< লুক 7 >
1 ১ লোকদের কাছে নিজের সমস্ত কথা শেষ করে তিনি কফরনাহূমে প্রবেশ করলেন।
2 ২ সেখানে একজন শতপতির একটি দাস ছিল যে অসুস্থ হয়ে মরবার মত হয়েছিল, সে তাঁর খুবই প্রিয় ছিল।
3 ৩ তিনি যীশুর সংবাদ শুনে ইহূদিদের কয়েক জন প্রাচীনকে তাঁর কাছে অনুরোধ করার জন্য পাঠালেন, যেন তিনি এসে তাঁর দাসকে মরার থেকে রক্ষা করুন।
4 ৪ তাঁরা যীশুর কাছে গিয়ে বিশেষভাবে অনুরোধ করে বলতে লাগলেন, “আপনি যেন তাঁর জন্য এই কাজ করেন, তিনি এর যোগ্য,”
5 ৫ কারণ তিনি আমাদের জাতিকে ভালবাসেন, আর আমাদের সমাজঘর তিনি তৈরি করে দিয়েছেন।
6 ৬ যীশু তাঁদের সঙ্গে গেলেন, আর তিনি বাড়ির কাছাকাছি আসতেই শতপতি কয়েক জন বন্ধুদের দিয়ে তাঁকে বলে পাঠালেন, প্রভু, নিজেকে কষ্ট দেবেন না; কারণ আমি এমন যোগ্য নই যে, আপনি আমার ছাদের নীচে আসেন;
7 ৭ সেজন্য আমাকেও আপনার কাছে আসার যোগ্য বলে মনে হলো না; আপনি শুধু মুখে বলুন, তাতেই আমার দাস সুস্থ হবে।
8 ৮ কারণ আমিও অন্যের ক্ষমতার অধীনে নিযুক্ত লোক, আবার সেনাগণ আমার অধীনে; আর আমি তাদের এক জনকে, যাও বললে সে যায় এবং অন্যকে এস বললে সে আসে, আর আমার দাসকে এই কাজ কর বললে সে তা করে।
9 ৯ এই কথা শুনে যীশু তাঁর বিষয়ে আশ্চর্য্য হলেন এবং যে লোকেরা তাঁর পিছনে আসছিল, তিনি তাদের দিকে ফিরে বললেন, “আমি তোমাদের বলছি, ইস্রায়েলের মধ্যে এত বড় বিশ্বাস কখনো দেখতে পাইনি।”
10 ১০ পরে যাঁদের পাঠান হয়েছিল, তাঁরা বাড়ি ফিরে গিয়ে সেই দাসকে সুস্থ দেখতে পেলেন।
11 ১১ কিছু দিন পরে তিনি নায়িন নামে এক শহরে গেলেন এবং তাঁর শিষ্যেরা ও অনেক লোক তাঁর সঙ্গে যাচ্ছিল।
12 ১২ যখন তিনি সেই শহরের ফটকের কাছে এলেন, তখন দেখতে পেলেন, লোকেরা একটি মৃত মানুষকে বয়ে বাইরে নিয়ে যাচ্ছিল; সে তার মায়ের একমাত্র ছেলে এবং সেই মা বিধবা ছিলেন; আর শহরের অনেক লোক তার সঙ্গে ছিল।
13 ১৩ তাকে দেখে প্রভুর খুবই করুণা হল এবং তাকে বললেন, “কেঁদো না।”
14 ১৪ পরে তিনি কাছে গিয়ে খাট স্পর্শ করলেন; আর যারা বয়ে নিয়ে যাচ্ছিল তারা দাঁড়াল। তিনি বললেন, “হে যুবক, তোমাকে বলছি ওঠো।”
15 ১৫ তাতে সেই মরা মানুষটি উঠে বসল এবং কথা বলতে লাগলো; পরে তিনি তাকে তার মায়ের কাছে ফিরিয়ে দিলেন।
16 ১৬ তখন সবাই ভয় পেল এবং ঈশ্বরের গৌরব করে বলতে লাগল, আমাদের মধ্যে একজন মহান ভাববাদী এসেছেন, আর ঈশ্বর নিজের প্রজাদের সাহায্য করেছেন।
17 ১৭ পরে সমস্ত যিহূদীয়াতে এবং আশেপাশের সমস্ত অঞ্চলে যীশুর বিষয়ে এই খবর ছড়িয়ে পড়ল।
18 ১৮ আর যোহনের শিষ্যরা তাঁকে এই সমস্ত বিষয়ে সংবাদ দিল।
19 ১৯ তাতে যোহন নিজের দুজন শিষ্যকে ডাকলেন ও তাদের প্রভুর কাছে জিজ্ঞাসা করতে পাঠালেন, যাঁর আগমন হবে, সেই ব্যক্তি কি আপনি? না, আমরা অন্য কারও অপেক্ষায় থাকব?
