোকেরা সবাই স্ত্রীলোকের মত। তোমার দেশের দরজা তোমার শত্রুদের সামনে একেবারে খোলা রয়েছে, আগুন দরজা পুড়িয়ে দিয়েছে।
তোমার সৈন্যদলের দিকে তাকাও— তারা সবাই দুর্বল প্রাণী। তোমার দেশের প্রবেশদ্বারগুলি তোমার শত্রুদের জন্য হাট করে খুলে রাখা হয়েছে; তোমার ফটকের খিলগুলি আগুন গ্রাস করে নিয়েছে।
14 ১৪ ঘেরাওয়ের জন্য তুমি জল তুলে রাখ, তোমার দুর্গগুলো শক্তিশালী কর। কাদা, চুন ও বালি মেশাও ইটের দেওয়াল সারাও।
অবরোধকালের জন্য জল তুলে রাখো, তোমার দুর্গগুলি অভেদ্য করো! কাদা মেখে রাখো, চুন বালির মিশ্রণ তৈরি করো, ইটের গাঁথনি মেরামত করো!
15 ১৫ সেখানে আগুন তোমাকে গ্রাস করবে, তলোয়ার তোমাকে কেটে ফেলবে এবং এটা তোমাকে গ্রাস করবে পঙ্গপালের মত। তোমরা সংখ্যায় বেড়ে ওঠো পঙ্গপালের ও ফড়িংয়ের মত।
সেখানেই আগুন তোমাকে গ্রাস করবে; তরোয়াল তোমাকে কেটে ফেলবে— সেগুলি তোমাকে পঙ্গপালের ঝাঁকের মতো গিলে খাবে। গঙ্গাফড়িং-এর মতো সংখ্যায় বৃদ্ধি পাও, পঙ্গপালের মতো সংখ্যায় বৃদ্ধি পাও!
16 ১৬ তোমার ব্যবসায়ীদের সংখ্যা তুমি আকাশের তারার চেয়েও বেশী বাড়িয়েছ, কিন্তু তারা পঙ্গপালের মত, দেশকে লুট করে আর উড়ে যায়।
তোমার বণিকদের সংখ্যা তুমি বাড়িয়েই গিয়েছ যতক্ষণ না তারা আকাশের তারাদের চেয়েও সংখ্যায় বেশি হয়েছে, কিন্তু পঙ্গপালের মতো তারা দেশকে ন্যাড়া করে দেয় ও পরে উড়ে চলে যায়।
17 ১৭ তোমার রাজকুমারীরা পঙ্গপালের ঝাঁকের মত এবং তোমার সেনাপতিরা ফড়িংয়ের ঝাঁকের মত, যারা শীতের দিনের দেয়ালের উপরে বসে থাকে কিন্তু সূর্য্য উঠলে পর উড়ে যায়, কোথায় যায় কেউ জানে না।
তোমার রক্ষীবাহিনী পঙ্গপালের মতো, তোমার কর্মকর্তারা পঙ্গপালের সেই ঝাঁকের মতো যা এক শীতল দিনে প্রাচীরের উপর এসে বসে— কিন্তু যখন সূর্য ওঠে তখন তারা উড়ে চলে যায়, ও কেউ জানে না তারা কোথায় যায়।
18 ১৮ হে অশূরের রাজা, তোমার মেষপালকেরা ঘুমাচ্ছে, তোমার নেতারা বিশ্রাম করছে। তোমার লোকেরা পাহাড়ে পাহাড়ে ছড়িয়ে পড়েছে, তাদের একত্র করবার কেউ নেই।
হে আসিরিয়ার রাজা, তোমার মেষপালকেরা তন্দ্রাচ্ছন্ন হয়েছে; তোমার গণ্যমান্য লোকেরা শুয়ে বিশ্রাম করছে। তোমার প্রজারা পর্বতমালায় ছিন্নভিন্ন হয়ে আছে ও তাদের একত্রিত করার কেউ নেই।
19 ১৯ কোন কিছুই তোমার ক্ষত ভাল করতে পারবে না, তোমার ক্ষত সাংঘাতিক। যারা তোমার খবর শুনবে তারা তোমার উপরে আনন্দে হাততালি দেবে, কারণ তোমার অশেষ নিষ্ঠুরতা থেকে কে রক্ষা পেয়েছে?
কোনো কিছুই তোমাকে সুস্থ করতে পারবে না; তোমার আঘাতটি মারাত্মক। যতজন তোমার খবর শোনে তারা সবাই তোমার পতনের খুশিতে হাততালি দেয়, যেহেতু তোমার অপার নিষ্ঠুরতার আঁচ কে না পেয়েছে?