20 ২০ পরে সেই দুই ব্যক্তি তাঁর কাছে এসে বলল, “বাপ্তিষ্মদাতা যোহন আমাদের আপনার কাছে এই কথা বলে পাঠিয়েছেন, যাঁর আগমন হবে, সেই ব্যক্তি কি আপনি? না, আমরা অন্য কারও অপেক্ষায় থাকব?”
21 ২১ সে দিন তিনি অনেক লোককে রোগ, ব্যাধি ও মন্দ আত্মা থেকে সুস্থ করলেন এবং অনেক অন্ধের চোখ ভাল করে দিলেন।
22 ২২ পরে তিনি সেই দুই জন দূতকে এই উত্তর দিলেন, “তোমরা যাও এবং যা শুনেছ ও দেখেছ, সেই খবর যোহনকে দাও; অন্ধরা দেখতে পাচ্ছে, খোঁড়ারা হাঁটছে, কুষ্ঠ রুগীরা শুদ্ধ হচ্ছে ও বধিরেরা শুনতে পাচ্ছে, মৃতেরা জীবিত হচ্ছে, গরিবদের কাছে সুসমাচার প্রচার করা হচ্ছে।
23 ২৩ আর ধন্য সেই ব্যক্তি, যে আমাকে গ্রহণ করতে বাধা পায় না।”
24 ২৪ যোহনের দূতেরা চলে যাওয়ার পর যীশু জনতাকে যোহনের বিষয়ে বলতে লাগলেন, “তোমরা মরূপ্রান্তে কি দেখতে গিয়েছিলে? কি বাতাসে দুলছে এমন একটি নল?
25 ২৫ তবে কি দেখতে গিয়েছিলে? কি সুন্দর পোষাক পরা কোনও লোককে? দেখ, যারা দামী পোষাক পরে এবং ভোগবিলাসে এবং সম্মানের সহিত জীবন যাপন করে, তারা রাজবাড়িতে থাকে।
26 ২৬ তবে কি দেখতে গিয়েছিলে? কি একজন ভাববাদীকে দেখবার জন্য? হ্যাঁ, আমি তোমাদের বলছি ভাববাদী থেকেও শ্রেষ্ঠ ব্যক্তিকে।
27 ২৭ ইনি সেই ব্যক্তি,” যাঁর বিষয়ে লেখা আছে, “দেখ আমি আমার দূতকে তোমার আগে পাঠাব, সে তোমার আগে তোমার রাস্তা তৈরী করবে।
28 ২৮ আমি তোমাদের বলছি, স্ত্রীলোকের গর্ভে যারা জন্ম গ্রহণ করেছে তাদের মধ্যে যোহন থেকে মহান কেউই নেই; তবুও ঈশ্বরের রাজ্যে সবথেকে ছোট যে ব্যক্তি, সে তাঁর থেকে মহান।”
29 ২৯ আর সমস্ত লোক ও কর আদায়কারীরা যারা যোহনের বাপ্তিষ্মের বাপ্তাইজিত হয়েছে এই কথা শুনে তারা ঈশ্বরকে ধার্মিক বলে স্বীকার করল;
30 ৩০ কিন্তু ফরীশী ও ব্যবস্থার গুরুরা যারা যোহনের কাছে বাপ্তিষ্ম নেয়নি তারা নিজেদের বিষয়ে ঈশ্বরের পরিকল্পনাকে ব্যর্থ করল।
31 ৩১ অতএব আমি কার সঙ্গে এই যুগের লোকদের তুলনা করব? তারা কি রকম?
32 ৩২ তারা এমন ছোট বালকের মতো, যারা বাজারে বসে একজন অন্য এক জনকে ডেকে বলল, আমরা তোমাদের কাছে বাঁশী বাজালাম, তোমরা নাচলে না; এবং আমরা দুঃখ প্রকাশ করলাম, তোমরা কাঁদলে না;
33 ৩৩ কারণ বাপ্তিষ্মদাতা যোহন এসে রুটি খান না, আঙ্গুর রসও পান করেন না, আর তোমরা বল, সে ভূতগ্রস্ত।
34 ৩৪ মনুষ্যপুত্র এসে ভোজন পান করেন, আর তোমরা বল, ঐ দেখ, একজন পেটুক ও মাতাল, কর আদায়কারীদের ও পাপীদের বন্ধু।
35 ৩৫ কিন্তু প্রজ্ঞা তার সমস্ত সন্তানের মাধ্যমেই নির্দোষ বলে প্রমাণিত হলেন।
36 ৩৬ আর ফরীশীদের মধ্যে একজন যীশুকে তার সঙ্গে ভোজন করতে নিমন্ত্রণ করল। তাতে তিনি সেই ফরীশীর বাড়িতে গিয়ে ভোজনে বসলেন।
37 ৩৭ আর দেখ, সেই শহরে এক পাপী স্ত্রীলোক ছিল; সে যখন জানতে পারল, তিনি সেই ফরীশীর বাড়িতে খেতে বসেছেন, তখন একটি শ্বেত পাথরের পাত্রে সুগন্ধি তেল নিয়ে আসল
38 ৩৮ এবং পিছন দিকে তাঁর পায়ের কাছে দাঁড়িয়ে কেঁদে কেঁদে সে চোখের জলে তাঁর পা ভেজাতে লাগল এবং তার মাথার চুল দিয়ে পা মুছিয়ে দিল, আর তাঁর পায়ে চুমু দিয়ে সেই সুগন্ধি তেলে অভিষেক করতে লাগল।
39 ৩৯ এই দেখে, যে ফরীশী তাঁকে নিমন্ত্রণ করেছিল, সে মনে মনে বলল, এ যদি ভাববাদী হত, তবে নিশ্চয় জানতে পারত, একে যে স্পর্শ করছে, সে কে এবং কি ধরনের স্ত্রীলোক, কারণ সে পাপী।
40 ৪০ তখন যীশু উত্তরে তাকে বললেন, “শিমোন, তোমাকে আমার কিছু বলার আছে।” সে বলল, “গুরু বলুন।”
41 ৪১ এক মহাজনের কাছে দুজন ঋণী ছিল; এক জনের পাঁচশো দিনারী ঋণ ছিল, আর একজন পঞ্চাশ।
42 ৪২ তাদের শোধ করার ক্ষমতা না থাকার জন্য তিনি দুজনকেই ক্ষমা করলেন। তাদের মধ্যে কে তাঁকে বেশি ভালবাসবে?
43 ৪৩ শিমোন বলল, “আমার মনে হয়, যার বেশি ঋণ ক্ষমা করা হয়েছিল, সেই।” তিনি বললেন, “ঠিক বিচার করেছ।”
44 ৪৪ আর তিনি সেই স্ত্রীলোকটীর দিকে ফিরে শিমোনকে বললেন, “এই স্ত্রীলোকটীকে দেখছ? আমি তোমার বাড়িতে প্রবেশ করলাম, তুমি আমার পা ধোয়ার জল দিলে না, কিন্তু এই স্ত্রীলোকটী চোখের জলে আমার পা ভিজিয়েছে ও নিজের চুল দিয়ে পা মুছিয়ে দিয়েছে।
45 ৪৫ তুমি আমাকে চুমু দিলে না, কিন্তু আমি ভিতরে আসার পর থেকে, এ আমার পায়ে চুমু দিয়েই চলেছে, থামেনি।
46 ৪৬ তুমি তেল দিয়ে আমার মাথা অভিষেক করলে না, কিন্তু এ সুগন্ধি জিনিস আমার পায়ে মাখিয়েছে।
47 ৪৭ তাই, তোমাকে বলছি, এর বেশি পাপ থাকলেও, তার ক্ষমা হয়েছে; কারণ সে বেশি ভালবেসেছে; কিন্তু যাকে অল্প ক্ষমা করা হয়, সে অল্প ভালবাসে।
48 ৪৮ পরে তিনি সেই স্ত্রীলোককে বললেন, তোমার সমস্ত পাপ ক্ষমা হয়েছে।”
49 ৪৯ তখন যারা তাঁর সঙ্গে খেতে বসেছিল, তারা মনে মনে বলতে লাগল, “এ কে যে পাপও ক্ষমা করে?”
50 ৫০ কিন্তু তিনি সেই মহিলাটিকে বললেন, “তোমার বিশ্বাস তোমাকে উদ্ধার করেছে শান্তিতে চলে যাও।”